Spread the love

বাড়ি ফেরার সঙ্গে সঙ্গে ছুটে এসে অভ্যর্থনা, ওই যে নিঃস্বার্থ ভালবাসা, ওটা যে কত বড় পাওয়া, সেটা তারাই বুঝতে পারবে যাদের বাড়িতে পোষ্য আছে। কেউ কুকুর পোষে, কেউ বিড়াল, কেউ বা খরগোশ। কিন্তু বেবুন পোষার গল্প শুনেছেন কি?

ন্যানোর এন্ট্রিটা কিন্তু ভারি অদ্ভুত। ইতিমধ্যেই জুলির পরিবারে অনেকদিন ধরেই আছে কুকুর কুট্টুস। সেই সূত্রে অনেক পেট সেলারদের সঙ্গে যোগাযোগ। এরকমই একজন বিক্রেতার কাছে বহুদিন ধরেই আবদার ছিল একটা বিদেশি বাঁদরের কোনও ব্রিড এনে দেওয়ার। শেষপর্যন্ত সেই ভদ্রলোক বাড়িতে দিয়ে গেলেন একটি ছোট্ট একরত্তি বেবুনছানা। জুলি প্রথমটায় ডিসিশন নিতে পারছিলেন না ওকে রাখবেন কিনা। কিন্তু জুলির সিদ্ধান্ত নেওয়া না-নেওয়ায় কী আসে যায়? সিদ্ধান্ত একজন নিয়েই বসেছিল, যে জুলিকে দেখামাত্রই কোলে চড়ে, জড়িয়ে ধরে বসে আছে। বাচ্চা বেবুন ‘ন্যানো’। সে নাছোড়বান্দা। জুলির আদরের আশ্রয় তার চাই-ই চাই। অগত্যা দ্বিতীয় কোনও চিন্তা করার সুযোগ ছিল না, ন্যানো রইল জুলির কাছেই।

এর পরই তো শুরু হল আসল খেলা। এক-দু’দিনের মধ্যেই ন্যানো শিখে ফেলল কীভাবে জানলার পর্দা সরিয়ে বাইরে উঁকি দিতে হয়। শিখে ফেলল জুলিদিদি কিছু বললে মাথা নেড়ে হ্যাঁ বা না-বাচক উত্তর কীভাবে দিতে হয় ৷ কোনও কথা বুঝতে গেলে, আই কনট্যাক্ট করে কীভাবে শুনতে হয় কিংবা রেসপন্ড করতে হয়, এটা অবশ্য সে প্রথম থেকেই জানত। তার ফলেই সে দ্রুত শিখে ফেলতে লাগল যাবতীয় মানুষী কার্যকলাপ । এখন সে জানে টুথব্রাশের কাজ কী, টিভি দেখার আকর্ষণ কতটা এবং এও জানে যে জামাকাপড় আসলে পরিধান করার জিনিস।

প্রথম প্রথম এখানে আসার পর লোকজন দেখলে বেজায় ভয় পেত। এমনকি জুলির মাকেও কাছে ঘেঁষতে অ্যালাও করত না। যদিও ভয়ের নয়, বহিঃপ্রকাশটা ছিল ঠিক উলটো। দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে, কামড়াতে চেষ্টা করে, হুলুস্থুল কাণ্ড বাঁধাত একেবারে। এখন অবশ্য জুলির ট্রেনিং- এ অনেকটাই স্বাভাবিক। অচেনা কেউ বাড়িতে এলে প্রথমে একটু বিরক্তি প্রকাশ করলেও অচিরেই ভাব জমায় তাদের সঙ্গে। নিজে থেকেই তাদের কাছে গিয়ে আপ্যায়ন জানায়। তবে একটু করে বড় হচ্ছে আর বাড়ছে তার বেবুনগিরি। সারাক্ষণ চলছে তিড়িং বিড়িং। এই আলমারির মাথায় দোল খাচ্ছে তো পরক্ষণেই কুট্টুসের পিঠে চড়ে ঘরময় ঘুরঘুর।

