ফোনটা যখন এল রাজীব তখন কোম্পানির ফাইনাল ব্যালেন্সশিট বানাতে চূড়ান্ত ব্যস্ত। ইয়ার এন্ডিংয়ের সময়টায় রাজীবের প্রবল কাজের চাপ থাকে। ওরিয়েন্ট ফাইনান্স কোম্পানির চিফ অ্যাকাউন্ট্যান্ট রাজীব চৌধুরী। চারশাে কোটি টাকা টার্নওভারের কোম্পানির ফাইনাল অ্যাকাউন্টস তৈরি করা সহজ কথা নয়। রাজীবের ওপর বিশাল দায়িত্ব। সাতচল্লিশ বছরের রাজীব যদিও চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, কস্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট কিছুই নয়, নেহাতই এম কম। কিন্তু প্রায়। বাইশ বছর ধরে ঘসতে ঘসতে নানা ঘাটের জল খেয়ে অনেক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে অবশেষে ওরিয়েন্টের মতাে একটা জবরদস্ত কোম্পানিতে সুযােগ পেয়ে গেছে। তাও প্রায় দেখতে দেখতে সাত বছর হয়ে গেল এখানে। এমনি অ্যাকাউন্ট্যান্ট হয়ে জয়েন করেছিল, দুই বছর আগে চিফ অ্যাকাউন্ট্যান্ট হয়েছে। যথেষ্ট ভালাে প্যাকেজ। এখানে জয়েন করার পরই রাজীবের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে। দমদম মেট্রো স্টেশনের কাছে টু বিএইচকে ফ্ল্যাট, আরেকটু আরামের জীবন। কিছুটা স্বাচ্ছন্দ্য, কিছুটা নিশ্চিন্তি। একমাত্র ছেলে বিটুও এখন ক্লাস সেভেন। পড়াশােনায় তুখাের। খুবই বাধ্য। স্ত্রী ধৃতিও। পরিপাটি একজন ভালাে গৃহিণী। সব মিলিয়ে দিব্বি নিরিবিলি শান্ত একটা সংসার রাজীবের। কিন্তু একটা ফোন সব কেমন যেন ঘেঁটে দিল।
বেলা দুটোর সময় এল ফোনটা। মােবাইল ভাইব্রেট মােডে রাখা। রাজীব এক হাতে বাগারে কামড় দিচ্ছিল আর অন্য হাতে ল্যাপটপের কি বাের্ডে আঙুল চালাচ্ছিল। ফাইনাল অ্যাকাউন্টসের প্রতিটা ডিজিট খুঁটিয়ে দেখে নিচ্ছিল শেষবারের মতাে। তখনই মােবাইলটা গোঁ গোঁ করতে শুরু করল।
রাজীব জাস্ট একবার আড়চোখে মােবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকাল। দেখল একটা ল্যান্ডলাইনের নাম্বার। ট্রু কলারে কোনও নাম শাে করল না।
রাজীব প্রথমে ভাবল কলটা রিসিভ করবে না। এই মুহূর্তে আননােন কল রিসিভ করার থেকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল এই ব্যালেন্সশিট। কিন্তু ফোনটা বারবার আসতে লাগল। চারবারের বার কলটা রিসিভ করেই নিল রাজীব। এতবার ফোন আসছে মানে খুবই আরজেন্সি রয়েছে। গম্ভীর গলায় বলল, হ্যালাে।
সঙ্গে সঙ্গে ওদিক থেকে খােনা গলায়, কে রাজু…
রাজু! চমকে গেল রাজীব। রাজীবের ডাকনাম রাজু, তবে সেটা বাড়ির লােকজন আর পুরনাে পাড়ার বন্ধু, প্রতিবেশীরা ছাড়া আর কেউ জানে না। এই নতুন জীবনে রাজীবকে কেউ রাজু বলে ডাকে না। এমনকি ধৃতিও না। ধৃতি ওকে ডাকে রাজ নামে। ফলে এই নামে…!
