শুক্লা ব্যানার্জ্জী
বন্দিপুরের নিঃসঙ্গ নন্দিনী সেনের বন্দি জীবনের একমাত্র অদৃশ্য আলাপনের সাথি ছিল উৎসব। না-দেখা ওদের এই আলাপচারিতা দুটো বসন্ত পার করে দিয়েছিল। নন্দিনী এখন স্কুল ছেড়ে কলেজে যাচ্ছে। সুন্দরী নন্দিনীর যৌবন অনেক যুবককেই আকৃষ্ট করেছিল। কিন্তু তারা কেউই তার জীবনসঙ্গী হয়ে ওঠেনি। না-দেখা এই বন্ধুটি এখনও তার জীবনের একমাত্র সঙ্গী। নন্দিনীর দেহ-মনের বসন্ত এবার অরূপরতনের রাজাকে দেখার জন্য উৎসুক হয়ে উঠল। তাই একদিন ইথার তরঙ্গে ভেসে এলো উৎসবের কাছে নন্দিনীর সেই আকুল আহ্বান… ‘উৎসব, আগামীকাল আমার জন্মদিন। কাল আমি আমার সাথে দেখা করতে চাই’।
দরজায় বসন্ত, উৎসবের হৃদয়তন্ত্রীতেও বেজে উঠেছিল বীণার সুর। সুরেলা কথার মালা ইথার তরঙ্গে ওপারে ভেসে গেলো নন্দিনীর কানে… ‘ঠিক আছে, কালই যাব তোমাদের বাড়িতে। বাপিকে বলব একটা গাড়ি রেডি রাখতে’।
উচ্ছ্বাসের আবেগে নন্দিনীর গলায় কান্না দলা পাকিয়ে উঠেছিল। অনেক কষ্টে একটা ঢোক গিলে বল… ‘তুমি আসবে! আমাদের বাড়িতে! তারপর সময় আর পথনির্দেশিকা দিতে দিতে আলাপন শেষ হয়ে গিয়েছিল’।
এক চৈত্রমাসের নিঃঝুম দুপুরে নন্দিনী মুঠোফোনে মিস কল করেছিল কোনও এক টেন ডিজিট নম্বরে। সঙ্গে সঙ্গে বসন্তের কুহুতান তুলে সুরেলা ধ্বনিতে আওয়াজ উঠেছিল যন্ত্রটায়। বোতাম টিপে কাঁপা কাঁপা গলায় নন্দিনী বলেছিল… ‘হ্যা…লো’।
অপর প্রান্ত থেকে কিশোর কণ্ঠের আওয়াজ ভেসে এসেছিল…
‘হ্যালো, আমি উৎসব সেন বলছি’।
‘হ্যালো নন্দিনী সেন বলছি। আমি তোমার সাথে বন্ধুত্ব করতে চাই’।
এমন সহজ সরল প্রস্তাবে উৎসবের কন্ঠেও কোনও কুন্ঠা ছিল না। মনে হলো সেও এমনি একজনের প্রতীক্ষায় ছিল। নন্দিনীর মতোই সহজ সরল প্রস্তাবে উৎসবের কন্ঠেও কোনও কুন্ঠা ছিল না। মনে হলো সেও এমনি একজনের প্রতীক্ষায় ছিল। নন্দিনীর মতোই সহজ সরলভাবে উত্তর দিল… ‘আমিও তো বন্ধু খুঁজছি। আমার কোনও সঙ্গী নেই কথা বলার’।
আনন্দে-উচ্ছাসে গলার স্বর বন্ধ হয়ে আসছিল নন্দিনীর, বুকের মধ্যে দ্রাম দ্রাম আওয়াজ হচ্ছে। অস্ফুট স্বরে বলল… ‘ ফোনে তো হাত মেলাতে পারলাম না বন্ধু, তাই গলা মেলালাম। তারপর অনেক—অনেক—অনেক — কথা। কথার মালাগুলো লম্বা হতে হতে নন্দিনীর ১৭ বছরের নিঃসঙ্গ জীবনটাকে ঢেকে দিয়েছিল উৎসব।
