বাচ্চাদের দাঁতের সমস্যা নিয়ে আমরা প্রায়শই নাজেহাল হয়ে থাকি। দাঁতে ব্যাথা, মাড়ি ফুলে যাওয়া বা ক্যাভিটির মতো দৈনন্দিন সমস্যা তো লেগেই থাকে। তবে ডেন্টাল ইনজুরির মতো সমস্যা তৈরি হলে সেক্ষেত্রে একটু বেশি নজর দেওয়া দরকার। দাঁতের এই ধরণের সমস্যা বলতে আঘাত পেয়ে দাঁত পড়ে যাওয়া, ভেঙে যাওয়া বা দাঁত মাড়ির ভিতরে ঢুকে যাওয়া ইত্যাদিকে বোঝায়। এই পরিস্থিতিতে কখন ডাক্তারের কাছে যাওয়া দরকার, আর কখন এর মোকাবিলা আমরা নিজেরাই বাড়িতে করতে পারি, সেই নিয়ে আমাদের মনে দ্বন্দ্ব চলতেই থাকে। তাই ডেন্টাল ইনজুরির সমস্যা অবহেলা করার মতো নয়।
কখন হতে পারে
বাচ্চা যখন হামাগুড়ি দিতে শেখে তখন থেকেই ডেন্টাল ইনজুরির সমস্যা দেখা যেতে পারে। এরপর বয়স দু-তিন বছর হলে যখন বাচ্চা খেলে-দৌড়ে বেড়ায়, তখন আরও সমস্যা দেখা যায়। দোলনা বা স্লিপ থেকে পড়ে গিয়ে এই ধরনের আঘাত লাগার আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে। অনেক সময় পিচ্ছিল জায়গা থেকে পড়ে গিয়েও এমন ইনজুরি হতে পারে।
কী ধরনের ইনজুরি
বাচ্চা যদি খুব ছোট হয়, তার দুধের দাঁত বা প্রাইমারি টিথ থাকলে অনেক সময় মাড়ির ভিতর ঢুকে যায়। চোট লাগলে দাঁত পড়েও যেতে পারে। এর সঙ্গে ল্যাসারেশন বা টিস্যু ইনজুরিও দেখা যায়। এর ফলে মাড়িতে আঘাত লেগে দাঁতের কিছুটা অংশ মাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে। আবার অনেক ক্ষেত্রে দাঁতের ভিতরের পাল্প বেরিয়ে আসে। বেশি লাগলে এর সঙ্গে ব্লিডিং শুরু হয়। অনেক সময় আঘাত লেগে ব্লিডিং হয় না, দাঁত ভাঙেও না। অল্প ব্যথা হলে ওষুধ খেয়ে সেরে যায়। কিন্তু কোনওভাবে ভাস্কুলার ডিসটার্বেন্স হওয়ার কারণে দাঁত মৃত হয়ে যায়। ফলে দু-তিন বছর পর দাঁতের রং বদলে গিয়ে লালচে বা কালো হয়ে যায়।
প্রথমেই কী করণীয়
প্রথমে রক্ত বন্ধ করার চেষ্টা করতে হবে। বরফ দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। দাঁত নড়তে থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। ভালভাবে ব্রাশ করান। শক্ত খাবারের পরিবর্তে গলা ভাত, আইসক্রিম খাওয়ান।
চিকিৎসা
দুধের দাঁতের ক্ষেত্রে যদি ইনট্রুশন বা দাঁত মাড়ির মধ্যে ঢুকে যায়, তাহলে প্রথমে কিছু ক্ষণ অপেক্ষা করুন। নর্ম্যাল পজ়িশনে আসার পর অ্যান্টিসেপটিক অয়েন্টমেন্ট লাগাতে পারেন। সেক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। অনেক সময় মেডিকেটেড পেস্টও ব্যবহার করারও পরামর্শ দেওয়া হয়। এতে দাঁত ঠিক হয়ে গেলে পরবর্তীকালে দাঁত বেরোতে কোনও অসুবিধে হয় না। কিন্তু স্থায়ী দাঁত তৈরির হওয়ার ভিত নষ্ট হয়ে গেলে, পরে দাঁত উঠলে সেটির স্বাভাবিক আকার নষ্ট হয়ে যেতে পারে। অ্যাঙ্কিলোসিস মানে যেখানে দাঁতের গোড়া আর স্বাভাবিকভাবে দাঁতের টিস্যুর সঙ্গে আটকে থাকে না, ভিতরে ঢুকে যায়। এর জন্য ডাক্তারের কাছে নিয়মিত চেক-আপের প্রয়োজন। পাল্প ইনজুরি ট্রিটমেন্টের নানা পদ্ধতি রয়েছে। যদি দাঁতের ভিতরে পাল্প ইনজুরি হয়, তখন আগে পাল্প ইনজুরির ট্রিটমেন্ট করানো হয়, তারপর দাঁত ঠিক করা হয়। দাঁতের মধ্যে নরম টিস্যু দিয়ে তৈরি এক ধরনের পাল্প থাকে। এতে নার্ভ, কানেকটিভ টিস্যু, রক্ত কণিকা থাকে। নরম পাল্পের উপরের স্তরে থাকে ডেনটিন। আর ডেনটিনকে ঘিরে থাকে এনামেল। দাঁতের ক্ষয় শুরু হয় প্রথমে এনামেল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তারপর ধীরে ধীরে ডেনটিন থেকে নরম পাল্পে সেই ক্ষয় ছড়িয়ে পড়ে। ডেনটিন পর্যন্ত ক্ষয় ছড়িয়ে পড়লে ফিলিং পদ্ধতির মাধ্যমে চিকিৎসা সম্ভব। পাল্প র্যাপিং পদ্ধতিতে পাল্পে ওষুধ দিয়ে র্যাপ করে দেওয়া হয়। এতে ইনফেকশনের সম্ভাবনা কমে। পাল্পোটোমি পদ্ধতিতে চোট লেগে পাল্প বেরিয়ে গেলে, সেই পাল্প বের করে মেডিসিন দিয়ে ফিল আপ করিয়ে দেওয়া হয়। অনেকটা ক্ষতিগ্রস্ত হলে রুট ক্যানাল করা হয়। কিন্তু এতে যেহেতু দাঁত দুর্বল হয়ে যেতে পারে, তাই পরে ক্রাউনিং করা হয়। বাচ্চাদের যেহেতু তখন দাঁতের ডেভেলপমেন্ট পুরোপুরি হয় না, তাই রুট ক্যানাল থেরাপি করার পর স্টেনলেস স্টিলের ক্রাউন দিয়ে দাঁত প্রিজার্ভ করা হয়। আঠারো বছরের পর সেরামিক ক্রাউনিং করা হয়।