jamdani

কাট কার্ব? (পর্ব-২)

কাট কার্ব ফ্রম ইয়োর ডায়েট। এই ফর্মুলার ওজন কমানোর ইঁদুর দৌড়ে নেমেছেন অনেকেই। কিন্তু তলে তলে শরীরটা দুর্বল হয়ে পড়ছে না তো? বাসা বাঁধছে না তো কোনও রোগ? ডেইলি ডায়েটে কার্বোহাইড্রেটের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বেলিভিউ ক্লিনিকের সিনিয়র ডায়েটিশায়ান অর্পিতা ঘোষ দেবের সঙ্গে কথা বলল অদ্বিতীয়া।

কলকাতার এক নামী পাবলিশিং হাউসে সম্প্রতি জয়েন করেছে বসুন্ধরা। মেদিনীপুরের আধা শহর-আধা গ্রাম গোছের জায়গার মেয়ে। দিনে তিনবার ভাত খাওয়ার অভ্যাস। ঘুম থেকে উঠে ভাত ডাল পরিপাটি করে খেয়ে অফিসে আসা। দুপুরে ক্যান্টিনে ফের ভাত! বিকেলের স্ন্যাক্সে পাঁউরুটি বা ইডলি। রাতে পিজিতে ফিরে আবার ভাতের থালা নিয়ে বসা। শহরের প্রাণকেন্দ্রে অফিস। ছড়িয়ে ছিটিয়ে নানারকম চটপটা মুখরোচক খাবার। তবুও বসুন্ধরার ভাত ছাড়া কিছুতে রুচি নেই। এদিকে তিনবেলা ভাতের সৌজন্যে ওয়েট-মেশিনের কাঁটা ক্রমশ ঘুরেই চলেছে। ৫০ ছেড়ে আস্তে আস্তে ৬০-এর দিকে। কিন্তু এমনটা তো আগে হত না। গ্রামে থাকতেও তো বসুন্ধরার ডায়েট ছিল এমনই। তখন তো ওজন বাড়েনি! অফিস কোলিগরাও টিপ্পনী দিয়ে বলছে, ‘ আরে কী তিনবেলা করে ভাত খাস….কাট কার্ব!’ সে আবার কী? শেষ পর্যন্ত এক সহকর্মীর পরামর্শেই ডায়েটিশিয়ানের শরণাপন্ন

লাইফস্টাইল ও কার্বোহাইড্রেট ইনটেক

প্রথমেই বসুন্ধরার ক্ষেত্রে দেখা গেছে, সে যখন গ্রামের বাড়িতে থাকত, তখন তার একই খাদ্যাভাসে ওজন বাড়েনি। অথচ কলকাতায় চাকরি করতে এসে তিনবেলা ভাত খেয়ে তার ওজন বাড়ছে চড়চড় করে। কেন? উত্তরটা সহজ। তার জীবনধারায় পরিবর্তন। গ্রামে থাকতে প্রতিদিন বেশ কয়েক কিলোমিটার সাহক্লিং করে কলেজে যেত সে। সঙ্গে ছিল খেলাধুলোর অভ্যেসও। অধুনা ডেস্কওয়ার্কার বসুন্ধরার রুটিন থেকে বাদ হয়ে গেছে ফিজিক্যাল এক্সারসাইজ বিষয়টি। মডারেট ওয়ার্কার থেকে সে সোজাসুজি চলে এসেছে সেডেন্টারি লাইফস্টাইলে। ফলে প্রতিদিন তার ক্যালরি ক্ষয় হচ্ছে কম। স্বাভাবিকভাবেই শরীরে কার্বের প্রয়োজনও কমেছে। অথচ ডায়েট রুটিনে কোনওরকম পরিবর্তন আনেনি বসুন্ধরা। প্রয়োজনাতিরিক্ত কার্ব শরীরে জমা হয়ে যাচ্ছে ফ্যাট হিসেবে। এখানেই সতর্কতার প্রয়োজন। লাইফস্টাইল অনুসারে দৈনিক শরীরে কার্বের প্রয়োজন একেক রকম। একজন সুস্থ ও সঠিক ওজনের মানুষের জীবনযাত্রার ধরন অনুসারে কতটা কার্ব দরকার তার একটা তালিকা দেওয়া হল। এ প্রসঙ্গে শিশুদের কথা বলি। ওরা ফিজিক্যালি খুব অ্যাক্টিভ। ওদের বেসিক মেটাবলিক রেটও হাই। শিশুদের ডায়েটের তাই কার্বোহাইড্রেট-এর পরিমাণ কম হলে চলবে না। বাচ্চাদের শরীরের সঠিক বৃদ্ধির জন্য এমনিতেই প্রোটিনযুক্ত খাবার তাদের ডায়েট চার্ট থাকে যথেষ্ট পরিমাণে। কিন্তু কার্বোহাইড্রেটে ঘাটতি পড়লে, প্রোটিন তার কাজ বন্ধ করে শক্তি উৎপাদনে ব্যস্ত হয়ে পড়বে। তাতে বাচ্চার শরীরের বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হবে।