প্রতি বছরই নন্দিনীর জন্মদিনটা খুব রঙিন। নন্দিনীর মা সারাদিন বাড়ি থাকে না। সেদিন বাড়ি থেকে ঘর সাজায়, রকমারি খাবার বানায়। এছাড়া কেক, মোমবাতি, নতুন পোশাক, আর উপহার তো আছেই। কিন্তু ১৭ বছরে জন্মদিনের উপহারটা নিঃসঙ্গ নন্দিনীর জীবনে এক নতুন দরজা খুলে দিল। যে দরজা দিয়ে কোনও আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী বা বন্ধু ঢোকেনি তার নিঃসঙ্গ জীবনে। সকলে তফাতে থাকে। স্কুলে, পাড়ায় ওকে নিয়ে আড়ালে সকলে ফিসফিস করে। ওদের কথাগুলো নন্দিনীর কানে হুল ফুটিয়ে মনে জ্বালা ধরায়। শুঁয়োপোকার মতো জীবন তার। নন্দিনীর মনে হলো, এই যন্ত্রটা তাকে লালা রসে ঢেকে দেবে। প্রজাপতি হয়ে ফুলের কাছে যাওয়ার দিন তার এসে গেছে।
মা অবশ্য উপহারটা হাতে দিয়ে বলেছিল… ‘নিনি এটাতে কারুর সঙ্গে বেশি কথা বলতে পারবে না। কিন্তু কেউ রিং করলে সে যতক্ষণ চাইবে কথা বলতে পারবে’।
দরজার চৌকাঠে নন্দিনী যেন হোঁচট খেল। এমনি হোঁচট খেয়েছিল উৎসবের নিঃসঙ্গ স্বতঃস্ফূর্ত প্রাণের সাড়া পেয়েও। কান পেতে মুঠো ফোনে শুনেছিল চলমান কোনও গাড়ির ক্যাঁচ- ক্যাঁচ আওয়াজ। তারপর কৌতুকের সুরে বলেছিল- ‘তুমি কী এখনও খেলনা গাড়ি নিয়ে খেলা করো?’
‘কই? না তো’।
‘ঘরে একটা চাকার আওয়াজ হচ্ছে শুনতে পাচ্ছি’।
স্বাভাবিকভাবেই হেসে উৎসব উত্তর দিয়েছিল- ‘আমি তো চাকা লাগানো চেয়ারে সারাদিন এই হল ঘরটাতে ঘোরাফেরা করি’।
নন্দিনীর মনটা অবশ হয়ে গিয়েছিল কথাটাতে। তার দিবারাত্রের সঙ্গী মামনি, মার একমাত্র সহোদরা, যাকে ঘিরে নন্দিনীর দেহলতাটা বেড়ে উঠেছিল কিন্তু সার, জলের অভাবে ফুলে ফুলে ভরে ওঠেনি, সে বোবা।
কথা বলার সঙ্গী কখনও হতো রাতের আঁধারের চাঁদ, আর কখনও তারারা। বাবার ফোটো হাতে নিয়ে পূর্ণিমার রাতে ছাদে উঠতো, চাঁদকে ডেকে বলতো- ‘চাঁদমামা তুমি তো ওপর থেকে কত দেশের লোককে দেখতে পাও। এই দ্যাখো আমার বাবার ফোটো, আমার ছোটোবেলায় বাবা বিদেশে গেছে। তুমি তাকে দেখতে পেলে বলো, নিনি তাকে দেখার জন্য বসে আছে। কবে আসবে সেটাও জেনে এসো। দরজা খুলে রাখব। তারাদের সঙ্গে আলাপে উঠে আসতো স্কুলের দিদিমনির বকুনির কথা, সহপাঠীদের খারাপ লাগার কথা, মার কথা, মামনির অদ্ভুত সব অঙ্গভঙ্গির কথা। এরকমই নিত্যদিনের কথা চলতো তারাদের সাথে। আকাশ মেঘলা হলে খুব মন খারাপ হতো নন্দিনীর।
কখনও ছাদে টবের ফুল গাছগুলোর সঙ্গে কথা বলতো। নাম দিতো সহপাঠীদের নামে। একদিন গোলাপ গাছের কাঁটা ফুটেছিল। রেগে বলেছিল… রক্তিমা তুই আমায় ব্যথা দিলি, তোকে আর জলও দেবো না, কথাও বলব না’। গাঁদাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিল, ‘বাসন্তী তুই খুউব ভাল’।
