jamdani

গল্প।। নগ্ন ক্যানভাস ।। দিব্যেন্দু ঘোষ

ঘষা কাচের জানলা ভেদ করে কিছুতেই ঠিকরে আসছে না রোদ। তার প্রকৃতি নরম হলেও দিনের এই সময়টা কিছুতেই কঠোর হতে পারে না। দীর্ঘ, অবিন্যস্ত ঘরটিতে সে খেলতে চায়, কিন্তু পারে না। সারিবদ্ধ জানলাগুলো সব বন্ধ থাকে, দরজাও তাই। অনেকটা ওপরে কড়িকাঠের বুক বেয়ে ওই দেওয়ালের ওপর অনেকগুলো ঘুলঘুলি। ওখান দিয়ে তার আসতে বাধা নেই। কিন্তু পারে না। একটু আড়াল চায় কি সে ? পেল্লাই ঘরটিতে দিনের চরম সময়েও খেলা করে আলো-আঁধারি। তবুও প্রবুদ্ধর তীক্ষ্ণ চোখ পড়ে নেয় শরীরের বাঁকগুলো। তরাই, উপত্যকার নরম বিভাজন হাতে দাগ কাটে, ক্যানভাসে ছড়িয়ে পড়ে রং। ভুল হয় না। যদি হয়ও বা, নরম তুলির ডগায় নরম রং সে ভুল নিমেষে ঠিক করে দেয়। এমনি এমনি তো আর প্রবুদ্ধর এক একটা ছবি লক্ষ লক্ষ টাকায় বিক্রি হয় না ! ঠিক এভাবেই সে শিখেছিল পোট্রেট আঁকা। হাতেখড়ির আঁতুরঘর আর্ট কলেজ আর শেষ বিকেলের ট্রেন ধরে বাড়ি ফেরা প্রার্থনা, পলাশি, প্রণতি, প্রিয়া, পারমিতারা।

মগজের ফ্ল্যাশব্যাকে অনেকটা পেছনে চলে গিয়েছিল দেশের প্রথম সারির আঁকিয়ে প্রবুদ্ধ সান্যাল। খুব বেশি দেশে আর থাকা হয় কই। চাইলেও পারে না। বিদেশের হেন শহর নেই, যেখানে প্রবুদ্ধ সান্যালের ছবির প্রদর্শনী হয় না। তাই ছুটতে হয় এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্ত। হিল্লি দিল্লি তো আছেই। সব কিছু ছাপিয়ে মায়ের জন্য মনটা মাঝে মাঝে ব্যাকুল হয়। শহরের দুই পশ এরিয়ায় দু-দুটো ফ্ল্যাট। একটাতে মা থাকে, একা। ঠিক একা নয়, পলাশপ্রিয়া থাকে। রত্নাদেবীকে ওইই দেখাশোনা করে। যদিও রত্নাদেবী এখনও যথেষ্টই শক্ত সমর্থ। কতই বা আর বয়স। এই তো গত মাসেই ধুমধাম করে পঁয়ষট্টির জন্মদিন পালন করল প্রবুদ্ধ। পার্টি দিয়েছিল। পার্টিতে পলাশপ্রিয়াকে খুব সুন্দর লাগছিল। খুব সেক্সি। অনেকক্ষণ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল প্রবুদ্ধ। মা-মরা মেয়েটাকে জয়নগর থেকে নিয়ে এসেছিল। ওর বাবা ওকে বিক্রি করে দিতে চেয়েছিল এক পয়সাওয়ালা শেঠের কাছে।

পলাশপ্রিয়াকে সৌদি নিয়ে যেত আনন্দরাম জয়পুরিয়া। লুঠে নিত নরম শ্বাস। হিরে ব্যবসায়ী। ওটা অবশ্য লোকদেখানো। আড়ালে নারী মাংসের বিশাল ফাঁদ। হাই প্রোফাইল এসকর্ট সার্ভিস চালায় আনন্দরাম। এক নম্বরের হারামি। প্রতি রাতে বিছানায় নিত্যনতুন নরম মেয়ে চাই। টেস্ট করার পর চালান হয়ে যায় বিদেশে। গোটা দেশে ঘুরে বেড়ায় আনন্দরামের স্পটার। খেলার মাঠে যেমন উঠতি প্রতিভা খুঁজে তুলে আনে স্পটাররা, ঠিক তেমনই আনন্দরামের স্পটারদের অভিজ্ঞ চোখ ঠিক খুঁজে নেয় পলাশপ্রিয়াদের।

জয়নগর স্টেশনে পলাশপ্রিয়াকে দেখে চোখ আটকে গিয়েছিল আনন্দরামের স্পটারের। গরিব ঘরের মেয়ে, পরনে সস্তার গেঞ্জি আর ফুল আঁকা স্কার্ট। সবে যৌবন ধরেছে মা-মরা মেয়েটির শরীরে। কমদামি পাতলা ব্রা, তার ওপর সস্তার গেঞ্জি। ভরন্ত বুকদুটো আরও উত্তুঙ্গ হয়ে ওঠে। রাস্তার ছেলেদের চোখ পড়ে। কলেজ-বন্ধুরাও ইয়ার্কি মারে। কেউ কেউ এগোতেও চায়। কিন্তু কী করবে পলাশপ্রিয়া, ওকে যে কলেজে যেতেই হবে। পড়াশোনাটা ভাল করে করতে হবে। বাবা কাজ করে সামান্য একটা গোডাউনে। মা ছিল মডেল, আর্ট কলেজের। মায়ের রূপ, শরীর সব পেয়েছে পলাশপ্রিয়া। মা-ই চাইত, লেখাপড়া শিখিয়ে অনেক বড় করবে একমাত্র মেয়েকে। বাবা চাইত না। কোনও চেনাশোনা ছেলে দেখে বিনে পয়সায় তার কাছে গছিয়ে দিতে চাইত। কিন্তু বাধা দিত পলাশি। একচিলতে ঘুপচি ঘরে থেকেও মেয়েকে অনেক বড় করার স্বপ্ন দেখত। কিন্তু কোথায় হল সে স্বপ্নপূরণ। ব্লাড ক্যানসারের মারণ ছোবল সব স্বপ্ন ছারখার করে দিল। আর্ট কলেজে তখনও তার কদর। সিনিয়র ছাত্ররা ওকেই চাইত সিটিংয়ের জন্য। কিন্তু একটা সময় পর আর পারল না। লড়াই শেষ হয়ে গেল পলাশির। অন্ধকার ঘরটাতে ডুকরে উঠল পলাশপ্রিয়া। আর চোখদুটো চকচক করে উঠল পলাশের। মনে মনে ভাবল, যাক, আপদ বিদেয় হয়েছে। ব্লাড ক্যানসারের খরচ কি আর টানা যায়! পলাশিকে কিন্তু ভালবেসেই বিয়ে করেছিল পলাশ। মেয়ে হওয়ার পর থেকেই সে ভালবাসা উবে যায়। পলাশি মরে সুযোগ করে দিল পলাশকে। এবার পলাশপ্রিয়াকে বিক্রি করে দিতে হবে। সুযোগ এসে গেল। জয়নগর স্টেশনে পলাশপ্রিয়ার রূপ-যৌবনে মাত আনন্দরামের স্পটার। খোঁজখবর করে একদিন ধরে ফেলল পলাশকে। সব রফা হয়ে গেল। পাঁচ লাখ পাবে পলাশ। আনন্দরামের হাতে চলে যাবে পলাশপ্রিয়া। ঘুণাক্ষরেও জানতে পারেনি মা-মরা মেয়েটা। বাপ তার এত বড় সর্বনাশের প্ল্যান ছকে ফেলেছে। রাতের অন্ধকারে বেহুঁশ করে পলাশপ্রিয়াকে তুলে নিয়ে যাবে আনন্দরামের স্পটাররা। মদত দেবে পলাশ। সঙ্গে সঙ্গে পেমেন্ট। কিন্তু বেচারি পলাশ, আনন্দরামের ধূর্তামি কি আর তার পক্ষে বোঝা সম্ভব ? পারেওনি। গুনতে হল অনেক বড় মাসুল।

