কিটু চট্টোপাধ্যায়
বাইক কিনেছি মাসখানেক। একদিন হঠাৎ ইচ্ছা হল বাইক নিয়ে পাহাড়ে ঘুরতে। যাব। কিন্তু বউ তাে কিছুতেই রাজি নয়। শেষে অনেক তর্ক-বিতর্কের পর ঠিক হল আমরা যাচ্ছি। তবে ‘লাল পাহাড়ির দেশে। ব্রেক কষলাম, রাস্তা এখানে শেষ। সামনে কংসাবতীর ধারা আটকে বিশাল। জলধারা। তিনদিকে দিগন্ত বিস্তৃত জলরাশি। মাঝে দ্বীপের মতাে কিছু চড়া। ওপারে উঁচু বাঁধ। ওই বাঁধটি অবশ্য বেশ পরিচিত—“মুকুটমণিপুর’। জলধারায় প্রতিফলিত সূর্যাস্তের রক্তিম আলােয় চারিদিক সিঁদুর রাঙা। চোখ জুড়ে মুগ্ধতা। টিং টিং-ফেসবুকে নােটিফিকেশন এল। পকেট থেকে ফোন বার করে দেখলাম, আমার ঘরনি ইতিমধ্যে ছবি তুলে ফেসবুকে আপলােড করে দিয়েছে। ছবির কমেন্ট বক্সে একের পর এক লেখা পড়ছে, কোথায় তােরা? কী সুন্দর জায়গাটি। জায়গাটি কোথায়? যদিও লাল মাটির দেশ মানে অযােধ্যা পাহাড়, বড়ন্তি, তেলকুপি, দুয়ারসিনি। কিন্তু আমাদের ডেস্টিনেশন ছিল অচেনা লাল পাহাড়ির দেশ ‘দোলডাঙায়। কি, নামটা অচেনা ঠেকছে! তা তাে ঠেকবেই, এখনও যে পর্যটন তালিকায় নাম ওঠেনি। দুয়ােরানির। ‘ফোন নিয়ে এত কী দেখছ? এদিকে এসাে না, একটা সেলফি তুলি’– গিন্নির ডাকে সাড়া না দিয়ে উপায় নেই। ছবিপর্ব চুকিয়ে পেছন দিকে এসে জঙ্গলঘেরা। রান্না দিয়ে চললাম দোলডাঙার দিকে। পথে পড়ল ডিয়ার পার্ক। দূরে খাঁচার । ভেতরে চোখ বুজে বিশ্রাম নিচ্ছে হরিণের দল। একটু দূরে যেতেই চোখ ঝলসে গেল। চারিদিকে লাল আর লাল! কোন দিক ছেড়ে কোন দিকে চাই! পলাশ, শিমুলের সাজে মায়াবী হয়ে উঠেছে পুরুলিয়া। এখানে বাইক না থামালেই নয়। রূপবতীর এই রূপ লেন্সে বন্দি না করলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারব না। শাটার পড়ল একের পর এক।
মাটিতে থেকে পলাশ তুলে খোঁপায় খুঁজে পারমিতা বলল, ‘এবার চলাে, নাহলে রাত হয়ে যাবে। অনিচ্ছা নিয়েই বাইক স্টার্ট দিলাম। দোলডাঙা ঢােকার আগে পড়ল ছােট্ট একটি গ্রাম। ঘরে ঘরে জ্বলছে কুপি, হ্যারিকেনের আলাে। এক জায়গায় দেখলাম তুলসীতলায় দাঁড়িয়ে প্রদীপ দেখাচ্ছে ছােটো একটি মেয়ে। চারিদিক স্তব্ধ, মাঝে মাঝে বেজে উঠছে শাঁখ। গ্রামের এই নিস্তব্ধতা চিরে চলল আমাদের বাইক। গ্রাম পার হতেই দূরে দেখা গেল আগুনের ফুলকি। আরাে কাছে যেতেই কানে এল একতারার সুর। ‘মনের মানুষ জিন্দা থাকে মরে না’ সুরের দোলায় আমরা পা রাখলাম দোলডাঙা ব্যাকপ্যাকার্স ক্যাম্পে। সামনে