বৈশাখী নার্গিস
‘কীর্তন ফাগু খেলত গোরা বিষ্ণুপ্রিয়া সঙ্গে, মারে পিচকারি দুঁহুঁ দোঁহা অঙ্গে…’ এই গর্বের সুরের সঙ্গে আজও লেগে রয়েছেন বিষ্ণুপ্রিয়া। কথিত আছে, বিষ্ণুপ্রিয়া দেবী তাঁর দুই প্রিয় সখি কাঞ্চনা এবং অনিতাকে নিয়ে এই দশমী তিথিতে গৌরাঙ্গদেবের সঙ্গে রঙ খেলেছিলেন। আর সেই রীতি মেনে আজও মহাপ্রভুকে বিষ্ণুপ্রিয়ার সঙ্গে দোলনায় বসানো হয়।
উৎসব শেষ হয়েও শেষ হয় না এখানে। দোল পূর্ণিমার পরের কৃষ্ণ পক্ষের প্রথম দশ দিন রঙের রেশ থাকে নবদ্বীপে। তবে চৈতন্যধাম নবদ্বীপে দোল শেষ হওয়ার দশ দিন পরেও সকাল সন্ধ্যার বাতাসে ভাসে গুঁড়ো আবির। মুহূর্তের মধ্যে শহরের পিচঢালা রাস্তা যেন বৈষ্ণব ভজনকুঠির নাটমন্দির। সুর আর সুগন্ধে ভরে ওঠে বসন্ত সারা শহরে।
এ ভাবেই হাজার বছর বা তারও বেশি সময়ে উৎসবের হাত ধরেই সমৃদ্ধ হয়েছে নদী পাড়ের নবদ্বীপ জায়গাটি। দোল উৎসবকে ঘিরেই আবর্তিত হয় স্থানীয় অর্থনীতি। নবদ্বীপের মানুষের কাছে উৎসবের অর্থ তাই অন্যরকম। উৎসবেই তাঁদের জীবন। উৎসবই জীবিকা। আর তাই নবদ্বীপের দীর্ঘতম উৎসব হল দোল। দোল পূর্ণিমার পরেও চলে তৃতীয় দোল, চতুর্থ দোল, পঞ্চম দোল,সপ্তম দোল কিংবা দশম দোল। বৃন্দাবনের ‘বর্ষাণা হোলি’, ‘জাওয়াট হোলি’ বা ‘নন্দগ্রাম হোলি’র মত, এসব দোলের প্রতিটি স্বমহিমায় উজ্জ্বল।
দোলের পরে এতদিন ধরে দোল ভারতে আর কোথাও হয় না। বিভিন্ন মন্দিরের প্রধানের কথায় কমবেশি তিনশো বছর ধরে এভাবেই দোল উদযাপিত হয়ে আসছে নবদ্বীপের বৈষ্ণব মন্দিরগুলিতে।
এই নানা রঙের দোলের মূল কারণ চৈতন্যদেব স্বয়ং। চৈতন্য মহাপ্রভুর আবির্ভাব তিথি। তাই প্রথা মেনে এখানে দোল উদযাপন করা হ য়না। পূর্ণিমার পরে যেভাবে তিথি মেনে সেই অনুসারে তৃতীয়, পঞ্চম, দশম দোল ইত্যাদি নামকরণ করে দোল পালিত হয়।
সোনার গৌরাঙ্গ মন্দিরের প্রধানের কথায়, “নবদ্বীপের অপর নাম হলো গুপ্ত বৃন্দাবন। রাধাকৃষ্ণের দোল শেষ না হওয়া পর্যন্ত মহাপ্রভুর দোল বিধেয় নয় এখানে। সেই জন্য আমাদের পূর্বপুরুষেরা মূল দোলের পাঁচ দিন পরে পঞ্চম দোলের প্রথা চালু করেছিলেন প্রায় আড়াই’শো বছর আগে।”
তিনি এলেই যে বসন্ত আসে। খাদ্যের সুঘ্রাণ, ধূপের সুগন্ধের সঙ্গে মিশে যায় আরতির কীর্তনের সুর। এখানে মহাপ্রভু মন্দিরের বিগ্রহের হাত দু’খানি সামনে প্রসারিত। গৌর এখানে প্রচলিত ঊর্ধ্ববাহু নন। কারণ, তিনি বুঝি এভাবেই দেখা দিয়েছিলেন বিষ্ণুপ্রিয়াকে। তখন সন্ন্যাসী চৈতন্যের কাছে যাওয়ার অনুমতি ছিল না একরকম নির্বাসিত নিমাই-জায়ার। কিন্তু সারা নবদ্বীপ সে দিন ভেঙে পড়েছিল গৌরাঙ্গকে দেখতে, ঘরের ছেলে সন্ন্যাসী হয়ে নগরীতে ফিরেছেন বলে, গিয়েছিলেন বিশ্বম্ভর জননীও। শুধু একা নিজের ঘরে বসে অঝোরে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন রাজপণ্ডিতের ঘরের কন্যা বিষ্ণুপ্রিয়া। হঠাৎই তিনি যেন সেদিন অনুভব করেন পরিচিত অঙ্গসুবাস, পরিচিত স্পর্শ। নির্ভুল অনুমানে মাথা তুলে দেখেন সামনে দাঁড়িয়ে স্বয়ং গৌর। বিষ্ণুপ্রিয়ার দিকে তিনি হাত দু’টি বাড়িয়ে রয়েছেন।
এভাবেই যেন নাটমন্দিরের নহবত খানার সানাই আলাপ জমায় বসন্ত রাগে। রাত যত গড়িয়ে যায় নাটমন্দিরের হরিকীর্তনের লয় ততই ঘন হয়ে আসে। বসন্তের রঙে মেতে ওঠে গোটা নবদ্বীপবাসী।
সন্দীপ মুখোপাধ্যায় - “নাম কী? থাকো কোথায়? কোন ক্লাস অবধি... Read More
লিপস্টিক আমার কাছে লিপস্টিক নয়। লিপস্টিক আমার কাছে প্রতীক। রং...
আমরা সবাই জানি যে ত্রিদেব বলতে ব্রহ্মাণ্ডের তিন প্রধান স্তম্ভকে...
নাতাশা স্নান সেরে এসছে। সারাটা ঘরই এখন গন্ধস্নান করছে। একই...
পুলিশের উর্দিটা তখনও গা থেকে খুলিনি, সুসময়ী বলল, “তােমার জন্য...
শাে তখন জমে উঠেছে। শীতের সন্ধে। গায়ে ছিল হালকা জ্যাকেট।...
রিশপের ছবিগুলাে সব ফেসবুকে আপলােড করার পর কম্পিউটারের সামনে থেকে...
চা আর প্রজাপতি বিস্কুট। খাবার মধ্যে এই। কিন্তু কথা ছিল...
সকাল বেলাটা আজকাল বিজনের বেশ সমস্যার। থিতু হয়ে প্রভাত উপভােগ...
লােকে ‘ব্যোমকেশ’ নামে ডাকেন। নতুন নামকরণ হয়েছে ‘সােনা দা। এদিকে...
আজও এই শহরের সরু অলি-গলি তাকে নস্ট্যালজিক করে তােলে। তাই...