Spread the love

জন্ডিস, যার পোশাকি নাম হেপাটাইটিস। একটু অবহেলা একে করে তুলতে পারে মারণ রোগ। অথচ খুব সহজ কিছু সাবধানতা আর সচেতনতায় এই রোগের সম্ভাবনা রুখে দেওয়া যায়। জানালেন, ডাঃ শ্যামাশিষ বন্দ্যোপাধ্যায়।

  • হেপাটাইটিস কী?

লিভারের ইনফ্ল্যামেশন বা ইনফেকশন। লিভারের (হেপাটোসাইট) সেলগুলি কোনও অর্গানিজমের দ্বারা ইনফেকটেড হলে, বা অটোইমিউনিজমের জন্য লিভার ঠিকমতো কাজ না করলে বলা হয় হেপাটাইটিস ইনফেকশন হয়েছে।

  • এ রোগের কারণ কী?

ভাইরাস ইনফেকশন একটা কারণ। তবে, আরও অনেক কারণেও হতে পারে। যেমন ধরুন- হেপাটাইটিস ‘এ’ হয় খাবার, জল ইত্যাদির মাধ্যমে বাহিত সংক্রমণে। আবার ‘বি’, ‘সি’ হয় রক্তে সংক্রমণের ফলে। ঠিকমতো পরীক্ষা না করে রক্ত দিলে, অসুরক্ষিত যৌন জীবনযাপনে, আবার সংক্রমিত কাউকে ইঞ্জেকশন দিয়ে সেই সূঁচ, সুস্থ অন্য কারও হাতে ফুটে গেলেও এই দু’ধরনের হেপাটাইটিস হতে পারে। এ দুটিই প্রধানত রক্তবাহিত। আবার প্রেগনেন্ট অবস্থায় মায়ের হেপাটাইটিস ‘ই’ হতে দেখা যায়। এ তো গেল ভাইরাল ইনফেকশন। এ ছাড়াও বিভিন্ন ওষুধেও হেপাটাইটিস হতে পারে। আর হয় ব্যাকটিরিয়া এবং প্যারাসাইটের আক্রমণে। অটোইমিউন হেপাটাইটিসও হয়। অন্যান্য ভাইরাস যেমন ই এন ভি সংক্রমণেও হেপাটাইটিস হতে পারে।

  • অটোইমিউন হেপাটাইটিস কী?

এই ধরনের হেপাটাইটিসে লিভারের সেলগুলি নিজেদের চিনতে পারে না। ডেসট্রাক্টিভ থাকে এরা।

  • এই রোগের লক্ষণ কী?

প্রথম প্রথম খাবারে অনীহা, জ্বর হতে পারে, বমি ভাব, বমি হতেও পারে, পেটে ব্যথা, চোখ হলুদ হয়ে যায়। এক্ষেত্রে রোগীর মল সাদা হয়ে যায়। প্রস্রাবও হলুদ হয়ে যায়। আবার হেপাটাইটিস ‘বি’ এবং ‘সি’-র ক্ষেত্রে অনেক সময় লক্ষণ বোঝা যায় না। অটোইমিউন হেপাটাইটিসের ইনফেকশন বোঝা যায় না ৷

  • এই রোগ কী প্রাণনাশক?

সব ক্ষেত্রে নয়। তবে, হেপাটাইটিস ‘বি’, ‘সি’ হলে ভয় থাকে অনেক সময়। এই দুটি ক্রনিক স্টেজে থাকতে থাকতে লিভারে ক্যান্সারও হয়ে যেতে পারে। গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে হেপাটাইটিস “ই” সঠিক চিকিৎসা না হলে মৃত্যুর কারণ হয়ে যেতে পারে। তেমনি অটোইমিউন হেপাটাইটিসের ইনফেকশন থাকে না, ধরা পড়াও মুশকিল হয়ে যায়। তাই এটাও বেশ মারাত্মক আকার নেয়। তবে অন্যান্য কারণ যেমন- ওষুধে হেপাটাইটিস হলে সেই ওষুধ বন্ধ করলে সেরে যায়। ব্যাকটিরিয়াল, প্যারাসাইটের আক্রমণে হওয়া হেপাটাইটিসের চিকিৎসা সহজসাধ্য। হেপাটাইটিস ‘এ’ তো একেবারেও মারাত্মক নয়।

  • তা হলে এটাই কী জন্ডিস?

