jamdani

রূপকথার সোপান

কোথাও যদি বাজে রূপকথার বাঁশিটি, জলনূপুরের ঝমঝম শব্দে মিশে যায় মনকেমনের সুর, তাহলেও বোধহয় অবাক হওয়ার কিছু নেই এখানে। এ এমনই এক ফেয়ারি টেলস্‌-এর দুনিয়া, যেখানে অবাক হওয়াটা প্রথম থেকেই এত স্বাভাবিক যে, যে কোনও আশ্চর্যের জন্য মন তৈরি থাকে এমনিতেই। রঙবাহার পর্বতের মাঝখানে কে যেন বানিয়েছে এখানে, বিস্তীর্ণ দুধসাদা শ্বেতপাথরের সিঁড়ি। কে যায়? কোথায় যায় ঐ সিঁড়িপথ ধরে? এ প্রশ্নের জবাব মেলে না। শুধু পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝরনার জল, গভীর নৈঃশব্দ ভেদ করে শুধু অবিশ্রান্ত ঝিরঝির শব্দে জেগে থাকে।

প্রকৃতির খেয়াল- ওয়াটার টেরেস! সাংগ্রিলা কাউন্টি থেকে ১০১ কিমি দূরে, হাবা স্নো মাউন্টেনস-এর পাদদেশে অবস্থিত হোয়াইট ওয়াটার টেরেস বা বাইস্যুই টেবলল্যান্ড এমনই এক আশ্চর্য প্রাকৃতিক নির্মাণ। রহস্যময় সাংগ্রিলার অন্যতম আকর্ষণ এই চাইনিজ ল্যান্ডফর্মটির ইতিহাস দুই থেকে তিন লক্ষ বছরের পুরোনো। বিচিত্র বর্ণের আঁকিবুঁকি কাঁটা টেবলল্যান্ডের উপত্যকা, ঝরনার জলে থাকা ক্যালশিয়াম কার্বোনেট দীর্ঘদিন ধরে জমে জমে তৈরি হয়েছে আপনা থেকেই। বছরের পর বছর ধরে উপত্যকার ল্যান্ড সারফেস ঢেকে গেছে ডিজপোজিশনে। অবশেষে রূপ পেয়েছে রূপকথার সোপান। বর্তমানে এই হোয়াইট ওয়াটার টেরেস বিস্তৃত পাহাড়ের উপর বিশালাকায় হোয়াইট জেড কার্ভিং-এর স্থায়ী ইম্প্রেশন রেখে যায়। স্তরের পর স্তর শুয়ে থাকা টেবলল্যান্ড একটা সিঁড়ির মতো আকার নেয়। স্থানীয় মানুষদের মতে এটি রূপকথার পরিত্যক্ত ভূমি। এর বাঁ দিকের অংশে একটি পুল এবং চন্দ্রাকৃতি প্ল্যাটফর্ম আছে, যাকে তারা বলে ‘ড্রেসার অফ দ্য ফেয়ারিজ’।

অসাধারণ নিসির্গ দৃশ্য ছাড়াও জানার আছে আরও কিছু। এই জায়গাটি ন্যান্সি মাইনরিটি গ্রুপের ডোংবা কালচারের জন্মস্থান। কিংবদন্তি অনুযায়ী ডোংবা ধর্মের প্রথম সন্ন্যাসী তিব্বত থেকে ফেরার সময় এই স্থানটিতে এসে মুগ্ধ হন এবং এখানেই থেকে যান ধর্মপ্রচারের জন্য। এর পর অঞ্চলটি ডোংবা ধর্মের পবিত্র ভূমি হয়ে ওঠে। দ্বিতীয় চান্দ্রবর্ষের অষ্টম দিনে প্রতিবছর সেজে ওঠে রূপকথার সোপান। ন্যান্সি জনগণ জমায়েত হয় তাদের ট্র্যাডিশনাল উৎসব পালনের জন্য। নাচগান চলে সারারাত ধরে। জ্যোৎস্না ধোয়া জলসিড়িটিতে তখন হয়তো নেমে আসে রাতপরিরা। ডানা মুড়ে কুর্নিশ জানায় এই অবাক পৃথিবীকে!

Trending

Most Popular


Would you like to receive notifications on latest updates? No Yes