ডিসেম্বরের ঠান্ডা। জয়নগরের ঘোষপাড়া বস্তির সামনে এসে দাঁড়াল গাঢ় লাল এসইউভি। ভিতরে তিনজন। ঘড়িতে রাত দেড়টা। অন্ধকারে শ্মশানের স্তব্ধতা। মাঝে মাঝে দু-একটা কুকুর ডেকে উঠছে ওই দূরে। অপেক্ষা করছিল পলাশ। খাটে তখন পাশ ফিরে শুয়ে পলাশপ্রিয়া। কিছু শোনেনি সে, বোঝা তো পরের কথা। ঘরের বাইরে ছোট্ট দাওয়াটা চারপাশে বস্তা দিয়ে ঘেরা। ওখানেই খাটিয়া পেতে শোয় পলাশ। চাদর মুড়ি দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে সে। গাড়ি থেকে তখন নেমে পড়েছে তিনজন। আস্তে আস্তে দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকল। পলাশপ্রিয়ার নাকের কাছে রুমাল চেপে ধরল। তারপর চ্যাংদোলা করে সোজা গাড়িতে। পলাশপ্রিয়ার পরনে সস্তার নাইটি। নরম শরীরের স্পর্শে জেগে ওঠে স্পটারের পৌরুষ, কিন্তু নিরুপায়, একদম আনকোরা অবস্থায় পৌঁছে দিতে হবে বসের কাছে। হাত পাতল পলাশ, আনন্দরামের স্পটারদের সামনে। কালো চামড়ার জ্যাকেটের মধ্যে থেকে বেরিয়ে এল একগুচ্ছ নোট। পলাশের হাতে দিয়ে হুস করে বেরিয়ে গেল এসইউভি। ঘরে এসে বাল্বটা জ্বালল পলাশ। সব অচল পাঁচশো আর হাজারের নোট। মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল, অতিচালাকের গলায় দড়ি। ঠিক তখনই মা-মরা মেয়েটার জন্য বুকটা হু হু করে উঠল পলাশের। হাজার হোক, নিজেরই তো মেয়ে। নিজের চারিত্রিক পরিবর্তনে নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে হল পলাশের। পলাশির মুখটাও চোখের সামনে ভেসে উঠেই মিলিয়ে গেল।

দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে তীব্রগতিতে ছুটে চলেছে গাঢ় লাল এসইউভিউ। স্টিয়ারিংয়ে একজন, পিছনের সিটে দুজন। দুজনের কোলের ওপর বেহুঁশ হয়ে শুয়ে পলাশপ্রিয়া। গাড়ি চালানোর হাত অত্যন্ত পাকা প্রদ্যুতের। বিএ পাশ, পয়সার অভাবে আর পড়াতে পারেনি বাবা-মা। এ-কাজ সে-কাজ করতে করতে হঠাত্ আনন্দরামের বিশাল সাম্রাজ্যের চৌহদ্দিতে ঢুকে পড়া। কীভাবে? তা আর এখন মনে করতে চায় না বর্ধমানের ছেলেটি। পেটাই চেহারা, ক্যারাটেতে ব্ল্যাকবেল্ট। প্রদ্যুত্ও হয়ে গেল আনন্দরামের স্পটার। অনেক খারাপ কাজ করেছে। অনেক মেয়েকে তুলে এনেছে। কিন্তু পলাশপ্রিয়ার এতবড় সর্বনাশ সে কীভাবে করবে? পলাশি যে তারই মায়ের বান্ধবী। প্রণতিও যে আর্ট কলেজের মডেল ছিল। পলাশি আর প্রণতি দুজনেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা সিটিং দিয়েছে প্রবুদ্ধকে। প্রবুদ্ধ তখন ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র। পলাশপ্রিয়ার পরিচয় জানতে পেরে মনখারাপ হয়ে যায় প্রদ্যুতের। পলাশপ্রিয়াকে তুলে আনার অ্যাসাইনমেন্টটা পেয়ে একটু খুশিও হল। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে, যে করেই হোক, আনন্দরামের কবল  থেকে বাঁচাতেই হবে মা-মরা মেয়েটাকে।

প্রবুদ্ধ সান্যালের ফোন নম্বর জোগাড় করে ফোনে ধরে ফেলে প্রদ্যুত্। সব কথা খুলে বলে। প্রবুদ্ধর মনে ভিড় করে আসে অনেক স্মৃতি। পলাশি, প্রণতি, পলাশপ্রিয়া, প্রদ্যুত্, সব কেমন যেন মনের মধ্যে  জট পাকিয়ে যায়।

অনেকটা সময় পিছনে ফিরে যায় প্রবুদ্ধ।

পলাশি, তোমার নিতম্ব দুটো আরও ভারী হয়েছে মনে হচ্ছে? কী, বর ছাড়া আর কারও হাত পড়ছে বুঝি?