একটু বড়ো হলে কথা বলার একটা সঙ্গী খুঁজতে নন্দিনী গ্যাস বেলুন উড়িয়ে দিয়েছে ঠিকানা লিখে। কোনও ঠিকানা হাতে পেলেই চিঠি লিখতো-
প্রিয় বন্ধু,
আমি নন্দিনী, তোমার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চাই। বয়স ১২-১৩-১৪-১৫-১৬ – উত্তরের অপেক্ষায় থাকব নীচের ঠিকানায়।
অপেক্ষায় কেটে গেছে দিন- মাস- বছর। চিঠির উত্তর সে কোনওদিনই পায়নি। আজ ইথারে তেপান্তরের মাঠ, নদী, জঙ্গল, পাহাড় পেরিয়ে কথারাও মুহুর্তে চলে আসবে একেবারে নন্দিনীর কানে। সঙ্গীবিহীন ঊষর জীবনে সে এখন মরুদ্যানের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। মনের রাজ্যের দুঃখ, কষ্ট, যন্ত্রনাময় স্মৃতিগুলো ভুলতে এই মরুদ্যানের সরোবরেই স্নান করতে তাকে উৎসাহী করল। উৎসব বলেছিল- ছোটোবেলায় অনেকদিন অসুস্থ ছিলাম। তারপর এমনিতে সুস্থ হলেও হাঁটতে কোনওদিনই পারিনি। তোমার সাথে দেখা হয়তো হবে না। তবে কথা হবে রোজ। দিনে রাতে কখনও মিস কলেও তোমার বন্ধু মিস হবে না।
জন্মদিনের উপহারটা পেয়ে মনে হয়েছিল মা তার মনের কথা বুঝেই এটা দিয়েছে। তাই উচ্ছ্বাসের আবেগে মাকে জড়িয়ে ধরে সারা মুখে অজস্র চুমুর আলপনা এঁকে দিয়েছিল নন্দিনী।
মোবাইলটা দেওয়ার পর মা রোজই কাজে গিয়ে সময় পেলেই ফোন করতো- কাজের লোকের কথা, পড়ার কথা, স্কুলের কথা, প্রাইভেট টিউশনের কথা, খাবার মেনু, শরীর ঠিক আছে কিনা- সবই প্রয়োজনীয় কথার মালা।
কিন্তু নিঃসঙ্গ বন্ধু-পিয়াসী নন্দিনী যে প্রয়োজনীয় বর্ণ গন্ধময় লাল গোলাপ দিয়ে মালা গাঁথার জন্য বসে আছে সেটা কি মা জানতো? কথা বলার সঙ্গী খুঁজতে সে শুরু করেছিল মিস কলের খেলা। সাড়া কদাচিৎ মিলেছে। মিললেও সেই কন্ঠস্বর কখনও শুকনো ফুলের মতো ঝরে গেছে, আবার কখনও শুকনো ফুলের মতো ঝরে গেছে, আবার কখনও বিষ কুসুমের মতো দেহ-মনে ঘৃণা বিস্তার করেছে। তবে খেলার গতি স্তব্ধ করতে পারেনি। মার সাথে তার কথা বলার ফুরসত বিশেষ হয় না। কিন্তু মার কথাগুলো তার মনে গেঁথে থাকে। পরীক্ষায় কোনও বিষয়ে খারাপ নম্বর হলে মা বলে… ‘চেষ্টা করো একদিন সফলতা পাবে’। তাই এতদিনের নিঃসঙ্গ জীবনের সাথি খোঁজার চেষ্টা অসফল হলেও সফল হওয়ার আশায় সে থেমে থাকেনি।