পূর্ণিমার আলােয় চকচক করছে কংসাবতীর জল।। চারিদিক ঘেরা সােনাঝুরি বনে। গাছ জুড়ে জোনাকি পােকার আলাে, ঝি ঝি। পােকার ডাক, হিমেল বাতাস, আদিম খােলা প্রকৃতির মাঝে বসে, গরম চা হাতে (ওয়েলকাম ড্রিঙ্ক) বাউল গান শােনা। দ্যাট এক্সপেরিয়েন্স ওয়াজ অসাম। আমি লিখে বা বলে বােঝাতে পারব না। সৌন্দর্যে মন ভরলেও পেট ভরে না। তাই খিদের কথা বলতেই শালচিকেন, মুড়ি আর চপ দিয়ে গেল। শালচিকেন-মুরগির এই পদের গুণগান অনেকের মুখে। শুনেছি, প্রথমার টেস্ট করলাম। ইট ওয়াজ জাস্ট টু গুড। ফোক গানের সঙ্গে এই রেসিপি জমে গেল। শেষে রাতে চিকেন-রুটি খেয়ে ঘুমাতে গেলাম। মাটির ঘর, খড়ের ছাউনি, দেওয়ালে খান কতক ফটো, আসবাব বলতে একটি খাট ও টেবিল। তবে জানালাটি খাসা, এটা দিয়ে দেখা যাচ্ছে কংসাবতীর জল, নীল। আকাশ। মনােরম এই দৃশ্য দেখতে দেখতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম টেরই। পায়নি। জানলা দিয়ে আসা একচিলতে রােদ চোখে পড়তেই ঘুম ভেঙে গেল। ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে দেখলাম চারিদিক ছবির মতাে সুন্দর। সমুদ্রতটে সাজানাে ঝাউয়ের শাড়ির মতাে শালের জঙ্গল। নীচে বিছানাে সবুজ গালিচা গিয়ে মিশেছে। জলাধারে। ছলাৎ ছলাৎ শব্দ করে সেই জলাধারের ঢেউ এসে পড়ছে ঘাসের ওপর। চা খেতে খেতে শাল গাছে ঝােলানাে হ্যামকের ওপর বসে সেদিকে তাকিয়ে রইলাম। লুচি, তরকারি, মিষ্টির প্লেট নিয়ে এল পারমিতা। ঘাসের ওপর বসেই সারলাম ব্রেকফাস্ট। তারপর বেরিয়ে পড়লাম ঘুরতে। আগেই ঠিক ছিল
‘তেপারা যাব। এই পথেই পড়ল কালকের সেই ডিয়ার পার্ক। কাল দূর থেকে যে হরিণগুলাে দেখেছিলাম, আজ তাদের গায়ে হাত দিয়ে আদর করলাম। সকালে হরিণদের খেতে দেওয়া হয়। তাই এই সময়টা তারা খাঁচার কাছে চলে আসে। তাতেই এই প্রাপ্তিযােগ। পাহাড়ের ওপর ছােটো গ্রাম তেপারা। নীচে কংসাবতী। যদিও মনে ইচ্ছা ছিল অন্য কিছু কিন্তু পুরুলিয়াতে প্রথমবার বাইক নিয়ে পাহাড়ে ওঠার এক্সপেরিয়েন্স মন্দ নয়। তেপারা থেকে আমরা গেলাম সােজা পরেশনাথ মন্দির’-এ। দেড়শাে বছরের পুরনাে শিবের মন্দির। দুজনে মিলে পুজো দিয়ে সােজা নেমে এলাম। নীচে। এখানে একটি বুদ্ধদেবের মূর্তিও আছে। সেটি দেখে ‘মুসাফিরানা পার্ক। এখান থেকে মুকুটমণিপুর বাঁধ পুরােপুরি দেখা যায়। ঘন্টাখানেক পার্কে কাটিয়ে যখন বাইরে এলাম তখন খিদেতে পেট জ্বলছে। ফেসবুক থেকে আগেই। জেনেছিলাম