পুজোর ছুটি মানেই বেড়াতে যাওয়ার সেরা সময়। এই সময়ে প্রকৃতির রূপ বদলে যায়। উৎসবের আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে চারপাশ। যদি আপনি এবার পুজোর ছুটিতে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করে থাকেন, তাহলে আসাম হতে পারে আপনার জন্য আদর্শ গন্তব্য। আসামের সৌন্দর্য, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি আপনার মন কেড়ে নেবেই। তাই, মনের দোটানা কাটিয়ে এবার পুজোর ছুটিতে ঘুরে আসুন আসামের কিছু বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্রগুলো থেকে।
কোথায় কোথায় যাবেন?
১. কাজিরাঙ্গা জাতীয় উদ্যান
কাজিরাঙ্গা জাতীয় উদ্যান আসামের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন স্থানের মধ্যে অন্যতম। এটি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের অন্তর্ভুক্ত এবং বিশ্বের একশৃঙ্গ গণ্ডারের বাসস্থান। কাজিরাঙ্গায় আপনি হাতি সাফারি, জঙ্গল সাফারি, এবং বন্যপ্রাণীর সান্নিধ্য উপভোগ করতে পারেন।
২. মাজুলি দ্বীপ
ব্রহ্মপুত্র নদীর বুকে অবস্থিত মাজুলি দ্বীপ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নদীদ্বীপ। এটি আসামের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং বৈষ্ণব ধর্মের প্রধান স্থান। এখানে গেলে আপনি বৈষ্ণব সত্র, হস্তশিল্প, এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মেলবন্ধন উপভোগ করতে পারেন।
৩. গুয়াহাটি
গুয়াহাটি আসামের বাণিজ্যিক রাজধানী এবং একটি প্রধান পর্যটন স্থান। কামাখ্যা মন্দির, উমানন্দ দ্বীপ, নেহরু পার্ক এবং পবিত্র উজানবাজার এই শহরের প্রধান আকর্ষণ। এছাড়াও, ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরে নৌবিহার করা একটি অপরূপ অভিজ্ঞতা।
৪. তেজপুর
তেজপুরকে আসামের ‘রোমান্টিক শহর’ বলা হয়। এখানকার পাহাড়, নদী ও সবুজ পরিবেশ আপনাকে মুগ্ধ করবে। তেজপুরের প্রধান আকর্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে অগ্নিগড় দুর্গ, মহাভৈরব মন্দির এবং কলিয়াভোমোরা সেতু।
৫. শিবসাগর
আসামের ইতিহাসের সাক্ষী শিবসাগর। এখানে রয়েছে অসংখ্য প্রাচীন মন্দির, রাজবাড়ি এবং জলাশয়। শিবসাগরের অন্যতম আকর্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে শিবদোল, তলাতল ঘর এবং জয়সাগর জলাশয়।
৬. মানস জাতীয় উদ্যান
মানস জাতীয় উদ্যান একটি বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ এবং ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট। এটি বন্যপ্রাণী, বিশেষত বাঘ এবং হাতির জন্য বিখ্যাত। এখানকার প্রাকৃতির সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবে এবং আপনি জঙ্গল সাফারির মাধ্যমে বন্যপ্রাণীর কাছাকাছি যেতে পারবেন।
৭. হাফলং
হাফলং আসামের একমাত্র হিল স্টেশন, যা পাহাড়প্রেমীদের জন্য আদর্শ স্থান। এখানকার মনোরম পরিবেশ, ঝরনা এবং হাফলং লেক ভ্রমণকারীদের জন্য একটি প্রধান আকর্ষণ। এই স্থানে আপনি ট্রেকিং, ফটোগ্রাফি এবং ক্যাম্পিংয়ের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন।
৮. ডিব্রুগড়
ডিব্রুগড় আসামের ‘টি সিটি’ নামে পরিচিত। চা বাগান, ব্রহ্মপুত্র নদী এবং ব্রিটিশ আমলের স্থাপত্য ডিব্রুগড়ের মূল আকর্ষণ। এখানে গেলে আপনি চা বাগানের সৌন্দর্য এবং চা প্রক্রিয়াকরণের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন।
যাতায়াতের পরামর্শ
আসামে যাওয়ার জন্য গুয়াহাটি সবচেয়ে বড় ট্রান্সপোর্ট হাব। গুয়াহাটিতে দেশের প্রায় সব প্রধান শহর থেকে ফ্লাইট এবং ট্রেন উপলব্ধ। এছাড়াও,আসামের বিভিন্ন শহরের মধ্যে সড়কপথে যোগাযোগ অত্যন্ত সুগম।
থাকার ব্যবস্থা
আসামে থাকার জন্য প্রচুর জায়গা আছে। পাঁচতারা হোটেল থেকে শুরু করে বাজেট হোটেল, হোমস্টে থেকে রিসর্ট- আপনার পছন্দ এবং বাজেট অনুযায়ী সব কিছুই এখানে উপলব্ধ।
স্থানীয় খাদ্য
আসামের স্থানীয় খাবারগুলির স্বাদ নেওয়া আপনার ভ্রমণকে আরও বিশেষ করে তুলবে। এখানে মাসর টেঙা, পিঠা, তেংমা, ডাক মিট এবং বিভিন্ন ধরণের চা অত্যন্ত জনপ্রিয়।
এই পুজোর ছুটিতে আসাম ভ্রমণ আপনার জীবনের একটি অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা হতে পারে। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি এবং স্থানীয় মানুষের আতিথেয়তা আপনাকে মুগ্ধ করবে। তাই, আর দেরি না করে এখনই টিকিট কেটে ফেলুন।