আজ নন্দিনী সফল। উৎসব সত্যিই রক্তগোলাপ, ওর বর্ণ আছে গন্ধ আছে। ওর কথায় অদ্ভুত জাদু আছে। সে ছোটোবেলার কাঁটার ঘা ভুলে গেছে। চোখ বন্ধ করে দেখতে পেল তার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে একটা ঝকঝকে গাড়ি। যে গাড়ি থেকে নেমে আসবে উৎসব, তার স্বপ্নের রাজকুমার।
নন্দিনীর বাড়িতে কেউ কোনওদিন আসেনি। তার মনে তাই খুশির জোয়ার। যে জোয়ারে মামনি আর সে মিলে ঘরের সাজসজ্জা একেবারে পালটে দিল।
অনেক রাতে মা ঘরে ঢুকতেই নন্দিনী তার উচ্ছ্বাসের আবেগকে ধরে রাখতে পারল না। মাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে আরম্ভ করল, যেমন করে দুবছর আগের জন্মদিনে করেছিল। অন্যদিন মা বাড়ি ফেরার আগেই নন্দিনী ঘুমিয়ে পড়ে। আজ অভাবনীয় এই ঘটনায় মা প্রথমটা হকচকিয়ে গেল। চারিদিকে তাকিয়ে মেয়ের ঘর সাজানো অবাক হয়ে দেখতে লাগল। তারপর নন্দিনীর মুখখানা আলতো তুলে হেসে বল… ‘আমার নিনি যে বড়ো হয়ে গেছে। সে খেয়াল আমার নেই। জন্মদিনের উৎসবের জন্য সে আর মার অপেক্ষা করছে না। আজ থেকেই তাই শুরু হয়ে গেছে উৎসবের সাজসজ্জা’।
নন্দিনী খুশিতে ঝলমল করে উঠল, মার হাতে একটা চুমু খেয়ে বলল… ‘তা তো করতেই হবে, কাল যে তোমার অনেক কাজ। কাল তো উৎসব আসবে’।
উৎসবের নামটা মা অনেকবার মেয়ের ফোনে দেখেছে। আড়ি পেতে কথাও কিছু কিছু শুনেছে। মেয়ে কলেজে পড়ে। তার ছেলেবন্ধু থাকাটা খুবই স্বাভাবিক। তাই একটু মুচকি হেসে বলল… ‘ও তোর বন্ধু বুঝি?’
মাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে নন্দিনী বলে… ‘ইয়েস সুইট মম, উৎসব আমার একমাত্র বন্ধু। তুমি কাল অনেক- অ-নে-ক খাবার বানাবে কিন্তু?
মা ওর হাত দুটো না ছাড়িয়েই ওর দিকে তেরছা তাকিয়ে দেখল লজ্জায় তার নিনির মুখ একেবারে লাল হয়ে গেছে। ব্যাপারটা কিছুটা আন্দাজ করে মা বলল… ‘সে না হয় হবে। তা তোর বন্ধুটি কখন আসছে? সেটা তো আমার জানতে হবে’।
মাকে ছেড়ে দিয়ে নন্দিনী ঘর সাজাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। মার দিকে না তাকিয়েই বলল… ‘অনেক দূর থেকে গাড়ি করে আসবে তো। তাই কখন আসবে ঠিক বলতে পারবো না’।
মা বাথরুমে ঢুকতে গিয়ে থমকে দাঁড়ালেন। বুকটা ধক্ করে উঠল। মনের ভেতরে ২১ বছর আগের এক স্মৃতি উঁকি দিয়ে গেল। নন্দিনীর দিকে দু-এক পা এগিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলো… উৎসব কতদূরে থাকে নিনি?’