ন্যাকা, কিছু জানে না। কার আদরে আমি গলে যাই, জানো না, না! দস্যু একটা। ইজেলে টাঙানো ক্যানভাসে তখন পেনসিলের কয়েকটা আঁচড়। একটা নারী শরীর পেনসিলের শেডে বড্ড জীবন্ত। প্রবুদ্ধ সান্যাল আর্ট কলেজের সেরা ছাত্র। তার পেনসিল শেড সাদা ক্যানভাসে কথা বলে। ছবি শেষের পর কেউ বলবেই না, এটা স্কেচ। প্রবুদ্ধর সিটিং ডিমান্ডটা তাই একটু বেশিই। সেরা মডেলদের তার সামনে বসতে বা দাঁড়াতে হবেই। পলাশি তখন আর্ট কলেজের সেরা মডেল। জয়নগর থেকে আসে-যায়। পলাশের সঙ্গে প্রেম-বিয়ে। প্রতি রাতে পলাশের আদরে আত্মহারা হয়ে যায়। কিন্তু সকালে উঠে ট্রেন ধরা চাই। আজ কি প্রবুদ্ধকেই সিটিং দিতে হবে?

যেদিন প্রথম প্রবুদ্ধ ওকে পজিশন বলেছিল, একটু লজ্জাই পেয়েছিল পলাশি। চোখে রিমলেস চশমা, কী গভীর আর তীক্ষ্ণ চোখদুটো। ঝাঁকড়া চুলগুলো বড্ড এলোমেলো। সাদা গোলগলা টি-শার্টের ওপর বড় বড় কালো হরফে লেখা – Go deep। deep মানে গভীর, জানত পলাশি। কিন্তু ঠিক কতটা গভীরে যেতে চায় প্রবুদ্ধ, জানত না। যেদিন প্রবুদ্ধ ওকে গভীরে নিয়ে গেল, ঠিক সেদিন থেকেই পলাশি গলতে শুরু করল। শরীরে-মনে। ইজেলটা সেট করে প্রবুদ্ধ কাছে এসে দেখিয়ে দিত, ঠিক কীভাবে স্তনের নীচে হাত রেখে দাঁড়াতে হবে পলাশিকে।

ঠিক পাকা কয়েত বেলের মতো পুরুষ্ট দুটো বুক পলাশির। গম-রঙা উরু, সমুদ্রের গভীরতা নাভিবলয়ে। নিশি যাপনের অভিসার আড়ি পাতে উরুসন্ধিতে।

একদিন ওর কানে গরম শিসে ঢেলে দেয় প্রবুদ্ধ।

তোমার স্তনদুটোয় দম আছে। আমি বেদম হতে চাই। গাঢ় বাদামি রঙের বৃন্ত দুটো শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে।

ওদিকে চোখ রেখে প্রবুদ্ধ বলে ওঠে, ঠোঁট রাখতে চাই।

সেদিন পলাশির বৃন্তে ঠোঁট রেখেছিল প্রবুদ্ধ। শরীরের আরও অনেক জায়গায় ঘুরে ফিরে বেড়িয়েছিল চেন স্মোকার প্রবুদ্ধর ঠোঁট। পলাশির সমান্তরাল, আড়াআড়ি ঠোঁটগুলোকে চিরে দিয়েছিল প্রবুদ্ধর অভিজ্ঞ ঠোঁট। প্রণতির ঠোঁটেও যে ততদিনে ঠোঁট রেখেছে প্রবুদ্ধ, জানত পলাশি। বর্ধমান থেকে আসত প্রণতি। প্রবুদ্ধও তো বর্ধমানেরই ছেলে। চেনাশোনা ছিল। অত্যন্ত উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলেটা শিল্পী হতেই চেয়েছিল। বাবার সায় ছিল না। মা রত্না ছেলেকে নিয়ে কলকাতায় চলে আসেন। আর্ট কলেজে ভর্তি হয় প্রবুদ্ধ। নাকতলায় ফ্ল্যাট নেন রত্না। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে চাকরি করতেন। ছেলেকে বড় করে তুলতে অসুবিধে হয়নি। মায়ের রূপ পেয়েছিল প্রবুদ্ধ। অমন কাটাকাটা চোখমুখ দেখে যে কোনও মেয়ের পা পিছলে যেতে বাধ্য। তেমনই পিছলেছিল পলাশি, প্রণতি, প্রিয়া, পারমিতা, প্রার্থনা।

মা অফিসে, নাকতলার ফ্ল্যাটে পলাশিকে নিয়ে আসে প্রবুদ্ধ। ধবধবে সাদা বিছানায় শঙ্খ লেগেছিল দুটো শরীর। পলাশ কোনওদিন ওর নাভিমূলে মুখ দেয়নি। নাকতলার ফ্ল্যাটে প্রবুদ্ধ শিক্ষা দেয় এক অজানা সুখের। যৌনতার পাঠশালায় শিক্ষক-ছাত্রী। এত আনন্দ যে কোনওদিন পায়নি মেয়েটা। পলাশকে ভালবেসে বিয়ে করলেও প্রবুদ্ধ তাকে সম্মোহিত করে দিয়েছিল।

তুমি এত সুন্দর কেন?

পলাশির দুই গমরঙা উরুর মাঝে মুখ ডুবিয়ে বলে উঠেছিল প্রবুদ্ধ। নাভির গভীর গর্ত থেকে পিছলে নামে রুপোলি পথ। পিছল পথের আঁকে-বাঁকে লুকিয়ে অপার মুগ্ধতা। পুরুষ যেখানে দর্পভরে রাঙিয়ে তোলে গভীর গোপন মধুভাণ্ড। ক্যানভাস আর পলাশির যৌবনসুষমা কখন যেন এক হয়ে ধরা দেয় প্রবুদ্ধর হাতছানিতে। রত্নাদেবীর আদরের বাবিন আরও গভীরভাবে চিনে ফেলে নারী শরীর। চিনতে যে ওকে হবেই। নারী শরীরের প্রতিটি বাঁকে যে লুকিয়ে রয়েছে শিল্প-শিক্ষা। ওকে যে সেরা শিল্পী হয়ে উঠতেই হবে। দেশ ওকে চিনবে, বিশ্ব ওকে চিনবে।

তার আগে ওকে চিনে নিতে হবে নারী শরীর। আরও গভীরে যেতে হবে। তাই তো ওর প্রতিটা টি শার্টের ওপর লেখা থাকে, Go deep।

মায়ের অজান্তেই নাকতলার ফ্ল্যাটে দিন দিন দীর্ঘ হতে থাকে প্রবুদ্ধ আরও গভীরে যাওয়ার পথ। গভীর চোখের ছেলেটার প্রেমে পড়তে খুব বেশি সময় লাগেনি প্রিয়া, পারমিতা, প্রার্থনাদের। প্রণতির সঙ্গে তো সেই ছোটবেলা থেকেই বন্ধুত্ব ছিল। আর্ট কলেজে মডেল হয়ে আসার পর বন্ধুত্ব শরীরী হতে খুব বেশি সময় লাগেনি। পলাশি ভার্জিন ছিল না। কিন্তু প্রণতিকে ভার্জিন হিসাবেই পেয়েছিল প্রবুদ্ধ। ওর প্রথম রক্ত-দর্শন। বিছানায় নয়, ওরা মিলিত হয়েছিল কিচেন টেবিলে। রক্তের দাগ বিছানায় লাগতে দেয়নি প্রবুদ্ধ।

