কথায় আছে হাজারটা বন্ধুর থেকে একজন বন্ধুই সবথেকে উৎকৃষ্ট। কারণ আমাদের সবার জীবনই অফিস, বাড়ি, সংসার এইটুকুতেই সীমাবদ্ধ। আড্ডাটাও যেন ফিকে হয়ে এসেছে। পুরনো দিনগুলো ফিরিয়ে আনুন। মশগুল থাকুন নির্মল আড্ডার মেজাজে। কারণ গবেষণা বলছে, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডাই হলো বেঁচে থাকার আসল চাবিকাঠি।
সম্প্রতি লণ্ডন স্কুল অফ ইকনমিকসের এক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে রোগ সারাতে আড্ডার জুরি নেই। পারিবারিক আড্ডার থেকে বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে আড্ডা অনেক ভালো। কারণ একমাত্র বন্ধুরাই পারে সবচেয়ে বেশি আনন্দ দিতে। আর মন ভালো থাকলে শরীরও ভালো থাকবে। আর তাই আড্ডা নিয়ে যতই জোরাজোরি থাকুক না কেন বাড়ির, ঠেকবাজি কি আর বন্ধ করা যায়। এমনটাই দাবি করছে লন্ডন স্কুল অফ ইকনমিকসের সমীক্ষা।
কেন এই দাবি? তার পরিপ্রেক্ষিতে বলা হচ্ছে, বিগত ৩ বছর ধরে স্মার্টফোনের ডাটা সংগ্রহ করে আড্ডার মাহাত্ম্য উপলব্ধি করেছে লন্ডনের নামী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। হ্যাপিনেস মাপার জন্য তৈরি করা হয়েছে MAPINESS APP। দিনের নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর এই অ্যাপ অ্যালার্ট দিতে থাকে। জানতে চায় প্রতিটা সময়ে কে কতটা সুখী? কতটা আরামে? মুড যখন ভাল, তখন তাঁরা কী করছেন এবং কাদের সঙ্গে রয়েছেন?
এরমধ্যে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ এই MAPINESS APP ডাউনলোড করেন। যার মধ্যে ৩০ লক্ষ উত্তর উঠে আসে তাঁদের কাছ থেকে। MAPINESS APP এর সমীক্ষায় যা উঠে এসেছে, তা হল এই রকম,
মন ভাল করতে কে কতটা ভালো? এরমধ্যে বন্ধুরা খুশি রাখতে পারে ৮.২ শতাংশ – অর্থাৎ সবচেয়ে বেশি। সেখানে একজন জীবনসঙ্গী খুশি রাখতে পারে ৫.৯ শতাংশ। আর পরিবার ২.৯ শতাংশ। সন্তান-সন্ততি আরও পেছনে – ১.৪ শতাংশ। অর্থাত্ মুড ভাল রাখতে পরিবারের চেয়ে বন্ধুরাই বেশি আগে।
এবার আসি বাঙালিদের কথায়। আড্ডাপ্রিয় বাঙালি চিরকাল আড্ডা দিতে ভীষণ পছন্দ করে। রকে বসে আড্ডা, চায়ের ঠেকে আড্ডা, লেকের ধারে আড্ডা, চাতালের আড্ডা কিংবা কফিশপে আড্ডা। সবেতেই বাঙালি এগিয়ে। একদিন আড্ডা দিতে না পারলে প্রাণ উশখুশ করে ওঠে।
ব্যাসদেবের মহাভারত থেকে পাওয়া,’নৈমিষারণ্যে মহর্ষিরা দৈনন্দিন কাজ শেষ করে, সকলে সমবেত হয়ে কথা-প্রসঙ্গ সুখে বিচরণ করছিল। এরকম সময় সেখানে ঋষি লোমহর্ষণের ছেলে সৌতি এসে উপস্থিত হলেন এবং তিনিও আড্ডায় মজে গেলেন। সৌতি কোথা থেকে আসছেন, কী দেখলেন, কী শুনলেন এবং কী শুনলেন এইসব বলার পর যখন সেখান থেকে বেরোলেন, দেখা গেল যে মহাভারত অষ্টাদশ পর্ব পর্যন্ত লেখা হয়ে গেছে। অর্থাৎ আড্ডার ইতিহাস সুপ্রাচীন কাল থেকে চলে আসছে। মুনিঋষিরাও দান-ধ্যানের পর আড্ডা দিতেন জমিয়ে। তবে আড্ডা যে শুধু নিরস আলস্য বিনোদন নয়, সেখান থেকে মহাভারত জন্ম নিতে পারে। এটাই তার প্রমাণ।
হাল আমলের চায়ে পে চর্চা যেমন উঠে এসেছে সংবাদ শিরোনামে। চায়ের আড্ডায় উঠে আসে পাশের পাড়ার দেবু’দার কাহিনী থেকে রাজনীতির বিশ্লেষন। বাঙালির আড্ডায় রাজনীতি থাকবে না এমনটাও হওয়ার নয়। কারণ বাঙালির মতো রাজনৈতিক বোদ্ধা খুব কমই আছেন। কাজেই আড্ডায় রাজনীতি যেমন একটি পরম এবং গরম বিষয় সেরকম কেউ কেউ অযথা রাজনীতি করে অনেক আড্ডার ভেতর কবর খুঁড়ে দিয়েছেন। আর প্রতিটি আড্ডায় একজন নেতাস্থানীয় মানুষ থাকেন। যারা সাধারণত বিভিন্ন বিষয়েই অগাধ বিশেষজ্ঞ হন।
