jamdani

শুধু জানতে চেয়েছিলাম নিজের চোখে মানুষটি আপনি কেমন?

মৌমিতা তারণ

জবাবে বললেন, একটা অসলে প্রকৃতির মানুষ আমি। খেতে ভালবাসি, সিনেমা দেখতে ভালবাসি, আডডা দিতে ভালবাসি। ভীষণ খরুচে মহিলা আমি। কাউকে সঙ্গে পেলে। ভাল, না পেলে ক্ষতি নেই, একা একাই রেস্টুরেন্টে খেতে চলে। যাই। সময় পেলে আইনক্স—যাই। একটা সিনেমা দেখার পর লাঞ্চ সেরে নিই। তারপর আর একটা সিনেমা দেখি। নন্দনে প্রথমে একা একাই একটা সিনেমা দেখেছিলাম’ এক নিশ্বাসে নিজেকে অনেস্টলি এভাবে যিনি ব্যাখা করলেন তিনি আমাদের সকলের প্রিয় রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী শ্রাবণী সেন। আর তাঁর সঙ্গে আডডায় মৌমিতা তারণ। 

পেশার ক্ষেত্রে মা বা দিদির জনপ্রিয়তা কখনও চাপ বলে মনে হয়েছে, নাকি পারিবারিক পরিচয় থাকায় সুবিধা হয়েছে?

রবীন্দ্রসংগীতের শিক্ষা মায়ের কাছেই শুরু। তারপর গীতবিতানে ৫ বছরের কোর্স করেছি। আরও পরে বিশিষ্ট রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী মায়া সেনের কাছে ৩ বছর শিখেছি। সুতরাং আমার গানের শিক্ষা ঘরে এবং বাইরে দু’জায়গাতেই। নিজের পেশার ক্ষেত্রে আমি খুব ক্যাজুয়াল। কখনই কোনও চাপ মনে হয় নামা এবং দিদি সংগীত জগতের মানুষ হওয়ায় বাইরের লােক অনেক সময় নােংরা পলিটিক্স করার চেষ্টা করেছে, আমার ভাল কোন গান শােনার পর হয়তাে এমন মন্তব্যও হয়েছে যে, ওরা আর কী, ওর মা তাে গান করে ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু এসব আমার ওপর কোনও চাপ সৃষ্টি করেনি। মা ও দিদির গানের মধ্যেই আমার বড় হওয়া। সুতরাং একটা প্রভাব তাে থাকছেই। পারিবারিক পরিচয় নিশ্চই সাহায্য করে। তবে সচেতনভাবে আমি কোনও সাহায্য নিই না। 

এই প্রজন্মের কাছে রবীন্দ্রসংগীত কতখানি জনপ্রিয়?

আমার অ্যাকাডেমিতে প্রচুর এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা আছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ শ্রাবণী সেন নামটার টানে গান শিখতে আসে। হয়তাে গান শেখার ইচ্ছে নেই। কিন্তু মা-বাবারা ঠেলে দিচ্ছেন তাই আসছে। কিছু ছেলেমেয়ে অবশ্যই সিরিয়াসলি গান শিখতেই আসে। শিখছে তারা। সুতরাং এই প্রজন্মের কাছে রবীন্দ্রসংগীতের জনপ্রিয়তা আছে।

আরও বেশি করে কি রবীন্দ্রসংগীত শােনানাের ব্যবস্থা করা প্রয়ােজন? রেডিয়াে যুগে যেমন দিনভরব্যাপী রবীন্দ্রসংগীত বাজত রেডিয়ােতে?

এটা তাে ঠিকই এখমানুষ সেইভাবে রবীন্দ্রসংগীত শুনতে পারছে না। রবীন্দ্রনাথের গানের কথা ও সুর পরিবর্তন করাটা আমি ভালবাসি না। টিভি চ্যানেল ও সিনেমায় আরও বেশি করে রবীন্দ্রসংগীত শােনানাের ব্যবস্থা করা উচিত। পাশাপাশি চাইব বিশ্বভারতীর মতাে কোনও অথরিটি থাকুক যারা রবীন্দ্রসংগীতের কথা ও সুর যথাযথ হচ্ছে কিনা সেটা দেখবে।

মা সুমিত্রা সেন এখন আর গান করেন না। মন খারাপ হয় ? 

একেবারেই না। মায়ের এখন ৮৬ বছর বয়স। ওঁনার যে গান শুনে এসেছি সেই গলাটাই মনে রাখা ভাল। রেশটাই থাকুক মনে। মাকে মানুষ সেভাবেই মনে রেখেছে। 

বাংলা ব্যান্ড বাংলা গানের ক্ষতি করছে না উপকার ?

না, বাংলা ব্যান্ড বাংলা গানের ক্ষতি করেনি। ভূমি যখন। রবীন্দ্রসংগীতের অ্যালবাম করল আমি ওদের সঙ্গে ছিলাম। নােটেশন ওয়াইজ ওরা কাজটা করেছে। কোনও কিছু সংশয় থাকলে আমায় জিজ্ঞাসা করেছে। ভূমি ছাড়াও আরও কিছু বাংলা ব্যান্ড ভাল লাগে। চন্দ্রবিন্দু আমার খুব প্রিয়। ভাল লাগে দোহার-এর গান। কথার জন্য নয়, সুরের জন্য ব্যান্ডের গান বেশি ভাল লাগে। অত্যন্ত ট্যালেন্টেড এইসব ছেলে মেয়ে গুলাে। ইনস্ট্রমেন্ট বাজিয়ে গান করা খুব সহজ ব্যপার নয়।। ব্যান্ডে বাচ্চা বাচ্চা ছেলে মেয়েগুলাে এই কঠিন কাজটা কী সুন্দরভাবে করে। বলা হয় ব্যান্ডের গায়কদের অনেকেরই সংগীতের প্রথাগত শিক্ষা নেই। সত্যি বলতে কী এই প্রথাগত শিক্ষা আমারও নেই, ইন্দ্রনীল সেনেরও নেই। কে ভাল সংগীত শিল্পী হবে সেটা কিছুটা কপালের ব্যাপার। 

রিয়্যালিটি শাে প্রতিভার স্ফুরণ ঘটায় কতটুকু?

