Spread the love

কলকাতা থেকে মাত্র কয়েক ঘন্টার বাইক রাইডে লুকিয়ে রয়েছে এক টুকরো শান্তি –বেলপাহাড়ি। রুক্ষ লাল মাটি, গভীর শাল-সেগুনের জঙ্গল আর খোলামেলা আকাশ –সব মিলিয়ে এক অন্যরকম সৌন্দর্য। গুড ফ্রাইডের ছুটিতে যারা ভিড়হীন শহরের কোলাহল থেকে দূরে নিঃশব্দ প্রকৃতির সন্ধান করছো, তাদের জন্য কিন্তু পারফেক্ট অপশন। কলকাতা থেকে বাইকে করে রোমাঞ্চ আর শীতলতার মিশেলে এক অনন্য যাত্রা অনুভব করতে চাইলে ব্যাগ প্যাকিং শুরু করে দাও বেলপাহাড়ির জন্য।

কীভাবে যাবেন?

কলকাতা থেকে বেলপাহাড়ি পৌঁছতে আপানাকে ২০৪ কিলোমিটার পথ যেতে হবে। বাইকে গেলে প্রথমে NH16 ধরে ডেবরা পৌঁছবেন। এবার বাঁ দিকের রাস্তা ধরলে আপনি পৌঁছবেন বম্বে রোড। এরপর NH49 ধরে আরও ২ঘন্টা গিয়ে মেইন রাস্তা ছেড়ে নীচের রাস্তা ধরুন। দ্বিতীয় আন্ডারপাস ধরে সোজা গেলেই ১ ঘন্টা ৩০ মিনিটে পৌঁছে যাবেন আপনার ডেস্টিনেশন বেলপাহাড়ি।

কোথায় থাকবেন?

বেলপাহাড়িতে পৌঁছলেই আপনি রোডের সামনে অনেক হোম-স্টে পেয়ে যাবেন, আপানার পছন্দ ও বাজেট অনুযায়ী বেছে নিতে পারেন।

  • বেলপাহাড়ি হলিডে হোম (6297591012)
  • দুর্গা হোম স্টে (8509976907)
  • লাল পিঁপড়ে হোম স্টে (7501644788)

কী কী দেখবেন?

বেলপাহাড়িতে ঘোরার প্রচুর জায়গা আছে, তবে কিছু কিছু বেস্ট লোকেশন আছে যা দেখাটা মাস্ট। বাইক নিয়ে একটু সকাল সকাল বেরিয়ে পড়ুন যাতে সবকটা জায়গা কভার করতে পারেন।

  • ঢাঙ্গীকুসুম জলপ্রপাতঃ

এটি স্থানীয়ভাবে ‘হুদহুদি’ নামেও পরিচিত। শাল-পিয়ালের ঘন জঙ্গলের মাঝে অবস্থিত এই জলপ্রপাতের শান্ত প্রবাহ ও প্রাকৃতিক পরিবেশ মনকে প্রশান্তি দেবে। প্রকৃতিপ্রেমী কিংবা ফটোগ্রাফারদের জন্য আদর্শ স্থান।

  • ঘাঘরা জলপ্রপাতঃ

কালো পাথরের গিরিখাতের মধ্য দিয়ে এই জলপ্রপাতের প্রবাহ অন্যরকম দৃশ্য। বর্ষাকালে এই জলপ্রপাতের সৌন্দর্য সবথেকে বেশি সুন্দর, যদিও শীতকালে জলপ্রবাহ কমে যায়। প্রকৃতির সঙ্গে শান্ত সময় কাটানোর জন্য আদর্শ।

  • কানাইসোর পাহাড়ঃ

ঘন জঙ্গলে ঘেরা এই পাহাড়টি ট্রেকিংপ্রেমীদের জন্য আদর্শ, যেখান থেকে আশেপাশের অপূর্ব দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন। প্রতি বছর জুলাই মাসে এখানে ‘পাহাড় পূজা’ উপলক্ষ্যে একটি মেলা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে স্থানীয় আদিবাসীরা পাহাড় দেবতার পূজা করেন।

  • খাঁন্দারানি লেকঃ

এক সুন্দর প্রাকৃতিক জলাশয় যা তিনটি পাহাড় আর জঙ্গলে ঘেরা। লেকের পাশে একটি ওয়াচ টাওয়ার আছে যেখান থেকে লেক, বন, পাহাড় আর সূর্যাস্ত দেখতে পারবেন। শীতকালে এখানে বহু পরিযায়ী পাখি আসে।

  • তারাফেনি ব্যারেজঃ

শালবনে ঘেরা এক শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ও পাখির কিচিরমিচিরে ভরপুর তারাফেনি নদীর ওপর নির্মিত একটি মনোরম জলাধার, যা ফটোগ্রাফির জন্য উপযুক্ত। ব্যারেজটি সারাবছর খোলা থাকে, প্রবেশের জন্য কোনো ফি লাগে না।

কী কী খাবেন?

  • বেলপাহাড়ি গেলে মাদ পাতোড়া, ল্যাটা ভাত এইসব আদিবাসী খাবার খুব জনপ্রিয়।
  • এছাড়া দেশি মুরগির ঝোল/ হাঁসের মাংস, ঝাল ঘুগনি আর শীতকালে বিভিন্ন রকমের পিঠে অবশ্যই ট্রাই করুন।

যাওয়ার সেরা সময়

বেলপাহাড়ি যাওয়ার বেস্ট টাইম হল শীত, বর্ষা, শরৎ, বসন্ত। 

কেনাকাটা

বেলপাহাড়িতে গেলে পাথরের তৈরি জিনিস, পূজা সামগ্রী, জুট ক্রাফট কিনতে পারেন। শীতে গেলে অবশ্যই ঝোলা গুড় আর পাটালী কিনবেন।

দিন দুয়েকের প্রকৃতি নির্ভর সফরের খোঁজে যারা থাকেন, তাদের জন্য এই জায়গা নিঃসন্দেহে এক পরিপূর্ণ ঠিকানা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Posts