ফুলদানিতে জল ঢালছে তখন নন্দিনী। মার মুখের দিকে না তাকিয়েই উত্তর দিল… ‘উৎসব রানীগঞ্জে থাকে মা’।
‘রাণিগঞ্জে থাকে! এতদূর থেকে তোদের কলেজে আসে? মার ছোটো কপালেও ৩টে ঢেউ পর পর জায়গা করে নিয়েছে তখন। সেদিকে তাকানোর নন্দিনীর সময় নেই।
‘ঘরেতে ভ্রমর…’ গুনগুন করতে করতে আদুরে গলায় উত্তর দিল… ‘ও তো কলেজে পড়ে না মা’।
‘তাহলে?’ মার মুখটা ক্রমশ ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছে।
নন্দিনী ফুলদানিতে লালগোলাপ সাজাতে সাজাতে একটু হেসে বলল… ‘উৎসব তো ফোন অব ফ্রেন্ড। জানো মা, রানীগঞ্জে ওদের সবাই চেনে। ওখানে ওদের দুটো কোলিয়ারি আছে। ওর বাবার নাম উৎপল- সে-এ-ন’।
কথাটা শেষ হওয়ার আগেই মা চিল চিৎকার করে উঠল…
‘না-আ-আ- উৎসব আসবে না-আ-আ-আ’
মার চিৎকারে নন্দিনী কেঁপে উঠল। হাতের পেতলের মিনে করা ফুলদানিটা পড়ে গেল। লাল গোলাপগুলো ছড়িয়ে পড়ল মাটিতে। মনে হলো তার সামনে ঘরের সব কিছু দুলছে। মা দু-হাত চাপা দিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠল। টলমল করতে করতে শরীরটা আছড়ে পড়ল মাটিতে। দীর্ঘদিনের জমা দুঃখ যেন মার দুচোখে সুনামির জলোচ্ছ্বাসে পরিণত হয়েছে। বঙ্গোপসাগরের উথাল পাতাল করা ঢেউ যেন মার বুকের মধ্যে ওঠা-পড়া করছে। আচমকা এই ঘটনায় মামনি হকচকিয়ে গেল। তার অসহায় দৃষ্টি আর বোবা ভাষা ঘরময় ঘুরতে লাগল। সুনামির জলোচ্ছ্বাস, সমুদ্রের ঢেউ কেউই নন্দিনীর মনকে ছুঁতে পারল না। হঠাৎ টোকা খাওয়া কেন্নোর মতো গুটিয়ে রইল খানিকক্ষণ। জীবনে চলার মন্ত্র তাকে শিখিয়েছে জন্মদাত্রী মা। অনেক রাত পর্যন্ত নন্দিনী উৎসবের নাম্বারটায় রিং করল। স্যাটেলাইটের সংযোগে প্রথমে শোনা গেল… ‘আপনি যে নম্বরটিতে যোগাযোগ করতে চাইছেন সেটি বর্তমানে সুইচ অফ আছে অথবা পরিষেবা সীমার বাইরে আছে দয়া করে…’ তারপর নম্বরটায় অস্তিত্ব নেই-এর ঘোষণা। তবু নন্দিনী থেমে থাকল না। ছিঁড়ে যাওয়া সুতোতে গিঁট বেঁধে সেলাই করা যায় না। নতুন সুতো লাগিয়ে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
।। জন্মদিন।।
প্রতিদিন সূর্য ওঠে, একটা নতুন দিন। ঘুমন্ত মানুষ নতুন করে জন্ম নেয় প্রতিটি সকালে। নতুন উদ্যমে শুরু করে তার কাজ। মনে জাগে আশা। এই আশা তো ঘাসের মতো। মানুষ তাকে যতই পদদলিত করুক সে বেঁচে থাকে। পুব আকাশে লাল লাল ছোপ পড়েছে। ঝিরি ঝিরি বাতাস নন্দিনীর শরীরে হালকা আঙুল বোলাল, মন থেকে সরে গেল ঝরা পাতার রাশি। নন্দিনীর আঙুলের হালকা চাপে টেন ডিজিট নাম্বারগুলো আবার মিস কলের খেলায় সক্রিয় হয়ে উঠল। সকালের সূর্য দিনের শেষে ঘুমের দেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। নন্দিনীর মিস কলে ধরা দিল মৌনমুখর বসু।
