Spread the love

পয়লা বৈশাখ নিয়ে আমাদের দেশে যেমন উন্মাদনা, তেমনই বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান ও প্রাণের উৎসব হল বাংলা নববর্ষ। এটি জাতীয়ভাবে ছুটির দিন এবং পুরো বাংলাদেশে প্রচুর উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে এই দিনটা উদযাপন করা হয়। এই দিনে ধর্ম, বর্ণ, জাতি নির্বিশেষে সবাই একত্রিত হয় এবং আনন্দে মেতে ওঠে।

নতুন বছরের আগমনকে স্বাগত জানানো হয় রাজধানী ঢাকার রমনা বটমূলে ছায়ানটের মঙ্গলগান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘এসো হে বৈশাখ’ গানের মাধ্যমে। হাজার হাজার মানুষ ভোরবেলায় সাদা-লাল পোশাকে, কপালে টিপ পরে, নানা রঙিন মুখোশ, গ্রামীণ মোটিফ ও বিশাল আকৃতির পশু-পাখির প্রতিকৃতি নিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করে। ১৯৯০ সাল থেকে এই শোভাযাত্রা ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নামেই পরিচিত এবং ২০১৬ সালে এটি ইউনেস্কো কর্তৃক “Intangible Cultural Heritage” হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।  যা বাংলাদেশের জন্য একটি গর্বের বিষয়।

এরপর রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমি, চারুকলা ইন্সটিটিউট এবং ধানমন্ডি, শাহবাগসহ বিভিন্ন এলাকায় অনুষ্ঠিত হয় নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মেলা। ঢাকাসহ প্রতিটি শহর, এমনকি গ্রামের হাট-বাজারেও বৈশাখী মেলা বসে। মেলায় থাকে গ্রামীণ শিল্প, হস্তশিল্প, পাটের তৈরি সামগ্রী, নকশীকাঁথা, মাটির পুতুল, বাঁশের তৈরি খেলনা, হাতে আঁকা শাড়ি ও ফতুয়া, আর নানা রকম দেশীয় খাবার। শিশুদের জন্য থাকে নাগরদোলা, বায়োস্কোপ, পুতুলনাচের আয়োজন।

খাবারের দিক থেকে বলতে গেলে, বাংলাদেশে বৈশাখী ট্র্যাডিশন হলো ইলিশ মাছ ও পান্তা ভাত। এই দিনটিতে প্রায় প্রতিটি বাড়িতে ও রেস্তোরাঁয় থাকে বৈশাখী স্পেশাল এই মেনু। এছাড়াও নানা ধরনের পিঠে, মিষ্টি, আচার ও দেশীয় খাবার।

তবে এই বছর থেকে পাল্টে গেল অনেক কিছুই। মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম চলতি বছরে বদল করে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ করা হয়েছে। এ বারের শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য বিষয় ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’। আয়োজকেরা জানান, শোভাযাত্রায় তুলে ধরা হয়েছে আবহমান বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। সেই সঙ্গে গত বছর জুলাই-অগাস্টের অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে ‘ফ্যাসিবাদকে’ বিদায় জানানো হয়েছে, সেই ফ্যাসিবাদের উত্থান যেন এই দেশে আর না হয়, সেই বার্তাও দেওয়া হয়েছে। শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী যেমন- চাকমা, মারমা, সাঁওতাল ও গারো। অংশ নিয়েছে বাংলাদেশের জাতীয় নারী ফুটবল দলও।

আবার এই বছরে বাংলাদেশে নববর্ষের দিন পান্তা ও ইলিশ খাওয়ার রীতিতেও এসেছে নিষেধাজ্ঞা। সম্প্রতি সেখানের মৎস্য উপদেষ্টা জানিয়েছেন ইলিশ মাছ খাওয়া সেই দেশের সংস্কৃতি নয়। বিশেষ করে এপ্রিল মাসে। এপ্রিল মাসের ১৪ তারিখে পান্তার সঙ্গে যে ইলিশ খাওয়া হয়, এগুলো ইলিশ নয়, এগুলো জাটকা অর্থাৎ ১০ ইঞ্চি বা ২৫ সেন্টিমিটারের ছোট আকারের ইলিশ। যদি জাটকা সংরক্ষণ করা যায়, তাহলে ইলিশের উৎপাদন অনেক গুণে বাড়বে। উৎপাদন বাড়লে বাজারেও এর প্রভাব পড়বে, সরবরাহ বাড়বে, দামও নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

সব মিলিয়ে বলা যায়, পয়লা বৈশাখ শুধু উৎসব নয়, এটি একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রতীক। যেখানে বাঙালি জাতি পুরোনো বছরকে বিদায় জানিয়ে বরণ করে নেয় নতুন বছরকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Posts