একটা সময় ছিল যখন বাংলার বুকে শীত এলে সন্ধ্যার সময় আগুন জ্বেলে গোল হয়ে বসে গল্প করত বাঙালি। আর ইয়াং জেনারেশন মেতে থাকত ক্রিকেট খেলায়। কিন্তু বর্তমান সময়ে শীত আসার আগে থেকেই পাড়া-মহল্লায় প্রস্তুত করা হয় ব্যাডমিন্টন কোর্ট। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতেই জ্বলে ওঠে বাতি। ঠান্ডা হাওয়ায় উঠতি থেকে মধ্যবয়সী, সবাই মেতে ওঠেন ব্যাডমিন্টন খেলায়। এ সময় অনেক এলাকায় ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্টের আয়োজনও হয়। সব মিলিয়ে বাঙালির কাছে শীতের মৌসুমে ব্যাডমিন্টন যেন এক উৎসবমুখর আয়োজন। এই খেলা স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারী, চলুন জেনে নিই।
১. পেশি গঠনে ভূমিকা
ব্যাডমিন্টন খেলায় যে মুভমেন্ট বা নড়াচড়া হয় তাতে সারা শরীরের মাংসপেশির ওপর প্রভাব পড়ে। তাই ব্যাডমিন্টন শরীরের জন্য ব্যায়ামের চেয়েও কার্যকর। একেকটি ব্যায়াম একেক ধরনের মাংসপেশির ওপর কাজ করে, কিন্তু এ ধরনের খেলায় সব ধরনের মাংসপেশির নড়াচড়া, সঞ্চালন হয়। এতে মাংসপেশির শক্তিমত্তা বাড়ে, মাংসপেশি বৃদ্ধি পায়।
২. হৃদ্রোগ প্রতিরোধ
ব্যাডমিন্টনের মতো খেলায় হার্টের মাংসপেশির সঞ্চালন বেশি হয়, রক্ত সরবরাহ বাড়ে। এতে হৃৎপিণ্ডের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তাই নিয়মিত ব্যাডমিন্টন খেলে হৃদ্রোগসহ হৃৎপিণ্ডের বিভিন্ন জটিল রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
৩. হাড়ের গঠন
উঠতি বয়সী বা কিশোরেরা ব্যাডমিন্টন খেললে হাড়ের গঠন শক্ত হয়। এতে শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি পায়।
৪. হজমক্রিয়ায় ভূমিকা
সুষম বিপাকক্রিয়া সুস্থ জীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাডমিন্টনের মতো খেলায় শারীরিক কসরত বেশি হয় বলে হজমক্রিয়া শক্তিশালী হয়।
৫. ওজন হ্রাস
যাঁদের ওজন বেশি তাঁরা ওজন কমাতে ব্যাডমিন্টন খেলতে পারেন। ব্যায়াম বা ওজন হ্রাসের অন্য পদ্ধতিগুলো কষ্টসাধ্য হলেও এ ক্ষেত্রে খেলতে খেলতে অনায়াসে ওজন কমানো সম্ভব। পেটের চর্বি কমাতে এ খেলা বেশ কার্যকর। এর সঙ্গে সঙ্গে রক্তের চর্বি অর্থাৎ কোলেস্টেরল কমে যায়। যাঁদের রক্তে আগে থেকেই চর্বি আছে, তাঁরাও ব্যাডমিন্টন খেলার মাধ্যমে হাই কোলেস্টেরল কমাতে পারেন।
৬. ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হ্রাস
ব্যাডমিন্টন খেললে ঘাম ঝরে। ওজন কমে যায়, রক্তের চর্বি কমে যায়। ফলস্বরূপ ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও কমে যায়। এমনকি যাঁদের ডায়াবেটিস আছে এবং নিয়মিত ব্যায়াম করতে হয়, তাঁরা ব্যায়ামের অংশ হিসেবে ব্যাডমিন্টন খেলে রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন।
৭. কার্যকর ফুসফুস
নিয়মিত শারীরিক কসরতের কারণে ব্যাডমিন্টন খেলার মাধ্যমে ফুসফুসের শক্তিমত্তা বাড়ে। ফুসফুসের রক্ত সরবরাহ ও অক্সিজেন নেওয়ার ক্ষমতা বাড়ে। এতে ফুসফুসের বিভিন্ন রোগ থেকে নিজেকে প্রতিরোধ করা যায়।
মানসিক উপকারিতা
এ তো গেল শারীরিক উপকারিতা। গবেষণায় দেখা গেছে, ব্যাডমিন্টনের মতো খেলায় মস্তিষ্ক থেকে ডোপামিন নামক রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরণ হয়, যা মনকে প্রফুল্ল রাখে ও মানসিক চাপ কমায়। আবার মানসিক দক্ষতাও বৃদ্ধি পায়। এ খেলায় বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে হয় বলে মস্তিষ্কেরও ব্যায়াম হয়, যা একজন মানুষের মানসিক দক্ষতা বাড়ায়। এলাকাবাসী, বন্ধুবান্ধব সবার সঙ্গে নিয়মিত দেখা হয় বলে সামাজিক সম্পর্ক গাঢ় ও সুদৃঢ় হয়।
সতর্কতা
ব্যাডমিন্টন অবশ্যই একটি স্বাস্থ্যকর খেলা। তবে এ খেলা সবার জন্য প্রযোজ্য নয়। যাঁদের শারীরিক সক্ষমতা কম, তাঁদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। হার্টের রোগীদের জন্য এ ধরনের শারীরিক কসরত চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত করা যাবে না। বিভিন্ন ফুসফুসের রোগ, যেমন অ্যাজমা থাকলে এ ধরনের খেলায় শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই এই মানুষদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে পরামর্শ অনুযায়ী খেলতে হবে।