রূপকথা বসু
ঠান্ডাটা বেশ জাঁকিয়েই পড়েছে এবার। রাত বেড়ে গেলে টুপটাপ শিশিরের ঝরে পড়া শুনতে শুনতে হিমেল হাওয়া গায়ে কাঁপুনি দিয়ে যাচ্ছে। এইসময় ছোটোবেলার কথা খুব মনে পড়ে যায়। মায়ের বোনা শোয়েটারে গরম হতে হতে বাবার নিয়ে আসা গরম সিঙারায় কামড়। আহ! সেসব দিনই আলাদা। তারপর আরও একটু বড়ো হতেই মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকের চাপ। শীতের ভোরে ঘুম ভেঙে আবার পড়তে বসা। আর তখুনি মায়ের ঘুম ভেঙে যেত, চুপচাপ কখন যে উঠে যেত আর নিয়ে আসত লাল চায়ের কাপ। তার সঙ্গে গায়ে চাপিয়ে দিত বালাপোষখানি। ছোটবেলা নাকি এটা ছাড়া আমার ঘুমই আসত না। তবে আজ এত কথা বলছি তার কারণ, কিছুদিন আগেই রঙিন কিছু বালাপোষ ফেরি করতে দেখে মন আনচান করে উঠেছিল আবার।
তখনও বাংলা ভাগ হয়নি। বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা শাসন করছেন মুর্শিদকুলি খাঁ। আর বাংলার শীতকাল, মানে বাঘের মতো বলত অনেকেই। জাঁকিয়ে শীত পড়েছে মুর্শিদাবাদে। রাজপ্রাসাদে শীতের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত কিছুই মজুদ ছিল। লেপ, কম্বল, বাহারি শাল থাকা স্বত্ত্বেও নবাবের কিছুতেই শান্তি হচ্ছিল না। এত ঠান্ডা, যে কিছুতেই কাবু হচ্ছে না শীত। আর লেপ কম্বল বেশ ভারী। শীতবস্ত্র হিসেবে শালের বেশ সমাদর ছিল তখন। নবাবের বেশ পছন্দ ছিল শাল ব্যবহার করা। একটা লেপ, কম্বল, বা তিনটে শাল শীত কাবু করতে পারছিল না কিছুতেই। এদিকে রাজামশাইয়ের শীত লাগছে। সবাই তো বেশ চিন্তিত হয়ে পড়লেন। কি করা যায় ভাবতে বসলেন সকলেই।
সুজাউদ্দিন ছিলেন মুর্শিদকুলি খাঁ’র জামাই। পরবর্তীকালে যিনি বাংলার নবাব হয়েছিলেন। তিনিই এক উপায় ভেবে বের করলেন। তাঁর নির্দেশে খলিফা রমজান শেখ তৈরি করলেন এক হালকা কার্পাস তুলোর আবরণ। এরপর সেই তুলোকে ঢেকে দেওয়া হল সুন্দর সিল্ক কাপড়ে। যার নাম দেওয়া হল বালাপোষ।
সেই সময় বালাপোষ তৈরী করার জন্য ব্যবহার করা হতো উন্নত মানের কার্পাস তুলো। সবার আগে এই তুলোকে নরম করা হলো। এরপর সেই তুলোকে রঙিন জলে ডুবিয়ে তাকে রঙিন করে তোলা হলো। শেষে শুকিয়ে নিয়ে সিল্কের কাপড়ের মধ্যে তুলো ভরে দেওয়া হলো। এবার বালাপোষের পরীক্ষার পালা।
নবাব মুর্শিদকুলি খাঁয়ের সামনে পেশ করা হলো বালাপোষ। তিনি ব্যবহার করে বুঝতে পারলেন তুলো দিলে মোড়া এই কাঁথা শীতের জন্যে আদর্শ। সেই থেকেই শুরু হলো বালাপোষের যাত্রা।
