Spread the love

পরিবারে একমাত্র জিয়াকেই পছন্দ করে জিউস। স্বল্পাহারী জিউস আসলে বল্ড পাইথন প্রজাতির একটি সাপ। বরাবরই ওয়াইল্ড অ্যানিমেল সম্পর্কে আগ্রহী জিয়া রায়, এই জিউসকে পুষেছেন সাধ করেই। প্রথমটায় অবশ্য কৌতূহল থেকে রাজি হয়েছিলেন তিন-চার দিনের জন্য বাড়িতে রাখতে। শেষপর্যন্ত ভাব জমে যাওয়ার আর ছাড়তে পারেন নি। মায়াও পড়ে গিয়েছিল কেমন একটা। হবে নাই বা কেন? বাড়িতে আসার পর কিছুদিনের মধ্যেই যে জিয়াকে আঁকড়ে ধরেছিল জিউস। এমনকি রাতেও জিয়ার কাছটিতে গুটিশুটি মেরে, আবার কখনও গলা জড়িয়ে ধরে (পড়ুন লেজ দিয়ে পেঁচিয়ে) ঘুমাতো ছোট্ট পাইথনটা। কয়েকদিন পর থেকেই দেখা যেত জিয়া যেখানে, জিউসও সেখানে। বাড়ির বাইরে গেলে জিউসও যেত সঙ্গে। ছোট্ট একটা থলি-ব্যাগে চড়ে জিয়ার সঙ্গে কত যে ঘুরে বেড়িয়েছে সে, তার ঠিক নেই। এখন অবশ্য জিয়াদের খামারবাড়িতেই জিউসের ঠিকানা। এই জিউসের কাহিনি নিয়েই পেটকেয়ারে পাইথন-পুরাণ। 

জিয়া তার আদরের পোষ্যটির নাম রেখেছেন জিউস। গ্রিক দেবতা জিউসের নাম অনুসারে এই নামকরণ। জিয়া মনে করেন তার পাইথনটি হল সর্পকুলের সেরা, তাই নামকরণে এই দেবনামের ছোঁয়া। সারাটা দিন আপনমনেই থাকে জিউস। খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে বিশেষ একটা আগ্রহ নেই। কখনও-সখনও তো রীতিমতো হাঁ করিয়ে প্রায় জোর করেই চিকেনের টুকরো খাইয়ে দেন জিয়া। জঙ্গলের পরিবেশ ছেড়ে এতদিন থাকায় শিকার করে খাওয়ার অভ্যেসটা প্রায় নেই। ইঁদুর-টিদুর এগিয়ে দিলে মাঝেমধ্যে শিকার করে খায় যদিও, কিন্তু একদিন খেলে ব্যাস, চুপ করে জবুথবু হয়ে বসে থাকবে পরবর্তী বহুদিন। গরমকালে জিউসকে রাখা হয় অভিনব উপায়ে। একটা বড় বাটিতে জল দিয়ে তার মধ্যে ছেড়ে দেওয়া হয়। গোল হয়ে গুটিয়ে সারাক্ষণ জলে গা ডুবিয়ে শুয়ে থাকতে ভালবাসে তখন। এই ভঙ্গিটি ভারি প্রিয় তার। জলের আরামে রীতিমতো আবিষ্ট অবস্থার চুপচাপ শুয়ে থাকে গোটা গ্রীষ্মকাল। বর্ষাকালে বা শীতকালে থাকে খড় বিছানো অ্যাকোয়ারিয়ামে। শীতকালে অ্যাকোয়ারিয়ামে জ্বালানো থাকে তুলনায় বেশি পাওয়ারের বাল্‌ব, বর্ষায় জিরো পাওয়ার। ভেতরটা গরম রাখার জন্য এই ব্যবস্থা। তবে বর্ষাকালে শর্ট সার্কিটের ভয় থাকায় বাল্‌ব বেশিক্ষণ জ্বালান না জিয়া। জিউসের ব্যাপারে জিয়া খুবই সর্তক সবসময়। আবার জিউসও জিয়ার ব্যাপারে খুব সেন্সিটিভ। জিয়ার উপস্থিতি মুহূর্তে বুঝতে পারে সে। এমনকি শীতকালে যখন সাপেদের ঘুমের সময় তখনও যদি জিয়া এসে দাঁড়ান সামনে, তাহলে তক্ষুণি মাথা তুলে এদিক-ওদিক ঘাড় ঘোরাতে শুরু করবে সে। লোকজন একদম পছন্দ করে না। বাড়ির অন্য লোকদের প্রতিও সে একদমই নিরাসক্ত। যত ঘেঁষাঘেঁষি সব জিয়ার সঙ্গেই। জিয়ার কাছে যেন নিরাপদ আশ্রয়।

