রাত পোহালেই বড়দিন। প্রভু যিশুর জন্মদিনকে কেন্দ্র করে এই দিন সবাই আনন্দে মেতে ওঠে। কিন্ত কখনও ভেবে দেখেছেন, স্বাধীনতার আগে আমাদের এই শহর কীভাবে ক্রিসমাস সেলিব্রেট করত? তাহলে আসুন, আজ সেই দিকেই ফিরে তাকাই।
বিদেশে থাকলে আমাদের সবারই স্বদেশের প্রতি এক অন্য আন্তরিকতা কাজ করে। এই কথাটা সমানভাবে প্রযোজ্য ব্রিটিশদের জন্যও। দেশ ছেড়ে এই প্রবাসে তারা এসেছিল ব্যবসা করতে ও পাশাপাশি তাদের সাম্রাজ্য বিস্তার করতে। এই দেশের আবহাওয়া, সংস্কৃতি সব কিছুই ছিল তাদের দেশের তুলনায় বিপরীতগামী। তাই এখানে বসবাস স্থাপন করতে তাদের নিঃসন্দেহে অসুবিধে হয়েছিল। তবু উপনিবেশের ঘাঁটি রক্ষা করার জন্য তারা নিজেদের মানিয়ে নিয়েছিল এই দেশের সঙ্গে। তবে, এই দেশে এসেও নিজেদের সংস্কৃতি থেকে তারা কোন ভাবেই বিছিন্ন হতে পারেনি। তাই যখন বছর ফুরত, ইউরোপিয়ান দেশগুলোর মত এই ঔপনিবেশিক কলকাতাও সেজে উঠত বড়দিনের আনন্দে।
১৯১১ পর্যন্ত কলকাতা ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের রাজধানী। তখনকার কলকাতায় আলাদাই ছিল বড়দিনের জৌলুশ। নিবন্ধকার রাধাকান্ত গুপ্তর দেশ পত্রিকায় লেখা একটি প্রবন্ধ থেকে কিছুটা হলেও সেই সময় কলকাতার বড়দিন উদযাপনের সম্বন্ধে জানা যায়।
১৮০০ খ্রিস্টাব্দ বা তার আগে ব্রিটিশদের কাছে প্রখর গ্রীষ্মে কলকাতায় জীবনযাপন ছিল কষ্টকর। আর বর্ষায় হত নানা রোগের প্রাদুর্ভাব। ফলে শীতকাল এলে স্বভাবতই সাহেবদের মনে আনন্দ বেড়ে যেত। ধর্মীয় কারণের পাশাপাশি এই যে গরমের হাত থেকে নিষ্কৃতি, এটাও উদযাপনের একটা কারণ ছিল। এমনকি, মাঝে মাঝে খাস বিলেতের থেকেও বেশি রঙিন হত সেই সময় কলকাতার সাহেবপাড়ার বড়দিনের জৌলুশ।
তখনকার কলকাতায় সাহেবরা নিজেদের মতো করেই মেতে উঠতেন ক্রিসমাস সেলিব্রেশনে। তাঁদের বড়দিন উদযাপনের জাঁকজমক এবং বিলাস বৈভব হত চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়ার মতো। সবার আগে তারা বাড়িঘর মেরামত ও রং করিয়ে নিত। তারপর বাড়ির সদর দরজায় লাগাত কলাগাছ। আর থামগুলো সাজাতো দেবদারু বা অন্য লতাপাতা, ফুলের তোড়া ও মালা দিয়ে। সঙ্গে রঙিন কাগজের শিকল বাড়তি জেল্লা আনত বছরশেষের এই সাজগোজে। আর পার্বণ উদযাপনের চিরাচরিত অংশ হিসেবে গির্জায় অনুষ্ঠিত হত মিডনাইট মাস। বড়দিন উপলক্ষে উপহার দেওয়া-নেওয়ার বহরও ছিল দেখার মতো। বিশেষ অতিথিদের জন্য উপহারের ডালিতে থাকত হিরের আংটি থেকে বুখারা ঘোড়া। আবার অন্যদিকে বাড়ি বা এস্টেটের সরকার-বেয়ারা-খানসামা-সহ অন্য কর্মচারীরা মাছ-মাংস, কেক, ফলমূল উপহারে দিতেন ব্রিটিশ মনিবকে। এবং অলিখিত নিয়ম অনুযায়ী পাল্টা