মোবাইল ফোন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে উঠেছে। যোগাযোগ সহজ করার পাশাপাশি গোটা পৃথিবীটাকেই যেন হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে বিজ্ঞানের এই বিস্ময়। তবে অতিমাত্রায় মোবাইল ফোনের ব্যবহার ক্ষতির কারণও বটে। বিশেষজ্ঞরা তাই প্রয়োজনের অতিরিক্ত মোবাইল ফোনের ব্যবহার করতে বারণ করছেন।
বিশেষ করে মোবাইল ফোনের ব্যবহার যাদের জন্য আসক্তির পর্যায়ে পৌঁছে গেছে, তাদের সতর্ক হওয়া বেশি প্রয়োজন।
মোবাইল ফোনে আসক্তি সংক্রান্ত নতুন এক উদ্বেগের কথা সামনে নিয়ে এসেছেন গবেষকরা। সেটি হলো ‘নোমোফোবিয়া’। অর্থাৎ হাতের কাছে স্মার্টফোন না থাকার ভয়।
এ বিষয়ে গবেষণা করেছেন মনোবিজ্ঞানী ইভন গ্যোরলিশ। তার মতে, মোবাইল ফোন সঙ্গে নিতে ভুলে গেলে বা ব্যাটারির চার্জ ফুরিয়ে গেলে অনেকের মধ্যে নার্ভাসনেস, যোগাযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার ভয়, আতঙ্ক কাজ করে। এগুলোই নোমোফোবিয়ার লক্ষণ। এসব ভয় কোনো এক সময়ে শরীরের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে বলে জানান তিনি।
গবেষণার জন্য তিনি ৮০০ লোকের ওপর গবেষণা চালিয়েছেন। সেখানে দেখা গেছে, অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক নোমোফোবিয়াতে কমবেশি ভুগছেন। তাদের মধ্যে প্রায় ৪ শতাংশ গুরুতরভাবে আক্রান্ত। আশঙ্কার কথা হলো, এই সমস্যা থেকে ডিপ্রেশনও হতে পারে। গ্যোরলিশ বলেন, ‘বর্তমানে আসলে কেউই নোমোফোবিয়া হলে ডাক্তার, সাইকোথেরাপিস্ট বা মনোবিজ্ঞানীর কাছে যায় না।
ডিপ্রেশন বা উদ্বেগের ব্যাধিকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়৷ অথচ এক্ষেত্রে রোগ নির্ণয়ের প্রক্রিয়া অর্থবহ হতে পারে। প্রশ্ন করা যেতে পারে, আপনি কত ঘনঘন মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন? সেটি ভুলে গেলে দুশ্চিন্তা হয় কি? এমন সব প্রশ্ন করা যায়। হয়তো এটাই একটা উৎস।’
তিনি আরও বলেন, ‘অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা বেশির ভাগ মানুষের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সেটা না হলে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ভয় জাগে, যার থেকে খারাপ আর কিছুই হতে পারে না। নোমোফোবিয়ার ক্ষেত্রে সোশাল মিডিয়ায় কিছু মিস করার ভয়ও কাজ করে। বিশেষ করে তরুণীদের মধ্যে মোবাইল হাতছাড়া হওয়ার আতঙ্ক বিশেষভাবে দেখা যায়।’
ইভন গ্যোরলিশ এ বিষয়ে দ্বিতীয় একটি গবেষণার চূড়ান্ত ফলের জন্য অপেক্ষা করছেন। আপাতত সেই গবেষণা থেকে জানা গেছে, যে মোবাইল ফোনের নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার নোমোফোবিয়া অনেকটা কমিয়ে দেয়। অর্থাৎ দিনে দুই ঘণ্টার বেশি মোবাইল ব্যবহার করা চলবে না। মাঝে মাঝে মোবাইল ফোন ছাড়াই বেরিয়ে পড়তে হবে।
গ্যোরলিশ বলেন, ‘আমি বাড়িতে মোবাইল রাখি। প্রথম দিকে আমার ভয়ের অনুভূতি হয়। মনে হয় কী না ঘটতে পারে! কিন্তু বারবার স্মার্টফোন দূরে রাখলে ইতিবাচক অভিজ্ঞতা বাড়তে থাকে। দেখা যায়, বস্তুটি সঙ্গে না থাকলেও জগৎটা চালু থাকে।