Spread the love

ঘরে বাচ্চা থাকলেই বিভিন্ন কারণে নাজেহাল হতে হয় বাবা-মায়েদের। সে সিজন চেঞ্জের সময় শরীর খারাপ হোক অথবা খাবারের প্রতি অনীহা। কিছু না কিছু সমস্যা হতেই থাকে। তাই বাচ্চাদের সুস্থ থাকার হদিশ দিলেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সুরজিৎ সাঁতরা।

  • ছোটোবেলা থেকে কী কী ভ্যাকসিন বাচ্চাদের দেওয়া উচিত?

জন্মের ২৪ ঘণ্টা থেকে ৪০ ঘণ্টার মধ্যে বাচ্চাদের বিসিজি, পোলিও এবং হেপাটাইটিস-বি ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দেওয়া উচিত। এটা সাধারণত হসপিটাল থেকে বাচ্চাকে ডিসচার্জ করার আগেই দেওয়া হয়। এরপর দেড় মাস, আড়াই মাস ও সাড়ে তিন মাস অন্তর ট্রিপল অ্যান্টিজেন, হেপাটাইটিস-বি, ইনজেকশন পোলিও এবং হিব ভ্যাকসিনের যে কম্বিনেশন পাওয়া যায় সেটি এবং তার সঙ্গে রোটা ভাইরাস ও নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিন দেওয়া উচিত। এর পরবর্তীকালে অর্থাৎ ৯ মাসে হামের টিকা, এক বছরের আশপাশে হেপাটাইটিস-এ এবং টাইফয়েডের ভ্যাকসিন, দেড় বছরে চিকেন পক্স ও বুস্টার ভ্যাকসিন, দুই বছরের আশপাশে টাইফয়েডের দ্বিতীয় ডোজ এবং হেপাটাইটিস এ-র দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়। আবার পাঁচ বছর বয়সে এই ভ্যাকসিনগুলিরই বুস্টার দেওয়া হয়।

  • কোনও ডোজ যদি মিস হয়ে যায় তাহলে কী কী সমস্যা হতে পারে?

হ্যাঁ, কোনও ভ্যাকসিনের ডোজ যদি মিস হয়, তাহলে সমস্যা নিশ্চয়ই হতে পারে। কারণ, প্রতিটা ভ্যাকসিনের ডোজের সঙ্গে যোগাযোগ আছে সেই নির্দিষ্ট রোগের। বাচ্চার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করার জন্যই আসলে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। কোনও কারণে যদি ভ্যাকসিন মিস হয়, তাহলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভ্যাকসিনটা নিয়ে নেওয়া উচিত। নাহলে সেই নির্দিষ্ট রোগের জন্য বাচ্চার শরীরে ইমিউনিটি তৈরি হবে না।

  • বাচ্চাদের প্রচণ্ড জ্বর এলে বাবা-মায়েদের কী করা উচিত?

আসলে জ্বর কোনও রোগ নয়, রোগের প্রকাশ মাত্র। যে কোনও কারণে যদি শরীরে ইনফেকশন প্রবেশ করে, তাহলে বাচ্চার শরীরে জ্বর আসে। জ্বর এলে প্রথমেই উচিত বাচ্চাকে প্রয়োজন অনুসারে প্যারাসিটামল খাওয়ানো। তার কিছুক্ষণ পরে বাচ্চার জ্বর পরীক্ষা করা উচিত। কখনও কখনও এরকম হয় যে অ্যাডিকোড পরিমাণে ওষুধ দেওয়া সত্ত্বেও বাচ্চার জ্বর নামছে না অথবা আরও বেড়ে যাচ্ছে, তখন গা স্পঞ্জ করা বা মুছিয়ে দিতে হবে, যাতে বাচ্চার জ্বর ধীরে ধীরে নামতে পারে। কিন্তু বাচ্চাদের বরফজল দিয়ে স্নান করানো বা মাথা ধোয়ানো একদমই উচিত নয়।

  • বয়স অনুসারে বাচ্চাদের ওজন আর হাইট কি ট্র্যাকে রাখতে হয়?

ওজন এবং হাইট এই দুটি বিষয়ই বাচ্চার গ্রোথের সঙ্গে জড়িত। এই দুটি ক্রাইটেরিয়া থেকে বাচ্চার গ্রোথ ঠিকঠাক হচ্ছে কিনা বোঝা যায়। সেই জন্য বয়সের সঙ্গে সঙ্গে বাচ্চার ওজন এবং তার হাইট ঠিকঠাক আছে কিনা তা জানার জন্য অবশ্যই ট্র্যাকে রাখা দরকার।

  • সিজন চেঞ্জের সময় কী কী প্রোটেকশন নেওয়া উচিত?

সিজন চেঞ্জের সময় বাচ্চারা সাধারণত বিভিন্ন ধরনের এলার্জি ও ভাইরাল ইনফেকশনের কবলে পড়ে। সেই জন্য এই পার্টিকুলার সময়ে যখন বাইরের তাপমাত্রা ও পরিবেশ চেঞ্জ হচ্ছে, বিশেষ করে বর্ষাকাল ও শীতকালে বাচ্চাদের বাইরে নিয়ে যাওয়ার সময় যথোপযুক্ত পোশাক পরানো উচিত। বিশেষ করে ভোরবেলা এবং সন্ধ্যাবেলা খুব ফাঁকা জায়গায় না যাওয়াই ভালো এবং যে যে জায়গাতে খুব বেশি কঞ্জিশন হয় যেমন স্কুল বা কঞ্জাস্টেড জায়গা যেখানে অন্য আর পাঁচটা বাচ্চা বা অন্যান্য মানুষ আছে, তাদের হাঁচি-কাশি হতে পারে সেইরকম জায়গায় বাচ্চাকে না নিয়ে যাওয়াই ভালো।

  • যে বাচ্চারা প্রায় সব সময়ই দুর্বল থাকে, তাদের এনার্জি কীভাবে বুস্ট আপ করা যায়?

