jamdani

আলতা পায়ের আলতো ছোঁয়া

আলতা পরা রাঙা দুটি পায়ে নববধু যখন শ্বশুরবাড়ি প্রবেশ করে, তখন তার আগমন সমস্ত পরিবেশে এক অন্য মাত্রা এনে দেয়। চিরন্তন ভাবে লাল রঙকে শুভ বলে মনে করা হয়েছে। আর তাই বিয়ের কনের বেনারাসি থেকে সমস্ত সাজেই থাকে লাল রঙের ছোঁয়া। সেই সাজ থেকে বাধ যায় না তার পা দুটিও।
যদিও, ইতিহাসে কোন উল্লেখ পাওয়া যায়না কিভাবে শুভ আচার অনুষ্ঠানের মধ্যে আলতা তার জায়গা করে নিয়েছে। তবে গ্রাম বাংলায় আলতার ব্যবহার বহু পুরনো। অনেকেই এমন ধারণা রাখেন যে, পল্লিগ্রামে মেয়েদের পায়ে এক ধরনের ছত্রাকঘটিত রোগ হত। একে হাজা বলা হয়ে থাকে। এই রোগ থেকে বাঁচতেই প্রাথমিকভাবে আলতা ব্যবহার করা হত। যা সেই সময় শুধুই ছিল এক আয়ুর্বেদিক ছত্রাকনাশক তরল ওষুধ।


তবে আজ আর তেমনটি নেই। সময়ের সঙ্গে আলতার ব্যবহারে এসেছে বহু পরিবর্তন। যদিও আলতা সাধারনত বিবাহিত স্ত্রী অঙ্গসজ্জার মধ্যে পরে, তবে অবিবাহিত মেয়েরাও আজ অনায়াসে আলতা পরিধান করে। যে কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে আলতা পরা এখন ফ্যাশন। এমনকি ছোটোরাও নিজেদের স্কুল বা পাড়ার ফাংশানে আলতা পায়ে নাচ করে।
তবে, বিবাহ বা অন্য সামাজিক অনুষ্ঠানে আলতা পরার কারণ কিন্তু যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। রক্তের রঙের সঙ্গে সাদৃশ্য এই তরল পদার্থকে মনে করা হয় প্রাচুর্য এবং সমৃদ্ধির প্রতীক। আলতা দিয়ে জটিল কোন নকশা করা অসম্ভব। আর তাই তুলি বা তুলোর খুব সহজ দুটি টানে পা রাঙ্গিয়ে নেই মেয়েরা। অনেকে আবার পায়ের সঙ্গে হাতেও আলতা পরে।


প্রথম দিকে আলতা তৈরি করা হত পানের রস, কুমকুম ও সিঁদুরের মিশ্রণে। এখন অবশ্য লাক্ষার নির্যাস বা বেঙ্গল রোজ নামের কেমিক্যাল থেকে আলতা তৈরি হয়।
বাণিজ্যিক ভাবে বাংলাতে আলতার প্রচলন করেছিলেন চিত্তরঞ্জন দাস। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের অনুপ্রেরণায় মোটা মাইনের চাকরি ছেড়ে তিনি আলতার ব্যবসা শুরু করেন।


১৯২৪ সালে শ্যামবাজারের একটি বাড়ি থেকে শুরু হয় এই ব্যাবসা। পরে দক্ষিণ কলকাতার ঈশ্বর গাঙ্গুলি স্ট্রিটে ‘অনুম্পা কেমিক্যাল’ নামে কারখানা নির্মাণ করেন। পরবর্তীকালে সেই কারখানাটি ‘রাঙাজবা সোপ অ্যান্ড কেমিক্যাল প্রাইভেট লিমিটেড’ নামে পরিচিত হয়। অচিরেই বাংলার সঙ্গে দেশের আরো অনেক জায়গাতে সুনাম ছড়িয়ে পরে ‘রাঙাজবা’-র। ১৯৪৪ সালে কারখানার ঠিকানা পাল্টে যায়। টালিগঞ্জ অঞ্চলে ৪/২ চণ্ডীতলা লেনে তিন বিঘা জমির উপর তৈরি হয় সংস্থার নতুন কারখানা ও কার্যালয়। আজ, এদের পাশাপাশি আরও অনেক বাণিজ্যিক সংস্থা আছে যারা আলতা তৈরি করছে যা বাংলার ঘরে-ঘরে মেয়েদের পায়ের শোভা বৃদ্ধি করে চলেছে।

Trending

Most Popular


Would you like to receive notifications on latest updates? No Yes