হঠাৎ করে সামনে অন্য লোকজন এসে পড়লে একদম এড়িয়ে চলে। সরসর করে বুকে হেঁটে ঠিক চলে যাবে জিয়ার কাছে। এমনকি জিয়া একটু দূরে থাকলেও ঠিক গন্ধ চিনে পৌঁছে যাবে তার সামনে। আর কেউ যদি শখ করে ওকে হাতে নিতে যায় তাহলেই বিপদ। এমন মাথার ঝটকা দেবে যে আত্মারাম খাঁচাছাড়া হবার জোগাড়। একমাত্র জিয়ার সঙ্গেই কমফর্টেবল। জিয়ার হাত বেয়ে, কোমরে বেড় দিয়ে, কাঁধে-গলায় প্যাঁচ দিয়ে আহ্লাদে আটখানা সে। আর মাঝেমধ্যে যখন মাঠে রোদ পোয়াতে নিয়ে যায় তখন তো ফুর্তির শেষ নেই। ঘাসের উপর দিয়ে সরসর করে হাঁটার ছন্দটি দেখার মতো। একটি একটি করে প্রতিটি ঘাসের ডগা মাথা দিয়ে আঘাত করে টুকটুক করে নেড়ে নেড়ে তখন সে গজেন্দ্রগামিনী। গ্রীষ্মকালে জলের বাটিতে বসে থাকার সময় তার আহারাদির কৌলিন্যও দেখার মতো। ছোট ছোট গাপ্পি মাছ ছেড়ে দেওয়া হয় খাদ্য হিসেবে। একসঙ্গে আট-দশটি মাছ ছেড়ে দেওয়া হলেও, প্রতিদিন ঠিক একটির বেশি মৎস্য সেবন করেন না প্রভু। একটি মাছ খাওয়ার পর আজ পর্যন্ত দ্বিতীয়টি আর একই দিনে ছুঁয়ে দেখেন না জিউস। তবে খাওয়ার ব্যাপারে যতই অনীহা থাকুক, খেলার ব্যাপারে কিন্তু আগ্রহের ঘাটতি নেই। বল খেলতে ভালবাসেন প্রভু। টুক করে একটা বল ওনার দিকে পাস করলে উনিও দিব্যি মাথা দিয়ে ঠেলে পাস দেন। পরক্ষণেই অবশ্য প্যাঁচ দিয়ে জড়িয়ে ধরবেন বলটার গায়ে। এরপর বেশ কিছুক্ষণ চলবে প্যাঁচ-প্যাঁচ খেলার কসরত।

একদম ছোট অবস্থায় প্রথম যখন এসেছিল জিয়াদের বাড়িতে, তখন জিয়া ওর লেজে বেঁধে দিয়েছিলেন ছোট ঘুঙুর। সারাক্ষণ টুকটুক করে, ঝুমঝুম শব্দ তুলে ঘুরত বাড়িময়। যতই মিষ্টি দেখতে লাগুক, পরে অবশ্য ওর কষ্ট হতে পারে ভেবে ঝুমঝুমি খুলে দিয়েছিলেন জিয়া। এখন নিঃশব্দেই চলাফেরা করে, তবে বেশিরভাগ সময় নিজের মধ্যে ডুব দিয়ে একলাটি বসে থাকাই পছন্দ জিউসের। হয়তো রক্তের মধ্যে জঙ্গলের ডাক শুনতে পায়, অরণ্য হাতছানি দেয় দু’চোখে, অচেনা বাসভূমি একা লাগে ওর। তাই হয়তো চুপচাপ বসে থাকে মন ভার করে! ঠিক কী হয় সেটা তো জানার উপায় নেই, কথা কইতে জানলে না হয় একটা ইন্টারভিউ বাইট নিয়ে নেওয়া যেত!               

Related Posts