কোন কার্বোহাইড্রেট খাবেন?

প্রথমেই আসি, মোনো স্যাকারাইড কার্বের কথায়। এই সরল কার্বোহাইড্রেট সহজেই গ্লুকোজে ভেঙে যায়। চিনি মনো স্যাকারাইড কার্বোহাইড্রেটের উদাহরণ। ডাই স্যাকারইডের মধ্যে পড়ে ফ্যাকরোজ, ম্যালটোজ, সুক্রোজ প্রভৃতি। স্টার্চ জাতীয় পলি স্যাকারইড যেমন – চাল, পাকা কলা, আলু ইত্যাদি তাড়াতাড়ি পরিপাক ক্রিয়ার মাধ্যমে ভেঙে সরল গ্লুকোজে পরিণত হয়। নন স্টার্চ পলি স্যাকারাইড আবার শরীরে শক্তি দেয়না। ফাইবার তৈরি করে, যা ডাইজেশন সিস্টেম ঠিক রাখতে, পেট পরিষ্কার রাখতে, মেটএবলিক ডিজঅর্ডার দূর করতে সাহায্য করে। ডায়বেটিকদের ক্ষেত্রেও পলি স্যাকারইড জাতীয় কার্বোহাইড্রেট (কমপ্লেক্স) উপকারী। যারা ওজন কমাতে চান, কিংবা ডায়াবেটিক অথবা যাদের বসে বসে কাজ তারা এড়িয়ে চলুন রিফাইনড কার্বোহাইড্রেট, অর্থাৎ চিনি, ময়দা, ফ্রুটজুস ইত্যাদি। তার বদলে আপনার ডায়েটে থাকুক যথেষ্ট পরিমাণে কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট। যেমন – আটার রুটি সেঁকা, মাল্টিগ্রেন ব্রেড, ডালিয়া, ভুট্টা, খই, ডাল, গোটা ফল ইত্যাদি।

পরিশেষে বলা বাহুল্য ওজন কমানোর তাগিদে অনেকেই অনেক সময় কার্বোহাইড্রেট সীমিত করে প্রোটিন ও ফ্যাট ইনটেক বাড়িয়ে দিয়ে থাকেন। এই ধারণা এসেছে বিদেশে জনপ্রিয় ‘অ্যাটকিন ডায়েট’ থেকে। তবে মনে রাখতে হবে, পাশ্চাত্যের জলহাওয়া, জীবনযাত্রা, শারীরিক গঠন, কর্মক্ষমতা আলাদা। তাই তাদের শরীরে যে ডায়েট সুফলদায়ী তা আমাদের পরিস্থিতিতে নাও হতে পারে। একজনের শরীরে ঠিক কতটা কার্বোহাইড্রেট প্রয়োজন, কতটুকু না খেলেই নয়, তা বলতে পারেন একজন অভিজ্ঞ ডায়েটিশিয়ানই। কোনও রকম ক্যালকুলেশন ছাড়া, হাই ফ্যাট, লো কার্ব ডায়েট শুরু করলে লং রানে কিডনির উপর চাপ বাড়তে পারে। হার্টের সমস্যা হতে পারে। সামগ্রিক ভাবে এনার্জিতেও ঘাটতি আসতে পারে। বাড়তে পারে কোলেস্টোরলের মাত্রা ও ইউরিক অ্যাসিড। তাই কার্ব কাট করতে গিয়ে খামকা শরীরকে বিপদে ফেলে কী লাভ? বরং অভিজ্ঞ নিউট্রিশনিস্টের পরামর্শে আপনার শরীরের চাহিদা অনুসারে বানিয়ে নিন ডায়েটচার্ট।

 

Trending

Most Popular


Would you like to receive notifications on latest updates? No Yes