Spread the love

পুজোর ছুটির কথা মাথায় এলেই মনে হয় ব্যস্ত জীবন থেকে একটু বিরতি নিয়ে দূরে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার কথা। আর আপনি যদি পাহাড়প্রেমী হোন, তাহলে নেপাল হতে পারে একটি চমৎকার বিকল্প। হিমালয়ের কোলে অবস্থিত এই দেশটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক স্থাপত্য এবং সমৃদ্ধ সংস্কৃতির মেলবন্ধন। তাই পুজোর ছুটিতে নেপাল ভ্রমণের জন্য একটি গাইড দিয়ে রাখলাম।

১. কাঠমাণ্ডু: ঐতিহ্যের শহর

নেপালের রাজধানী কাঠমাণ্ডুতে আপনার ভ্রমণ শুরু করা উচিত। এই শহরটি তার প্রাচীন মন্দির, স্তূপ এবং ঐতিহাসিক স্থাপত্যের জন্য বিখ্যাত। কাঠমাণ্ডুর প্রধান আকর্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে-

  • পশুপতিনাথ মন্দির: হিন্দুদের অন্যতম পবিত্র তীর্থস্থান।
  • বৌদ্ধনাথ স্তূপ: বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম স্তূপ এবং বৌদ্ধ ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র।
  • স্বয়ম্ভুনাথ (মাঙ্কি টেম্পল): কাঠমাণ্ডুর উপরে অবস্থিত এই মন্দিরটি থেকে শহরের অসাধারণ সৌন্দর্য দেখা যায়।

২. পোখারা: প্রকৃতির আশ্রয়

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর পোখরা শহরকে ‘নেপালের ভূস্বর্গ’ ও ‘নেপাল রানী’ বলা হয়। পোখারা, কাঠমাণ্ডু থেকে মাত্র কয়েক ঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত, নেপালের অন্যতম সুন্দর স্থান। এটি হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত এবং ফেওয়া লেকের তীরে অবস্থিত। এখানে আপনি-

  • অন্নপূর্ণা এবং মাছের লেজের মতো দেখতে শৃঙ্গের দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন।
  • ফেওয়া লেকে বোটিং করতে পারেন এবং শান্ত পরিবেশে সময় কাটাতে পারেন।
  • প্যারাগ্লাইডিং এবং ট্রেকিংয়ের মতো অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস উপভোগ করতে পারেন।

৩. নাগরকোট: হিমালয়ের সৌন্দর্য উপভোগের স্থান

নাগরকোট, কাঠমান্ডু উপত্যকার প্রান্তে মধ্য নেপালের একটি গ্রাম, যেটি কাঠমাণ্ডু থেকে মাত্র ৩২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটি হিমালয়ের অপূর্ব দৃশ্যের জন্য বিখ্যাত। নাগরকোট থেকে আপনি:

  • মাউন্ট এভারেস্টসহ অন্যান্য শৃঙ্গের দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন।
  • সকালে সূর্যোদয়ের অসাধারণ দৃশ্য দেখতে পারেন।
  • প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে হাইকিং করতে পারেন।

৪. চিতওয়ান ন্যাশনাল পার্ক: বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য

যদি আপনি প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণী ভালোবাসেন, তাহলে চিতওয়ান ন্যাশনাল পার্ক আপনার জন্য আদর্শ স্থান। এখানে আপনি:

  • বাঘ, গণ্ডার, হাতি এবং বিভিন্ন প্রজাতির পাখি দেখতে পাবেন।
  • জঙ্গল সাফারি করতে পারেন এবং প্রকৃতির মাঝে কিছুক্ষণ সময় কাটাতে পারেন।

৫. লুম্বিনি: আধ্যাত্মিকতার স্থান

লুম্বিনি হল গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান, এবং এটি বৌদ্ধ ধর্মের অন্যতম পবিত্র স্থান। এখানে আপনি:

  • মায়াদেবী মন্দির দর্শন করতে পারেন, যেখানে গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান হিসেবে চিহ্নিত।
  • পুষ্করিণী পুকুর এবং বিভিন্ন দেশের নির্মিত মঠ ও মন্দিরগুলো দেখতে পারেন।

৬. পাটান: সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মেলা

কাঠমাণ্ডুর কাছেই অবস্থিত পাটান শহরটি তার প্রাচীন মন্দির এবং সংস্কৃতির জন্য বিখ্যাত। এখানে আপনি:

  • পাটান দরবার স্কয়ারের প্রাচীন মন্দির এবং স্থাপত্য দেখতে পারেন।
  • হিরণ্যবর্ণ মহাবিহার এবং অন্যান্য ঐতিহাসিক স্থানগুলো পরিদর্শন করতে পারেন।

৭. ধুলিখেল: শান্তির এক স্বর্গ

ধুলিখেল হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত একটি ছোট্ট শহর, যা তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং হিমালয়ের দৃশ্যের জন্য বিখ্যাত। এখানে আপনি:

  • হিমালয়ের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন।
  • হাইকিং ও ট্রেকিংয়ের মাধ্যমে প্রকৃতির মাঝে সময় কাটাতে পারেন।

কীভাবে এবং কখন যাবেন?

কোনও ভিসা লাগবে না। ভোটার কার্ড থাকলেই হবে। ভারতের বিভিন্ন স্থান থেকে কাঠমাণ্ডুতে সরাসরি ফ্লাইট পাওয়া যায়। এছাড়া সড়কপথেও নেপাল যাওয়া সম্ভব। নেপালে ভ্রমণের জন্য সেরা সময় হল সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর, যখন আবহাওয়া পরিষ্কার এবং আরামদায়ক থাকে।

কী কী খাবেন?

নেপালে ‘থাকালী থালি’ ভীষণ জনপ্রিয়। এটি সাজানো হয় ভাত, রুটি, পাঁপড় ও ঘি-ডাল, মুলা ভাজি, সরিষা শাক ভাজি, মুরগির ঝোল, ঝাল আচার, পনির, পেঁয়াজ, শসা ও গাজর দিয়ে। আদিবাসী সম্প্রদায় নেওয়ারিরা এই খাবার খায়। নেপালে খাওয়া হয় টক টক স্বাদের ‘গুন্দ্রুক’। টক জাতীয় কিছু পাতা দিয়ে খাবারটি তৈরি হয়। এছাড়া বার্লি, জোয়ার, রাই ইত্যাদি প্রায়ই নুডলস বা সম্পা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। ঘি আর লিকারে ঘি এবং লবণ মিশিয়ে ঘি চা তৈরি করা হয়। ভ্রমনের ফাঁকে সম্পা ময়দা দিয়ে তৈরি খাবার এবং এই চা খাওয়া যেতেই পারে।

থাকার জায়গা

থাকার জন্য কমখরচে প্রচুর হোটেল পেয়ে যাবেন। কয়েকটি দেওয়া হল-

  • হোটেল জাঙ্গেল ক্রাউন (কমপ্লিমেন্টরী ব্রেকফাস্ট) ঠিকানা: টাইগার পয়েন্ট, বাঘমারা সৌরাহা চিতওয়ান ন্যাশানাল পার্ক।
  • ডালিয়া বুটিক হোটেল (কমপ্লিমেন্টরী ব্রেকফাস্ট) ঠিকানা: লেকসাইড রোড, পোখারা।
  • ওয়েসিস কাঠমান্ডু হোটেল (কমপ্লিমেন্টরী ব্রেকফাস্ট) ঠিকানা: কেএমসি, ত্রিদেবী সদক ২৯, কাঠমান্ডু।

এই পুজোর ছুটিতে নেপাল ভ্রমণ করে আপনার স্মৃতির ঝুলিতে যোগ করুন এক নতুন অধ্যায়।

About Author
Adwitiya Magazine
View All Articles
Check latest article from this author !
ফুলকপি ঘি রোস্ট
ফুলকপির যত গুণ
জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায়

Related Posts