jamdani

সঞ্জয় এখনও আমার সিনেমা টিকিট কেটে দেখে

সুচিত্রা সেনের পরবর্তী বাংলা ছবিতে নায়িকাদের দিকে তাকালে অনেকের নামই ঝলমল করে উঠবে। তবে তিনি অদ্বিতীয়া। বাংলা ছায়াছবিতে নায়িকাদের চলার পথটি সংস্কার করে সমসাময়িক ইতিহাসে সেটিকে চালিত করছেন যিনি, তিনি নিঃসন্দেহে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। এবার ‘খােলা জানলায় নায়িকার চোখে বদলে যাওয়া চেনা ইন্ডাস্ট্রি, পরিবারের কথা, পুজোর প্ল্যান নিয়ে খােলাখুলি আড্ডা দিলেন মানসী চ্যাটার্জি। 

১. প্রথমেই জানতে চাইব, বেশ কিছু বছর ধরে আপনার ছবিতে নারীদের  চাওয়া-পাওয়া, অভাব-অভিযােগ, ব্যক্তি স্বাধীনতার কথা উঠে আসছে। কেন। 

এই ধরনের চরিত্র বেছে নিচ্ছেন? (সিলিংয়ের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে) আমার ছবিতে যে নারীদের চাওয়া-পাওয়া, ব্যক্তি স্বাধীনতার কথা উঠে আসছে, তা আমি কনশাসলি করছি বলব না, তবে হ্যা, আনকনশাসলি তাে একটু বটেই। বিকজ আমার মনে হয়, নারীদের চাওয়া-পাওয়া, তাদের ভেতরকার কষ্ট এবং সংগ্রামের কথা মানুষের কাছে তুলে ধরা মানে তাদের আরও একটি পদক্ষেপে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। আসলে প্রায় সময়ই নারীরা নিজেদের কথা বলতে পারেন না। ভুল বােঝাবুঝির শিকার হনআসলে সম্পর্কগুলি তাঁরা যেভাবে চান সেভাবে পান নাএদিকে আবার বহুবার বহুভাবে নির্যাতিতও তাঁরা। তাই কোথাও না কোথাও তাে সােচ্চার হতেই হবে। এটা যদি আমরা সিনেমায় আনতে পারি, তবে মেয়েদের জন্য সেটা ভালাে হবে। তাঁরা অনেক স্বাধীনভাবে এগিয়ে যেতে পারবে। 

২. ঋতুপর্ণা ব্যক্তিগত জীবনে কি নারীবাদী? 

আমি সেই অর্থে নারীবাদী নই। তবে বিশ্বাস করি, আমাদের সমাজে পুরুষদের পাশাপাশি নারীদেরও নিজেদের কথা বলার অধিকার আছে। তবে নারী স্বাধীনতার অপব্যবহার কখনওই করা উচিত নয়আসলে নারীশক্তি অনেক কিছু বদলে দিতে পারে। তা সে সংসারে হােক আর কর্মক্ষেত্রে হােক না কেন, চিরকাল নারীরা স্ব স্ব ক্ষেত্রে নিজেদের ব্যক্তিত্বের ছাপ রেখে গেছেন। 

৩. বর্তমান সমাজে নারীদের ভাবনার অনেক বদল হয়েছে, তেমনই এ ইন্ডাস্ট্রিরও।  আপনার চোখে চেনা ইন্ডাস্ট্রি কতটা বদলেছে? 

অনেকটাই বদলেছে। আগে ইন্ডাস্ট্রিতে এভাবে উইমেন ওরিয়েন্টেড মুভি হত নাএখন যেমন নরীদেরকে প্রধান কেন্দ্রীয় চরিত্র করে ছবি তৈরি হচ্ছে, পােস্টারে শুধু নারীদের ছবি থাকছে এই প্রিভিলেজটা এতদিন ইন্ডাস্ট্রির পুরুষরা এনজয় করে এসেছেন, যা । কিছু নারী এসে বদলে দিয়েছেন। আগে তাে চলচ্চিত্র দুনিয়াকে শুধু পুরুষশাসিত ইন্ডাস্ট্রি বলা হত, এখনও যদিও কিছুটা বলা হয়এছাড়া অনেক ড্রাস্টিক চেঞ্জ এসেছে, যা না। হলেও চলত।। 

৪. ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে সঙ্গে বাংলা ছবির দর্শকও কি বদলে গিয়েছে? 