হ্যালো আমি সাইকোথেরাপিস্ট ডক্টর…। তারপর শুরু হলো অনেক কথা। উৎসবের কথা, বাবার কথা, মার কথা, মামনির কথা, তার নিঃসঙ্গ জীবনের কথা। সবশেষে নন্দিনীর আকুল আহ্বান… ‘আজ আমার জন্মদিন। উৎসব তো এলো না, তুমি আসবে কিন্তু’।
মৌনমুখর একটু হেসে জবাব দিল… ‘তুমি না বললেও আজ সন্ধ্যায় আমার গাড়িটা তোমার বাড়ির দরজায় দাঁড়াবে ঠিক করেছিল’।
‘তাই! তুমি কী করে আগেই ঠিক করলে!’
‘আজ সকালেই তোমার মা আমাকে সন্ধ্যায় তোমার জন্মদিন উৎসবে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন’।
সারাদিনের ক্লান্ত নন্দিনীর মুঠোফোন টিক্ টিক্ আওয়াজ করে তখন লো-ব্যাটারির সংকেত দিচ্ছে। নন্দিনী মুঠোফোন চার্জে বসিয়ে মার ঘরে ঢুকল। মা শুয়ে আছে, তখনও সুনামির রেশ চলছে। নন্দিনী ঘরের লাইট জ্বেলে মাকে মৃদু ধমক দিয়ে বলে ওঠে… ‘এ কী মা, তুমি এখনও শুয়ে আছো! মৌনমুখর আসার সময় হয়ে গেছে তো। তুমি ওকে আমার জন্মদিনে নেমন্তন্ন করে নিজেই বসে আছো? বাইরে তখন গাড়ির হর্ন বাজছে। মা তাড়াতাড়ি উঠে বাইরে গেল। নন্দিনী ফুলদানিটার দিকে তাকালো। লাল গোলাপগুলো তখনও টাটকা তাজা। একটা মাত্র পাপড়ি ঝরে পড়েছে।
সন্দীপ মুখোপাধ্যায় - “নাম কী? থাকো কোথায়? কোন ক্লাস অবধি... Read More
লিপস্টিক আমার কাছে লিপস্টিক নয়। লিপস্টিক আমার কাছে প্রতীক। রং...
আমরা সবাই জানি যে ত্রিদেব বলতে ব্রহ্মাণ্ডের তিন প্রধান স্তম্ভকে...
নাতাশা স্নান সেরে এসছে। সারাটা ঘরই এখন গন্ধস্নান করছে। একই...
পুলিশের উর্দিটা তখনও গা থেকে খুলিনি, সুসময়ী বলল, “তােমার জন্য...
শাে তখন জমে উঠেছে। শীতের সন্ধে। গায়ে ছিল হালকা জ্যাকেট।...
এদেশে সোনাকে স্থিতি এবং ভাগ্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।...
চা আর প্রজাপতি বিস্কুট। খাবার মধ্যে এই। কিন্তু কথা ছিল...
রিশপের ছবিগুলাে সব ফেসবুকে আপলােড করার পর কম্পিউটারের সামনে থেকে...
সকাল বেলাটা আজকাল বিজনের বেশ সমস্যার। থিতু হয়ে প্রভাত উপভােগ...
লােকে ‘ব্যোমকেশ’ নামে ডাকেন। নতুন নামকরণ হয়েছে ‘সােনা দা। এদিকে...