jamdani

ব্রেক আপ (পর্ব – ২)

রেহান কৌশিক

‘আত্মবিশ্বাসের অভাব। সঙ্গে অভাব সেলফ রেসপেক্টের। যার ফলে মানুষের ভিতরে ভয়ের জন্ম হয়েছে। “মানে?

‘সেই প্রাচীনকাল থেকেই এই ভয় দূর করার জন্য অবলম্বন খুঁজেছে। বজ্রপাতে ভয়, ঝড়ে ভয়, অসুখ হয়ে মৃত্যু হলে ভয়। নিজের শ্রম নিজের মেধা নিজের বুদ্ধি-বিবেচনা দিয়ে যেসব সমস্যার মোকাবিলা করতে পারেনি, সেখানেই জন্ম মনগড়া অলৌকিক এক অদৃশ্য শক্তির। সেই শক্তিই জন্ম দিয়েছে ঈশ্বর আল্লা গডের। ‘নিজের সম্পর্ককে জাস্টিফাই করার জন্য এমন বলছিস না তো? ‘নিজের মেয়েকে এই চেনো তুমি!

অভিমানে ঠোট ফোলায় জিনাত। তারপর বলে, ‘আম্মি, পূর্বজন্মে পরজন্মে বিশ্বাস করি না আমি। জন্ম থেকে মৃত্যু- এই পিরিয়ডে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকাই আমার ধর্ম। আমার সততা আমার আল্লা, আমার ঈশ্বর, আমার স্বপ্ন আমার গড। শায়ন আমার প্রয়োজনও।

অনেকদিন পর কথাগুলো মনে পড়ল জিনাতের। শায়নের সঙ্গে সম্পর্কটা তার হৃদমহলের আতরদান। আর সেটাকে নিয়েই সংশয়! হঠাৎ কান্না পেল। কিন্তু মুহুর্তেই নিজেকে সামলে নিল সে। জিনাত শিশিরের মতো মায়াময়, নরম। আবার স্ফুলিঙ্গের মতো তীব্রও নিমেষে ছাই করার ক্ষমতাও ধরে।

জিনাত সটান বিছানায় বডি ফেলে দিল। খিদে আছে কিন্তু খাওয়ায় ইচ্ছেটাই নেই। দেখল, মোবাইল স্ক্রিনে আলাদিনের চ্যাটহেড। সঙ্গে সতেরোটা মেসেজ। ওপেন করতেই দেখল হাবিজাবি কতকিছু লিখেছে। মোদ্দা কথা আজ খুব লোনলি ফিল করছে। জিনাত মেসেঞ্জারে টাইপ করল, “ হোয়াই আলাদিন? হোয়াট হ্যাপেন্ড? এনিথিং রং?

সঙ্গে সঙ্গে মেসেঞ্জারে আলাদিনের চ্যাট-বক্সের লাইট গ্রিন হয়ে উঠল। আলাদিন যেন জিনাতের রিপ্লাইয়ের জন্যই অপেক্ষা করছিল। সেকেন্ডে রিপ্লাই দিল, “নাথিং… জাস্ট এমনিই মনখারাপ। ‘আরে মনখারাপের কারণ থাকে না? ‘তুমি যে আর্টিস্ট! শিল্পী! তুমি জান না মানুষের কারণ ছাড়াও মিছিমিছি মনখারাপ হতে পারে!’জিনাতকে মৃদু খোঁচা দেওয়ার চেষ্টা করল আলাদিন। জিনাত লিখল, ‘আর্টিস্ট বলেই কথাটা মানতে পারলাম না। কমন পাবলিক হলে হেঁ হেঁ করে পাশ কাটিয়ে যেতাম। লিসিন, যারা সত্যিকারের চিত্রশিল্পী কবি ঔপন্যাসিক, তাদের কাজগুলো সেকেন্ড আইডেন্টিটি, ফাস্ট, দে আর অল ফিলোসফার, থিংকার। এবং মনে করে যে পৃথিবীতে সমস্ত কাজের পিছনেই এক বা একাধিক কারণ থাকে। কারণ ছাড়া কাজ হয় না। ইটারন্যাল টুথ। ‘বাট, আমি তো বুঝতে পারছি না আমার মনখারাপের জন্য কোনও কারণ আছে কিনা। ‘সেটা আলাদা কথা। মেবি, ইয়ু ডোন্ট ফাইন্ড দ্য রিজন। আস্ক ইয়োরসেল্ক, সার্চ ইয়োর হার্ট। একসময় ঠিক খুঁজে পাবে। আলাদিন বস্টন ইউনিভার্সিটিতে স্পোর্টস মেডিসিনে রিসার্চ করে। বেশ মজার ছেলে। বাড়ি এখানে, গড়িয়ায়। কয়েকমাস আগে ফেসবুকে আলাপ। ছেলেটাকে বেশ ভালোলাগে জিনাতের। কী করে যেন জিনাতের ভালোলাগা মন্দলাগাগুলো নিমেষেই বুঝে ফেলে!