নিখাদ আড্ডায় এই একে অপরের পেছনে লাগা কিন্তু লেগেই থাকে। যা নাহলে আড্ডার মৌতাত তৈরি হয় না। আবার কেউ কেউ আছেন হেন অসুখ নেই তিনি জানেন না। অসুখের সিম্পটম থেকে শুরু করে কোন অসুখের কী ওষুধ, কোন ডাক্তার ধন্বন্তরি সবই তাদের নখদর্পণে। কেউ আবার খাদ্যরসিক। কোন গলিতে, কোন দোকানের তেলেভাজা ভালো তাদের মতো আর কেউ জানেন না। কেউ কেউ সচেতনভাবে কথা চালিয়ে যান যাতে আর কেউ মুখ খুলতে না পারেন। এরাই আসল আড্ডাধারী রাজনীতিক। আর এই চারিত্রিক গুণ বাঙালি উত্তরাধিকার সূত্রে পায়।
যে আড্ডায় যত বহুবর্ণ মানুষের সমাগম হয় সেই আড্ডা তত আকর্ষক। মানে বিভিন্ন জীবিকার মানুষ এক আড্ডায় সামিল হলে বিচিত্র অভিজ্ঞতার সঞ্চয় হয়। কিন্তু বাস্তবে তা খুব একটা বেশি হয় না। পাড়ার ক্লাবের আড্ডা ছাড়া। সাধারণত আড্ডায় সমরুচির মানুষেরাই একত্র হন। যে কারণে এ শহরে কবিদের আড্ডা, শিল্পীদের আড্ডা, সিনেমা করিয়েদের আড্ডা, বিজ্ঞাপনের মানুষদের আড্ডা, ডাক্তারদের আড্ডা নানারকম আড্ডা আছে। এইসব আড্ডার একটিই সাধারণ এজেন্ডা, সেটি হল যে কোনও একটি বিষয়ে সকলেই অল্পবিস্তর জানেন। গত শতকে এরকম বিভিন্ন রুচির আড্ডা শহর জুড়ে ছিল। টেলিভিশন, সোশ্যাল সাইট এবং বাজার অর্থনীতি সেইসব সোনার খনির আড্ডাকে ডুবিয়ে ছেড়েছে।
সেইসব আড্ডা আজ কোথায় যেন হারিয়ে গেছে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে। যেভাবে আর সবাই যায়।বাঙালির আড্ডাপ্রীতি আজ লুপ্তপ্রায়। আড্ডা ছাড়া বুদ্ধির গোড়া শুকনো, হলুদ হয়ে যাওয়া মরা ঘাসের মতোই। সেই মরা ঘাসে কেই বা জল দেবেন? সেই মানুষগুলোই তো আর নেই। তবে হ্যাঁ, বাঙালি আড্ডার উপকারিতা বুঝতে পারছে এখন। ইতিমধ্যেই কলকাতায় বেশ কয়েকটি ক্যাফে হয়েছে এবং সেখানে নিয়মিত আড্ডাও হয়। আসলে আড্ডা দেওয়ার মানুষগুলোকে স্থির বিন্দুর মতো অবিচল থাকতে হবে। তাদের কোনো বিয়েবাড়ি থাকবে না, অন্নপ্রাশন থাকবে না, শ্রাদ্ধ থাকবে না, এমনকি পুরী-দীঘা থাকবে না। অবিচল প্রতিটি ঋতুতে প্রতিদিন আড্ডাখানায় হাজির হতে হবে নিঃশর্তে। এবং অবশ্যই ভালোবেসে।
সন্দীপ মুখোপাধ্যায় - “নাম কী? থাকো কোথায়? কোন ক্লাস অবধি... Read More
লিপস্টিক আমার কাছে লিপস্টিক নয়। লিপস্টিক আমার কাছে প্রতীক। রং...
আমরা সবাই জানি যে ত্রিদেব বলতে ব্রহ্মাণ্ডের তিন প্রধান স্তম্ভকে...
নাতাশা স্নান সেরে এসছে। সারাটা ঘরই এখন গন্ধস্নান করছে। একই...
পুলিশের উর্দিটা তখনও গা থেকে খুলিনি, সুসময়ী বলল, “তােমার জন্য...
শাে তখন জমে উঠেছে। শীতের সন্ধে। গায়ে ছিল হালকা জ্যাকেট।...
এদেশে সোনাকে স্থিতি এবং ভাগ্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।...
চা আর প্রজাপতি বিস্কুট। খাবার মধ্যে এই। কিন্তু কথা ছিল...
রিশপের ছবিগুলাে সব ফেসবুকে আপলােড করার পর কম্পিউটারের সামনে থেকে...
সকাল বেলাটা আজকাল বিজনের বেশ সমস্যার। থিতু হয়ে প্রভাত উপভােগ...
লােকে ‘ব্যোমকেশ’ নামে ডাকেন। নতুন নামকরণ হয়েছে ‘সােনা দা। এদিকে...