jamdani

বন্ধুরা এড়িয়ে চলত, এমনকী সিনেমা থেকে বাদ পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে..

আজও এই শহরের সরু অলি-গলি তাকে নস্ট্যালজিক করে তােলে। তাই কলকাতার ম্যাগাজিনে ইন্টারভিউ চাইতেই রাজি হয়ে গেলেন তিনি। মন খুলে আড্ডা দিলেন সেলিনা জেটলি। সঙ্গী মানসী চ্যাটার্জি সাহা।

প্রথমেই জানতে চাইব, কলকাতাকে মিস করেন?
ভীষণভাবে মিস করি। স্পেশালি কলকাতার খাবার, ইটস জাস্ট টু গুড। সত্যি কথা বলতে, আমি বিশ্বের অনেক জায়গায় থেকেছি, কিন্তু কলকাতার মতাে শহর কোথাও পাইনি। তাছাড়া ওখানে বাবা-মায়ের সঙ্গে কাটানাে মুহূর্তটা রয়েছে। অনেক বন্ধুরা আছে। জানাে এখনও কলকাতার সরু অলি-গলি আমাকে নস্ট্যালজিক করে তােলে।

আপনার বাবা তাে আর্মিতে কাজ করতেন, কতটা স্ট্রিক্ট ছিলেন উনি?
স্ট্রিক্ট বলতে খুবই স্ট্রিক্ট ছিলেন। ছােটোবেলায় স্ট্রিট লাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বাড়ির বাইরে থাকার পারমিশন ছিল না। সেটা যদি বিকাল চারটের সময় বন্ধ হয়ে যায় তাে আমাকে তখনই বাড়ি ফিরতে হবে। আর রাত্রি সাতটার পর লাইট অফ হােক আর অন থাকুক আমি বাড়িতেই। বললে বিশ্বাস করবে না, আমি যখন মডেলিং করি তখনও পার্টিতে যাওয়ার পারমিশন ছিল না। তবে বাবাই আমাকে শিখিয়েছেন, নিজের ওপর বিশ্বাস রাখতে, খারাপ পরিস্থিতির মােকাবিলা করতে। হি ওয়াজ সাচ অ্যা ভেরি অনেস্ট অ্যান্ড কাইন্ড হার্টেড পার্সেন।

এতটা স্ট্রিক্ট ব্যাকগ্রাউন্ডে থেকে গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ডে কীভাবে এলেন?
এটাকে তুমি ডেস্টিনি বলতে পারাে। পড়াশােনায় ভালাে হওয়ায় ভেবেছিলাম অলইন্ডিয়া এনট্রান্স ফর মেডিক্যাল দিয়ে ডেথ হিস্ট্রি নিয়ে পড়ব। কিন্তু ‘সানন্দা ম্যাগাজিনে ‘তিলােত্তমা’ হওয়ার পর, মিস ইন্ডয়া, মিস ইউনিভার্সাল, সিনেমা একের এক গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ড আমাকে টানতে থাকে। কিন্তু বিশ্বাস করাে আমি চেয়েছিলাম অন্য কিছু করতে, কিন্তু পারিনি।

এবার বলুন কামব্যাক সিনেমা হিসাবে ‘সিজনস গ্রিটিংস’ বেছে নিলেন কেন?
তিনটি কারণ আছে। প্রথমটি, কোথাও আমার মনে হয়, এই ছবিটি আমি করি সেটা আমার জীবনের প্রিয় চারজন মানুষ চান, যাঁরা আর এই পৃথিবীতে নেই। কেননা সিনেমাটি তাে আমার করারই কথা ছিল না, সেটা তােমরা সকলেই জানাে। একদিন হঠাৎ রামকমল ফোন করে আমায় অফারটা দেয়, অ্যান্ড আই ওয়াজ লিটার্যালি শক। তাছাড়া ছবির স্ক্রিপ্ট পড়ার পর, আমি নিশ্চিত এলজিবিটিদের অধিকার নিয়ে আমি কিছু করি সেটা ভগবানই চান। এছাড়া কিছুদিন আগে মা চলে গেছেন। একটা খালি জায়গা তৈরি হয়েছে। আর ‘সিজনস গ্রিটিংস’-এর গল্পটাতে আমার সঙ্গে কোথাও মায়ের সম্পর্কের গভীরতা উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম। প্রথম যেদিন কাহিনিটি শুনেছিলাম আমার চোখে জল চলে এসেছিল। আর লাস্ট বাট নট দ্যা লিস্ট, এই সিনেমার মাধ্যমে আমার প্রিয় পরিচালকদের মধ্যে একজন ঋতুপর্ণ ঘােষকে শ্রদ্ধার্ঘ্য দেওয়া হচ্ছে।

