Spread the love

জীবনের কিছু স্বাদ হৃদয়ের মণিকোঠায় রয়ে যায় আজীবন। যেমন – ‘এক থালা পান্তা ভাত’। যা হয়তো আজ আর প্রতিদিনের খাবার নয়,কিন্তু একসময় এই পান্তা ভাতই ছিল ঘরের প্রাত্যহিক রাজা। কেউ খেয়েছে দিদা-ঠাকুমার হাতে, কেউ বা উৎসবে, কেউ আবার অভাবের দিনে। সময় বদলেছে, পান্তা খাওয়ার ধরনও বদলে গেছে। তবে আজ এই পান্তা গ্রাম থেকে শহরের অভিজাত ডাইনিং টেবিলেও জায়গা করে নিচ্ছে, কিন্তু তার গন্ধে এখনো যেন লেগে আছে সেই পুরোনো দিনের টান।

গ্রামবাংলার শিকড়ে পান্তা

একটা সময় ছিল যখন এই পান্তা ভাত গ্রামের সাধারণ মানুষের প্রধান খাদ্য ছিল, মাঠে যাওয়ার আগে কৃষকের সহজ শক্তির উৎস ছিল। পান্তা ভাতের শুরু, মূলত প্রয়োজনের তাগিদে। রাতে বেঁচে যাওয়া ভাত পরদিন ফের খাবারের রূপ নিত। কাঁচা লঙ্কা, পেঁয়াজ, কিংবা কোনও ভর্তা বা ভাজার সঙ্গে গ্রামের উঠোনে সকালের প্রথম আলোয় পান্তার সেই গন্ধ আজও যেন ভেসে আসে।

পান্তার আধুনিক রূপ

আজকাল পান্তা ভাতের রূপ বদলেছে। রেস্টুরেন্টে এখন পান্তা পাওয়া যায় ‘ফিউশন’ রূপে। কোথাও মাছের কাটলেটের সঙ্গে, কোথাও আবার চিলি-চিংড়ি দিয়ে। গ্রামাঞ্চলের সাধারণ খাবার আজ শহরের ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। এমনকি শহরের কিছু পছন্দের হোটেলে পান্তার মধ্যে মালাই ফল, মিষ্টির সংমিশ্রণেও নতুন রূপ দেওয়া হয়।

পান্তা ভাতের ঐতিহ্য এবং সমাজ

পান্তাভাত শুধু একটি সাধারণ খাবার নয়, এটি গ্রামবাংলার ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও সামাজিক সম্পর্কের প্রতীক। বিশেষ করে পুজো-পার্বণ বা বাঙালির কোনও উৎসবে এই এক থালা পান্তা ভাতের সঙ্গে সবাই একত্রিত হওয়া, একে অপরকে সম্মান জানানো –এই প্রথাগুলি আজও জীবন্ত। ছোট ছোট গ্রামাঞ্চলে এই দৃশ্য এখনো দেখা গেলে সেই পুরোনো সময়ের কথা মনে করিয়ে দেয়।

শহরের দোরগোড়ায়

আজকের দিনে শহরে বাস করা বাঙালিরাও পান্তা ভাতের এই ঐতিহ্যের ধারাটিকে ধরে রেখেছে। তবে সেটা অনেক বেশি আধুনিকতায়। শহুরে কালচারে নববর্ষের সকাল হোক কিংবা কোনো পুজোয় ঠান্ডা খাওয়া, পান্তা এখন যেন আলাদা ট্র্যাডিশনে পড়ে। অথবা খুব গরমে হাঁসফাঁস অবস্থায় পেট ঠান্ডা রাখতে পান্তার নাম বদলে হয়েছে ‘জল দেওয়া ভাত’। এক সময় যে খাবার ছিল ‘গরিবের ভাত’, আজ তা শহরের ডিনার টেবিলে ঠাঁই করে নিয়েছে।

আধুনিকতা আমাদের অনেক কিছু দিয়েছে, আবার কেড়ে নিয়েছে অনেক সহজ-সরল অনুভব। তবে পান্তা ভাত তার মধ্যেও সময়ের সেতু পার করে, গ্রামের উঠোন থেকে শহুরে কালচারে আজও আমাদের টেনে আনে এক সুতোয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Posts