প্রিয়া, পারমিতার হাত ধরে কতদিন যে নাকতলা এসেছে প্রবুদ্ধ, তার হিসেব নেই। কলেজের হলঘরে ওরা নিজেরাই নগ্ন হয়ে সিটিং দিত। কিন্তু নাকতলার ফ্ল্যাটে ওদের নিজের হাতে নগ্ন করত প্রবুদ্ধ। ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখত চোখ, নাক, ঠোঁট, গাল, গলা, বুক, নাভি, নাভিমূল, নিতম্ব, উরু। পায়ের আঙুল ঠোঁটে নিয়ে আদর করত। নরম নারী শরীর আরও নরম হয়ে উঠত প্রবুদ্ধর আদরে।

প্রার্থনা অবশ্য কোনওদিন নাকতলার ফ্ল্যাটে যায়নি। কোটিপতি বাপের উচ্ছনে যাওয়া মেয়ে। পড়াশোনায় তুখোড়। অন্য অনেক কিছুতেই অনেককে হার মানাতে পারে। তীব্র গতিতে বাইক চালায়, পার্টি করে, মদ খায়। পুরুষবন্ধুরা নেহাতই ওর খেলার সঙ্গী। আদর করেছে, কিন্তু ওর শরীরে প্রবেশ করতে দেয়নি কাউকে। সেই মেয়েরই হঠাত্ মাথায় ভূত চাপে, আর্ট কলেজের ন্যুড মডেল হবে।

অন্য সোসাইটির মেয়ে। মা-বাবা অত আতুপুতু করে খেয়াল রাখে না মেয়ের। ওদেরও নিজস্ব একটা জগত্ আছে। বড় লোকেদের গ্লাসে মদের ফোয়ারা ওঠে। সঙ্গে আরও অনেক কিছু। কোকেন, মারিজুয়ানার নেশা আর ওয়াইফ সোয়াপিং, মানে স্ত্রী অদল-বদল করে সেক্স। গ্রুপ সেক্স, অর্জি, থ্রিসাম-ফোরসাম কিছুই বাদ যায় না। প্রার্থনা বড় হতে হতে একটু একটু করে জানতে থাকে এই সমাজকে। অভ্যস্ত হতে থাকে। শরীর তো তৈরি হতে থাকেই, সঙ্গে মনও। একা বিছানায় শুয়ে  নিজেকে সুখ খুঁজে নিতে হয় না। ফোন সেক্স, ভিডিয়ো চ্যাটে প্রতি রাতে ওপ্রান্তে হাজির হয়ে যায় কোনও পুরুষবন্ধু। প্রতিদিন নতুন। কেউই ওর প্রেমিক নয়, সবাই বন্ধু। অনেকে শুধুই ফেসবুক ফ্রেন্ড, প্রার্থনার রাতের অতিথি। রাতকে রঙিন করে তোলে। প্রার্থনা শরীরী সুখ পায়, মনও খুশিতে ভরে ওঠে। ছেলেগুলোকে নষ্ট করাতেই ওর আনন্দ। ভিডিয়ো চ্যাটে প্রার্থনা ডমিনেট করে। নেশা করতে হয় ওপ্রান্তের ছেলেটিকে। সিগারেটের পর সিগারেট, মদ। কখনও কখনও সিগারেটে গাঁজা ভরে টান। এমন নেশায় বুঁদ না হতে পারলে প্রার্থনার সঙ্গে ভার্চুয়াল সেক্স করা যাবে না। চোখের সামনে প্রার্থনা দেখতে চায়, কীভাবে পুরুষগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ওর কলেজ বা ফেসবুক সার্কেলের বেশ কয়েকজন ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্টকে এভাবেই ও মাত্রাতিরিক্ত যৌনতার পঙ্কিলতায় ডুবিয়ে দিতে থাকে দিনের পর দিন, রাতের পর রাত। নিজে পর্ন দেখে না, কিন্তু ওর পুরুষবন্ধুদের পর্নে আসক্ত করে তুলতে থাকে। একদিন কলেজ থেকে ফিরে বাবার ঘরের ভেজানো দরজায় চোখ রেখে প্রার্থনা কেঁপে উঠেছিল। ওরই দুই প্রিয় বান্ধবী প্রজ্ঞা আর পামেলা ওর বাবার বিছানায় ঝড় তুলছে। অসাড় হয়ে আসছিল হাঁটু দুটো। তারপর সেন্সলেস হয়ে যায়। যখন জ্ঞান ফেরে, তখন দেখে হাসপাতালের বিছানায়। হঠাত্ চোখের সামনে ভেসে ওঠে দুপুরের ছবিটা। কীভাবে সম্ভব হল, আজও ভেবে পায় না প্রার্থনা। কেন প্রজ্ঞা বা পামেলা ঘন ঘন ওদের বাড়ি আসত, আগে বুঝতে পারেনি। তবে ওদের দোষ দেয়নি। নিজের বাবার ওপর রাগ, বিতৃষ্ণা বাড়তে থাকে। নিজের চোখে দেখেছিল প্রজ্ঞা, পামেলার চোখে চরম সুখের অনুষ্ঠান। ওর বাবা ওদের ওই অসহ্য সুখে ভাসিয়ে দিত বলেই ওরা বারবার আসত। বাবার ওপর প্রতিশোধটা তাই অন্যভাবে নিতে চেয়েছিল প্রার্থনা। ওর পুরুষবন্ধুদের নষ্ট করার গুরুদায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিল।

সেই প্রার্থনা হঠাত্ নিজেকে এক অন্য জগতে ডুবিয়ে দিতে চাইল। আর্ট কলেজের ন্যুড মডেল হয়ে গেল। এবং চোখে পড়ল প্রবুদ্ধ সান্যালের। পলাশি, প্রণতি, প্রিয়া, পারমিতারা গরিব বাড়ির মেয়ে, কিন্তু প্রার্থনা তা নয়। ওর শরীরের জেল্লা, তটভূমি ওদের থেকে আলাদা। প্রার্থনার সিটিংয়ে আরও ভাল আঁকতে শুরু করল প্রবুদ্ধ। প্রার্থনার গোলাপি বৃন্ত বেয়ে টুপটাপ ঝরে পড়ে কামনার অশনি সংকেত। নাভিমূলের কুঞ্চিত বালুকাবেলায় অবগাহনের হাতছানি। আর্ট কলেজের করিডরে যেদিন প্রার্থনার কাঁধে হাত রাখল প্রবুদ্ধ, ঈষত্ নীল চোখের দিকে যখন তাকাল, প্রার্থনার শরীর-মনে এক অদৃশ্য ঢেউ বয়ে গেল। ওর ভিডিয়ো চ্যাটের পুরুষদের থেকে প্রবুদ্ধকে অনেক আলাদা মনে হল। প্রকৃত পুরুষ বলে মনে হল, যাকে ভালবাসা যায়, শরীর দিয়ে, মন দিয়ে। প্রবুদ্ধর প্রেমে পড়ল প্রার্থনা। প্রবুদ্ধ ওর শরীরের প্রেমে পড়ল। নাকতলার ফ্ল্যাটে যেতে চাইল না প্রার্থনা। নিজের বাড়িতে, নিজের বিছানায় প্রবুদ্ধকে শরীর দেবে। ওর বাবা-মার চোখের সামনে, বারবার। ওর বাবার ওপর প্রতিশোধ নেবে।