আবার একই প্রশ্ন, কে রাজু?
হুঁ, বলছি।
ফোন তুলিস না কেন? কতবার করে ডাকছি। বেশ ধমক এল ফোনের ওপার থেকে।
গলাটা চেনার চেষ্টা করল রাজীব। উঁহু… একজন খােনা গলার বৃদ্ধা ফোন করেছে, এর বেশি আর কিছুই বােঝা যাচ্ছে না। কে হতে পারে ? পুরনাে পাড়ার কেউ? দুঃসম্পর্কের কোনও আত্মীয়? নাহ, মনে পড়ছে না।
কে বলছেন? একটু বিরক্তি নিয়েই প্রশ্নটা করল রাজীব।
এই প্রশ্ন শুনে থমকাল ওইদিকের গলাটা কি চেনা! স্মৃতি হাতড়াতে থাকল। উহু… মনে পড়ছে না। রাজীব আবার জিজ্ঞাসা করল, কে বলছেন?
কে আবার বলবে? তােকে ফোনটা করার আছেটা কে?
এমন ধমক শুনে থমকে গেল রাজীব। কয়েক মুহূর্ত চুপ থেকে বলল, আপনি কে? কী চাইছেন?
হতভাগা আমি কে জিজ্ঞাসা করছিস? গলা শুনেও বুঝিস না রে! তাের মা… চিনিস তাের মাকে? যে তােকে জন্ম দিয়েছে, খাইয়ে-পড়িয়ে বড়াে করেছে রে হারামজাদা।
আবারও চমকে উঠল রাজীব। না, ফোনটা রঙ নাম্বার সেই বিষয়ে আর সন্দেহ নেই, কিন্তু তাের মা এই কথাটা মনের ভেতর ঘুরপাক খেতে শুরু করল। তারপরেই ওই হারামজাদা শব্দটা। হ্যা, মা ঠিক ওই শব্দটাই ব্যবহার করত। কথায় কথায় ওই শব্দটা চলে আসত মুখে। ছােটোবেলা থেকেই এইটা শুনে। বড়াে হয়েছিল রাজীব।
হু… হ্যাঁ বলুন…
আবার বলুন! হারামজাদা কোথাকারে! কলকাতায় গিয়ে পোঁদে লেজ গজিয়েছে নাকি রে? থাবড়ে পিঠের ছাল তুলে নেব।
আবারও চমকাল রাজীব। এসব কী হচ্ছে! থাবড়ে পিঠের ছাল… এও তাে ওরই মায়ের লবজ ছিল। কিন্তু ইনি কে?
বাবা রাজু তুই টাকা পাঠাসনি হােমে, এরা বলছে আর রাখবে না। তুই টাকা পাঠা, এরা আর ভালাে ব্যবহার করছে না আমার সঙ্গে, একেবারেই দেখাশােনা করছে না। ঠিকমতাে খেতেও দেয় না আজকাল। বললে বলে ছেলেকে বলাে টাকা পাঠাতে, তুই বাবা শিগগির আয় একবার, টাকা দিয়ে যা এদের। পেট ভরে খাবারটা পর্যন্ত দিচ্ছে না এরা। হ্যালাে… হ্যালাে…
এনগেজ টোন আসতে থাকল। কেটে গেল কলটা।
রাজীব হাতের মুঠোয় ধরা বাগারটায় কামড় দিতে গিয়ে ওটার দিকে একবার তাকাল, তারপর প্লেটের ওপরে রেখে দিল। কথা আটকে যাচ্ছে রাজীবের। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে হুড়মুড় করে অনেকগুলাে বছর পিছিয়ে গেল রাজীব।
