ফ্যাশন মানেই কেতাদুরস্ত থাকা, কেবল সেটা নয়। ফ্যাশন মানে আপাদমস্তক নিজেকে আকর্ষণীয় করে তোলা। আর আজকের যুগে ফ্যাশন শব্দটার অর্থই হয়ে গেছে স্মার্টনেস এবং ক্যাজ-কুল লুকে। তবে আমরা যতই দামী জামা কাপড় পড়ি না কেন, একসময় বিশ্বের সবথেকে দামী পোশাকটি কিন্তু পড়তেন ইনকা সভ্যতার রাজারা। সেইসময় ইনকা শাসকরা বংশ পরম্পরায় অভিজাত ছিলেন। রাজকীয় পরামর্শ সভা পরিচালনা করতেন রাজ্য।
ইনকা সভ্যতার মানুষ পোশাক আশাকের ব্যাপারে ছিল ভীষণ খুঁতখুঁতে। পোশাক যে শুধু লজ্জা রক্ষার কাজই করে না। রুচি এবং সামাজিক অবস্থানও বোঝায় এটা তাঁরা বুঝেছিল। আর এই পোশাক নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্নরকম রীতিনীতি প্রচলিত আছে। বেশ কিছু জায়গার মানুষেরা কোনো একটি বিশেষ ধরনের পোশাক পরিধান করেন, কেউ আবার পোশাক পরিধান করার ক্ষেত্রে তার উৎস সন্ধান করে থাকে। অর্থাৎ অনেক মানুষই উল জাতীয় পোশাক অর্থাৎ পশমের পোশাক পরেন না, কারণ সেগুলো প্রাণীদের দেহ থেকে সংগ্রহ করা হয়। তাদের মতে প্রাণীর দেহ থেকে পশম সংগ্রহ করার মধ্য দিয়ে অবলা জীবদের ওপর নির্যাতন করা হয়।
পোশাকের গুণগত মান এবং দামের ওপর ভিত্তি করেই সেইসময় সমাজে যথেষ্ট শ্রেণি বিভাজন দেখা যেত। কিন্তু মধ্য যুগে দক্ষিণ আমেরিকার একাংশে এক অদ্ভুত নিয়ম প্রচলিত ছিল। এক বিশেষ ধরনের পশমে তৈরি পোশাক কেবলমাত্র রাজপরিবারের মানুষজনই ব্যবহার করতে পারত, সাধারণ প্রজাদের জীবিত অবস্থায় ওই পোশাক ব্যবহারের অনুমতি ছিল না। তবে মৃত্যুর পর সাধারণ মানুষের সঙ্গে ওই পশমের পোশাকের একটা ছোট্ট টুকরো দিয়ে দেওয়া হতো। ইনকারা এই বিশেষ পশমের পোশাকটিকে ‘ঈশ্বরের কাপড়’ বলে মনে করত।
ইনকাদের কাছে মূল্যবান ছিল ভিকুনা নামে এক বিশেষ ধরনের প্রাণী থেকে বানানো কাপড়। এটিএখনও দেখতে পাওয়া যায় দক্ষিণ আমেরিকায়। চিলি, আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া, পেরুতেও এই প্রাণীর দেখা মেলে। অনেকটা ছাগল ও ভেড়ার মিলিত রূপের মতোই দেখতে। তবে ছাগল বা ভেড়ার থেকে ভিকুনা অনেকখানি আলাদা। এদের গায়ের পশম থেকেই আজও পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান পোশাকগুলো প্রস্তুত হয়ে থাকে।
আপনারা কাশ্মিরী পশমের তৈরি শালের কথা জানেন নিশ্চয়ই? এটি বিশ্বের অন্যতম মূল্যবান কাপড়। সবার সাধ্যের নাগালে নেই এই কাপড়। তবে ভিকুনার পশম থেকে তৈরি পোশাক কাশ্মীরি শালের থেকেও বহু মূল্যবান।
ইনকা আমলে ভিকুনাকে ঈশ্বরের দূত মনে করা হত। তাই এই প্রাণীটিকে হত্যা করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ছিল। কেউ যদি ভিকুনা হত্যা করত তবে তাকে মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত দেওয়া হত। শুধুমাত্র রাজ পরিবারের সদস্যদের ব্যবহারের জন্য প্রয়োজন মতো পশম সংগ্রহ করা হত।
গত শতাব্দীর সত্তরের দশকে এদের সংখ্যা মাত্র পাঁচ হাজারে এসে দাঁড়ায়। স্বাভাবিকভাবেই এই বহুমূল্য প্রাণীটিকে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতি হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
ভিকুনার পশম কেন এত মূল্যবান? এর কারণ হলো এই পশম থেকে তৈরি পোশাক দেহকে ঠাণ্ডার সময় দারুণ উষ্ণ রাখে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হল এদের দেহে কিন্তু ভেড়ার মতো পশম তৈরি হয় না, এক বছরে মাত্র ১ পাউন্ড ওজনের পশম তৈরি হয় একটি ভিকুনার দেহে। এছাড়াও এই পোশাকগুলো বিশ্বের সবচেয়ে নরম পোশাক বলে বিবেচিত, তাই এর চাহিদা অনেক।
একটি ভিকুনার দেহ থেকে প্রতি ৩ বছরে একবার মাত্র পশম সংগ্রহ করা যায়। ফলে স্বল্পতার কারণেই এই পশমের মূল্য এতো বেশি। এর পাশাপাশি এদের খামারে রেখে চাষ করাও সম্ভব নয়, কারণ ভিকুনারা মুক্ত অবস্থায় না থাকলে সঠিকভাবে বেড়ে ওঠে না। দক্ষিণ আমেরিকার এই অঞ্চলের আন্দিজ পর্বতমালায় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১০,০০০ ফুটের বেশি উচ্চতাতেই কেবলমাত্র এই প্রাণীটিকে দেখতে পাওয়া যায়। এই সমস্ত কারণেই এদের দেহের পশমের দাম আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
ছবি সৌজন্য- দৈনিক বার্তা, গুগল, কেয়া শেঠ এক্সক্লুসিভ
বেনারসি শব্দটা শুনলেই আমাদের অনেকেরই চোখের সামনে ভেসে ওঠে ঝলমলে... Read More
সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেনারসিতেও এসেছে অভিনবত্ব। সন্ধের পার্টি থেকে... Read More