শনিবার আমার বাড়ি এসো।

কিন্তু আমার স্টুডিয়োর কাজ চলছে, একটু দেখাশোনা করা দরকার।

তুমি আমাকে চাও না?

চাই তো, ভীষণভাবে চাই। নিজের করে চাই।

কতটা নিজের?

সবটা।

পারবে তো!

তুমি আমার হবে?

হতে চাই।

আর্ট কলেজের ফাইনাল ইয়ার চললেও ততদিনে শহরের নাম-করা গ্যালারিতে প্রবুদ্ধর ছবির প্রদর্শনী হয়ে গেছে অনেকগুলো। ছবিও বেশ ভাল দামেই বিক্রি হয়েছে। হাতে তখন বেশ ভালই টাকা। ফলে নিজের স্টুডিয়ো করার তোড়জোড়। গড়িয়ায় একটা ফ্ল্যাট কিনে ফেলেছে। সেখানেই চলছে স্টুডিয়ো তৈরির কাজ।

হাজারো ব্যস্ততার মাঝেও শনিবার প্রার্থনার বাড়ি গেল প্রবুদ্ধ। দুপুরে। কলিং বেলের শব্দে দুপুরের ভাতঘুমটা ভেঙে গেল পঙ্কজের।

দরজা খুলে দাঁড়াতেই সামনে এল সুদর্শন যুবা।

কাকে চাই?

প্রার্থনার কাছে এসেছি।

কী নাম? কী ব্যাপার?

ও আমায় আজ ডেকেছিল। আমি প্রবুদ্ধ সান্যাল। এই শহর আমায় এই নামেই চেনে।

পঙ্কজের বেডরুমে ঠিক মাথার কাছে দেওয়ালে একটা বিশাল অয়েল পেন্টিং আছে। এক নগ্নিকার স্তনদানের দৃশ্য।

কদিন আগে শহরের নামী এক প্রদর্শনী থেকে ছবিটা কিনেছে পঙ্কজ।

নীচে টানা হরফে লেখা, প্রবুদ্ধ সান্যাল। শিল্পের কদর করে পঙ্কজ। কিন্তু শিল্পীরও কি?

ততক্ষণে বাবার পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে মেয়ে। প্রবু্দ্ধর হাত ধরে টেনে নেয় প্রার্থনা, এসো।

কী ব্যাপার, তুমি যাকে-তাকে বাড়িতে ঢোকাবে?

পঙ্কজের কথায় ফোঁস করে ওঠে প্রার্থনা- কেন বাবা? তুমি আমারই বান্ধবীদের যখন-তখন বাড়িতে ঢোকালে আপত্তি নেই, তাদের বিছানায় নিয়ে গিয়ে তুললে সমস্যা নেই, আমার বন্ধুকে বাড়িতে ডাকলেই মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে?

প্রবুদ্ধর হাত ধরে নিজের ঘরে টেনে নিয়ে গেল প্রার্থনা। প্রার্থনার শরীরে টাইট গোলাপি গেঞ্জি। বুকে লেখা- Love Me। হাঁটু পর্যন্ত একটা পাতলা রংবেরঙের ট্রাউজার। হাত ও পায়ের নখে সু্ন্দর করে রং করা। কপালে কালো রঙের ছোট্ট একটা টিপ। ফর্সা, সুন্দর মেয়েটাকে অন্যরকম লাগছে। অপলক তাকিয়ে রয়েছে প্রবুদ্ধ। ঘরে অতি-দামি আসবাব। গোটা বাড়িতে আভিজাত্যের আস্তরণ। সেও কম-বড়লোকের বাড়িতে জন্মায়নি। তবে, প্রার্থনা যে সোনার চামচ মুখে দিয়ে জন্মেছে, তার চিহ্ন সর্বত্র।

কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছিল প্রবুদ্ধ। সন্বিত ফিরতে বুঝতে পারে একজোড়া তপ্ত, সুগন্ধী ঠোঁট ওর ঠোঁটদুটোকে ফালাফালা করে দিতে চায়।

প্রার্থনা, ছাড়ো, দরজা খোলা।

থাক, খোলাই থাকবে। তুমি আমায় আদর করো। একটানে গেঞ্জিটা মাথার ওপর দিয়ে গলিয়ে খাটে ছুড়ে ফেলে প্রার্থনা। ঘরে ব্রা পরেনি। লোভাতুর নরম ভীতু পায়রার মতো হাতছানি দিয়ে ডাকছে প্রবুদ্ধকে। প্রবুদ্ধর পৌরুষ জাগ্রত।

খাটে বসে প্রার্থনা। উত্তেজনায় ওঠানামা করছে বুক দুটো। কাছে এসে মেঝেয় হাঁটু গেড়ে বসে প্রবুদ্ধ। কোমরটা জড়িয়ে ধরে। মাথাটা চেপে ধরে দুই পীনোন্নত পয়োধরের মাঝে। কেঁপে ওঠে প্রার্থনা। মাথার চুল খামচে ধরে। বুক থেকে নাভি। উঠে দাঁড় করিয়ে দেয় প্রার্থনাকে। একটানে ট্রাউজারটা টেনে নামিয়ে দেয় প্রবুদ্ধ। মুখটা চেপে ধরে নরম গিরিখাতে।

কী হচ্ছে এসব? জাস্ট স্টপ ইট। খোলা দরজার বাইরে কখন যে এসে দাঁড়িয়েছে পঙ্কজ। দুহাত কোমরে, চোখ রক্তবর্ণ।

ছিটকে উঠে দাঁড়ায় প্রার্থনা। আই সে গেট আউট। গেট আউট ফ্রম হিয়ার। হি উইল ফাক মি নাউ। এখানে, এক্ষুনি। তোমার দেখার হলে দেখো, না হলে গেট লস্ট। তোমার লজ্জা করে না, যখন প্রজ্ঞা আর পামেলাকে বিছনায় এনে তোলো। আমি সতী নই। থাকতেও চাই না। তোমাদের সমাজকে আমি চিনি। আমিও এই সমাজেরই মেয়ে। অন্য রকম কোনও শিক্ষা তোমরা আমায় দাওনি। আমি আমার মতো করে বাঁচতে চাই। প্রবুদ্ধ, প্লিজ কাম। কাম, ফাক মি।