ছবিতে আপনার চরিত্রটি ঠিক কেমন?
ঋতুপর্ণ ঘােষের সিনেমা ‘দহন’-এর রমিতার চরিত্রটি। যেখানে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত অভিনয় করেছিলেন। উফ…আমার জন্য রমিতার চরিত্রটি খুব চ্যালেঞ্জিং ছিল। কেননা সেলিনা একেবারেই রমিতার মতাে নয়। কিন্তু রামের আমার প্রতি বিশ্বাস আমাকে সাহস দিয়েছে। তাছাড়া শু্যটিংয়ের আগে লিলেটজির সঙ্গে বেশ কয়েকবার রিহার্সল করেছিলাম, যেটা খুব হেল্প করেছিল।

এই ছবির মাধ্যমে পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘােষকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হচ্ছে? কোথাও কি গল্পে আমরা পরিচালকের জীবনের কোনও ঝলক দেখবে পাব?

নাে নাে… এক্কেবারের না। সিনেমাটি পরিচালকের নিজস্ব ও ক্রিয়েটিভ দৃষ্টিভঙ্গিতে তৈরি।

রাষ্ট্রসংঘের স্পােক পার্সন থেকে তাদের জন্য গান গাওয়া, এখন আবার অভিনয়ও করছেন—এলজিবিটি রাইট নিয়ে আপনি এতটা সচেতন সেটা কি নিজে থেকে নাকি এর পেছনে কোনও কারণ আছে?
ফ্রাঙ্কলি স্পিকি, যদি কেউ মানসিক প্রতিবন্ধী বা অন্ধ না হয়ে থাক, তাহলে আমাদের দেশে এলজিবিটিদের সঙ্গে যে অন্যায়-অত্যাচার করা হয় তা চোখে পড়বে না এমনটা নয়। এটা ভাবতে খারাপ লাগে বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষ দেশে এমনটা হচ্ছে, অথচ সত্যিকারের ভারতবর্ষ কখনওই এমন নয়। আসলে অনেকবার কাছের মানুষদের দেখেছি এসব সহ্য করতে। কিন্তু যখন ইন্ডাস্ট্রির একজন মেকআপ আর্টিস্ট, যিনি এই কমিউনিটির ছিলেন মারা গেলেন, তখন সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছিলাম এনাদের জন্য আমাকে কিছু করতেই হবে। আসলে মেকআপ আর্টিস্টটি আমার কাছে মায়ের পরেই ছিলেন। আমাকে খুব ভালােবাসতেন।

আপনার এই চলার পথটা সহজ ছিল নাকি এখানেও নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে আপনাকে?
‘EACH OF US HAVE A UNIQUE PART TO PLAY IN THE HEALING OF THE WORLD’ grave oral প্রতিবাদী হওয়ার অভিজ্ঞতা খুব ভালাে হয় না। আমার ক্ষেত্রেও হয়নি। বহুবার নিজের সেক্স্যুয়ালিটি নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। অনেকবার অনেকরকম হুমকি পেয়েছি। এমনকী বন্ধুরা এড়িয়ে চলত, একাধিক সিনেমার প্রজেক্ট থেকে আমাকে বাদ পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে। এই সমস্ত অভিজ্ঞতা আমাকে জীবনে অনেক কিছু শিখিয়েছে। সাহস দিয়েছে লড়াই করার। আসলে বেশির ভাগ সময় সমকামীদের হয়ে আওয়াজ তােলেন কোনও সমকামী বা ওই ধরনের কোনও সংগঠন। মানুষ এটা বুঝতে পারে না যে, একজন ‘স্টেট পার্সন’ সমকামী না হয়েও তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে পারে।

এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, অজান্তে আপনি একজন গে-এর সঙ্গে রিলেশনশিপে ছিলেন। কিন্তু যখন জানলেন কী রিয়েকশন ছিল?
অনেকে আমাকে বলত ও ‘গে। কিন্তু ও যখন নিজে বলল, “আমি গে’। আর শুধুমাত্র পরিবার ও সমাজকে দেখানাের জন্য আমার সঙ্গে সম্পর্কে আছে। তখন আমি পুরাে ভেঙে পড়েছিলাম। কান্নাকাটি করতাম। বুঝে উঠতে পারছিলাম না এই পরিস্থিতিতে আমার কী করা উচিত।