বাবা মারা গিয়েছিল রাজীব তখন সবে কলেজে ফার্স্ট ইয়ার। একটা ওষুধ কোম্পানিতে বাবা ক্লার্ক ছিল। কর্মরত অবস্থায় মারা গিয়েছিল বলে কোম্পানি রাজীবকে চাকরি অফার করেছিল, কিন্তু মা চাকরি করতে দেয়নি, বলেছিল কোনও দরকার নেই, আগে পড়াশােনা কমপ্লিট কর, আমি ঠিক ব্যবস্থা করে ফেলব। তােকে সংসার নিয়ে ভাবতে হবে না। পি এফ গ্র্যাচুইটি আর কোম্পানির এমপ্লয়িজ ওয়েলফেয়ার ফান্ড থেকে পাওয়া কিছু টাকা এই ছিল সম্বল। তাই দিয়েই মা শুরু করল দুইজনের বেঁচে থাকার লড়াই। রাজীব যেমন সংসার কী করে চলবে তা ভাবতে চায়নি, ভাবতেও হয়নি ওকে। বাবা-মায়ের বেশি বয়েসের একমাত্র সন্তান রাজীবের চোখে তখন একটাই স্বপ্ন, গ্র্যাজুয়েশনে ভালাে রেজাল্ট করতেই হবে। চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট হতেই হবে। টাকা বাঁচানাের জন্য মাত্র একজন টিউটরের কাছেই পড়তে যেত রাজীব। বাকি সব সাবজেক্ট নিজেই। গ্র্যাজুয়েশনের রেজাল্ট মন্দ হল না, কলেজের স্যার বললেন, শুধু চার্টার্ডের আশায় থাকিস না, সঙ্গে মাস্টার্সও করে নে। সবদিক খােলা রাখাই ভালাে। স্যরের কথা শুনে তাইই করল রাজীব। এম কমে ভর্তি হল, সঙ্গে সি এ পড়া। পাঁচবার পরীক্ষা দেওয়ার পর বুঝল ওর দ্বারা সি এ পাশ হবে না। ততদিনে বয়স বেশ খানিকটা গড়িয়েছে, মা আর পারছিল না। যদিও মারা যাওয়ার বছর দেড়েক আগেই বাবা দেড় কাঠা জমি কিনে একটা ছােটো বাড়ি বানিয়ে রেখে গেছিল বলে বাড়িভাড়াটা গুনতে হত না, কিন্তু সংসারের বাকি খরচগুলাে তাে কমেনি, বরং দিনে দিনে বাড়ছিল। মা মুখে কিছু না বললেও নিশ্চপ মুখের দিকে শুধু তাকিয়ে থাকত। রাজীব বুঝত, মা এবার চাইছে ছেলে সংসারের হাল ধরুক। সেটা অস্বাভাবিক কোনও চাহিদা নয়, অনেকগুলাে বছর পেরিয়ে গিয়েছিল অসুখে, অস্বাচ্ছন্দ্যে। রাজীব ততদিনে সংসারের হাল ধরার উপযুক্ত। রাজীবের ইচ্ছে ছিল না, কিন্তু উপায়ও ছিল না। এম কম পাশ করে গিয়েছিল। কিন্তু সি এ পড়া এক অনন্ত যাত্রা। বেশ কিছুদিন বাড়িতে কোচিং ক্লাস চালাল রাজীব। ইলেভেন টু বি কম কমার্স পড়ানাে। পড়াতে ভালাে লাগত না ওর। চাকরির জীবন বেশি টানত। ফলে একদিন অ্যাপ্লাই করা শুরু এবং ইন্টারভিউ দিতে দিতে লেগে গেল চাকরি। কিন্তু চাকরি পেল কলকাতায়। হাবড়া থেকে কলকাতা ডেলি প্যাসেঞ্জারি। চলল বেশ কয়েক বছর। খান তিনেক চাকরি বদলের পরেই স্যালারি ভদ্রস্থ হল। মা বলল, এবার বিয়ে