jamdani

‘বাবা বলেছিলেন নতুন বাবা এনে দেবেন’ 

রুক্মিণী থেকে কোয়েল। বাবার আদুরে মেয়ে থেকে ইন্ডাস্ট্রির ‘মিতিন মাসি’। বাঙালি পরিবারের মেয়ে থেকে পাঞ্জাবি পরিবারের বউ। রিল টু রিয়েল- সব নিয়ে কোয়েল মল্লিকের মুখােমুখি মানসী চ্যাটার্জি। 

  •  ২০০৩ থেকে আজ ২০২০– সতেরাে বছরে ইন্ডাস্ট্রির কতটা বদল চোখে পড়ে? 

সতেরাে বছর আগের ইন্ডাস্ট্রি এখন অনেক ওয়াইডার। এখন টলিউড অনেক বেশি টেকনিক্যালি সাউন্ড। লাইটক্যামেরার কাজ, এডিটিং এককথায় দারুণ। আমার মনে আছে, আগে ফিল্মে রিলের খরচ অনেক বেশি ছিল, তাই একটু-আধটু ভুল থেকে গেলে তা এক্সচেঞ্জ করা হত নাকিন্তু এখন ডিজিটালাইজড হওয়ায়, সেই সুবিধাগুলি পাওয়া যায়। এছাড়া এখন কস্টিউমের জন্য স্টাইলিস্ট ও ডিজাইনাররা আছেনকিন্তু দ্যাট পয়েন্ট অফ টাইম আমাদের। জাস্ট ড্রেসাররা থাকতেন। মার্কেটে যা পাওয়া যেত তাই পরতামফলে আজকাল নায়ক-নায়িকার লুকেও বদল এসেছেআর অবশ্যই ছবির কনটেন্টে হিউজ চেঞ্জ এসেছে। এখন ছবির যে সব সাবজেক্ট ভাবা হচ্ছে, ষােলাে বছর আগে তা ভাবাই যেত না। তাছাড়া যেটা না বললেই নয়, এখনকার জেনারেশন অনেক বেশি ম্যাচিওরড। ক্যামেরা লুক, মেকআপ, ফ্যাশন সম্পর্কে তারা অনেক বেশি ওয়াকিবহাল, যা আমি একদমই ছিলাম না। 

  •  আপনার মতে ঋতুপর্ণার পর টলিউডের নেক্সট কুইন কে? আপনি

সেটা তাে আমার থেকে দর্শকরা ভালাে বলতে পারবেনতবে আমি কিনা, সেটা এখনও সেভাবে ভেবে দেখিনি। বরং আমার মনে হয়, যাঁরা ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছেন তারা ভীষণ ভালাে কাজ করছেন। 

  •  আজ যখন ‘নাটের গুরুতে নিজেকে দেখেন, তখন কী মনে হয়

আই অ্যাম সেল্ফ ক্রিটিক। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে অনেক কিছু মনে হয়যেমন কিছু কিছু । সিন দেখলে মনে হয়, চুলটা এমন করে কেন বেঁধে ছিলাম! ইস, মেকআপটা অন্যভাবে করলে হয়তাে আরও বেশি ভালাে লাগত! সাে অ্যাজ আ সেল্ফ ক্রিটিক্স, স্কোপ অফ ইমপ্রুভমেন্টের জায়গাটা থেকেই যাবেতবে সেই সময়ের জন্য আমার নিজেকে খুব ভালাে লেগেছিল। তাছাড়া তখন মেকআপ সম্পর্কে অত বুঝতামও নাসাজার জিনিস বলতে আমার ছিল কাজল আর লিপস্টিক, সেখানে এত কিছু দিয়ে সাজতে পেরে আমি খুশি হয়ে গিয়েছিলাম। 

  •  ‘নাটের গুরু’র শুটিংয়ের সময় কলেজে পরতেন, যেহেতু আপনার সাবজেক্ট সাইকোলজি ছিল, তাে সেখানে প্র্যাকটিক্যাল থাকত, কীভাবে ম্যানেজ করতেন

