jamdani

দেবদোলে রাঙ্গানো মার্বেল প্যালেস

বনেদি বাড়ি মানেই তার ঠাটবাটই ভিন্ন। পুজো হোক কী পোশাক-আশাক অথবা খাওয়া-দাওয়া, সবেতেই আলাদা স্বাদ। চোরবাগান মল্লিক পরিবারের মার্বেল প্যালেসের দোল-উৎসবও এর থেকে ভিন্ন নয়। এই পরিবারের তিন গৃহদেবতা জগন্নাথ, রাধাকান্ত ও গোপীচাঁদবল্লভকে ঘিরে সারা বছরই চলতে থাকে এখানে অনুষ্ঠান। যার মধ্যে অন্যতম বনেদি বাড়ির দোল উৎসব। ভোর সাড়ে চারটে বাজলেই চোরবাগান মল্লিক পরিবারের মার্বেল প্যালেসে শুরু হয় দেবদোল উৎসব! নান নিয়মবিধি মেনে বর্তমানেও পালিত হয় এই অনুষ্টান। সাধারণত গৃহদেবতাকে কেন্দ্র করেই জমে উঠে দেবদোল উৎসব। এমনকি এই উৎসবকে কেন্দ্র করেই মার্বেল প্যালেসে আসর বসে গানবাজনার, ব্যবস্থা থাকে এলাহি খাওয়াদাওয়ারও। সব মিলিয়ে বর্তমান প্রজন্ম আজও ঐতিহ্য বয়ে নিয়ে চলছে।

বনেদি বাড়িগুলোর দোলযাত্রার ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত কলকাতার ইতিহাসও। বাবু কলকাতার পারিবারিক বৈভব প্রদর্শন ও সামাজিক মেলামেশা ছিল তার অন্যতম উদ্দেশ্য। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে রীতিনীতি, পারিবারিক বৈভব প্রদর্শনের পালা। কিন্তু বর্তমানেও জাঁকজমকপূর্ণ ভাবেই পালিত হয় এই উৎসব।

পরিবারের প্রথা অনুযায়ী প্রতিবছর, “দোল পূর্ণিমার দিন সন্ধ্যায় এ বাড়ির হোলিকা দহন বা চাঁচর পোড়ানোর অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। বাড়ির উঠোনে তৈরি করা হয় তিনটি চাঁচর-ঘর। তার সামনে রাখা হয় তিনটি রুপোর সিংহাসন। সেই সিংহাসনে বসানো হয় তিন দেবতার প্রতিভূ হিসেবে তিনটি শালগ্রাম শিলা। পুজো আরম্ভ হয় ঘিয়ের প্রদীপ ও মশাল জ্বেলে। সেই মশাল দিয়ে আগুন ধরানো হয় চাঁচর ঘরগুলিতে। রীতি অনুযায়ী, হোলিকা দহন সম্পূর্ণ হওয়ার পর শালগ্রাম শিলা তিনটিকে শোধন করে ফিরিয়ে আনা হয় মন্দিরে। সেখানকার মূল বিগ্রহের সামনে শালগ্রাম শিলা বসিয়ে আবার পুজো করা হয়। পাশাপাশি সেদিন অল্প আবিরও খেলা হয়। পরদিন সকাল সাড়ে চারটার সময় বসে দেবদোল। কাঠের দোলনায় শালগ্রাম শিলাগুলিকে বসিয়ে দোল দিয়ে সূচনা হয় দেবদোলের। তার পর বসে কীর্তনের আসর। এখানকার দোলের প্রসাদে মালপো একটি উল্লেখযোগ্য পদ। প্রস্তুতি আরম্ভ হয়ে যায় দোলের বেশ কিছু দিন আগে থেকে। মল্লিক পরিবারের সদস্যেরা এই সময়ে ব্যস্ত থাকেন পুজোর উপাচার সংগ্রহ থেকে আরম্ভ করে গৃহদেবতার সিংহাসন সাজানো, অতিথি আপ্যায়নের মিষ্টান্ন প্রস্তুতি ইত্যাদি নানা কাজে। পূর্বের রীতি অনুযায়ী এখনও বাড়ির ছেলেরা ঠাকুরদালানের সামনের উঠোনে তৈরি করেন খড়ের তৈরি ‘হোলিকা’ বা ‘মেড়া’। গৃহদেবতাকে ঠাকুরদালানের সিংহাসনে বসিয়ে সন্ধ্যার সময়ে পুজো করে আগুন দেওয়া হয় মেড়ায়। তারপর পুজো শেষ হলে আরম্ভ হয় গান। গান শেষ হলে হরির লুট দেওয়া হয় এবং সে দিন একটু আবির খেলাও হয় নিজেদের মধ্যে। সবশেষে হয় ভূরিভোজ।

তানিয়া চক্রবর্তী

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

Trending

Most Popular


Would you like to receive notifications on latest updates? No Yes