Spread the love

বর্ষার রিমঝিম সুর শুনতে যতটা ভাল লাগে, শরীরের পক্ষে এই ঋতু ততটাই ক্ষতিকারক রোগ বহন করে আনতে পারে। বর্ষা মানেই বিভিন্ন জায়গায় জল দাঁড়ায় আর তা থেকে জন্মায় মশার ডিম বা লার্ভা। মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু সম্পর্কে আলোচনা করলেন ডাঃ সুদর্শন চক্রবর্তী।

আমরা এই ব্যাপারে মুখোমুখি হয়েছিলাম ডাক্তার সুদর্শন চক্রবর্তীর কাছে। তিনি জানালেন, বর্ষায় সাধারণত ম্যালেরিয়া বা ডেঙ্গু ভয়ংকর আকার ধারণ করতে পারে। তাঁর কাছে কয়েকটি প্রশ্ন রাখা হয়েছিল।

বর্ষার জমা জলে সাধারণত কী কি রোগ হতে পারে?

বর্ষার জমা জল থেকে ম্যালেরিয়া বা ডেঙ্গু হতে পারে। এছাড়া অন্যান্য মশাবাহিত রোগগুলি জনসাধারণে ততটা ভয়ংকর নয়।

ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গু কতটা ভয়ংকর?

ম্যালেরিয়ার ওষুধ আছে। কিন্তু ডেঙ্গুর কোনও ওষুধ নেই। ডাক্তারি শাস্ত্রে ডেঙ্গুর ভাইরাসকে মারার জন্য সম্প্রতি ভ্যাকসিন আবিষ্কারের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। কিন্তু এখনও তার আবিষ্কার হয়নি।

ডেঙ্গু প্রতিরোধের জন্য কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে?

ডেঙ্গু বা ম্যালেরিয়ার মশা যে সবসময় নোংরা জলে জন্মায় তা নয়। এটি যে কোনও পাত্রের পরিষ্কার জলেও জন্মাতে পারে। তাই প্রথম কাজ হল তিন দিন অন্তর জমা জলকে পরিষ্কার করা। বাড়ি ঘর সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। কোথাও জমা জল যাতে না থাকে তার খেয়াল রাখতে হবে। বাড়ির চারপাশ যাতে পরিষ্কার থাকে সেদিকেও দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। সব থেকে বড় সর্তকতা রাখা দরকার, যাতে জমা জল ৭২ ঘন্টা অন্তর পরিষ্কার করা যায়। এই থেকে কিন্তু ম্যালেরিয়া বা ডেঙ্গুর মশা জন্মাতে থাকে।

কোন মশা থেকে ডেঙ্গু হতে পারে?

‘ডেঙ্গু’ শব্দটা খুবই ছোট আর মশা দেখতে ছোট হলেও, রোগটির ফল মারাত্মক হতে পারে। যে মশাটি এই ডেঙ্গু রোগ ছড়ায় তার নাম ‘ইজিপসাই’। এটিই আমাদের প্রধান ডেঙ্গুবহনকারী মশা। এছাড়া ‘এডিস অ্যালবো পিকটাস’ মশাও আছে, তবে তা আমাদের পশ্চিমবঙ্গে সব জায়গায় দেখা যায় না।

ডেঙ্গু কী থেকে ছড়ায়?

ওই যে বললাম, জমা জল থেকে ডেঙ্গুর মশা জন্মায়। এটি সাধারণত পোস্ট-মনসুন একটি রোগ। বৃষ্টি হবে, জল জমবে, তাতে মশা ডিম পাড়বে এবং তা ডেভেলপ করবে। এই মশা ডেঙ্গু আক্রান্ত এমন মানুষকে কামড়ানোর পর যদি একজন সুস্থ মানুষকে কামড়ায় তবে তাকে ডেঙ্গু আক্রমণ করবে। ডেঙ্গুর ভাইরাস মশার দেহে থেকে যায়। একটি মশা যদি তিন থেকে চার সপ্তাহ বাঁচে তবে তা এই সময়ের মধ্যে অনেক মানুষের দেহেই ডেঙ্গু ছড়াতে পারে। তবে এটি ছোঁয়াচে নয়।

ডেঙ্গুর লক্ষণ কী?

যে কোনও ভাইরাস ফিভারের যা লক্ষণ, ডেঙ্গুরও সেই লক্ষণ। খুব বেশি মাত্রায় জ্বর হয়, প্রচণ্ড মাথাব্যথা, চোখ ঘোরাতে গেলে চোখের পেছনে ব্যথা হয়, গায়ে ব্যথা, জয়েন্ট পেন, বমিভাব, কারও ক্ষেত্রে ডায়রিয়াও হতে পারে। আবার দু-তিনদিনের মধ্যে সারা গায়ে র‍্যাশ বেরোতে পারে। যেহেতু আমাদের দেশে বেশিরভাগ মানুষই শ্যামবর্ণ, তাই খোলা চোখে র‍্যাশ দেখা যায় না। ফর্সা রং হলে দেখা যায়। তবে র‍্যাশ বেশিদিন থাকে না।

ডেঙ্গুর প্রতিকার কীভাবে করা হবে?

জমা জল মাঝেমাঝেই পরিষ্কার করতে হবে। বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। মশারি টাঙাতে হবে। এখন কেমিক্যাল মেশানো মশারি বা ওষুধ দেওয়া মশারি পাওয়া যাচ্ছে। তা ব্যবহার করলে আরও ভালো। এর ফলে মশারির দেওয়ালে হাত লাগলেও মশা কামড়াবে না, কারণ মশা ওষুধ লাগানো মশারিতে বসবে না। যে কোনও সময়ের মশা অর্থাৎ দিন বা রাতে যখনই মশা কামড়াবে তা থেকে ডেঙ্গু হতে পারে।

ডেঙ্গুর পরীক্ষা কীভাবে করা হয়?

জ্বরের দু-একদিনের মধ্যে একটি রক্তপরীক্ষার মাধ্যমে ডেঙ্গুর জীবাণু ধরা পড়ে। 1GM- এই টেস্টের রিপোর্ট যদি ফ্রেশ পজিটিভ আসে, তবে ডেঙ্গু কনফার্ম। MSI- এই রক্তপরীক্ষার মাধ্যমে ডেঙ্গু ধরা পড়ে।

ডেঙ্গু হলে প্রাথমিকভাবে কী করা যেতে পারে?

ডেঙ্গুর ওষুধ হল প্যারাসিটামল। এছাড়া প্রচুর জল খেতে হবে। যাতে শরীরে প্রচুর ফ্লুয়িড থাকে। শরীর যাতে শুকিয়ে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখা প্রয়োজন। এছাড়া যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যদি চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া যায়, সবথেকে ভাল হয়।

About Author
Adwitiya Magazine
View All Articles
Check latest article from this author !
নিউ ইয়ার পার্টি লুক
ফুলকপি ঘি রোস্ট
ফুলকপির যত গুণ

Related Posts