jamdani

সহজেই দূর করুন দাঁতের যাবতীয় সমস্যা

দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা বােঝার মতাে মানুষ এ সংসারে বিরল। যদিও কথাটি একটি প্রবচন। কিন্তু আক্ষরিক অর্থ ধরলে আমরা কজনই বা দাঁতের যত্ন নিয়ে থাকি? যদিও ‘দাঁত’বস্তুটি আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। আর তাই শীতের হিমেল হাওয়া বাতাসের সঙ্গে মিশতেই অদ্বিতীয়া হাজির দাঁতের যত্ন নিয়ে।
দাঁতের হলদে ভাব দূর করার উপায়: আগে আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে যে, দাঁতের এই হলুদ ভাব প্রাকৃতিক নাকি প্লাক অথবা ক্যালকুলাস জমে হয়েছে। যদি দ্বিতীয় কারণে হলুদ ছােপ পড়ে থাকে তাহলে স্কেলিং পলিশিং-এর মাধ্যমে এই সমস্যা সহজেই দূর হয়ে যাবে। আর যদি প্রাকৃতিক কারণে হয়ে থাকে তাহলে লক্ষ করুন যে আপনার ত্বকের রঙের সঙ্গে দাঁতের রং। মেলে কি না। বেশিরভাগ সময় উজ্জ্বল ত্বক অধিকারীদের দাঁতের রং হালকা হলুদ হয়। এটাই স্বাভাবিক সৌন্দর্য। তবে, যদি ন্যাচারাল হলুদ দাঁতকে নিতান্তই সাদা করতে চান তখন ‘ব্লিচিং’ পদ্ধতির মাধ্যমে সাদা করা যেতে পারে। কিন্তু এই পদ্ধতি ব্যবহার করার আগে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়াই ভালাে।
দাঁতের গােড়ায় পাথর জমার কারণ: প্রথমেই বলে রাখা প্রয়ােজন যে, দাঁতের গােড়ায় যা জমে তা পাথর নয়। তার নাম ক্যালকুলাস (Calculus)। আমাদের মুখের ভিতর থাকা জীবাণু, খাদ্যকণা আর লালার মধ্যে থাকা প্রােটিন একসঙ্গে মিলে তৈরি করে প্লাক। (Plaque)। আর এই প্লাকই ঠিকমতাে পরিষ্কার না করলে মিনারেলস-এর সঙ্গে মিশে স্তরের ওপর স্তর তৈরি করে। এটাই ধীরে ধীরে শক্ত হয়ে ক্যালকুলাস বানায়।
দাঁতের গােড়ায় ক্যালকুলাস জমলে তার চিকিৎসা: দাঁতের ফাঁকে অথবা গায়ে ক্যালকুলাস জমলে চিকিৎসা হল স্কেলিং করা। যদি ডাক্তারবাবু মনে করেন যে, স্কেলিং করতে হবে তাহলেই স্কেলিং করাবেন। আবার দাঁতের যত্ন করার ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপরেও এর গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
ডায়াবেটিস রুগির দাঁতের চিকিৎসায় সতর্কতা অবলম্বন: ডায়াবেটিস রােগটি দাঁতের চিকিৎসায় একটি বড়াে বাধা। ডায়াবেটিস মানুষের রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ফলে ছােটোখাটো ক্ষত বড়াে রূপ ধারণ করে। দাঁতের চিকিৎসায় যদি রক্তপাত হয় (যেমন দাঁত তােলা, স্কেলিং ইত্যাদি) তাহলে, র্যান্ডম ব্লাড সুগার (RBS) ১০ এমএমওএল/লিটার হতে হবে। যদি তা না থাকে সেক্ষেত্রে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত জরুরি।
দাঁতের ফিলিং কী এবং কখন করানাে উচিত: দাঁতে গর্ত হলে ভালােমতাে পরিষ্কার করে নির্দিষ্ট ফিলিং মেটিরিয়াল দ্বারা ভরাট করার পদ্ধতিই হল ফিলিং। দাঁতের গর্ত বা ক্যাভিটি যখন প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে অথাৎ গর্তের বিস্তার শুধু দাঁতের এনামেলের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে তখন দাঁতে ফিলিং করা সম্ভব।
কীভাবে বুঝবেন দাঁতের গর্তের গভীরতা: এক্সরে ছাড়া নিশ্চিতভাবে দাঁতের গর্তের বা ক্যাভিটির সঠিক গভীরতা মাপা সম্ভব নয়। যদি আপনার দাঁতে গর্ত থাকে কিন্তু কোনও অনুভূতি না থাকে, সেক্ষেত্রে ধরে নেওয়া যায় যে, গর্তটির বিস্তার এনামেলে সীমাবদ্ধ। আপনি ফিলিং করাতে পারেন। আর যদি আপনার দাঁতে গর্ত থাকে এবং ঠান্ডা অথবা গরমে শিরশির অনুভূত হয়, তবে ধরে নেওয়া যায় যে, গর্তের বিস্তার এনামেল পেরিয়ে ডেন্টিনে চলে গেছে। সেক্ষেত্রে পালপেকটোমি (Pulpectomi) করানাের প্রয়ােজন আছে। অথবা দাঁতের গর্তের পাশাপাশি যদি ব্যথা অনুভব হয়, তবে বুঝতে হবে যে, গর্তের গভীরতা দাঁতের অস্থিমজ্জা পর্যন্ত চলে গেছে। তখন আপনাকে রুট ক্যানাল (RCT) করাতে হবে। তবে এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়াই ভালাে।
দাঁতের যত্নে কোন ধরনের ব্রাশ ব্যবহার করা ভালাে

