সম্প্রতি আমরা সকলেই যে ট্রমার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি, তাতে তরুণদের অংশগ্রহণ বোধহয় সবচেয়ে বেশি। ফলে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যঝুঁকিও তাদের বেশি। দীর্ঘ সময় এই মানসিক অস্থিরতা সঙ্গে নিয়ে চললে শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। কিন্তু তাদের ধীরে ধীরে মানসিক আঘাত সামলে নিয়ে স্বাভাবিক জীবন ও কাজকর্মে ফেরার প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের দিক থেকে যেমন সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতা দরকার, তেমনি অভিভাবক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ।
করণীয় কী?
রাজনৈতিক ট্রমা ও এর প্রভাব সম্পর্কে সচেতন থাকা: কোনো সামাজিক রাজনৈতিক ঘটনা ও সহিংসতায় প্রভাবিত হয়ে আমাদের ভেতরে যে আতঙ্ক, অসহায়ত্ব, মানসিক উত্তেজনা, স্তব্ধতা ও অনিশ্চয়তার জন্ম হয়, সেও একধরণের ট্রমার জন্ম দেয়। এ ধরনের ঘটনায় আমাদের স্বাভাবিক জীবন ও কাজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। সেই সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহিংসতার মুখোমুখি হওয়ায় সংকট–পরবর্তী মানসিক চাপের বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়, যেমন ভয়, রাগ, অনুতাপ, দুশ্চিন্তা, অস্থিরতা, বিষন্নতা, অসহায়ত্ব, ঘুমের সমস্যা, অনিরাপদ বোধ করা, মাথাব্যথা, ক্লান্তি, ক্ষুধামান্দ্য, কাজে মনোযোগ দিতে না পারা, আক্রমণাত্মক আচরণ করা, প্রতিশোধপ্রবণ হওয়া, ভিন্নমতের মানুষকে সহ্য করতে না পারা ইত্যাদি। এসব উপসর্গ সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং তা মোকাবিলায় সচেষ্ট থাকা তরুণদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে সহযোগিতা করবে।
স্ক্রিন টাইম কমানো:
সংকট ছাড়া অন্যান্য সময়েও অতিরিক্ত ‘স্ক্রিন টাইম’ আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে ঝুঁকির মুখে ফেলে। আর সংকটকালে টেলিভিশন বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাওয়া সহিংসতার খবর ও ঘটনা সম্পর্কে অনবরত তথ্য আমাদের মস্তিষ্ককে স্থির হতে দেয় না। তাই দৈনন্দিন কাজে ফিরতে হলে সবার আগে প্রয়োজন স্ক্রিন টাইম কমানো—ইন্টারনেট থেকে বেরিয়ে নিজের জীবন, কাজ ও সম্পর্কগুলোর যত্ন নেওয়া।
কাজগুলোকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করা ও অগ্রগতি খেয়াল করা:
সংকট কাটিয়ে কাজে ফেরার জন্য একটি বাস্তবসম্মত রুটিন করা যেতে পারে; অর্থাৎ যে রুটিন অনুসরণ করা আমার সাধ্যের মধ্যে। শুরুতেই নিজেকে কাজের চাপ দিলে, জমে থাকা পড়ালেখা বা কাজগুলোকে একসঙ্গে করতে চাইলে তা সম্ভব হয়ে ওঠে না, বরং হতাশার সৃষ্টি হয়। তাই কাজগুলোকে ছোট অংশে ভাগ করে নেওয়া যেতে পারে এবং একটা একটা করে সম্পন্ন করা যেতে পারে।
পর্যাপ্ত ঘুম:
পর্যাপ্ত ঘুম আমাদের মনকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে, কর্মদীপ্ত রাখে। ভালো ঘুমের জন্য ঘুমের নির্দিষ্ট সময় ঠিক করুন। প্রতিদিন একই সময়ে ঘুম থেকে ওঠা এবং একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করুন। দিনের বেলা ঝকঝকে আলোয় থাকা; কিন্তু রাতে ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত এক ঘণ্টা আগে ঘরের আলো কমিয়ে দেওয়া এবং মুঠোফোন, কম্পিউটার ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার বন্ধ করা—এটিও একটি স্বাস্থ্যকর চর্চা।
সুষম খাদ্যাভ্যাস:
খাদ্যাভ্যাস আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর সরাসরি প্রভাব বিস্তার করে। প্রতি বেলার খাবারে অন্তত ৫০ শতাংশ শাকসবজি-ফলমূল রাখা উচিত। বাকি ৫০ শতাংশের মধ্যে ২৫ শতাংশ আমিষ (মাছ, মাংস, ডাল, ডিম ইত্যাদি) ও ২৫ শতাংশ শর্করা (ভাত, রুটি, পাস্তা ও বিভিন্ন শস্য) জাতীয় খাবার রাখা দরকার। সঙ্গে কিছুটা দুধ জাতীয় খাবারও রাখা যেতে পারে, তবে তা আবশ্যক নয়।