আরও অনেক দামি উপহার তাদের ফিরিয়ে দিত মনিবপক্ষ। সপ্তদশ শতকের শেষ দিকে উইলসম বা গ্রেট ইস্টার্ন হোটেলের একতলার হলঘরটি ছিল ক্রিসমাস ইভ-এর অন্যতম মিলনক্ষেত্র। রকমারি খাবার আর পানীয়ের সমাহারে সেই ভোজসভায় গভীর রাত অবধি চলত খাওয়া-দাওয়া আর বল ডান্স। সাহেব ও জাহাজে কাজ করা কর্মচারীদের আড্ডার ঠেক ছিল লালবাজারের ট্যাভার্ন বা পাঞ্চ হাউজগুলো। বড়দিন সেখানের আনন্দ উৎসব আরও বেড়ে যেত।
ফিরিঙ্গি কলকাতার বড়দিনে ভোজসভার মূল আকর্ষণ ছিল ‘বোরস হেড’ বা শূকরের মাথা। তেজপাতা, আপেল আর অন্য উপকরণ দিয়ে সাজিয়ে সেটা পরিবেশন করা হত। সঙ্গে থাকত সুস্বাদু টার্কি, ডাকরোস্ট, ক্রিসমাস পাই, প্লাম পুডিং, ট্যাঞ্জারিন লেবু, খেজুর, বাদাম, কিসমিস আর চকোলেট। পানীয়ের মধ্যে থাকত নানারকমের ওয়াইন আর বড়দিনের বিশেষ পানীয় ‘রামপাঞ্চ’। তবে, সাহেব কলকাতার সবথেকে জমজমাট ভোজসভা হত বড়লাটের প্রাসাদে।
কিন্তু সময়ের সঙ্গে পরবর্তীকালে বড়দিন পালনের একটি অঙ্গ হয়ে ওঠে ‘নগর সংকীর্তন’ বড়দিন উপলক্ষে এই রীতি বহুদিন ধরে পালিত হত সেই সময়ের কলকাতায়।
সাহেবদের দেখাদেখি ক্রমে বাঙালি বাবুদের কাছেও বড়দিন উদযাপনের উৎসব হয়ে দাঁড়ায়। কলকাতা ও তার আশেপাশে বাগানবাড়িতে বড়দিন উপলক্ষে নাচগানের আসর বসাতেন বাবুরা। মাঝে মাঝে সেখানে আমন্ত্রিত থাকতেন সাহেবরাও। ভোজ আর পানীয়ের বন্যায় রাতভর চলত ‘বড়দিনের’ আনন্দ উদযাপন। সেই ধারা চলেছে আজও। তবে, এখন আর শুধু বাবু শ্রেণি নয়। বরং, বড়দিন এখন সর্বজনীন। পুরোনো সাহেবি কেতা আজ বিদায় নিয়েছে। কিন্তু বাঙালিদের বড়দিন উদযাপনের জোয়ারে কোন ভাটা পরেনি। কেক খাওয়া থেকে বো ব্যারাক আর পার্ক স্ট্রিটের ক্রিসমাসের আলোকসজ্জা- সবেতে আজও মহানগরী অনবদ্য।
সন্দীপ মুখোপাধ্যায় - “নাম কী? থাকো কোথায়? কোন ক্লাস অবধি... Read More
লিপস্টিক আমার কাছে লিপস্টিক নয়। লিপস্টিক আমার কাছে প্রতীক। রং...
আমরা সবাই জানি যে ত্রিদেব বলতে ব্রহ্মাণ্ডের তিন প্রধান স্তম্ভকে...
নাতাশা স্নান সেরে এসছে। সারাটা ঘরই এখন গন্ধস্নান করছে। একই...
পুলিশের উর্দিটা তখনও গা থেকে খুলিনি, সুসময়ী বলল, “তােমার জন্য...
শাে তখন জমে উঠেছে। শীতের সন্ধে। গায়ে ছিল হালকা জ্যাকেট।...
রিশপের ছবিগুলাে সব ফেসবুকে আপলােড করার পর কম্পিউটারের সামনে থেকে...
চা আর প্রজাপতি বিস্কুট। খাবার মধ্যে এই। কিন্তু কথা ছিল...
সকাল বেলাটা আজকাল বিজনের বেশ সমস্যার। থিতু হয়ে প্রভাত উপভােগ...
লােকে ‘ব্যোমকেশ’ নামে ডাকেন। নতুন নামকরণ হয়েছে ‘সােনা দা। এদিকে...
আজও এই শহরের সরু অলি-গলি তাকে নস্ট্যালজিক করে তােলে। তাই...