আলাদিন লিখল, ‘তোমাকে আজ খুব হার্ড লাগছে! আলাদিনের মেসেজে বিস্মিত হল জিনাত। টাইপ করল, ‘হোয়াট! হার্ড! ‘হুম। কেন জানি না মনে হচ্ছে, তোমার মন আজ খুব ডিসটার্বড় হয়ে আছে। আর তাই তোমার রিপ্লাইগুলো কাঠ কাঠ।

নরম স্পর্শ নেই। ‘মেসেঞ্জারে লেখা মেসেজ থেকে এইরকম বোঝা যায়! বাখােয়াজ। ‘বাখােয়াজ শব্দটাই তোমার চেনা মেজাজে ফিরিয়ে আনল। গুড। বাট আমি যা বলেছি তা কি সত্যি নয়? ‘যদি বলি সত্যি নয় ! ‘আই গেট দ্য আনসার। ‘আর য়ু সাইকোলজিস্ট? ‘নো ম্যাম। মেসেজের সঙ্গে একটা স্মাইলি পাঠাল আলাদিন। তারপর লিখল, ‘অ্যাকচুয়ালি, আমাদের শুধু মেডিসিন সম্পর্কে জানলেই চলে না। পেশেন্টের সাইকোলজিটাও বুঝতে হয়। মাইন্ডটা রিড করতে হয়। জানো তো, লিফ- রিডিং বলে একটা ব্যাপার আছে! দূর থেকে মানুষের ঠোটের নড়াচড়া দেখেই লিফরিডারটা বুঝে নিতে পারে সেখানে কী আলোচনা হচ্ছে। বিশ্বের নানা দেশের নেতার সঙ্গে কী কথা বলছে তা জানার জন্য। পিওরলি স্পাইয়িং আর কী! ‘ কিন্তু আমার মেসেজ দেখে কী করে বুঝলে যে আজ আমার মেজাজটা ঠিক নেই? এখানে তো আর লিফরিডারদের ব্যাপারটা খাটছে না! তোমার টাইপিং স্পিড, তোমার অনেকক্ষণ ধরে টাইপ করার পর যতটা লেখা আসার কথা ততটা আসছে না। লেখার পর বারবার মেসেজ মুছে নতুন করে লিখে সেন্ড করছ। মন বিভ্রান্ত থাকলে এমন হয়। খুব সিম্পল। সত্যিই আশ্চর্য ছেলে! ক-মাসেই আলাদিন বেশ ভালো বন্ধু হয়ে উঠেছে। জিনাত লিখল, কী করছ? আজ কাজ নেই? ‘ ছিল ফাকি দিচ্ছি। বললাম না মনখারাপ? হয়তো তোমার মন ভালো নেই বলে আমারও মন ভালো নেই। এখন চার্লস নদীর বুকে দুপুরের সূর্য আলো ছড়াচ্ছে। সামনেই ব্রিজ। খুব রোমান্টিক অ্যাম্বিয়েন্স। ‘হুম বুঝলাম। কিন্তু সারাদিন কি নদীপাড়েই কাটাবে?

না না স্টুডেন্ট ভিলেজে ফিরব। তোমাকে বলেছিলাম না আমাদের ইউনিভার্সিটিটা একদম চার্লস নদীর পাড়েই? ‘অনেকবার বলেছ। এনিওয়ে, আমি খুব টায়ার্ড। কাল ক্যানভাস শেষ করতেই হবে। গুডনাইট। ‘সিওর। যদি অসুবিধে না থাকে তোমার মনখারাপের কারণ আমাকে বলতে পার। হতেও তো পারে আমার মেডিসিন তোমারে মন ভালো হয়ে গেল। থ্যাঙ্কস। সময় এলে নিশ্চয় বলব। বাই। ফেসবুক থেকে লগ-আউট করল জিনাত। আসলে আলাদিনের সঙ্গে আজ আর কথা বলতে ভালো লাগছিল না। আলাদিন ছেলেটা স্মার্ট, সেনসিটিভ। যে কোনও বিষয়ে কথা বলতে পারে বলে চ্যাট করতে খুব ভালো লাগে জিনাতের। কিন্তু মেয়েদের একটা সিক্স- সেন্স আছে। জিনাত যেন ইদানীং বুঝতে পারছে আলাদিন তার কাছে শুধু বন্ধুত্ব নয়, আরও অন্যকিছু চায়। যদিও স্পষ্ট তেমন কোনও ইঙ্গিত দেয়নি। তবুও এই মুহুর্তে জিনাতের হঠাৎ মনে হল আলাদিন তার প্রেমে পড়ে যায়নি তো!

Trending

Most Popular


Would you like to receive notifications on latest updates? No Yes