অবভিয়েসলি। এখনকার দর্শক অনেক অনেক বেশি ম্যাচিওরসিনেমা শুধু যে চারটি গান, দুটো ফাইট আর ক্লাইম্যাক্স নয়, সেটা দর্শক বারবার বুঝিয়ে দিয়েছেন। এখন দর্শকদের মধ্যে একটা অন্যালিটিক্যাল ভিউজ তৈরি হয়েছে। তারা নিত্যনতুন কনটেন্ট চান। সােসাইটির বিভিন্ন আসপেক্টে তৈরি চিত্রনাট্য, জীবনের নানান চাওয়া-পাওয়া সংঘাতের গল্প এখন তাদের বেশি পছন্দ। 

৫. মেন ডমিনেটিং এই ইন্ডাস্ট্রিতে আপনার সাফল্য বাংলা ছবির অনেক নায়কের 

কাছে ঈর্ষণীয়। বিষয়টা কতটা এনজয় করেন ? আই অ্যাম প্রিভিলেজড। পরিচালকেরা আমাকে ভেবে গল্প লেখেন! এটা ভেবেই নিজেকে কোথাও ভীষণ লাকি মনে হয়। আমি জানি না কোনও নায়ক আমাকে ঈর্ষা করেন কিনা! তবে আমার মতে করাও উচিত নয়! একটা ছবিতে যতটা নায়ক ততটাই নায়িকা- এই বিবর্তনটা তাদের আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করা উচিত। 

৬. কাননদেবী, সুচিত্রা সেনের পর আপনার নাম আসে। এই সাফল্যের পেছনে  কারণ কী? 

কাননদেবী, সুচিত্রা সেন, সুপ্রিয়া চৌধুরী- এঁরা হচ্ছেন লেজেন্ডআমার নাম কখনওই এঁদের পর আসতে পারে না। এটা ভাবাও আমার কাছে ধৃষ্টতা। তবে হ্যা, নিজেকে ওঁদের উত্তরসূরি বলতে পারি। ওঁদের দেখানাে পথেই, বাংলা ছবির ইতিহাসে আমার পারফরমেন্স দিয়ে নারীদের কথা ফুটিয়ে তােলার চেষ্টা করে চলেছিএছাড়া আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে খুব তাড়াতাড়ি মেয়েদের একটা স্লটে ফেলে দেওয়া হয়। যেটায় আমি একদমই বিশ্বাসী নই। আর বিশ্বাসী নই বলেই আমার এই অক্লান্ত পরিশ্রমএই ‘পরিশ্রম’ আমার সাফল্যের ‘কি-ওয়ার্ড’। আর এর কোনও অল্টারনেটিভ নেই। কারণ পরিশ্রমই মানুষকে শেখায়, পরিচয় করায় এবং জীবনের অন্য এক স্বাদ এনে দেয়। তাই পরিশ্রমকেই আমি জীবনে সবচেয়ে আপন করেছি। 

৭. বর্তমানে আপনাকে বিগ প্রােডাকশন হাউসে কম এবং নতুন পরিচালক ও নতুন  অভিনেতাদের সঙ্গে অনেক বেশি কাজ করতে দেখা যায়। এমনটা করার কারণ কী ? 

