jamdani

লাজবাব জবা

কথায় আছে ‘যে পুজোর যে ফুল। কিছু বিশেষ ফুল ছাড়া সেই পুজো পূর্ণতা পায় না। আমরা যেমন জানি, কালীপুজোয় জবার ভূমিকা অনস্বীকার্য। এই ফুল কালীপুজোর অঙ্গ। পুরানে আছে এই ফুল মায়ের পায়ে দিলে মা প্রসন্ন হন। বাঙালির হৃদয়ে তাই এই ফুলের সর্বদা বিরাজমান। তাকে যেমন বাঙালি তার হৃদয়ে ভক্তির আসনে বসিয়েছে, তেমনই যত্ন করে বাগানে জবা ফুলের চারাও লাগায়। ঠাকুরের পায়ে একটু জবা ফুল দিলে মন আনন্দে ভরে ওঠে। পুজোর ফুল বলতে যেমন জবাকে প্রথমেই মনে পড়ে, তেমনই এই প্রসঙ্গে সেই রামপ্রসাদী গান চিরকালীন হয়ে আছে ‘ মায়ের পায়ে জবা হয়ে ওঠ না ফুটে মন। আমাদের সকলের পরিচিত জবা ফুল যে শুধুমাত্র পুজোর কাজেই ব্যবহৃত হয় তা নয়, এর উপকারিতা নানান দিকে বিচরণ করছে। পাঁচটি পাপড়িযুক্ত এই জবাফুলের ইংরেজি নাম হল Hibiscus Rosa- sinensis। এই চিরসবুজ পুষ্পধারী গুল্ম। উৎপত্তি পূর্ব এশিয়াতে। লাল বা হালকা গোলাপি, শ্বেত, রক্ত, হলুদ ছাড়া গুচ্ছ জবা, পঞ্চমুখী জবা দৃষ্টিনন্দন শুধু নয়, এটি রূপচর্চায় ব্যবহৃত অত্যন্ত উপকারী এক ফুল। শুধুমাত্র পূজোর উপচার হিসেবে নয়, এটি তেলে ফুটিয়ে চুলে লাগালে চায়ে, বানিয়ে খেলে অথবা বিভিন্ন প্যাক তৈরি করে মাখলে শরীর-স্বাস্থ্য ভালো থাকে, সৌন্দর্যরক্ষায় কাজ দেয়। এখন জেনে নিন এর ব্যবহারবিধি।

স্বাস্থ্যের জন্য জবরদস্ত জবাঃ

  • প্রাচীন কাল থেকে আয়ুর্বেদে বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে জবাফুলের রস ব্যবহার করার প্রচলন আছে। সাধারণভাবে, স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী। তো বটেই, এমনকী বিভিন্ন রোগ সারাতেও জবার জুড়ি নেই। জবা ফুলের চা ভরপুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি বার্ধক্যের ছাপ প্রতিরোধে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধেও সাহায্য করে। এছাড়াও বিভিন্ন ভাবে জবাফুল স্বাস্থ্যরক্ষায় কাজ করে।
  • সাধারণ সর্দিকাশি, গলা ব্যথা, শ্লেষ্মা বা ঠান্ডা লেগে মাথা যন্ত্রণা হলে জবাফুলের চা পান করলে উপকার পাওয়া যাবে।
  •  অ্যান্টি- অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় জবাফুল দেহকোষে ফ্রি র‍্যাডিকেল ড্যামেজকে সারিয়ে তোলে। এর ফলে শরীরের এনার্জি লেভেল স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যায়।
  • মেনোপজের সময় মহিলাদের স্বাভাবিক হরমোনের তারতম্যজনিত কারণে যে হট ফ্লাশ হয়, তার হাত থেকে নিস্কৃতি পেতেও জবার জবাব নেই।
  • প্রাচীন আয়ুর্বেদ বিজ্ঞান অনুসারে জবাফুলের নির্যাস দেহের জলীয় ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। একসময় ইডিমা অথবা দেহের অতিরিক্ত জল কমাতে এটি ব্যবহার করা হতো।
  • ভিটামিন সি দেহের মেটাবলিজম ত্বরাম্বিত করার বিষয়ে প্রয়োজনীয়। জবাফুল ভিটামিন সি সমৃদ্ধ হওয়ায়, এটিও দেহের মেটাবলিজম রেট বৃদ্ধি করে।
  • অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট পরিপূর্ণ হওয়ায় জবাফুল রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। এর ফলে হার্ট সুরক্ষিত রাখতেও জবাফুল উপকারী।
  • প্রাচীন আফ্রিকান মেডিসিন অনুযায়ী জবাফুল দেহের তাপমাত্রার ভারসম্য ঠিক রাখতে সাহায করে। গ্রীষ্মকালে জবাফুলের নির্যাস খেলে দেহের অতিরিক্ত তাপ নিষ্কাশিত হয় এবং দেহ ঠান্ডা থাকে।
  • ক্যান্সারের বিরুদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম জবাফুল। প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় নিয়মিত জবাফুলের চা অথবা নির্যাস পান করলে ক্যান্সার প্রতিরোধী সক্ষমতা গড়ে ওঠে শরীরে।
  • জবাফুলের চা খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে । হাইপারটেনশন এবং কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজে জবাফুলের নির্যাস খাওয়া উপকারী। কারণ এতে  অয়ান্টি-হাইপারটেনসিভ এবং কার্ডিও-প্রোটেকটিভ গুণাগুণ।
  • জবাফুলের চা পান করলে লিভার ভাল থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গুণাগুণযুক্ত হওয়ায় লিভারের অসুখে এটি ভাল কাজ দেয়।
  • জবাফুলের চা অ্যাসকরবিক অ্যাসিড অর্থাৎ ভিটামিন সি সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি দেহের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে।
  • এটি অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণাগুণযুক্ত।
  • ঋতুচক্রকালীন ব্যথার উপশম ঘটয় জবাফুলের চা। এটি হরমোন ব্যালান্স পুনর্নিয়াণ-এ সহায়তা করায় এটি মহিলাদের বিভিন্ন মেনস্ট্রুয়েশন সিম্পটম, যেমন মুড স্যুইং, ডিপ্রেশন প্রভৃতি কমাতে সাহায্য করে।
  • হজমশক্তি বৃদ্ধি করতেও জবাফুলের চা খুব উপকারী। এটি একই সঙ্গে ইউরিনেশন এবং বাওয়েল মুভমেন্টস বৃদ্ধি করে। কনস্টিপেশন কমাতে সাহায্য করে এবং গ্যাসট্রোইনটেসিটিনাল সিস্টেমের স্বাস্থ্য উন্নত করে। এর ফলে কোলন ক্যান্সারের সম্ভবনা কমে।
  • স্পোর্টস ড্রিঙ্কস হিসেবেও ব্যবহার করা যায় জবাফুলের চা, কারণ এটি পিপাসা কমাতে সাহায্য করে।
  • এটি ডাইউরেটিক প্রপার্টিযুক্ত হওয়ায় দেহ থেকে অতিরিক্ত জলীয় পদার্থ এবং টক্সিন পদার্থ বের করে দিতে সক্ষম।
  • জবাফুলের চা ওজন কমানোতেও সাহায্যকারী। গবেষণায় দেখা গেছে এটি স্টার্চ এবং গ্লুকোজ অ্যাবসরপশন কমায়। এর ফলে ওজন বৃদ্ধিতে বাধা দেয়।

Trending

Most Popular


Would you like to receive notifications on latest updates? No Yes