কর। ক’দিন আছি, ঠিক নেই। নাতির মুখ দেখে যেতে চাই। আঠাশ বছরের রাজীব কখনও কারও প্রেমে পড়েনি। রাজীবের প্রেমেও কেউ নয়। ফলে নিস্তরঙ্গ জীবন। রাজীবের মা পাত্রী খোঁজা শুরু করলেন। তাও জুটে গেল। পাইকপাড়ার মেয়ে ধূতি। ঘরােয়া সুশ্রী শিক্ষিতা। বিয়ে হল। সংসার গড়াতে লাগল নিজের মতাে। কিন্তু খুব বেশিদিন এইভাবে চলল না। কলকাতার মেয়ে ধৃতি বাকি সব কিছু মানিয়ে নিলেও হাবড়ার আধা গ্রাম মফসসলকে, বিশেষ করে শহুরে সুযােগসুবিধা থেকে বঞ্চিত করে খুব বেশিদিন সামলাতে পারল না। হাঁফিয়ে উঠল। রাজীবকে বলতে শুরু করল। সত্যি বলতে, রাজীবও আর পেরে উঠছিল না। প্রাইভেট কোম্পানিতে কাজের সময়ের কোনও ঠিক নেই, তখন ওর মিন্টো পার্কের কাছে অফিস, ওখান থেকে বেরােতেই কোনওদিন রাত আটটা বেজে যেত, তারপর অফিস থেকে বেরিয়ে বাসে শিয়ালদা, সেখান থেকে দীর্ঘ ট্রেন জার্নি করে অনেক রাতে বাড়ি ফেরা। পরদিন আবার সকাল সাতটার মধ্যে বেরােনাে। শরীর আর দিচ্ছিল না। ততদিনে কলকাতায় একটা ছােটো ফ্ল্যাট ভাড়া নেবার মতাে সামর্থ্য হয়ে গেছে রাজীবের। ইচ্ছে ছিল হাবড়ার বাড়িটা বেচে দিয়ে সপরিবার কলকাতায় শিফট করে যাওয়ার। কিন্তু বাধ সাধল মা। পুরনাে পাড়া ছেড়ে সে এক পাও নড়তে রাজি নয়, বাড়ি বিক্রির তাে কোনও প্রশ্নই নেই। ফলে যা হওয়ার তাই হল, প্রায়ই অশান্তি, মনােমালিন্য, মান-অভিমান। একদিকে মা, অন্যদিকে ধৃতি আর মাঝখানে রাজীব। শ্যাম রাখি না কুল রাখি অবস্থা। শেষে কলকাতাই জয়ী হল। ধৃতি আর। রাজীব চলে এল পাইকপাড়ার একটি এক কামরার ফ্ল্যাটে। মা এল না। কিছুতেই আনা গেল না মাকে। কলকাতায় আসার কয়েকদিন আগে থেকে মা কথাও বন্ধ করে দিয়েছিল রাজীব ও ধৃতির সঙ্গে। সব মালপত্র টেম্পােতে চাপিয়ে ওই বাড়ি ছেড়ে চলে আসার সময় মাকে প্রণাম করতে গিয়েছিল রাজীব। মা প্রণামটুকুও নিতে চায়নি। মায়ের ওপর অভিমান করেছিল রাজীবও। মা এতটা জেদ না করলেও পারত! বয়স বাড়ছে। প্রাইভেট কোম্পানিতে উন্নতি করতে গেলে সময় দিতে হবে, বেশি সময় দিয়ে খাটতে হবে। সন্ধে হলেই অফিস থেকে বাড়ি পালাই পালাই করলে বসের নেকনজরে পড়া যাবে না। এই সব শর্ত মেনে নেওয়ার জন্যই শিফটিং আবশ্যক ছিল, কিন্তু মা গেল না। তাের বাবার স্মৃতি, এতগুলাে বছর এখানে থেকেছি, এইভাবে শিকড় উপড়ে চলে যাব! পারব না রে, বাঁচব না, তােরা যা, উন্নতি কর অনেক। মায়ের কথাগুলােয় হতাশা, ক্ষোভ সবই ছিল।
