Spread the love

ভ্রমণপিপাসু বাঙালি শুধু সময় আর সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। আর তা পেয়ে গেলেই ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে পড়ে জঙ্গল, পাহাড়, সমুদ্র বা অন্য কোনও অফবিট স্থানের উদ্দেশে। আজ এমনই একটা জায়গায় সন্ধান দেবো, যা মাত্র দুই দিনের ছুটিতেও যেতে পারবেন।

ছত্তিশগড়ের মাইনপাট (Mainpat)। একটি অনন্য এবং শান্তিপূর্ণ পর্যটন স্থান, যা ছত্তিশগড়ের ‘মিনি তিব্বত’ নামে পরিচিত। ১৯৬২-৬৩ সালে তিব্বতে চীনা আগ্রাসনের পর, ভারত সরকার তিব্বত শরণার্থীদের জন্য এই মাইনপাটে জমি বরাদ্দ করে। এর বিশাল তিব্বতি জনসংখ্যা এবং এই এলাকায় তিব্বতি সংস্কৃতির প্রভাবের জন্যই একে ‘মিনি তিব্বত’ নাম দেওয়া হয়েছে। এটি সূরজপুর জেলায় অবস্থিত এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পাহাড়, জলপ্রপাত এবং সংস্কৃতির মিশ্রণ নিয়ে সমৃদ্ধ।

যাওয়ার পথে পাবেন ‘রাজপুরী ওয়াটরফলস্‌’। একদম রাস্তার পাশেই এটা। রাস্তা থেকে সুন্দর একটা ভিউ পাওয়া যায়। তবে চাইলে সিঁড়ি দিয়ে উপরেও যেতে পারবেন। উপর থেকে ওয়াটারফলসের পুরো ভিউটা দেখতে পাবেন।

সেই পথেই আছে ‘টাইগার পয়েন্ট’। স্থানীয় মানুষরা বলেন, অনেককাল আগে এখানে বাঘে জল খেতে আসত। তাই এমন নাম। এখানের ওয়াটারফলসটির একটা নৈসর্গিক ভিউ রয়েছে। তাই যাওয়ার পথে আপনাকে একবার থামতেই হবে টাইগার পয়েন্টে। মহাদেব মুদা নদী থকে উৎপন্ন হয়েছে এই ওয়াটারফলস্‌।  

মাইনপাটে দেখার মতো কিছু আকর্ষণীয় স্থান

1. টিবেটান সেন্টার এবং মঠ: মাইনপাটে তিব্বতি অধিবাসীদের একটি বড় সম্প্রদায় রয়েছে। এখানে বেশ কয়েকটি মঠ এবং তিব্বতি শৈলীর স্থাপত্য দেখতে পারবেন।

2. উল্টাপানি: এটি একটি অদ্ভুত জায়গা, যেখানে জল স্রোতের বিপরীতে প্রবাহিত হয়। তাই এর নাম উল্টাপানি। এই স্থানটি ভৌগলিকভাবে আকর্ষণীয়। চারিদিকে পাহাড়। এখানে গিয়ে আপনি এবং আপনার বাচ্চারা এক প্রাকৃতিক বিস্ময় অনুভব করতে পারবেন।

3. জলজলী পয়েন্ট: ছবি দেখে মনে হতেই পারে যে, এই জায়গায় বিশেষ কী আছে! কিন্তু সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলেই চোখে পড়বে সুবিস্তৃত মাঠ। কিন্তু আসলে এটা একটা বাউন্সিং ল্যান্ড, যা সত্যিই বিস্ময়। এই জমির উপর লাফালে আপনার মনে হবে স্পঞ্জের উপর লাফাচ্ছেন।

4. তীর্থগড় ওয়াটারফলস্‌: মাইনপাটের কাছেই অবস্থিত এই জলপ্রপাতটি প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করার একটি আদর্শ স্থান।

5. ফিশ পয়েন্ট: এখানে ছোট ছোট জলাশয় রয়েছে যেখানে মাছ চাষ হয় এবং দর্শনার্থীরা মাছ ধরার অভিজ্ঞতাও নিতে পারেন। এছাড়া এখানে রয়েছে খুব সুন্দর ৩ টে ঝরনা।

আবহাওয়া:

মাইনপাটের আবহাওয়া সারা বছরই বেশ মনোরম। শীতকালে এটি বিশেষভাবে ঠান্ডা থাকে, তাই শীতের পোশাক নিয়ে যাওয়া জরুরি।

কিভাবে পৌঁছাবেন

রেলপথে: হাওড়া থেকে সমলেশ্বরী এক্সপ্রেসে (১৮০০৫) গেলে নামতে হবে ঝাড়সুগুদা স্টেশনে নামবেন। এছাড়া হামসাফার এক্সপ্রেস (২০৮২৮), আজাদ হিন্দ এক্সপ্রেস (১২১৩০), জননেশ্বরী এক্সপ্রেস (১২১০২) করেও ঝাড়সুগুদা স্টেশনে পৌঁছাতে পারবেন।  

রাস্তায়: ছত্তিশগড়ের প্রধান শহরগুলো থেকে মাইনপাট রোড ট্রিপের মাধ্যমে পৌঁছানো যায়। পথটি সুন্দর, এবং আপনি পথে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান দেখতে পাবেন।

থাকার ব্যবস্থা

মাইনপাটে কিছু ছোট রিসোর্ট এবং অতিথিশালা রয়েছে, যেখানে থাকার জন্য আগাম বুকিং করা ভালো। যেমন- ডলমা টিবেটান রিসোর্ট (০৭৯৮৭৩০৩০৭৭), কার্মা এথনিক রিসোর্ট, সাইলা টুরিস্ট রিসোর্ট ইত্যাদি।

মাইনপাট প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য একটি আদর্শ স্থান, যেখানে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ছুটির দিনগুলি কাটানো যায়।

Related Posts