‘সিজনস গ্রিটিংস’ সিনেমার গল্পের সঙ্গে পরিচালক রামকমল মুখােপাধ্যায় কতটা জাস্টিস করেছেন বলে আপনার মনে হয়?
দেখাে, রামকমল মুখােপাধ্যায় একজন প্রােগ্রেসিভ ডাইরেক্টর। এটুকু বলতে পারি, উনি নিজের সেরাটা দেওয়ারই চেষ্টা করছেন। এই প্রসঙ্গে আমি ছােটো একটি গল্প বলতে চাই। বছর কয়েক আগে আমি রামের সঙ্গে ইজিপ্ট ঘুরতে গিয়েছিলাম টু প্রমােট ট্যুরিজম। তখন দেখেছিলাম ওঁর গল্প বলার ক্ষমতা অসাধারণ। আর পুরাে ট্যুরের আমার ব্ল্যাক অ্যান্ড হােয়াইট ছবির সিরিজ তুলে নিজে তার ব্যাকগ্রাউন্ড এডিট করে আমায় দেখালেন, তখনই আমি ভেবেছিলাম রাম একদিন ফিচার ফিল্ম বানাবেন।

লিলেট দুবের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?
এককথায় অসাধারণ। উনি যে একজন দক্ষ অভিনেত্রী তা নতুন করে বলার কিছু নেই। শট নেওয়ার সময় ওনার বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ইজ অসাম, যা সত্যি শেখার মতাে। আই থিঙ্ক এই ছবিতে লিলেট ম্যামের উপস্থিতি অনেক স্পার্ক এনে দেবে।

ঋতুপর্ণ ঘােষের সঙ্গে কখনও সামনাসামনি দেখা হয়েছে?
নভেম্বর ২০১৯-ঋতুদা আমাকে ফোন করেছিলেন। অফার দিয়েছিলেন, একটি সিনেমায় কাজ করার জন্য। আমি তখন প্রেগন্যান্ট, ঋতুদা জানতেন না। তাই শােনার পর বলেছিলেন, ভালােভাবে বাচ্চার জন্ম দাও। তােমার মা হওয়ার পর আমরা এই প্রজেক্টটা নিয়ে এগােব। তখন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে ঋতুপর্ণ ঘােষ আমাকে তার ছবিতে কাস্ট করতে চাইছেন। আমাদের একসঙ্গে কাজ আর করা হয়নি, হবেও না। তবে ঋতুর্দার শ্রদ্ধার্ঘ্য মুভিতে অভিনয়ের সুযােগ পেয়ে খুব হ্যাপি। আমি প্রে করি, সি ফাউন্ড দ্য অ্যাক্সেপটেন্স অ্যান্ড প্লেস অফ নাে জাজমেন্ট।

বলিউডের তাবড় তাবড় অভিনেতা-অভিনেত্রীরা ঋতুপর্ণ ঘােষের সিনেমায় অভিনয় করেছেন। সারা বিশ্বে অনেক বড় বড় মানুষ ওনার ফ্যান। সেখানে দাঁড়িয়ে কোথাও কি একটু নার্ভাস ফিল করছেন?
অফকোর্স আই ফিল নার্ভাস। আমার মনে আছে তখন আমি স্কুলে পড়ি, যখন ‘দহন’ রিলিজ করেছিল। রমিতা’র ক্যারেক্টারটি দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। আর ঋতুপর্ণ ঘােষের প্রতি শ্রদ্ধা কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছিল। আজ এত বছর পর ‘রমিতা’ নামের চরিত্রটিতে অভিনয় করছি তাও আবার ঋতুপর্ণ ঘােষের ট্রিবিউ সিনেমায় ভয় তাে একটু লাগবেই।

মাদারহুড কেমন এনজয় করছেন?
মাতৃত্বের থেকে সুখের অনুভূতি আর কিছু নেই। যদিও খুব কঠিন কাজও বটে। ১৫ বছর টানা কাজ করার পর ‘মা’ হওয়ার অনুভূতি আমার কাছে অসাধারণ ছিল।

বাচ্চাদের জন্য রান্না করেন?
একদম। আমি তাদের জন্য প্রায়ই রান্না করি। ইনফ্যাক্ট বাচ্চাদের সঙ্গে মিলেও রান্না করি।

মা হিসাবে নিজেকে কত মার্কস দেবেন?
অনেস্টলি বলতে গেলে, এর কোনও মাপকাঠি নেই।

নেক্সট কোন সিনেমায় আমরা সেলিনাকে দেখতে পাব ?
গায়িকা থেকে অভিনেত্রী নিজেকে বিভিন্ন রূপে আমি দেখতে পছন্দ করি। তাে নেক্সট এক্সাইটিং কোনও অফার পেলেই তােমাদের সঙ্গে শেয়ার করব।

Trending

Most Popular


Would you like to receive notifications on latest updates? No Yes