এটা শিল্পীর ক্ষতি করছে। কয়েকটি গান শিখে এখানে উগরে দিচ্ছে শিল্পীরা। এই শােগুলােতে বিচারকরা সবার সব গানকেই ভাল বলছেন। এটা হতে পারে না। সব গান সবার ভাল হয় না।

জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে গেলে পাশে কি কোনও পুরুষের প্রয়ােজন?

কোথায়? আমার তাে কোনও পুরুষ নেই। নিজেকে একটু সৎ থাকতে হবে। বেশি ঝামেলায় গেলেই গন্ডগােল।

স্বাধীনতার এতগুলাে বছর কেটে যাওয়ার পরও আমাদের সরকারকে ‘বেটি বাঁচাও’ বিজ্ঞাপন দিতে হয়। এরপরও কি আমাদের দেশ নিজেকে আধুনিক বলে দাবি করতে পারে ?

শুধু ওয়াই-ফাই করে আধুনিক হওয়া যায় না। এখনও এই দেশকে আমার আধুনিক মনে হয় না। গ্রামে কি হচ্ছে আমরা জানতেই পারি না। সঠিক শিক্ষাটাই নেই। শিক্ষা দরকার। আমাদের বাড়িতে ছােট একটি মেয়ে থাকত। দেব, রচনা এসব তার মুখস্থ ছিল। কিন্তু লেখাপড়া জানত না। দেশের কাছ থেকে ওর কতটুকু প্রাপ্য কিছুই জানা ছিল না। ফলে এরকম মেয়েদের ঠকানাে তাে সহজযেদিন আমরা এই অবস্থা থেকে উঠে আসতে পারব, সেদিনই আমাদের দেশ আধুনিক হবে।

কখনও কি মনে হয় নারীর দ্বারা পুরুষও অত্যাচারিত হয় ?

হ্যাঁ তা তাে বটেই। এমন অনেক ঘটনাই চোখের সামনে ঘটতে দেখেছি বা দেখি। নারী মানেই দারুণ ভাল তার কোনও মানে নেই।

জীবনটাকে কখনও ইঁদুর দৌড় মনে হয়? 

না। আমার জীবন খুব স্বাভাবিক ছন্দে চলে। খুব রিল্যাক্স ওয়েতে কাজ করি আমি। শহরে যেমন গান করতে ভাল লাগে, তেমনই গ্রাম বা মফস্বলে গিয়ে গাইতে ভাল লাগে। তবে গ্রাম ও শহরের গান সিলেকশনে ফারাক থাকে। গ্রামে ফোক বেশি গাই। সুতরাং এত কিছু ভাল লাগা যেখানে রয়েছে সেখানে। জীবনটাকে ইঁদুর দৌড় করিয়ে নষ্ট করব না।

নিজে একজন বাঙালি বলে কতখানি গর্ব হয়?

দারুণ গর্বিত আমি। সৌরভ গাঙ্গুলির মতাে একজন দাদা আছে। আমাদের। একটা রিচ সংস্কৃতি আছে আমাদের। গানের জগতে বাঙালি চিরকালই দাপট দেখিয়েছে। আমাদের গানের জগতের পরম্পরা এতদিন ধরে রক্ষা পেয়েছে। এসবের জন্য খুব গর্ব হয়। 

র‍্যাপিড ফায়ার 

প্র: বন্ধু বা শত্রূ , আইডেন্টিফাই করেন কীভাবে?

উ: বুঝতে পারি না। 

প্র: আপনি কি প্রতিবাদী?

উ: না, একদম না। 

প্র: রাগী না অভিমানী?

উ: অভিমানী। 

প্র: বাসে লেডিজ সিট, ট্রেনে লেডিজ কম্পার্টমেন্ট থাকা কতটা জরুরি?

উ: অসভ্য দেশে এটা থাকা দরকার। 

প্র: কেমন পুরুষ পছন্দ?

উ: তার উইট থাকতে হবে। 

প্র: জীবনে অপমানিত হয়েছেন কতবার ?

উ: খুব বেশি নয়। হব হব দেখলেই আমি সেখান থেকে ধাঁ। 

প্র: ভয় পান কীসে?

উ: মায়ের শরীর খারাপ হলে। 

প্র: ওয়ার্ডরােবে শাড়ি কত আছে?

উ: ওরেব্বাবা—প্রচুর, গােনা যাবে না। 

প্র: কলকাতার সবচেয়ে ভাল লাগার জিনিসটি কী?

উ: বাংলায় কথা বলা। 

প্র: বিয়ে করলেন না কেন? প্রেম নিয়ে কিছু ভেবেছেন?

উ: বিয়ে করার ইচ্ছে নেই। আর প্রেম-ট্রেম আমার ধাতেই নেই। ছেলে বন্ধুরা ছেলের মতােই ট্রিট করে। 

প্র: কেমন খাবার পছন্দ?

উ: চাইনিজ আর ফুচকা। ফুচকা খাওয়ার শেষে একটা ফাউও চাই।

Trending

Most Popular


Would you like to receive notifications on latest updates? No Yes