আমি নিজেই এখন ভাবি কী করে পারলাম! আসলে সিনেমা আর সাইকোলজিদুটির প্রতি আমার ভীষণ ভালােবাসা ছিল বলেই হয়তাে পেরেছিলাম। মনে আছে, মেকআপ রুমে বসে আমি সাইকোলজির নােটস পড়তাম। সারাদিন শুটিং করে বাড়ি ফিরে ল্যাবের খাতা নিয়ে। বসেছিআবার কলেজের অফ পিরিয়ডে সবাই যখন গল্প করত, তখন আমি সিনেমার ডায়ালগ মুখস্থ করতাম। 

  •  সিনেমা করছেন বলে কলেজ থেকে কোনও একস্ট্রা সুবিধা পেয়েছিলেন

না, একদমই নয়। আমার কলেজ অ্যাটেনডেন্সের বিষয় ভীষণ স্ট্রিক। প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসের ল্যাব বুক যে দিন সাবমিশন করার ডেট থাকত সেদিনই করত হত, আদারওয়াইজ ডিসকোয়ালিফাই হয়ে যেত। বুঝতেই পারছ, নাে একস্ট্রা সুবিধা। বাকি আর পাঁচটা ছাত্রীর মতাে  আমাকেও ট্রিট করা হত। তাে আমাকে ছুটির দিনগুলােতেই শু্যটিং রাখতে হত।

  • অ্যাজ সাইকোলজি স্টুডেন্ট, প্রথম আলাপে মানুষের কী দেখেন?

আমি মানুষের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখিতাহলেই মানুষটাকে রিড করা যায়। 

  •  অভিনেত্রী না হলে কী হতেন

অবশ্যই একজন সাইকোলজিস্ট। 

  • রঞ্জিত মল্লিককে সােশ্যাল মিডিয়ায় ‘বেল্টম্যানবলা হয়। নানান রকমের মিম  তৈরি করা হয়এই বিষয়টা নিয়ে কখনও কি আপনার খারাপ লেগেছে? 

আমি আর বাবা খুব মজা করি এই ব্যাপারটা নিয়েবেশ ইন্টারেস্টিং ইন্টারেস্টিং মিম বানানাে হয় কিন্তুতবে বাবা যেহেতু সােশ্যাল মিডিয়ায় এক্কেবারেই নেই, তাই আমি যখন এই মিমগুলাে পাই তখন বাবার সঙ্গে শেয়ার করিআর দুজনে মিলে হাে হাে করে হাসি। 

  •  বাবাকে কখনও ইমােশনালি ব্ল্যাকমেল করেছেন?

হুম, অনেকবার। একটা ঘটনা বলি- তখন কলেজে পড়ি বােধ হয়। একদিন জেদ ধরলাম নিজে গাড়ি চালিয়ে নিউমার্কেট যাব। বাবা কিছুতেই রাজি হচ্ছেন নাভয় পাচ্ছেন, যদি অ্যাক্সিডেন্ট হয়। এদিকে আমি নাছােড়বান্দা। বললাম, “বাবা, আমি তােমার কথা শুনব না, আর তুমি জানাে , তােমার কথা না শুনলে আমার কষ্ট হয়। বাবা আমার একফোঁটা কষ্টও সহ্য করতে পারেন অতঃপর রাজি হতেই হল। 

  •  বাবা কখনও উল্টে ব্ল্যাকমেল করেছেন? 

কখনও নয়তবে দোলের দিন আমি বাবাকে একদম বিশ্বাস করি না। আমার রঙে ভীষণ ভয়প্রত্যেক বছর বাবাকে বলতাম, আমাকে কোথাও লুকিয়ে দাও, যাতে দাদা-দিদিরা খুঁজে  না পায়। তিনি আমাকে লুকিয়ে দিতেন ঠিকই, কিন্তু সবাইকে গিয়ে বলে আসতেন আমি কোথায় লুকিয়ে আছি! 

  •  আপনার আপনার বাবার সবথেকে প্রিয় কী?

