jamdani

নারীশক্তির অন্য নাম দেবযানী ঘােষ

সালটা ছিল ১৯৯৬। মুম্বাইয়ের এস পি জৈন ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রিসার্চ প্রতিষ্ঠানে চলছে ইন্টেল কোম্পানীর ক্যাম্পাসিং। প্রশ্নকর্তাদের সামনে বসে আছে তুলনামূলকভাবে ছােট চুলের বুদ্ধিদীপ্ত একটি যুবতী। তাকে প্রশ্ন করা হল— ‘আপনার জীবনের লক্ষ্য কী?’ এক মুহুর্ত চিন্তা না করে যুবতীটির অকপট উত্তর ছিল—একদিন আমি ভারতের ইন্টেল অপারেশনের প্রধান হব। হয়তাে সেই মুহুর্তে বিধাতা সামান্য হেসেছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি শুধুমাত্র ভারতের নয়, ইন্টেল কর্পোরেশনের সমস্ত দক্ষিণ এশিয়ার ম্যানেজিং ডিরেক্টর হন। তিনি দেবযানী ঘােষ। তিনি ন্যাসকমের বর্তমান প্রেসিডেন্ট।

১৯৮৮ সালের ১ মার্চ প্রতিষ্ঠিত হয় ন্যাশনাল অ্যাসােসিয়েশন অফ সফটওয়্যার অ্যান্ড সার্ভিসেস কম্পানিস (ন্যাসকম)। তারপর থেকে কেটে গিয়েছিল ৩০টা বছর। এই ৩০ বছরে ন্যাসকমের প্রেসিডেন্ট রূপে কোনও মহিলা নির্বাচিত হয়নি। কিন্তু ২০১৮ সালের ২ এপ্রিল নারীশক্তি বিকাশের ক্ষেত্রে ঘটে গিয়েছিল এক ঐতিহাসিক বিপ্লব। ওই দিন দেবযানী ঘােষ নির্বাচিত হন ন্যাসকমের পঞ্চম প্রেসিডেন্ট হিসাবে।

হায়দারাবাদের ওসমানিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি পলিটিক্যাল সায়েন্সে (রাষ্ট্রবিজ্ঞান) স্নাতক হন। এরপর তিনি মুম্বাইয়ের এস পি জৈন ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রিসার্চ নামক প্রতিষ্ঠান থেকে মার্কেটিং নিয়ে এমবিএ ডিগ্রী করেন। আর তারপর ইন্টেল কোম্পানীতে প্রবেশ। শুরু হয় জীবনের এক নতুন অধ্যায়। আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি দেবযানীকে। ২০০৫ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত তিনি ছিলেন ২০০৬ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত তিনি ছিলেন ইন্টেল। কোম্পানীর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া রিজিয়নের মার্কেটিং ম্যানেজার। এর পরে বছর অর্থাৎ ২০০৬ সালের অক্টোবর মাস থেকে ২০০৭ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত তিনি মালয়েশিয়া দেশের ইন্টেল কোম্পানীর জেনারেল ম্যানেজারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ইন্টেলের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া রিজিওনের ডিরেক্টর হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন ২০০৭ সালের নভেম্বর মাস থেকে ২০১২ সালের মে মাস পর্যন্ত। এরপর দীর্ঘ পাঁচ বছর (২০১২-২০১৭) ইন্টেল কর্পোরেশনের দক্ষিণ এশিয়া রিজিওনের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং সেলস ও মার্কেটিং গ্রুপের ভাইস প্রেসিডেন্ট রূপে কার্য নির্বাহ করেন। আর ঠিক তার পরের বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে নির্বাচিত হন ন্যাসকমের প্রেসিডেন্ট হিসাবে।

২০১২ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত এই ৫ বছরে ঘটে আর একটি অভূতপূর্ব ঘটনা। টানা পাঁচ বছরই ব্যবসা ক্ষেত্রে প্রথম ২০ জন শক্তিশালী ভারতীয় নারী হিসাবে নাম ওঠে ‘ফরচুন ম্যাগাজিনে। এছাড়াও ২০১৮ সালের জানুয়ারী মাসে ভারতের রাষ্ট্রপতি তাকে ‘ফার্স্ট লেডিস’ পদে সম্মানীত করেন।

আসলে দৃঢ়চেতা মন ও এগিয়ে যাওয়ার অদম্য উৎসাহ তাকে পৌঁছে দিয়েছে সাফল্যের শিখরে। বর্তমান সময়ের মহিলাদের কাছে তিনি একজন মাইলস্টোন। একবার দেবযানী ঘােষের সম্পর্কে বলতে গিয়ে ন্যাসকমের চেয়ারম্যান রমন রায় বলেন, ‘ন্যাসকমে দেবযানী ঘােষের নিয়ােগ বৈচিত্র্যের একটি সত্যিকারের বহিঃপ্রকাশ, যা প্রতিষ্ঠানেরমূল স্তম্ভ। দেবযানী ঘােষের প্রথাগত ধারণার বাইরে গিয়ে চিন্তাভাবনা করার শক্তিই তাঁকে পৌঁছে দিয়েছে আজকের সাফল্যে। তিনি একবার টেকনােলজি সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, শুধুমাত্র টেকনােলজির জন্য টেকনােলজির ধারণাকে আমি একদম পছন্দ করি না। এমনকি এই ধারণাকে আমি খুব নীচু নজরে দেখি। কিন্তু মানুষ যখন টেকনােলজি ব্যবহার করতে শুরু করে এবং সেই টেকনােলজির ব্যবহারিক ক্ষমতা ও ব্যাপ্তি দেখে আমি উৎসাহিত হই। টেকনােলজির এই অংশটি আমাকে আকর্ষিত করে।

দিন বদলেছে। আজ পুরুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সমস্ত কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে চলেছে নারীরা। তবে তার মধ্যেও বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভেসে আসে নারীদেরকে পিছিয়ে রাখার বিভিন্ন ঘটনা। কিন্তু পুরুষ তুমি যত চেষ্টাই কর, আজ আর নারীকে তুমি পিছনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে না। আজ নারী স্বতন্ত্র। দেশের গর্বের মুখ সে। আর নারীশক্তির প্রকৃষ্ট উদাহরন হিসাবে সর্বদা উজ্জ্বল অক্ষরে লেখা থাকবে দেবযানী ঘােষের নাম।

Trending

Most Popular


Would you like to receive notifications on latest updates? No Yes