একবার পেছন ফিরে তাকিয়ে প্রার্থনাকে ফের জড়িয়ে ধরে প্রবুদ্ধ। কোলে তুলে নেয়। নিজের জিন্সটা খুলে ফেলে। উদ্দাম সুখের সাগরে উথাল পাথাল ঢেউ। কামনার রসসিঞ্চনে ডুবতে থাকা। এই হেমন্তের গোধূলিবেলায় তীক্ষ্ণ ফলায় বিদ্ধ হতে থাকা এক কন্যা। প্রতিশোধের আগুন ছড়িয়ে দিচ্ছে এঘর থেকে ওঘর। শীত্কারে কাঁপতে থাকে দেওয়াল। নিজেকে আর ধরে রাখতে পারে না প্রবুদ্ধ। প্রার্থনাকে কোলে নিয়ে গোটা ঘর দাপিয়ে বেড়িয়েছে। আর পারছে না। এ দৃশ্য বেশিক্ষণ সহ্য করতে পারেনি পঙ্কজ। চলে গেছে। প্রবুদ্ধও সর্বশক্তি ঢেলে দিয়ে প্রার্থনাকে নীল সাগরে ডুবিয়ে দেয়। প্রবুদ্ধর পিঠে প্রার্থনার নখ চেপে বসে। ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরোয়। কিন্তু রক্ত কোথায়?

রক্তদর্শন তো হল না।

বিশ্বাস করো প্রবুদ্ধ, আমি কিন্তু ভার্জিন। তা হলে? প্রবুদ্ধ বুঝতে পারে, অনেক আগেই হাইমেন ছিঁড়ে গেছে প্রার্থনার। হয়ত বাইক চালাতে গিয়ে, বা সাঁতারে। বেশি ভাবতে চাইল না প্রবুদ্ধ।

বিশ্বাস করো প্রবু্দ্ধ, তুমিই কিন্তু প্রথম। সো মেনি গাইজ টাচড মি, বাট নো ওয়ান এন্টারড। ইউ আর দ্য ফার্স্ট হু পেনিট্রেট। তা হলে কেন রক্ত বেরোল না, বলো।

ইটস ওকে বেবি। ডোন্ট বি আপসেট। আই ডোন্ট মাইন্ড অ্যাট অল।

ওকে, তুমি একটু থাকো। আমি তোমার সঙ্গে চলে যাব।

কোথায়?

কেন, তোমার ফ্ল্যাটে। জায়গা হবে না আমার?

হ্যাঁ, কিন্তু তোমার বাড়ি, তোমার মা-বাবা!

না, ওদের সঙ্গ আমি ত্যাগ করতে চাই, প্রবু্দ্ধ। ওরা আমায় ভালবাসে না। ওরা ওদের সমাজকে ভালবাসে। ওদের স্ট্যাটাসকে ভালবাসে। মেয়ের জন্য ওদের কোনও সময় নেই। আমি এই সমাজ চাই না। আমাকে তোমার সঙ্গে নিয়ে যাবে না?

যাব, চলো।

নিজের একটা ব্যাগে যতগুলো জামাকাপড় ধরে, ভরে নিল প্রার্থনা। দামি দামি ঘড়ি, গ্যাজেট, অ্যাকসেসরিজ, সব ফেলে রেখে গেল।

একটু বোসো, আসছি।

বাবা-মার ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে প্রার্থনা বলল, আমি প্রবুদ্ধর সঙ্গে চলে যাচ্ছি। ওর সঙ্গেই থাকব। তোমরা তোমাদের স্ট্যাটাস, সমাজ নিয়ে থাকো। আমার কোনও দরকার নেই।

তোমার যাওয়া হবে না। এখানেই থাকতে হবে। আমরা তোমার জন্য ছেলে খুঁজে বিয়ে দেব। আমাদের কথা তোমাকে শুনতে হবে। তুমি তা শুনতে বাধ্য। কারণ, আমরা অঢেল অর্থ খরচ করে তোমায় বড় করে তুলছি। আমরা তোমার বাবা-মা। আমাদের প্রতিও তোমার কর্তব্য আছে। তুমি কচি খুকি নও।

হ্যাঁ বাবা, আমি কচি খুকি নই। আমি এখন অ্যাডাল্ট। তোমার কথা শুনতে আমি বাধ্য নই। আমি এই সমাজ চাই না। আই লাভ প্রবু্দ্ধ। হি ইজ আ সাকসেসফুল গাই। ওর সমাজটা তোমাদের থেকে আলাদা। ওর সঙ্গে আমি খুশিতে থাকব। আর তোমরা যদি আমায় জোর করো, আই উইল কমপ্লেন টু দ্য পুলিস।

মেয়ের কথা শুনে পঙ্কজ-দীপালি থ। মেয়ে তখন তাকিয়ে রয়েছে ওর বাবা-মার খাটের ওপরে দেওয়ালের দিকে। এক নগ্নিকা স্তনদান করছে। মুখটা যে অবিকল তারই মতো। হবে নাই বা কেন? ওই বিশাল অয়েল পেন্টিংয়ের নীচে লেখা নামটা তো কোনওদিন দেখাই হয়নি প্রার্থনার।

প্রবুদ্ধ একবার এদিকে এসো।

প্রবুদ্ধ ধীর পায়ে এসে দাঁড়ায়।

দেখো তো ছবিটার মেয়েটার মুখ কেন আমার মতো?

প্রবুদ্ধ চোখ তুলে তাকাতেই যেন চারশো চল্লিশ ভোল্টের বিদ্যুত্ ওর শরীরকে ঝাঁকুনি মেরে ছিটকে ফেলল। এ কী দেখছে ও? এটা দেখার জন্য প্রস্তুত ছিল না। এখনও পর্যন্ত ওর যে ছবিটা সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হয়েছে, সেটা যে ওর চোখের সামনে। প্রায় সতেরো লক্ষ টাকায় ছবিটা যে প্রার্থনার বাবাই কিনেছে, জানত না প্রবুদ্ধ। আর্ট কলেজে প্রার্থনার একটা সিটিংয়ে ছবিটা এঁকেছিল। ছবি শেষ করার পর প্রার্থনার আর দেখা হয়নি সেটা।

ওটা আমারই আঁকা। এগজিবিশনে পাঠিয়েছিলাম। ওখান থেকে মোটা দামে বিক্রি হয়। অত্যন্ত ধীর লয়ে কথাগুলো বলে থামে প্রবুদ্ধ সান্যাল।