যে বাচ্চারা সব সময় দুর্বল থাকে, তাদের সাধারণত শরীরের ভিতরে ইমিউনিটির কোনও একটা সমস্যা থাকে। সেক্ষেত্রে এনার্জি বুস্ট আপ করার মেইন রাস্তা হচ্ছে তাদের সুষম খাদ্য দেওয়া। যে খাদ্যের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট এবং প্রয়োজন অনুসারে ফ্যাট আছে এবং প্রপার ভিটামিন ও মাইক্রো-নিউট্রিয়েন্টস আছে, সেই খাবার খাওয়াতে হবে বাচ্চাকে। এর পাশাপাশি সঠিক সময়ে ভ্যাকসিন দেওয়া উচিত।

  • বাজারে প্রাপ্ত হেলথ ড্রিংকগুলি কি সত্যিই কার্যকরী হয়?

আগেই বলেছি, বাচ্চার ক্ষেত্রে জরুরি হল সুষম খাদ্য। বাচ্চার বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খাদ্যের মান ও পরিমাণ বাড়ানো উচিত। দুধ হল সবথেকে ভালো হেলথ ড্রিংক। বাচ্চাকে যদি যথোপযুক্তভাবে খাওয়ানো যায় তাহলে বাজারের কোনও হেলথ ড্রিংক তাদের আর খাওয়ানোর প্রয়োজন হবে না।

  • প্রাইমারি লেভেলের স্কুলে যাওয়া বাচ্চাদের বেডওয়েটিং কি স্বাভাবিক বিষয়?

চার থেকে পাঁচ বছরের বাচ্চাদের কখনও কখনও বেডওয়েটিং হতে পারে। এই বিষয়টা এক একটা বাচ্চার এক একটা সময়ে রিকভারি হয়ে যায়। ম্যাক্সিমাম বাচ্চার চার থেকে পাঁচ বছরের মধ্যেই বিষয়টা ইমপ্রুভ করে যায়। তাই অযথা চিন্তা না করে বাচ্চার প্রপার কাউন্সিলিং করা উচিত অর্থাৎ তাকে বোঝানো উচিত। তাতেও যদি ঠিক না হয় তাহলে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত।

  • বাচ্চাদের এলার্জি হলে কী করণীয়?

বর্তমান সময়ে এই সমস্যাটি খুবই প্রবল। যে যে কারণে বাচ্চার অ্যালার্জি হচ্ছে যেমন কারোর কোনও নির্দিষ্ট খাবারে অ্যালার্জি হয়, কারোর হাওয়ায় অর্থাৎ ডাস্ট, স্মোক ও পলিউশন এগুলো থেকে অ্যালার্জি হয়, সেখান থেকে বাচ্চাকে প্রিভেন্ট করা উচিত। আর যদি বাচ্চার অ্যালার্জি হয় তাহলে অ্যান্টি-অ্যালার্জি ওষুধ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে খাওয়ানো উচিত।

  • বাচ্চাদের ওজন প্রয়োজনের তুলনায় কম অথবা বেশি হলে কী করণীয়?

বাচ্চাদের ওজন যদি বয়সের তুলনায় কম অথবা বেশি হয়, তা বাচ্চার হেলথের পক্ষে একদমই ঠিক নয়। যদি ওজন বেশি হয় তাহলে দেখতে হবে খাবারে ফ্যাটজাতীয় খাদ্য বেশি আছে কিনা। আর বাইরের খাবার এবং জাঙ্কফুড অ্যাভয়েড করতে হবে। নজর দিতে হবে খাদ্য যেন সব সময় সুষম খাদ্য হয়। এছাড়া বাচ্চাকে প্রতিদিন অ্যারোবিক এক্সারসাইজ অর্থাৎ সুইমিং, জগিং করাতে হবে, যাতে তার ক্যালোরি বার্ন হয়। আর যদি ওজন কম হয়, সেক্ষেত্রে বাচ্চার খাদ্যের গুণাগুণের মাত্রা বাড়াতে হবে। একইভাবে সুষম খাবার খাওয়াতে হবে। দেখতে হবে তার খাবারে যেন পর্যাপ্ত প্রোটিন, ভিটামিন এবং ক্যালোরি থাকে। খাওয়ার সময় এবং পরিমাণের দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। তাতেও যদি ওজন না বাড়ে তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

  • বাচ্চাদের খাবারের ইচ্ছা কম হলে কী করণীয়?

এটা খুবই কমন প্রবলেম। যদি কখনও মনে হয় যে বাচ্চা খেতে চাইছে না, তখন প্রথমেই যেটা করা উচিত নয় সেটা হল, তাকে জোর করে খাওয়ানো। একটা বয়সের পর অর্থাৎ চার থেকে পাঁচ বছরের পর বাচ্চা যখন নিজে হাতে খেতে পারে, তখন তাকে খাইয়ে দেওয়া উচিত নয়। বাচ্চা যদি নিজে হাতে খায় এবং ঠিক ঠিক সময়ে খায় তাহলে খাওয়ার উপরে তাদের ইচ্ছেটা বাড়ে। পাশাপাশি তাদের টেস্টবার্ডসগুলির উন্নতি করার জন্য একই খাবার বিভিন্নভাবে রান্না করে খাওয়াতে হবে।

Related Posts