এখানকার ‘আম্রপালি’ হােটেলের কথা। দুপুরের খাওয়ার সেখান থেকে খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম কংসাবতী ও কুমারী নদীর সংযােগস্থলে। বাইক। রেখে গেলাম নৌকা বিহারে। বিকালের পড়ন্ত আলােয় নৌকায় ঘুরে বেড়ানাে আলাদাই এক্সপিরিয়েন্স। এখান থেকে সােজা ফিরে এলাম ক্যাম্পে। সকালে। ব্রেকফাস্ট সেরে পা রাখলাম বাড়ির পথে। কোথায় থাকবেন: ইজিফিসাে ব্যাক প্যাকার্স ক্যাম্প (৯৩৩০৩৪২৬৮৯/৭৯৮০৫১৪৪৭৭)। খরচ: খাওয়া–দাওয়া সহ জন প্রতি দিন ১৩০০ টাকা (বাউল, বােট, শালচিকেন—এক্সট্রা খরচ)
* এই অস্থির সময়ে কোথাও বেড়াতে যেতে হলে সমস্ত নিয়মাবলী, সুরক্ষা ও ওই জায়গার সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়ে যাওয়াই ভালাে।
শীতকাল পড়তে আর কটা দিন বাকি মাত্র। ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে... Read More
মানস মুখোপাধ্যায় মনের ইচ্ছাটা অনেকদিনের। হপ্তা-খানেকের ছুটিতে যাবো হলং। হলং... Read More
কাশ্মীরের ডাল লেকের ‘হাউসবোট’ জগৎ বিখ্যাত। কিন্তু সেখানে যাওয়া সময়... Read More
বহুদিন পরে মাত্র কয়েক দিনের ছুটি পেলেন অফিস থেকে। ভাবতে... Read More
ইতিহাসের আর জঙ্গল দুটোই যদি একসঙ্গে পছন্দ করেন। তবে বেড়িয়ে... Read More
কিরি মানে হাতি আর বুরু মানে বন। আর মেঘাতুরু মানে... Read More
অফিস আর বাড়ি একটানা করতে করতে হাঁপিয়ে উঠেছিলাম। তাই সুযােগ... Read More
প্রতিদিনের ব্যাস্ততার মাঝে মন চায় কিছুদিনের ছুটি। যেখানে থাকবে না... Read More
কোচবিহার থেকে মাত্রা ৩৫ কিলােমিটার দূরে তুফানগঞ্জএর রসিকবিল বিভিন্ন প্রজাতির।...
শহুরে বাতাবরণ, কোলাহল থেকে বেড়িয়ে হাত বাড়িয়ে একটু এগিয়ে গেলেই...
ঘড়িতে ৮ টা বেজে ১০ মিনিট। তখনও অফিসে কাজ করছিলাম।...
কলকাতার খুব কাছে একরাত কাটানোর জন্য মনের মত জায়গা। উত্তর...
কিটু চট্টোপাধ্যায় বাইক কিনেছি মাসখানেক। একদিন হঠাৎ ইচ্ছা হল বাইক...
কথিত আছে যে, ২৩তম জৈন তীর্থঙ্কর পার্শ্বনাথ স্বামী ১০০ বছর...
পুরি থেকে মাত্র ১৪ কিলােমিটার দূরে। এই সুপ্রাচীন ঐতিহ্যশালী শিল্পকলা...
পাহাড়ের কোলে ছবির মতাে সাজানাে এক আদিবাসী গ্রাম। পুরুলিয়ার শহর...
ভ্রমণ পিপাসু বাঙালি সর্বদাই ঘুরতে পছন্দ করেন। তাই কোথাও ঘুরতে...
ওড়িশার একমাত্র শৈলগ্রাম কন্ধমাল জেলার দারিংবাড়ি। শাল, সেগুন, মহুয়ার বন,...