প্রার্থনা সবেগে জড়িয়ে ধরে প্রবু্দ্ধকে। আমায় নিয়ে চলো এখান থেকে। আমি আর এক মুহূর্তও থাকতে চাই না এখানে।

আমি তো তোমায় জোর করে নিয়ে যেতে পারি না। না হলে তোমার বাবা হয়ত আমার নামে পুলিসে কমপ্লেন করবেন।

আমি শিল্পের কদর করি, শিল্পীরও। যে শিল্পীর আঁকা ছবি আমি সতেরো লক্ষ টাকা দিয়ে কিনতে পারি, তার নামে কমপ্লেন করব বলে মনে হয় আপনার? তা ছাড়া আমার মেয়ে যদি আপনাকে ভালবেসে থাকে, আপনিও ওকে ভালবাসেন কি না, জানি না, তবুও আমার মনে হয়, আমার মেয়ে হয়ত আপনার সঙ্গে ভালই থাকবে। আমার মেয়ের বিয়ে আপনার সঙ্গে আমরা ধুমধাম করেই দিতে চাই, যদি আপনি বা আপনার পরিবার রাজি থাকে।

তোমাকে আমার জন্য কিচ্ছু করতে হবে না। আমারটা আমি নিজেই বুঝে নেব। আর আমি তো প্রবুদ্ধকে বিয়ে করছি না। আমরা লিভ ইন করব।

প্রবুদ্ধর হাত ধরে বাড়ি ছাড়ে প্রার্থনা। নাকতলার ফ্ল্যাটে এসে মায়ের সঙ্গে প্রার্থনার আলাপ করায় প্রবু্দ্ধ। প্রার্থনার সঙ্গে লিভ ইনের কথা বলে। রত্নাদেবী নিমরাজি হন। ছেলের সুখের জন্য একদিন স্বামীর ঘর ছেড়েছিলেন। আজও বিশেষ আপত্তি করতে পারলেন না। গতানুগতিকতায় প্রবুদ্ধ যে কোনওদিন গা ভাসায়নি, জানেন রত্না। তাই ছেলের অন্য রকম হয়ে যাওয়ার কিছু কিছু খবর কানে এলেও খুব বেশি কিছু বলতে পারেন না। আর্ট কলেজ, নারীসঙ্গ, সবই জানেন রত্না। প্রার্থনার সঙ্গে লিভ ইন করলে কি কিছুটা কমবে ছেলের অবাধ নারীসঙ্গ? সেই চিন্তা করেই নিমরাজি হয়ে যান রত্না। বাড়িতে একটা সঙ্গীও হবে। মন্দ কী! নাকতলার ফ্ল্যাটে প্রার্থনা মানিয়ে নিতে শুরু করল অন্য রকম ছেলেটাকে। আস্তে আস্তে গড়িয়ার ফ্ল্যাটে প্রবুদ্ধর স্টুডিয়ো জোর কদমে কাজ শুরু করে দিয়েছে। নিত্য নতুন মেয়ের আনাগোনা। নামী শিল্পী প্রবুদ্ধর মডেল হতে চায় সবাই। প্রবু্দ্ধর হাতের কাজ আর তার চোখ দুটো দেখে প্রায় সকলেই তার প্রেমে পড়তে চায়। প্রবুদ্ধ চায় না। তার প্রেম মানে প্রার্থনা। আর মডেলরা ওর কাছে শরীরী আকর্ষণ। প্রায় প্রত্যেকে। নারী শরীরের অলিগলিতে পথ হাঁটে প্রবুদ্ধ সান্যাল। আর একের পর এক জন্ম নেয় অসাধারণ সব শিল্প। লক্ষ লক্ষ টাকায় বিক্রি হয় সে সব ছবি। বিদেশেও পাড়ি দেয়। মাঝে মাঝেই বিদেশ ছুটতে হয় তাকে। মডার্ন আর্ট নিয়ে সেমিনার অ্যাটেন্ড করতে হয়। কেপটাউনের এমনই এক সেমিনারে প্রিসিয়ার সঙ্গে আলাপ। সেই আলাপ বিছানায় যেতে সময় নেয়নি বেশি দিন। স্কুলের চাকরি ছেড়ে প্রবুদ্ধর সঙ্গে ভারতে আসতে চায় প্রিসিয়া। কিন্তু প্রার্থনা, রত্নাদেবীকে কী বলবে প্রবুদ্ধ?

আই ওয়ান্ট টু গো টু ইওর হাউজ। প্লিজ বাই আ ফ্ল্যাট ফর মি। আই ইউল লিভ দেয়ার। ইউ উইল কাম সামটাইমস। আই ওন্ট মাইন্ড। আই ওনলি নিড ইউ, ইওর কোম্পানি, ইওর লাভ প্রবুদ্ধ।

প্রিসিয়া মের্কেল প্রবু্দ্ধর হাত ধরে ভারতের মাটিতে পা রাখল। রাজারহাটে ততদিনে আরেকটা ফ্ল্যাট কিনে ফেলেছে প্রবু্দ্ধ। প্রার্থনা, রত্না দেবী কেউই জানে না। ওই ফ্ল্যাটে থাকতে শুরু করল প্রিসিয়া। মাঝে মাঝে এসে থাকত প্রবুদ্ধ। উদ্দাম শরীরী খেলায় মেতে উঠত তারা। সেক্সের সব ছলাকলা প্রিসিয়ার নখদর্পণে। শরীরী নেশায় বুঁদ করে দেয় প্রবুদ্ধকে। গড়িয়ার স্টুডিয়োয় একদিন প্রিসিয়া সিটিংও দিল। অন্য রকম ছবি আঁকল প্রবুদ্ধ। ওদিকে রাজারহাটের ফ্ল্যাটে নানা রকমের লোকের আনাগোনা বাড়তে শুরু করেছে। ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি প্রবুদ্ধ। অন্ধের মতো বিশ্বাস করত প্রিসিয়াকে। একটু একটু করে খোলস থেকে বেরোচ্ছে প্রিসিয়া।

হঠাত্ কলকাতায় হানা দিল সাউথ আফ্রিকান পুলিসের একটা দল। ডাক পড়ল প্রবুদ্ধ সান্যালের। একটা ছবি চোখের সামনে মেলে ধরলেন অফিসার। চমকে উঠল প্রবুদ্ধ। প্রিসিয়া।

ইয়া, শি ইজ অ্যান ইন্টারন্যাশনাল ড্রাগ মাফিয়া। গট নিউ অ্যাসাইনমেন্ট ইন ইন্ডিয়া। অ্যান্ড শি ওয়াজ অপারেটিং ফ্রম ক্যালকাটা ইটসেল্ফ। ইউ হ্যাভ টু গো টু সাউথ আফ্রিকা মিস্টার প্রবুদ্ধ সান্যাল। অ্যান্ড ইউ আর আন্ডার অ্যারেস্ট।

বাট হোয়াই? হোয়াট হ্যাভ আই ডান?

