jamdani

সামার ফ্রেন্ডলি Diet

কাঠফাটা রোদ, সঙ্গে তাপপ্রবাহ। প্রচণ্ড গরমে প্রাণ প্রায় ওষ্ঠাগত। উপরি পাওনা পেটের গণ্ডগোল, বদহজম, ডিহাইড্রেশনের মতো হাজারও একটা সমস্যা। তবে শুরু থেকেই একটু সাবধান হলে সমস্যা এড়ানো সম্ভব। এই গরমে সুস্থ থাকতে কী খাবেন, কতটা খাবেন, জানাচ্ছেন বিশিষ্ট ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট মিতা শুক্লা।

তাপমাত্রার পারদ ক্রমশ ঊর্ধবমুখী। প্যাচপ্যাচে গরমে বাইরে একটু বেরোলেই ঘেমে-নেয়ে একশা। ছাতা, সানগ্লাস, টুপি, স্কার্ফের আচ্ছাদনেও রোদ থেকে বাঁচার উপায় নেই। এই গরমে শরীর ঠান্ডা রাখতে দরকার সামার ফ্রেন্ডলি ডায়েট, যা একদিকে যেমন প্রয়োজনীয় ভিটামিন, মিনারেলের জোগান দেবে, তেমনই জলের ঘাটতি পূরণ করবে, আবার শরীরকেও ঠান্ডা রাখবে। এছাড়া এই সময়ে হজমের গণ্ডগোল, পেটের সমস্যা, ডিহাইড্রেশনের মতো নানা সমস্যাগুলো আরও বেশি করে দেখা দেয়। তাই এই সময় সুস্থ থাকতে সঠিক খাওয়া-দাওয়া অত্যন্ত জরুরি।

একটা কথা সবসময় মনে রাখবেন, গরম বা ঠান্ডা – যে সময়ই হোক না কেন? সুস্থ থাকতে ব্যালেন্সড খাওয়ার চেষ্টা করুন। বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় গরমকালে প্রচুর ঘাম হয়। ঘামের সঙ্গে প্রচুর জল ও বডি-গ্লুকোজ শরীর থেকে বেরিয়ে যায়, ফলে শরীরে জলের ঘাটতি থেকে ডিহাইড্রেশনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। ডিহাইড্রেশন যাতে না হয় তার জন্য প্রথম থেকেই সাবধান হন। জলের ঘাটতি মেটাতে বেশি করে জল খান। তবে রোদ থেকে ফিরেই সঙ্গে সঙ্গে জল খাবেন না। একটু বসে তারপর জল খান। সাধারণত তেষ্টা পেলে তবেই আমরা জল খাই। অনেকসময় কাজের ব্যস্ততায় আমরা পিপাসার অনুভূতি বুঝতে পারি না। তাই তেষ্টা না পেলেও মাঝেমাঝে জল খান। সারাদিনে ৩ থেকে ৪ লিটার জল অবশ্যই খাবেন। আর যাঁরা রোদে ঘুরে কাজ করেন তাঁরা দিনে অন্তত পাঁচ – ছ লিটার জল খান। রোদ থেকে বাড়ি ফিরে একটু বিশ্রাম নিয়ে এক গ্লাস নুন-চিনির শরবত খান। এতে একদকে যেমন শরীরে সোডিয়ামের ঘাটতি পূরণ হবে, তেমনই আবার জলও খাওয়া হয়ে যাবে। ফলে ডিহাইড্রেশন হবে না। গরমে একটু স্বস্তির জন্য আমরা দারস্থ হই ক্যানবন্দি ঠান্ডা পানীয়র। এতে সামরিক আরাম হলেও লাভের লাভ কিছুই হয় না। শরীরের ক্ষতই হয় বেশি। গরমে মরসুমি শাকসবজি (যেমন – পটল, উচ্ছে, লাউ, চালকুমড়ো, ঝিঙে, করলা) বেশি করে খান। আমরা যাতে ভাল থাকি তার জন্য প্রকৃতি নিজেই তার ডালি সাজিয়ে দিয়েছে। এর সঙ্গে রোজ একটা করে মরসুমি ফল (তরমুজ, পেঁপে, পেয়ারা, জামরুল, আম, লিচু – যেটা আপনার পছন্দ) খান।