  • ছােটো মাথা যা সহজে দাঁতের সব জায়গায় পৌঁছয়।
  • নরম ও গােল মাথাযুক্ত ব্রিসােল যা মাড়ির ক্ষতি করবে না।
  • খেয়াল রাখতে হবে যেন ব্রাশ সর্বদা ক্যাপযুক্ত থাকে। কোনও পােকা যেন ব্রাশে বসতে
    না পারে।
  • ব্রাশের মাথার উল্টো দিকে খাঁজ কাটা থাকলে জিভ পরিষ্কার করতে সুবিধা হয়।

দাঁতের মাড়ির যত্ন: ঝকঝকে দাঁতের সুন্দর হাসি কেবল আপনার ব্যক্তিত্বকেই আকর্ষণীয় করে
, এটা আপনার স্বাস্থ্যেরও পরিচায়ক। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে যে দাঁতের পাশাপাশি মাড়ির যত্নও সঠিক ভাবে যেন নেওয়া হয়। অনেকেই মাড়ির যত্ন নেওয়ার দিকে গুরুত্বই দেন না।
কম-বেশি প্রায় সবারই সমস্যা থাকে মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া। অনেক সময় দাঁত মাজতে গেলে অথবা শক্ত কিছু খেতে গেলে দেখা যায় যে, মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়ছে। জোরে জোরে ব্রাশ করা, ভিটামিনের অভাব বা অন্য কোনও ওষুধের সাইড এফেক্টে মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়তে পারে। এছাড়াও গর্ভধারণের সময় হরমােনের পরিবর্তনজনিত কারণে অথবা অন্যান্য মেডিকেল। সমস্যা যেমন ডায়াবেটিস, লিউকোমিয়া, স্কারভি ইত্যাদির কারণেও মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়তে পারে।

অল্প পরিমাণ লবঙ্গের তেল নিয়ে হালকা ভাবে মাড়িতে ম্যাসাজ করুন, আপনার মাড়ি থেকে রক্ত পড়া বন্ধ করে দিতে পারে। অথবা অল্প পরিমাণ অ্যালােভেরা পাল্প নিয়ে মাড়িতে ম্যাসাজ করুন, দ্রুত ফল পাবেন। সুস্থ মাড়ি পেতে প্রচুর পরিমাণ তাজা শাক-সবজি এবং ফল খেতে হবে। কারণ, এতে আপনার শরীরের ভিটামিনের অভাব দূর হবে। কাঁচা সবজি ও ফল চিবিয়ে খেলে মাড়ির রক্ত চলাচল বেড়ে যায়, ফলে রক্তক্ষরণের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।

Trending

Most Popular


Would you like to receive notifications on latest updates? No Yes