ইউ অয়্যার হেল্পিং হার ইন দিজ স্মাগলিং।

নট অ্যাট অল স্যর। আই অ্যাম এন আর্টিস্ট। আই এম নট আ ড্রাগ ডিলার।

উই নো। বাট দেয়ার ইজ আ ফ্ল্যাট ইন রাজারহাট বাই ইয়োর নেম, হোয়ার শি ওয়াজ স্টেয়িং। ইউ নো হোয়ার শি ইজ, রাইট নাও?

নো স্যার, আই ডোন্ট নো। ইয়া, আই লাভড হার। বাট আই ডোন্ট নো এনিথিং অ্যাবাউট হার ডার্ক চ্যাপ্টার।

ইউ ওয়্যার ট্র্যাপড। বিকজ শি নিডেড অ্যান ইন্ডিয়ান, হুম শি ক্যান ইউটিলাইজ। বাট ইউ হ্যাভ টু গো টু কেপটাউন। অ্যান্ড ইউ হ্যাভ টু এক্সপ্লেন এভরিথিং।

নিজেকে বার বার দোষী মনে হতে থাকল প্রবুদ্ধর। কেন যে প্রিসিয়াকে ওর এত ভাল লাগল। দক্ষিণ আফ্রিকার পুলিস নিয়ে গেল প্রবুদ্ধ সান্যালকে। টিভিতে ব্রেকিং নিউজ, সব জানল প্রার্থনা, রত্নাদেবী। কান্নায় ভেঙে পড়ল মা। প্রার্থনা কাঁদল না। ওর মা-বাবার কথা মনে পড়তে লাগল। রত্নাদেবীর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে নাকতলার ফ্ল্যাট ছাড়ল সে।

আন্টি, আমি আর ফিরব না।

প্রায় দুবছর পর ফিরল প্রবুদ্ধ। প্রার্থনার খোঁজ করল। সে বিয়ে করে বিদেশে। পঙ্কজবাবুই বললেন, মেয়ে বাড়ি ফিরে ছেলে দেখার কথা বলল। এমন ছেলে, যে ওকে বিয়ে করে বিদেশে নিয়ে চলে যাবে। এদেশে ও আর থাকতে চাইল না।

পঙ্কজবাবুর চোখের কোণে একটু জলই দেখল প্রবুদ্ধ। প্রার্থনাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাস্তায় পা রাখল প্রবুদ্ধ সান্যাল।

শীতের রাতে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে গাড়িটা ছুটে চলেছে। পালসিটের কাছে টোলপ্লাজা পেরিয়ে বাঁদিকের অন্ধকারে তেরচাভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে  আরেকটি দুধসাদা এসইউভি। গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে বাঁ হাত রেখে বসে কাঁচা-পাকা চাপদাড়ির এক সুদর্শন ভদ্রলোক। চোখে রিমলেস চশমা। গাঢ় লাল এসইউভিটা প্রচণ্ড জোরে ব্রেক কষে দাঁড়াতে বাধ্য হল। ড্রাইভারের দরজা খুলে বিদ্যুত্গতিতে নেমে এল প্রদ্যুত্। রাস্তায় এভাবে গাড়ি রাখার জায়গা?

ঘন অন্ধকারের বুক চিরে সাদা এসইউভি থেকে নেমে এলেন সুঠাম  চেহারার ভদ্রলোক। সাঁ করে পকেট থেকে বেরিয়ে এল একটা রিভলভার। প্রদ্যুতের বুকে তাক করে রাশভারী কণ্ঠে বলে উঠলেন, গাড়ি চালানোটা বাচ্চাদের খেলা নয়। যেটা তোমার বুকের দিকে তাক করা, ওটা আসল, নকল নয়।

লাল গাড়ির দরজা খুলে তখন নেমে এসেছে আনন্দরামের আরও দুই স্পটার। ভিতরে তখনও বেহুঁশ পলাশপ্রিয়া।

কেউ আমার দিকে এগোনোর চেষ্টা কোরো না। আমার হাত ছবি আঁকে। তোমাদের বুকেও লাল রং দিয়ে ছবি এঁকে দেব। ওখানেই থেমে যাও।

হঠাত্ তীব্রগতিতে ওই চাপদাড়ি ভদ্রলোকের হাতটা টেনে ট্রিগারে চাপ দিল প্রদ্যুত্। তারপর আরও দ্রুতগতিতে উঠে পড়ল গাড়িতে। স্টার্ট দিল গাঢ় লাল এসইউভিটা। চাপদাড়ি ভদ্রলোকও উঠে পড়লেন নিজের গাড়িতে। ক্লাচ টিপে এক্সেলারেটরে চাপ দিতেই গাড়ি ছুটতে শুরু করল। অন্ধকার হাইওয়েতে পড়ে রইল আনন্দরামের দুই স্পটার।

দুটি গাড়িই একসময় গিয়ে থামল বর্ধমানের বীরহাটার ছোট্ট একটা বাড়ির সামনে। পলাশপ্রিয়াকে কোলে করে বাড়িতে ঢুকল প্রদ্যুত্। পিছনে সেই ভদ্রলোক। অনেকদিন পর ছেলেকে দেখে জড়িয়ে ধরল প্রণতি। পিছনেই দাঁড়িয়ে সেই ভদ্রলোক। হঠাত্ চোখ আটকে গেল প্রণতির।

তুমি!

প্রদ্যুত্, কোথায় পেলি ওকে? মেয়েটা কে? কী হয়েছে বাবা, আমায় খুলে বল।

প্রবুদ্ধ সান্যাল প্রণতির হাত চেপে ধরল।

সে অনেক কথা প্রণতি। বোসো বলছি, চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে এল প্রবুদ্ধর।

প্রবুদ্ধর গালে হাত রাখল প্রণতি। তোমার ছেলেকে চিনতে পারো? প্রদ্যুতকেও কোনওদিন বলিনি, লজ্জায়। আজ আমার মুক্তি।

আঁধার কাটছে। সকাল হচ্ছে, পুব আকাশে একটু একটু করে রং ধরছে। ভালবাসার রং, কাছে পাওয়ার রং, ফিরে পাওয়ার রং, পরিযায়ীর রং।

না, এ সকাল বড্ড ক্ষণস্থায়ী। অবৈধ আঁধারের অপেক্ষায়।

একটু একটু  করে চোখ মেলছে পলাশপ্রিয়া।

 

ছবি- গুগল আর্ট, পিন্টারেস্ট

Trending

Most Popular


Would you like to receive notifications on latest updates? No Yes