jamdani

আপনি কি জানেন, সামান্য পেটের ব্যথা থেকে হতে পারে প্যানক্রিয়াটাইটিস ?

পেটে অল্প অল্প ব্যথাকে আমরা অনেক সময় গুরুত্ব দিই না। গ্যাস-অ্যাসিডিটি বলে অবহেলা করি এবং বাজার চলতি কিছু অ্যান্টাসিডের সাহায্য নিই। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে চলতে থাকা পেটের ব্যথাকে একেবারেই অবহেলা করা উচিত নয়। এই ব্যথা প্যানক্রিয়াটাইটিসের কারণে হতে পারে। জানাছেন, বিশেষজ্ঞ ডা. দেবাশিস দত্ত। 

প্যানক্রিয়াটাইটিস কী? ইনফ্ল্যামেশন অফ দ্য প্যানক্রিয়াস। অর্থাৎ অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ। এটি মূলত দুই ধরনের হতে পারে ১) অ্যাকিউট এবং ২) ক্রনিক।

এই রােগের লক্ষণগুলি কী?

১) প্যানক্রিয়াটাইটিসের মূল লক্ষণ হল পেটে ব্যথা।

২) চিৎ হয়ে শুয়ে থাকলে ব্যথা বাড়ে। কিন্তু উঠে বসে পেটে একটা বালিশের সাপাের্ট দেওয়া হলে ব্যথার অনেকটা উপশম হয়।

৩) বমি হতে পারে।

৪) পিঠে ব্যথা হয়। 

প্যানক্রিয়াটাইটিসের কারণ কী? আপার অ্যাবডােমেনে প্যানক্রিয়াস বা অগ্ন্যাশয় বলে একটি গ্ল্যান্ড আছে। খাবার পরিপাক করার অতি প্রয়ােজনীয় কিছু এনজাইম ক্ষরণ হওয়া ছাড়াও ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণের ইনসুলিন ওই গ্ল্যান্ড থেকেই বেরােয়। প্যানক্রিয়াটাইটিস দুই ধরনের। অ্যাকিউট এবং ক্রনিক। 

অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটাইটিস ১) গলব্লাডার স্টোন ২) অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে কিন্তু এই দুটি কারণই অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটাইসিসের জন্য দায়ী। অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটাইটিসে সিভিয়ার অ্যাটাক হলে একদিনেই বােঝা যায় না। অনেক সময় তিন থেকে পাঁচদিনের মাথায় রােগীর আচার-আচরণে কিছু পরিবর্তন চোখে পড়ে। প্যানক্রিয়াটাইটিসের প্রভাবে শরীরের বাকি অর্গানগুলিতে কী প্রতিক্রিয়া হচ্ছে তার উপর নির্ভর করে এর ফল কতটা মারাত্মক হবে। একাধিক রক্তপরীক্ষা করে বােঝা যায় অগ্ন্যাশয় ঠিক কতটা ক্ষতিগ্রস্ত। তবে সিভিয়ার প্যানক্রিয়াটাইটিস যে কোনও মুহূর্তে বিপদ ডেকে আনে। রােগী ধীরে ধীরে সেপটিসেমিয়াতেও আক্রান্ত হতে পারেন। 

ক্রনিক প্যানক্রিয়াটাইটিস। ক্রনিক প্যানক্রিয়াটাইটিসের জেনেটিক কারণ কিছু কিছু ক্ষেত্রে থাকে। এ ছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে অ্যালকোহল সেবন করলেও হতে পারে ক্রনিক প্যানক্রিয়াটাইটিস। একাধিকবার অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটাইটিস (রেকারেন্ট) হতে থাকলে ক্রনিক প্যানক্রিয়াটাইটিসের রূপ নিতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে পেটে অল্প অল্প ব্যথা হবে। ডায়াবেটিসের মাত্রাও ফ্লাকচুয়েট করবে।। 

এই রােগের মূল লক্ষণই হল পেটে ব্যথা। খেয়াল রাখতে হবে, ব্যথা যদি তীব্র হয়, চিৎ হয়ে শুলে যদি যন্ত্রণা বাড়ে ও উঠে বসলে আরাম বােধ হয়, বমি হয়, তা হলে সেটি প্যানক্রিয়াটাইটিসের লক্ষণ হতে পারে।

এই রােগের চিকিৎসা ?

১) আলােচিত লক্ষণগুলি দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রক্তপরীক্ষা করাতে হবে।

২) প্যানক্রিয়াস কতটা ইনফ্লেমড় বা প্যানক্রিয়াসের আশপাশে কোনও ফ্লুইড জমছে কিনা। দেখতে আলট্রাসােনােগ্রাফি করতে হতে পারে।

৩) এর পর সিটি স্ক্যান করা হয়।

৪) অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটাইটিসের প্রথম চিকিৎসা হল ফ্লুইড দেওয়া। রােগের গুরুত্ব বুঝে ইনট্রাভেনাস ফ্লুইড দিতে হয় প্রচুর পরিমাণে। ফ্লুইডের সাহায্যে ইনফ্ল্যামেশন কমানাে যায়। প্রয়ােজনে পাঁচ-ছ লিটার ফ্লুইড দিতে হতে পারে।

৫) এ ছাড়া অ্যান্টিবায়ােটিক দিতে হতে পারে।

৬) সরাসরি কোনও ওষুধ নেই, যার সাহায্যে ইনফ্ল্যামেশন প্রতিরােধ করা যায়।

৭) পরিস্থিতি জটিল হলে রেডিওলজিক্যাল ইন্টারভেনশন করতে হতে পারে।

৮) প্যানক্রিয়াস ইনফ্লেমড হয়ে আশপাশের কিছু অংশ যদি পচে যায়, তাকে চিকিৎসার পরিভাষায় নেক্রোসিস বলে। তখন সার্জারি করতে হয়।

৯) এ ছাড়াও প্যানক্রিয়াসের চারপাশে ফ্লুইড জমে শক্ত দেওয়াল তৈরি হলেও এন্ডােস্কোপির প্রয়ােজন হতে পারে। 

প্যানক্রিয়াটাইটিস প্রতিরােধ করতে হলে সবার আগে অ্যালকোহল সেবন এবং ধূমপান বন্ধ করতে হবে।

গলব্লাডার স্টোনের সমস্যা যদি একবার হয়ে থাকে, তা হলে সতর্ক হতে হবে। এ ক্ষেত্রে ইউএসজি-তে সেটিও বােঝা যায়।

সুস্থ জীবনযাত্রা, নিয়মিত শরীরচর্চা, ওজন নিয়ন্ত্রণ, খাদ্যতালিকায় ফাইবারের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং প্রতিদিনের খাবারের অভ্যাসের দিকে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়ােজন।

সাক্ষাৎকার: অনুরাধা বন্দ্যোপাধ্যায়

Trending

Most Popular


Would you like to receive notifications on latest updates? No Yes