বেনারসি শব্দটা শুনলেই আমাদের অনেকেরই চোখের সামনে ভেসে ওঠে ঝলমলে রঙিন শাড়ি পড়া কনে বউ। তার সঙ্গে সঙ্গেই ভাসে বিয়ের মণ্ডপ, সানাইয়ের সুর, নাকেও আসে নানা রকম খাদ্যের ঘ্রাণ। এই বেনারসি শাড়ি যেন এক ও একমাত্র বিয়েবাড়ির সঙ্গেই জড়িয়ে আছে ওতপ্রোতভাবে। প্রাচীনকাল থেকে এদেশের বর্ণিল, সূক্ষ্ম ও বাহারি শাড়ির খ্যাতি জগৎবিখ্যাত। এসব শাড়ি যেন এক একটি ক্যানভাস, এক একটি শিল্পকর্ম।
ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে ভারতীয় উপমহাদেশ বিশ্বের অন্যতম প্রধান ধর্ম, দর্শন, সভ্যতা ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন। সংস্কৃতির বিভিন্নতার মধ্যেও ভারতীয় নারীদের অন্যতম পরিধেয় হচ্ছে শাড়ি।
বাঙালির জীবনের সঙ্গে হাজার বছর ধরে যে নামটি মিশে আছে তা হচ্ছে বেনারসি। ভারতের বেনারস থেকে বাংলাদেশের মোহাম্মদপুর ও মিরপুর, ইতিহাস তার নিজ গতিতে এসে মিলেছে উত্তরভারত থেকে পূর্বভারতে। কিংবদন্তী অনুযায়ী বেনারসি কারিগরদের পূর্বপুরুষরা মদিনা থেকে মুসলিম শাসনকালে উত্তরভারতের বারাণসী শহরে আসেন। বেনারসি শাড়ির প্রথম কারখানা স্থাপিত হয় মুঘল সম্রাট হুমায়ুনের আমলে। সেই সময় মুঘল সম্রাটদের পৃষ্ঠপোষকতায় এই শিল্প জমজমাট হয়ে ওঠে। বেনারসি শাড়ির মূল উপাদান হল রেশম। চীন থেকে আমদানিকৃত সুতো দিয়েই মূলত বেনারসি বা কাতান বানানো হয়।
শাড়ির নকশা, আঁকা গ্রাফ, সুতো রং করা, জাকট, তারপর বুননের কাজ শুরু হয়। প্রতিটা শাড়ি বুনতে সময় লাগে ৫-৮ দিন।
বেনারসি শাড়ির মূল ডিজাইনের ধারা সৃষ্টি হয়েছে মোগল ঘরানা থেকে। ফুল ও আল্পনার মোটিফ, কালগা ও বেলপাতার নকশা। সেসব নকশায় শাড়ির রঙের সঙ্গে মিলিয়ে বা রূপালি সোনালি সূতার জমাট কাজ।
বেনারসি শাড়িতে রয়েছে আভিজাত্যের ছাপ। এসব শাড়ির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো পাকা রঙ আর ওজনে হাল্কা। দামও নাগালের মধ্যেই। তাই সবার কাছেই এ শাড়ির কদর রয়েছে। শাড়ির নামগুলোও মনকাড়া। সাদা ক্যানভাসে যেমন বিভিন্ন রঙ ছড়িয়ে দিয়ে রূপকথা তৈরি হয়, বেনারসিও ঠিক তেমনি। শাড়ির ধরণ, নকশা, কারুকাজের উপর ভিত্তি করে বেনারসির অনেক নাম- জংলা, স্যাটিন, স্বর্ণকাতান, চান্দেরি, রগ্যঞ্জা কাতান, পাটোলা, জুট কাতান ইত্যাদি।
কাতান হল এক রকমের সুতো, যা নানা রকম সিল্কের সুতো পেঁচিয়ে তৈরি করা হয়। কাতান বেনারসির ফ্যাব্রিক হাল্কা হয়। আর স্যাটিন বেনারসি অনেকটাই ভারি হয় তাই।
অরগ্যাঞ্জা বেনারসি হল ব্রোকেডের বেনারসি। যার ওজনও হালকা হয় তাই। বিভিন্ন মোটিফ দিয়ে বোনা হয় এই বেনারসি।
পশ্চিমা বেনারসি উন্নতমানের সিল্ক দিয়ে তৈরি। হিমালয়ের এক ধরনের ছাগলের পশম থেকে বানানো লোম থেকে তৈরি সিল্কে এই বেনারসি বোনা হয়।
কারোয়া বেনারসিতে বিভিন্ন বুটি দেখতে পাওয়া যায়। ফ্লোরাল মোটিফের কাজই এর বৈশিষ্ট্য।
রেট্রো বেনারসির কদর এখন অনেক। বিভিন্ন রকম সুতোর কাজ করা থাকে এতে। সোনালি বা রুপোলি জরির কাজ বেশি দেখা যায় এতে। বিভিন্ন রকম সুতোর কাজ থাকে এই বেনারসিতে।
মাদুরাই বেনারসি সিল্ক দক্ষিণি প্যাটার্ণ ফলো করে। খুব ঘন সুতোর কাজ এবং ফ্লোরাল মোটিফ থাকে এই বেনারসিতে।
ঘিচা বেনারসি হলো বেশ জমকালো। তবে ওজনে হাল্কা হয়। ফ্লোরাল মোটিফ, অ্যানিমেল মোটিফ, জিওমেট্রিকাল মোটিফ থাকে এতে।
রয়্যাল বেনারসি বিয়েতে এনে দেয় রাজকীয় মেজাজ। খুব হাল্কা এবং ঘন কারুকাজের এই বেনারসির নকশায় থাকে মুঘল যুগের ওয়াল আর্ট।
কাঞ্জিরোসি হল কাঞ্জিভরম শাড়ির উপর বেনারসির ফেব্রিক। রঙে কারুকার্যে আকর্ষণীয়, ওজনে হাল্কা।
ভারতীয় উপমহাদেশের নারী ও শাড়ির যোগাযোগ হাজার বছরের পুরনো। বর্তমান যুগে আধুনিকতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শাড়ি ধরে রেখেছে তার ঐতিহ্য। অনন্তকাল টিকে থাক নারীর এই চিরন্তন সৌন্দর্যের প্রতীক।
কেয়া শেঠ এক্সক্লুসিভে আপনারাও পেয়ে যাবেন এরকম বেনারসির সম্ভার। ডিজাইনার কালেকশনে বেনারসির এক্সক্লুসিভ কালেকশন। দেখে নিন তার এক ঝলক।
বাতাসে বসন্তের রঙিন ছোঁয়া। মনের মধ্যে জেগে উঠছে পুলক। নিজেকে... Read More
আসছে বিয়ের মরশুম। বিয়ের পার্টিতে হোক বা কোনও অনুষ্ঠান, সেখানে... Read More
এমন কোনও বাঙালি মহিলা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর যাঁর আলমারিতে ভালো... Read More
হাল আমলের ফ্যাশনিস্তার সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত। এক মুহুর্ত ফ্যাশন... Read More