বাবা ঘুড়ি ওড়াতে ভালােবাসেন। তবে আমাদের দুজনের ভীষণ প্রিয় বৃষ্টি। আর বৃষ্টি মানেই খিচুড়ি আর বেগুনভাজাসঙ্গে কবিতার বই। বাবা খুব সুন্দর কবিতাপাঠ করেন। 

  • বাবা স্টার, তাই বাকি আর পাঁচটা বাচ্চার মতাে বাবাকে কাছে না পাওয়ার আপশােস কোনওদিন হয়নি? 

হ্যাঁ এটা ঠিক, বাকি বন্ধুবান্ধবীদের বাবার মতাে আমার বাবা আমায় কখনও চিড়িয়াখানা বা প্ল্যানেটরিয়ামে নিয়ে যেতে পারেননি। তবে তার জন্য আমার থেকে বাবা বেশি কষ্ট পেতেন। ছােটোবেলায় প্রায়ই বলতেন, “তাের জন্য নতুন বাবা নিয়ে আসবসে তােকে ফুচকা খেতে  নিয়ে যাবে। বাইরে ঘুরতে নিয়ে যাবে। আর এই কথাটা শুনেই আমি কান্না জুড়ে দিতামবলতাম, “না, আমার তােমাকেই চাই।আসলে এখন বুঝি, বাবা বুদ্ধি করে জেনে নিতেন, বাবাকে কাছে না পাওয়ার ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে কিনা। তবে মাঝে মাঝে আমরা ভিক্টোরিয়া মেমােরিয়ালে যেতাম। বাবা বলতেন, “আমি গাড়িতে বসছি, তুই সামনে থেকে ঘুরে আয়বেশিদূর যাস না। আর ভয় পাস না, আমি এখান থেকে তােকে দেখছি, আমি আছি। 

  • সত্যি কি বাবাকে কাছে না পাওয়ার কোনও ক্ষোভ কোনওদিন তৈরি হয়নি

আমি বাবার সঙ্গে হয়ত বেশি সময় কাটাতে পারিনি ঠিকই, তবে যতটুকু কাটিয়েছি সেইটুকুই কোয়ালিটি টাইম। তাছাড়া কলটাইম দেরিতে থাকলে বাবা আমাকে স্কুলে ছেড়ে দিয়ে আসতেনবাড়িতে ফিরে আমার সব অভিযােগ শুনতেন, আবদার মেটাতেন, গল্প শােনাতেনআবার গিনিপিগও হতেন মাঝে মাঝে (হাসি)। 

  • গিনিপিগ মানে? 

আসলে ইলেভেন-টুয়েলভে আমার হােম সায়েন্স ছিল। পরীক্ষার আগে বাড়িতে রান্না প্র্যাকটিস করতাম। আর সেই রান্নাগুলাে খাওয়াতাম বাবাকেএকবার একটা খাবার মুখে তােলার পর, বাবার সেই এক্সপ্রেশন ‘ওরে এটা কী করেছিস? নাম না বললে বুঝতামই না এটা মাছ! 

  • আপনি বাঙালি পরিবারে বড়াে হয়েছেন, বিয়ে হয়েছে পাঞ্জাবি পরিবারে 

শ্বশুরবাড়িতে এসে সেখানে তাদের খাওয়ার অভ্যাস বা রিয়ালের সঙ্গে নিজেকে মানাতে কোনও অসুবিধা হয়নি? 

এক্কেবারেই নয়। কারণ রাজমা চাওয়াল টু কলাইয়ের ডাল, আলুপােস্ত- আমার শ্বশুরবাড়িতে দু’ধরনের খাবারই তৈরি হয়। আর সেটা আমরা সবাই মিলে খুব মজা করে খাই। 

  •  শাশুড়ি-বউমার মধ্যে একটু টক ঝাল সম্পর্ক থাকে, আপনার শাশুড়ির সঙ্গে সম্পর্ক কেমন?

টাচউড, আমার শাশুড়ির সঙ্গে আমার সম্পর্ক একেবারে বন্ধুর মতােওনারা আমাকে খুব ভালােবাসেন। 

  •  প্রায় আপনার ও রানের সম্পর্কের ভাঙন নিয়ে নানান কথা শােনা যায়— খারাপ লাগে না

জাস্ট কোও ম্যাটার করে না। 

Trending

Most Popular


Would you like to receive notifications on latest updates? No Yes