‘আমলকি বন কাঁপে যেন তার বুক করে দুরুদুরু
এসেছে খবর পাতা খসানোর সময় হয়েছে শুরু’…
কবিতায় শরৎ এলেও আমাদের এখানে এখন বর্ষা। আষাঢ়ের আকাশ জুড়ে মাঝে মধ্যেই মেঘের আনাগোনা। বাজার জুড়ে মরশুমি ফল। আঁশফল, কালোজাম, পেয়ারা, পেঁপে বাতাবি লেবু, আমলকির মেলা। যদিও পেয়ারা আর পেঁপে এখন সারাবছর জুড়েই বাজার দখল করে বসে থাকে। পুষ্টিবিদেরা জানালেন, বর্ষার ফল পুষ্টিগুণে ভরা। তাই বেশি বেশি ফল খাওয়ার পরামর্শ তাঁদের। কিন্তু শুধু কি ফল খেয়েই পেট ভরাবেন? নাকি মেখেও দেখবেন? আমাদের ছোটবেলায় অনেককেই ত্রিফলার গুণাগুণ নিয়ে কথা বলতে। এই ত্রি ফলের অন্যতম হল আমলকি। বর্ষায় ফলের বাজারে আমলকির ঢল নেমেছে। আমলকির বনে পাতা খসার সময় আসার আগেই সংগ্রহ করে ফেলুন আমলকি।
তার আগে চলুন দেখে নিই আমলকির কী কী গুণ?
- আমলকিতে আছে সমস্ত ধরণের জরুরি মিনারেলস ও ভিটামিন, যা শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
- কাঁচা বা জুস বানিয়ে আমলকি খেতে পারেন। আবার আচার বা জ্যাম বানিয়েও খাওয়া যেতে পারে। ভিটামিন সি-তে সমৃদ্ধ আমলকি রোগ প্রতিরোধ শক্তি ও মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে।
- সর্দি-কাশি ছাড়া ভাইরাল বা ব্যাক্টিরিয়াল ইনফেকশানের হাত থেকেও আমলকি রক্ষা করে।
- আবার ক্যান্সার সেলের সংখ্যাও কমাতে পারে আমলকি।
- আয়ুর্বেদ অনুযায়ী আমলকির রস শরীরের সমস্ত প্রক্রিয়ায় ভারসাম্য রক্ষা করে এবং বাত, কফ ও পিত্ত এই ত্রিদোষ থেকে মুক্তি দেয়।
আমলকির উপকারীতা :
দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে আমলকি সাহায্য করে। মধুর সঙ্গে এক চামচ আমলকির পাউডার মিশিয়ে খেলে চোখের ছানির সমস্যা কাটিয়ে ওঠা যায়।
আমলকির রস পান করলে জ্বর কমানো যায়। এ ছাড়া, দাঁতে ব্যথা ও ক্যাভিটি হলে আমলকির রসে সামান্য কর্পূর মিশিয়ে মাড়িতে লাগালে স্বস্তি পেতে পারেন।
যে কোনও ভাবেই আমলকি খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে। এ ছাড়া হেঁচকি উঠলে বা বমি হলে আমলকির রসে মিছরি ভিজিয়ে দিনে দু-তিন বার খেলে স্বস্তি পেতে পারেন।
মুখের দাগ-ছোপ দূর করে সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য আমলকি খুব কার্যকরী। এর পেস্ট বানিয়ে মুখে লাগালে ত্বক পরিষ্কার ও উজ্জ্বল হয়। এমনকি বলিরেখাও কমে আসে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এর রস কাশি ও ফ্লু-র পাশাপাশি মুখের ঘা নিরাময়েও উপযোগী। দুচামচ আমলকির রসে দুচামচ মধু মিশিয়ে পান করলে সর্দি-কাশি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আবার মুখের ঘা সারিয়ে তোলার জন্য জলে দুচামচ আমলকির রস মিশিয়ে গার্গল করলে উপকার পেতে পারেন ।
নিয়মিত এর রস খেলে কোলেস্টেরল লেভেলও কমানো সম্ভব হয়। এর ফলে শরীর সুস্থ থাকে। এতে উপস্থিত অ্যামিনো অ্যাসিড ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের কারণে হার্ট ভালো থাকে।
শ্বাস-প্রশ্বাস সংক্রান্ত সমস্যা, যেমন অ্যাস্থমা নিরাময়ে আমলকি উপযোগী। এর পাশাপাশি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে ও হজম করতেও এর জুরি মেলা ভার।
ভিটামিন সি ছাড়াও আমলকিতে আয়রন, ক্যালশিয়াম ও ফসফরাস থাকে। ফলে শরীরে পুষ্টির জোগান অব্যাহত থাকে।
চুলের জন্যও দারুণ কাজ করে আমলকি। এতে উপস্থিত অ্যামিনো অ্যাসিড এবং প্রোটিন চুল লম্বা হতে সাহায্য করে, চুল পড়া রোধ করে ও গোড়া মজবুত রাখে।
নজরে রাখবেনঃ যাদের হাই ব্লাড প্রেশার এবং অ্যাসিডিটির সমস্যা রয়েছে তারা অবশ্যই আমলকি খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।
তাহলে আর দেরী কীসের? কালই বাজার থেকে এনে ফেলুন দুর্দান্ত উপকারি আয়ুর্বেদের ওষধি স্বরূপ এই ফল। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।