‘জন্ডিস’ মানে হল হলুদ। অর্থাৎ জন্ডিস হল এই সংক্রমণের লক্ষণ বা ম্যানিফেস্টেশন।

  • বিশেষ কোনও ঋতু বা বয়সে এই সংক্রমণ বেশি হয়?

বিশেষ কোনও সময়ে এই রোগ বেশি হয় এটা বলা যায় না। বছরের যে-কোনও সময়েই হতে পারে। আর হেপাটাইটিস ‘এ’ হয় সবচেয়ে বেশি। খাবার, জল থেকে হয় বলেই এটা বেশি হয়। আর কমবয়সী যারা বাইরে খাবার বেশি খান, তাদের এই সংক্রমণ বেশিই হয়।

  • হেপাটাইটিস একবার সেরে গেলে আবার হয়?

ইনফেকশন যে-কোনও সময় হতেই পারে। তবে একবার হেপাটাইটিস ‘এ’ হলে শরীরে একটা ইমিউনিটি তৈরি হয়। সাধারণত দেখা যায়, হেপাটাইটিস ‘এ’ ১০-১২ বছর বয়সীদের বেশি হয়। একবার হলে যেহেতু এর ইমিউনিটি তৈরি হয়ে যায়, তাই পরে আর সবসময় হয় না ৷

  • এই রোগের চিকিৎসা কী?

সংক্রমণ হলে অ্যাকিউট স্টেজে সাপোর্টিভ ট্রিটমেন্ট হয়। হেপাটাইটিস ‘বি’, ‘সি’ ক্রনিক স্টেজে অ্যান্টি-ভাইরাল ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা হয়। অটোইমিউন হেপাটাইটিসে দীর্ঘকালীন চিকিৎসা করতে হয়।

  • সংক্রমণ ধরা পড়ে কীভাবে?

প্রাইমারি স্টেজে রোগী কিছু লক্ষণের কথা বলেন। আবার অনেক ক্ষেত্রে সংক্রমণ হলেও লক্ষণ বোঝা যায় না। সাধারণভাবে প্যাথলজিক্যাল কিছু টেস্ট করা হয়। দেখা হয় লিভার ফাংশন ঠিক আছে কিনা, লিভার এনজাইম নির্ধারিত মাত্রার মধ্যে আছে কিনা। সংক্রমণ হলে এগুলি নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশিই থাকে। হেপাটাইটিস ‘এ’ সংক্রমণ হলে দেখে নেওয়া হয় ‘বি’, ‘সি’ সংক্রমণ হয়েছে কি? অ্যান্টিবডি টেস্টও করা হয়। রোগ সংক্রমণ সম্পর্কে একমাত্র চিকিৎসকই নিশ্চিত হতে পারেন।

  • এই রোগের ভ্যাকসিন নেওয়া যায়? সব বয়সীরাই নিতে পারেন?

হেপাটাইটিস ‘বি’ প্রতিরোধক ভ্যাকসিন নেওয়া যায়। অবশ্যই সব বয়সীরা নিতেও পারেন। এখন তো বাচ্চাদের বিভিন্ন ভ্যাকসিন সিডিউলেও এই ভ্যাকসিন দিয়ে দেওয়া হয়।

  • এর থেকে বাঁচতে কোনও সতর্কতা নেওয়া যায়?

অবশ্যই যায়। খাওয়াদাওয়া, জল খাওয়া এ-সব ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বাইরে খাওয়া, খোলা খাবার, ফাস্ট ফুড, যেখানে-সেখানে জল কিনে খাওয়া, যতটা সম্ভব এড়িয়ে চললে ভাল হয়। এই রোগ অপরিচ্ছন্নতা থেকেও হয়। তাই খাওয়ার আগে সবসময় হাত ধুয়ে খাওয়া উচিত। এ ছাড়া রক্ত দেওয়ার সময় সতর্ক থেকে ভাল করে চেক করে নিতে হবে। দেখতে হবে রক্তে কোনও সংক্রমণ আছে নাকি। সুরক্ষিত যৌন জীবনযাপন করতে হবে। আর হেপাটাইটিস আক্রান্তের ব্যবহৃত ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জ সাবধানে হ্যান্ডেল করতে হবে। অন্য কারও হাতে ফুটে গেলে সংক্রমণ হতে পারে কিন্তু। সাধারণ এই সব সচেতনতা মানতে পারলেই হেপাটাইটিস হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।

About Author
Adwitiya Magazine
View All Articles
Check latest article from this author !
নিউ ইয়ার পার্টি লুক
ফুলকপি ঘি রোস্ট
ফুলকপির যত গুণ

Related Posts