রাজীব কলকাতায় আসার পর পেল অনেক কিছুই, কিন্তু হারালও অনেক কিছু। কলকাতায়
আসার পর থেকে দিনে দিনে হাবড়ার সঙ্গে যােগাযােগ কমতে লাগল। মা আর ছেলের মধ্যে যেন রেষারেষি শুরু হয়ে গেল কে কাকে কত আগে ভুলতে পারে। মায়ের প্রতি মাসের হাতখরচটা পাঠিয়েছিল রাজীব। সেটা ফেরত এসেছিল। কারণ জিজ্ঞাসা করায় মা উত্তর দিয়েছিল, দরকার নেই। তাের বাবা যেটুকু রেখে গেছে, ওতে আমার একার চলে যাবে।
আঁতে ঘা লেগেছিল রাজীবের। আর পাঠায়নি। ধৃতি কখনও হাবড়া যাওয়ার কথা বললেও রাজীবই বলত, না যাব না। মা আর ছেলের এই অভিমানের মাঝে দুইজনেরই বয়স বাড়তে থাকল। তবে একেবারেই কখনও যাওয়া হয়নি তা নয়, মাকেও একবার জোর করে কলকাতার ভাড়া বাড়িতে দুইদিনের জন্য এনে রেখেছিল রাজীব। ছেলে হওয়ার পর ওর অন্নপ্রাশনও ওই হাবরার বাড়িতেই হয়েছিল। ব্যাস, ওইটুকুই।
শিকড় কেটে গেছিল রাজীবের। শহুরে জীবনেই অভ্যস্ত হয়ে উঠল ও। একদিন রাতে মা আচমকা চলে গেল। খবর পেয়েছিল পরের দিন, বেলায় প্রতিবেশী শিবুকাকা ফোন করে জানিয়েছিলেন।
বেলা হয়ে গেল, দেখি বউদি উঠোনে ফুল তুলতে বেরােননি, তখনই সন্দেহ হয়েছিল আমার, শরীরটা খারাপ হল নাকি… জানলা দিয়ে তাকিয়ে দেখি, মেঝেতেই পড়ে রয়েছেন… বাথরুমে যেতে গিয়েছিলেন বােধহয়… আহা রে…
শ্রাদ্ধের আগের দিনই রাজীব জানতে পেরেছিল মা বাড়িটা বৃদ্ধাশ্রম করার জন্য একটি সংস্থাকে দানপত্র করে দিয়ে গেছে। খারাপ লেগেছিল রাজীবের। না, পৈত্রিক সম্পত্তি পায়নি বলে নয়, মা এই কাজটা ওকে জানিয়েও করতে পারত, তাহলে কোনও তৃতীয় ব্যক্তির কাছে এই খবর শুনে ওকে অবাক হতে হত ।
কাজ মেটানাের পর সেই যে হাবরা ছাড়ল, আর কোনওদিন সেইমুখাে হয়নি রাজীব। শুধু বছর কয়েক আগে এক পুরনাে বন্ধুর সঙ্গে আচমকা দেখা হয়েছিল, ও জানিয়েছিল তােদের বাড়িটায় এখন দুটো ঘরে মােট চারটে বুড়ি থাকে।
মায়ের মুখটা মনে পড়েছিল তখন। বাবা ক’টাকাই বা রেখে গিয়েছিল? ওই টাকার সুদের পয়সায় একজনের চলাও কঠিন, তবু মা রাজীবের টাকা আর নেয়নি।
অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিল রাজীব। হুঁশ ফিরল ইন্টারকমের রিঙ-এ।
হ্যালাে।
রাজীব হাে গয়া?