কিন্তু শীত তো কিছুদিনের অতিথি। আর বেশিরভাগ সময়েই আলমারিতে রাখা হত। বহুদিন অব্যবহারের পর বালাপোষগুলো সোঁদা গন্ধে ভরে উঠত। যা নবাবের খুব অপছন্দ। এবার কি করা যায়? ভেবেচিন্তে সুজাউদ্দিন এক উপায় বের করলেন। কার্পাস তুলো সিল্কের কাপড়ে ভরে দেওয়ার আগে তাতে মাখানো হল আতর। যার ফলে কোনওরকম গন্ধের অবকাশ রইল না। নবাবও খুশি হলেন। মুর্শিদাবাদে চালু হয়ে গেল খলিফা রমজান শেখের বালাপোষ। এভাবেই মুর্শিদাবাদে চালু হলো বালাপোষ। যা আস্তে আস্তে বাংলার কুটির শিল্পে পরিণত হলো।
বালাপোষ তৈরি করতে যথেষ্ট দক্ষতার প্রয়োজন। আর কাজটাও সময়সাপেক্ষ বটে। কার্পাস তুলোকে রঙ মাখিয়ে, শুকিয়ে নিয়ে তারপর আতর ভরে দেওয়া হয়। এরপর তুলো শুকিয়ে নেওয়ার পালা। সেটা করতে করতেই গড়িয়ে যায় বেশ কয়েকটা দিন। আর সব থেকে আসল কাজ হল সেলাই করা। কাপড়ের উপর সেলাইয়ের কাজ করতে হয় সুক্ষ্ণ হাতে। এরপর বসানো হয় পাড়। যার একটি অংশের নাম বরফি, আর একটি অংশের নাম লাহারিয়া। মুর্শিদাবাদের বালাপোষের সুখ্যাতি তখন বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আধুনিক পদ্ধতি চলে আসে। যোগ হয় আরও নতুন পদ্ধতি। অনেকেই এখন আর বালাপোষ ব্যবহার করেন না। সেরকম উন্নত মানের তুলো, দক্ষ শিল্পীরাও হারিয়ে গেছে। তবে কিছু কিছু জায়গায় এখনও সরকারি উদ্যোগে টিকে আছে এই কুটির শিল্প।
আলমারির ভাঁজে এখনও কারোর বাড়ি থেকে হয়ত চিলতে স্মৃতি হয়ে বেঁচে রয়েছে বালাপোষ। তবে ওই পর্যন্তই। আগেকার মতো ব্যবহৃত হয় না বালাপোষ। ঠান্ডা জাঁকিয়ে পড়লে আমাদের মতো কিছু মানুষের গায়ে উঠে আসে স্মৃতির মতোই। উষ্ণতা দিয়ে যায় আনমনে।
সন্দীপ মুখোপাধ্যায় - “নাম কী? থাকো কোথায়? কোন ক্লাস অবধি... Read More
লিপস্টিক আমার কাছে লিপস্টিক নয়। লিপস্টিক আমার কাছে প্রতীক। রং...
আমরা সবাই জানি যে ত্রিদেব বলতে ব্রহ্মাণ্ডের তিন প্রধান স্তম্ভকে...
নাতাশা স্নান সেরে এসছে। সারাটা ঘরই এখন গন্ধস্নান করছে। একই...
পুলিশের উর্দিটা তখনও গা থেকে খুলিনি, সুসময়ী বলল, “তােমার জন্য...
শাে তখন জমে উঠেছে। শীতের সন্ধে। গায়ে ছিল হালকা জ্যাকেট।...
এদেশে সোনাকে স্থিতি এবং ভাগ্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।...
চা আর প্রজাপতি বিস্কুট। খাবার মধ্যে এই। কিন্তু কথা ছিল...
রিশপের ছবিগুলাে সব ফেসবুকে আপলােড করার পর কম্পিউটারের সামনে থেকে...
সকাল বেলাটা আজকাল বিজনের বেশ সমস্যার। থিতু হয়ে প্রভাত উপভােগ...
লােকে ‘ব্যোমকেশ’ নামে ডাকেন। নতুন নামকরণ হয়েছে ‘সােনা দা। এদিকে...