জুলিদিদির ব্যাগ দেখতে পেলে তো কথাই নেই। তক্ষুনি চেন টেনে খুলে দেখতে হবে ভেতরে কী আছে? এমনকি ব্যাগ থেকে দিদি কিছু বের করলেই মেমসাহেবকে আগে দেখাতে হবে। সব কিছু দেখার এক প্রবল অনুসন্ধিৎসা তার। কৌতূহল বাড়িতে আসা অতিথিদের প্রতিও। বাড়িতে কে এল, কে গেল সব তার দেখা চায়, জানা চায়। তবে অন্য কারও পোষ্য দেখলে বাবুসাহেবের মাথা গরম। বিশেষত জুলিদিদি যদি একটু আদর করে তাদের তাহলে তো সাংঘাতিক কাণ্ড। দাঁত খিঁচিয়ে তাদের ভয় দেখিয়ে, দিদির হাত ধরে টেনে প্রচণ্ড বিদ্রোহ প্রকাশ করবে তখন। এমনই সে পজেসিভ। দিদি যখন ব্রাশ করতে ওয়াশরুমে ঢোকে তখন ন্যানোর কাণ্ডকীর্তি দেখার মতো। ওর জন্য যে বেবি ব্রাশ কেনা আছে সেটা সে নিয়ে আসবে নিজেই। টুথপেস্ট লাগিয়ে দিলে হুবহু দিদির অনুকরণে মুখে পুড়বে পেস্ট সহ ব্রাশ। তবে প্রপারলি ব্রাশ করতে না পেরে পেস্টই খেয়ে নেবে খানিক। আবার জুলি যখন পোশাক পরেন তখনও চলে নকলনবিশি।

একটা কাপড় নিয়ে মাথায় গলাবার প্রাণান্ত চেষ্টা চালাতে থাকে ন্যানো। আর বাইরে বেরনোর জন্য সাজুগুজু করতে দেখলেই বুঝে যায় দিদি এবার তাকে ফেলে চলে যাবে বাইরে। তখন লাফিয়ে-ঝাঁপিয়ে বিরক্ত করে মারবে। ফিরে এলে অবশ্য শুরু হবে আনন্দের লাফ আর ডিগবাজি, অ্যাটলিস্ট এক ঘণ্টা ধরে। ফেরার সময় আনতেই হবে কোনও ফলের টুকরো। না পেলেই অভিমান। রাগের চোটে কামড়াতে আসবে। এছাড়াও সারাদিনই চলে নানা দৌরাত্ম্যি। লম্ফ-ঝম্ফ-হৃৎকম্প! একদম বাচ্চা মেয়ের মতোই জোর করে শুইয়ে, থাবড়ে থাবড়ে ঘুম পাড়াতে হয়। ভোর তিনটে কী চারটের সময় উঠে পড়বেন বাবু। তখন আবার জোর করে ঘুম পাড়ানো। রাতে জুলি কখনও টিভি দেখলে ন্যানোরও হাঁ করে দেখা চায় সেই চলমান দৃশ্য। টিভি বন্ধ থাকলে আবার সেই অনুসন্ধিৎসা।

টিভির ওপর চড়ে বসে খুঁটিয়ে দেখে বোঝার চেষ্টা করে কীভাবে চলে এই ইলেকট্রনিক ইনস্ট্রুমেন্টটি। গিভ অ্যান্ড টেক-এর বিনিময় প্রথাটি রপ্ত করেছে নিজস্ব স্টাইলে। নিজস্ব ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থাও রেডি করেছে এর জন্য। চুলের ক্লিপ, গার্ডার, বিস্কুট, রুটি যখন যা পাবে জড়ো করে রাখবে খাটের কোণে। এ তার ব্যক্তিগত সঞ্চয়। দিদি যখন কিছু খাবে তখন যদি সেটা তারও খেতে ইচ্ছে করে তাহলে হ্যাংলামো করবে না, মোটেই। নিজের ব্যাঙ্ক থেকে তখন বেরোবে ছেঁড়া রুটি বা আধখানা বিস্কুট। ধুলো লেগে থাকলে আবার সেটা মোছা হবে। তারপর স্ট্রেট এসে দিদির হাতে। ভাবখানা এই, আমার থেকে তোমাকে দিয়েছি, এবার তোমার থেকে আমাকে দাও !

তবে যতই দেওয়া-নেওয়ার হিসেব কষুক, আসলে কিন্তু বাচ্চাই । খেলতে ভালবাসে। টুকি-টুকি খেলা খুব ভাল শিখেছে। একটা কাপড়ের টুকরোয় মুখ লুকোবে। ‘টু-উ-উ-কি’ বললেই মাথাটা বের করবে, আবার মাথা ঢুকিয়ে লুকোবে। লুকোনোর কারণ অবশ্য আর একটা সময়ও ঘটে। বাড়াবাড়ি দুষ্টুমি করলে যদি একটু জোরে বকা হয় তাহলে এক ছুটে গিয়ে কোনও কোণায় লুকোবে। তারপর একটু পরেই বেরিয়ে এসে হাত-পা নেড়ে বোঝাবে যে সে খুবই দুঃখিত এবং এরকম কাজ আর কক্ষনো করবে না সে। এরপর মুহুর্তেই দিদির কোলে চড়ে মুখ লুকোবে। ন্যানো আসলে খুব বুদ্ধিমান। কেউ কোনও কথা বললে মাথা নাড়িয়ে নাড়িয়ে, চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সবটা শোনে। কী যে বোঝে, কে জানে ?

Related Posts