প্রােডাকশন হাউস নয়, আমার কাছে ম্যাটার করে ছবির সাবজেক্ট। ছবির কনটেন্ট পছন্দ হলে আমার কাছে হাউস কোনও ফ্যাক্টরই নয়তাছাড়া আজকাল নতুন পরিচালক বলাে আর অভিনেতা- সবাই অসাধারণ কাজ করছে। জাতীয় পুরস্কারের বিজয়ী লিস্টটা দেখলেই দেখবে সেখানে অনেক নতুনদের নাম রয়েছে। তাছাড়া আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়, নতুনরা অনেক আশা নিয়ে আসেতাদের প্রতিভা বিকাশের জন্য নতুনদের সুযােগ্য একটা সুযােগ দেওয়া উচিতসেটাই আমি দিয়ে থাকি। আর আজ যারা নতুন, কাল তাে তারাই খুব বড়াে জায়গায় পৌঁছবেগােটা এই প্রসেসটার মধ্যে অনেক আনন্দ রয়েছে নতুনকে বরণ করে নেওয়ার। 

৮. বলিউডে নতুনরা তাদের কাজ দিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিচ্ছেন, কিন্তু। 

টলিউডে সেরকম অনেক কম। আপনার কী মনে হয়, খামতিটা কোথায় ? বলিউডে নিঃসন্দেহে অনেক ভালাে ভালাে কাজ হচ্ছে। ওখানে জায়গাটা অনেক বড়াে। অনেক ফ্লোক্সিবিলিটি রয়েছেআর নতুনরা আত্মপ্রকাশ করার জায়গাও পায়যা। টলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে কিছুটা হলেও কম। বিকজ মানিঅস্বীকার করার নেই, টলিউডে মেনলি যে সমস্যাগুলি রয়েছে তার মধ্যে একটা ফান্ডিং ইস্যু। নতুন পরিচালকরা সেভাবে টাকা পান না যে নিজেদের সেভাবে আত্মপ্রকাশ করাতে পারবেনতবে এটাও ঠিক, তাদের চিন্তাভাবনার প্রসার আরও বাড়াতে হবে। তবে ভালাে কাজ যে হচ্ছে না। এমন নয়। বেশ কিছু বাঙালি পরিচালক অসাধারণ কাজ করেছেন, যা দেশবিদেশের বিভিন্ন ফেল্টিভ্যালে প্রশংসিত হচ্ছে। 

৯. নতুনদের সঙ্গে আপনার ছবিগুলির বক্স অফিস সাফল্য কেমন? নাকি এখন।  ঋতুপর্ণাকে বক্স অফিস সাফল্য তেমন ভাবায় না? 

বক্স অফিস সাফল্য ভাবায় না এমনটা কোনওদিন বলতে পারব না। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এখন বক্স অফিস সাফল্য দেখি না। কারণ অনেক কোয়ালিটি ছবি আছে, যা সেভাবে বক্স অফিসে সাফল্য পায়নি। কিন্তু তা বলে তা নগণ্য হয়ে যাবে, তা কখনওই নয়তাই মি সিনেমাকে বক্স অফিস কোয়ালিটি দু’ভাবে উপলব্ধি করার চেষ্টা করিআর নতুনদের সঙ্গে আমার ছবির বক্স অফিস সাফল্য বেশ ভালাে। “আহা রে তাে সারা পৃথিবীতে যাচ্ছে। খুব খুব প্রশংসা পাচ্ছি। এদিকে ‘বসু পরিবার ও মানুষের পছন্দ হয়েছে। 

১০. সুচিত্রা ভট্টাচার্যের গােয়েন্দা ‘মিতিন মাসি’র চরিত্রে প্রথমে আপনার নাম শােনা গিয়েছিল। সেখানে আজ কোয়েল অভিনয় করছেন। প্রিয় লেখিকার এমন  জনপ্রিয় চরিত্র হাতছাড়া হয়ে গেল, কতটা খারাপ লাগছে?