গরমে সুস্থ থাকতে বাইরের খাবার এড়িয়ে চলুন। ভাজাভুজি, জাঙ্কফুড, তেলজাতীয় খাবার একেবারে বন্ধ করতে হবে। বেশি করে সবুজ শাকসবজি , ফল, ফলের রস খান। দৈনন্দিন ডায়েটে দুধ ও দুগ্ধ জাতীয় খাবার বেশি করে রাখুন। রোজ একবাটি করে টক দই (ঘরে পাতা) খান। দই শরীরের জন্য খুব উপকারী। লস্যিও খেতে পারেন। বেশি করে জল খান। গরমে যাতে ডিহাইড্রেশন না হয়ে যায়। বেশি জল খেতে ইচ্ছে না করলে ডাবের জল, ফলের রস, নুন লেবুর শরবত, লস্যি, দইয়ের ঘোল খেতে পারেন। গরমে বিয়ে, অনুষ্ঠান বা আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে যদি নেমন্তন্ন থাকে তাহলে একটু বুঝে শুনে খাবেন। তেলমশলাযুক্ত রিচ খাবার না খাওয়াই ভাল। একটা কথা মাথায় রাখবেন, কোনও খাবারই বেশি খাওয়া ভাল না। সীমিত পরিমাণে আহার করুন। শরীর ভাল থাকবে। গরম হোক বা বর্ষা কিংবা শীত যে কোনও ঋতুতেই সুস্থ থাকতে সঠিক ডায়েট করা জরুরি। প্রপার ডায়েট মেনে চলার জন্য বছরে অন্তত একবার কোনও নিউট্রিশনিস্টের সঙ্গে পরামর্শ করে নিন। কারণ, শরীর সুস্থ ও ভাল থাকবে তখনই যখন আপনি প্রপার ডায়েট মেনে চলবেন। ভুল ডায়েট করলে কিন্তু কোনও উপকারই পাবেন না।

  • সকালে ঘুম থেকে উঠে এক কাপ লকার চা খান। ইচ্ছে হলে সঙ্গে একমুঠো মুড়ি খেতে পারেন।
  • ব্রেকফাস্ট হেভি করুন। হাতে গড়া রুটি বা ভাত, তরকারি, ডাল, মাছ বা চিকেন অথবা খিচুড়ি খেতে পারেন। যতই কাজে ব্যস্ত থাকুন না কেন ভুলেও ব্রেকফাস্ট স্কিপ করবেন না। ঠিকমতো ব্রেকফাস্ট না করলে কিছুক্ষণ পরেই খিদে পেয়ে যাবে। খিদের মুখে আমরা বিস্কুট, চিপস হাতের কাছে যা পাই খেয়ে ফেলি। এতে শরীরের উপকার তো কিছুই হয় না, উলটে ক্ষতিই বেশি হয়।
  • ব্রেকফাস্টের কিছুক্ষণ পর এক গ্লাস লস্যি খান।
  • লাঞ্চে সুজির উপমা, চিঁড়ের পোলাও, ইডলি, দোসা বা সবজি দিয়ে খিচুড়ি, রুটি-সবজি বা দই চিঁড়ে খান।
  • লাঞ্চের কিছুক্ষণ পর একটা মরসুমি ফল (আম, পেয়ারা, লিচু, তরমুজ, জামরুল – যেটা আপনার ভাল লাগে) খান। ফলের পরির্বতে ফলের রস বা ডাবের জলও খেতে পারেন।
  • সন্ধেবেলা মুড়ি, ছোলা সিদ্ধ বা মটর সিদ্ধ, শসা, টমেটো দিয়ে ঝালমুড়ি করে খেতে পারেন।
  • ডিনারে হালকা খাবার খান। ভাত বা রুটি , ডাল, সবজি , মাছ বা চিকেন, স্যালাড খেতে পারেন। ডিনার একটু তাড়াতাড়ি খাবার চেষ্টা করুন।
  • রাতে শুতে যাওয়ার আগে এক কাপ করে ডবল টোনড দুধ খান।
  • বাচ্চাদেরও রোজ একটা করে ফল দিন। যদি গোটা ফল খেতে না চায় তাহলে দুধের সঙ্গে মিশিয়ে সেক তৈরি করে দিন। বাচ্চাদের খেতেও যেমন ভাল লাগবে, তেমনই ওদের শরীরে পুষ্টিও হবে, শরীরে জলের ঘাটতি হবে না। স্কুল থেকে ফেরার পর নুন-চিনির শরবত বা লস্যি দিন। ওয়ার্কিং ওম্যান্দের ক্ষেত্রে বলব অফিসে চা-কফির পরিবর্তে শরবত বা লস্যি বা ডাবের জল খান। শরীর থেকে একদিকে যেমন টক্সিন বেরিয়ে যাবে, তেমনই জলের ঘাটতিও পূরণ হবে।

Trending

Most Popular


Would you like to receive notifications on latest updates? No Yes