ভিপি-র প্রশ্ন।
অ্যাঁ…হ্যাঁ স্যর হাে গয়া।
তুরন্ত লে কে আও। আজই এমডি সে সাইন করবানা হ্যায়।
হ্যাঁ স্যর।
পুরনাে ভাবনা সব ঝেড়েঝুড়ে দ্রুত ফাইনাল অ্যাকাউন্টসের প্রিন্ট আউট নিল রাজীব। তারপর অ্যাকাউন্টস ভিপি-র চেম্বারের দিকে গেল।
সব কিছু মিটতে আরও ঘন্টা দুয়েক। সাইন হয়ে গেল। এখন কয়েকদিনের রিল্যাক্সেশন। ইচ্ছে রয়েছে সপরিবার মন্দারমণি ঘুরতে যাওয়ার।
ব্যালেন্সশিট পছন্দ হয়েছে এমডি-র। ভিপি এবং এমডি দুজনেই রাজীবকে গুড বলেছেন। এই গুড মানেই ইনক্রিমেন্ট। রাজীবের খুশি হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু ওর মন কিছুতেই আজ খুশি হচ্ছিল না। ওই রঙ নাম্বারটা ওর মনে সুচের মতাে বিধছিল, ফালতু একটা রঙ নাম্বারকে এত গুরুত্ব দেওয়ার কিছুই ছিল, কিন্তু তবু একটা খচখচ। বিকেল পর্যন্ত নিজের সঙ্গে লড়াই করে অবশেষে ক্লান্ত ও বিষণণ রাজীব ঠিক করল, ওই অচেনা হােমটিতে ফোন করে সেই। ওই অচেনা মহিলার বকেয়া টাকাটুকু পাঠিয়ে দেবে। তাহলে যেন ঘাড় থেকে একটা বহু পুরনাে, অদৃশ্য বােঝা নামে। বৃদ্ধার নামটা তখন জানা যায়নি, তবে ফোন করে ডিটেল দিলে নিশ্চয়ই হােমের লােক বুঝবে।
নিজের কিউবিকলে বসে মােবাইলের কল লগ ঘেঁটে সেই ল্যান্ডলাইন নাম্বারটা বার করল রাজীব, তারপর কল করল। একটা অকারণ উত্তেজনা ওকে ঘিরে ধরেছে। কিন্তু রিং হল না, কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে যান্ত্রিক স্বর, দিস নাম্বার ডাজ নট এগজিস্ট। শিউরে উঠল রাজীব। আবার চেষ্টা করল… আবার… করতেই থাকল। আর ফোনের সেই যান্ত্রিক স্বরটাও প্রতিবার গলা চড়িয়ে আকাশ ফাটিয়ে একটাই স্রেফ একটাই লাইন… বারবার চেষ্টা করতে লাগল রাজীব, পাগলের মতাে। একবারও যদি রিং হয়, ও প্রান্ত থেকে কেউ যদি ধরে…
সন্দীপ মুখোপাধ্যায় - “নাম কী? থাকো কোথায়? কোন ক্লাস অবধি... Read More
এদেশে সোনাকে স্থিতি এবং ভাগ্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।...
আমরা সবাই জানি যে ত্রিদেব বলতে ব্রহ্মাণ্ডের তিন প্রধান স্তম্ভকে...
লিপস্টিক আমার কাছে লিপস্টিক নয়। লিপস্টিক আমার কাছে প্রতীক। রং...
নাতাশা স্নান সেরে এসছে। সারাটা ঘরই এখন গন্ধস্নান করছে। একই...
পুলিশের উর্দিটা তখনও গা থেকে খুলিনি, সুসময়ী বলল, “তােমার জন্য...
শাে তখন জমে উঠেছে। শীতের সন্ধে। গায়ে ছিল হালকা জ্যাকেট।...
চা আর প্রজাপতি বিস্কুট। খাবার মধ্যে এই। কিন্তু কথা ছিল...
সকাল বেলাটা আজকাল বিজনের বেশ সমস্যার। থিতু হয়ে প্রভাত উপভােগ...
রিশপের ছবিগুলাে সব ফেসবুকে আপলােড করার পর কম্পিউটারের সামনে থেকে...
লােকে ‘ব্যোমকেশ’ নামে ডাকেন। নতুন নামকরণ হয়েছে ‘সােনা দা। এদিকে...