মিতিন মাসি আমার নিশ্চয় করার কথা ছিল। বহু পরিচালক ভেবেও ছিলেন। হয়ত কাজটা হবেওফেলুদানিয়ে তাে অনেক সিনেমা যেমন হচ্ছে, তেমন মিতিন মাসিও হতে পারেআর মিতিন মাসি যে একজনই হবে, তার কিন্তু কোনও মানে নেই। এখন কোয়েল করছে, ওকে আমার তরফ থেকে অনেক শুভেচ্ছা। নিশ্চয়ই ও খুব ভালাে করবে। 

১১. ‘বেলাশেষে’র গল্প থেকে ‘বেলাশুরু’র কাহিনি কতটা আলাদা? 

এটা বলব না। বরং এটা এখন সাসপেন্স হয়েই থাকতবে এটুকু বলতে পারি যে ‘বেলাশেষএর থেকেও বেলাশুরু’দর্শকদের মনে অন্য মাত্রা যােগ করবে। কারণ এর অপূর্ব চিত্রনাট্য আর অসাধারণ চরিত্র বিন্যাসআমি তাে বলব, ‘বেলাশুরুশিবু ও নন্দিতাদির আরও একটা অনবদ্য সৃষ্টি হতে চলেছে।। 

১২. প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণার জুটি আবার কবে দেখতে পাব?

বাঙালি দর্শকদের কাছে প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণার জুটি একসঙ্গে প্রাইজ, আবার সারপ্রাইজও বটে। আমরা আবার একসঙ্গে সেদিনই অভিনয় করব, যেদিন মর্মস্পর্শী কোনও সাবজেক্ট আমাদের মনকে নাড়া দিয়ে যাবে। সেটা কবে- আপাতত আমাদের কাছেও সারপ্রাইজই ।। 

১৩. নায়িকা হিসাবে ঋতুপর্ণা নাম্বার ওয়ান, কিন্তু মা হিসাবে আপনি নিজেকে কত নম্বর দেবেন ? 

নায়িকা হিসাবে ঋতুপর্ণা নাম্বার ওয়ান সেটা দর্শক তৈরি করেছে। তবে মা হিসাবে আমি নিজেকে নাম্বার ওয়ান পজিশন দিতে পারব না। আসলে আমার কাজটাই এমন যে না চাইলেও আমার মাদারহুড কোথাও না কোথাও সাফার করে। তবে আমি সবসময় চেষ্টা করি ওদের ভালাে রাখার। তবে নাম্বার ওয়ান না হলেও, আই ডােন্ট থিঙ্ক আই। অ্যাম এ ব্যাড মাদার। 

১৪. ছেলে-মেয়ে-স্বামী সবাই মিলে আপনার ছবি দেখতে যান ? 

আমার পরিবার আমার সিনেমা দেখলে আমার খুব ভালাে লাগে। আর ওরা সবাই। দেখেও। তবে সব ছবি নয়সঞ্জয় তাে আবার আমার ছবি টিকিট কেটে দেখেতারপর আবার পরিচালকে তার নিজস্ব ফিডব্যাকও দেয়। যেটা আমার খুব ভালাে লাগে। নিশ্চয়ই জানাে, এবার সিঙ্গাপুর এশিয়ান ফেস্টিভ্যালে আহা রে’ সিলেক্ট হয়েছে।  আশা করছি আমরা সবাই মিলে সিনেমাটি দেখতে যাব। 

১৫. পুজোতে কোথায় থাকছেন- সিঙ্গাপুর, কলকাতায়, নাকি অন্য কোনও প্ল্যান আছে? 

এখনই ঠিক বলতে পারছি না কোথায় থাকব। এবার পুজোর সময় বিদেশে একটা শাে আছে, সেখানে যেতে হবে। আবার কলকাতাতেও কিছু দিন থাকতে হবেকেননা সুহৃদ সংঘ নাকতলা উদয় সংঘর ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর আমি, তাে সেখানেও একটা চাপ। আছে। এছাড়া যদি বাচ্চারা আসে তাে তাদের নিয়ে ঠাকুর দেখার প্ল্যান থাকবে

Trending

Most Popular


Would you like to receive notifications on latest updates? No Yes