jamdani

জেনারেল পোস্ট অফিস

দূষণের কালো ধোঁয়া যতই আচ্ছন্ন করুক শহর কলকাতাকে, জিপিও অর্থাৎ জেনারেল পোস্ট অফিস (কলকাতা) কিন্তু আজও একই রকম দুধ-সাদা রাজকীয়তা নিয়ে একইভাবে দণ্ডায়মান। প্রতিষ্ঠার সময় থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বহু ইত্থান-পতন, বহু রদবদল, বহু রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তন ঘটে গেছে কলকাতা মেট্রোপলিটনে। জেনারেল পোস্ট অফিস কিন্তু আজও একই ভাবে ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করছে।

আমরা যখন জিপিও-র পাশ দিয়ে যাতায়াত করি, হয়তো বা আলতো দৃষ্টিপাতে মুগ্ধতাও ফুটে ওঠে খানিকটা, কিন্তু কখনোই মনে পড়ে না তার অতীত বৃত্তান্ত। হয়তো অনেকেই জানে না আজ যেখানে জেনারেল পোস্ট অফিসের ম্যাজেস্টিক বিল্ডিং দাঁড়িয়ে আছে, একসময় সেখানেই ছিল কলকাতার প্রথম ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ। যা পরে স্থানান্তরিত হয় গড়ের মাঠের কাছে। জিপিও বিল্ডিং-এর ইতিহাস কিন্তু শুরু হয় এখান থেকেই। যেহেতু বর্তমান জেনারেল পোস্ট অফিস যে স্থানটিতে বিদ্যমান, সেই পুরো জায়গাটি এবং আশেপাশের আরও বিস্তৃত জমি জুড়ে একসময় ছিল পুরনো ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ এবং সেই দুর্গ বাংলার ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সেহেতু তার ইতিহাসও খানিকটা জুড়ে গেছে জিপিও-এর ইতিবৃত্তান্তের সঙ্গে।

এই পুরোনো দুর্গেই সংঘটিত হয়েছিল ঐতিহাসিক ব্ল্যাক হোল ট্র্যাজেডি বা অন্ধকূপ হত্যা। নবাব সিরাজদৌল্লা ১৭৫৬ সালে ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন লড়াই করার উদ্দেশে। তাঁর সৈন্যদল ইংরেজদের পুরোনো দুর্গ আক্রমণ করে। সেই যুদ্ধে পরাজয় ঘটে ইংরেজদের। সে সময় বেশ কিছু ইংরেজ সৈন্যকে অন্ধকূপে হত্যা করে নবাব সৈন্যরা। একসঙ্গে অনেক সৈন্যকে কূপে বন্দি করে রাখা হয়েছিল এবং ওইরকম অপ্রশস্ত জায়গায় অতজন মানুষ ভালভাবে নিশ্বাস নিতে না পারায় তাদের দম বন্ধ হয়ে যায় এবং আতঙ্কগ্রস্তও হয়ে পড়ে। এর ফলে বহু সৈন্য ওইখানেই মারা যায়।

অন্ধকূপ হত্যায় যে দু-একজন বন্দি জীবিত অবস্থায় বেরিয়ে আসতে পেরেছিল, তঅ্যাদের মধ্যেই ছিলেন হলওয়েল সাহেব। পরবর্তীকালে অন্ধকূপে মৃত সৈনিকদের সম্মানার্থে, ওই জায়গাতেই হলওয়েল সাহেব একটি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করেন। যদিও সেই স্তম্ভ বা অন্ধকূপের কোনও চিহ্নই ওই জায়গায় পাওয়া যায় না বর্তমানে। শুধু জিপিও-এর পূর্বদিকের সিঁড়িতে থাকা পেতলের প্লেটে পুরোনো ফোর্ট উইলিয়ামের পূর্বপ্রান্ত চিহ্নিত করা আছে।

জেনারেল পোস্ট অফিসের ম্যাজেস্টিক বিল্ডিংটির ডিজাইন পরিকল্পনা করেন ওয়ালটার বি. গ্রেনভিলে ১৮৬৮ সালে। সুবিশাল গম্বুজওয়ালা ছাদ, যা উচ্চতায় মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে রাজকীয় মর্যাদায়, তা এই স্থাপত্যের মূল আকর্ষণ। ১৮৮৪ সালে যুক্ত করা হয় একটি পোস্টাল মিউজিয়াম। যেখানে স্ট্যাম্পের বিপুল সংগ্রহ এবং ব্রিটিশ ও মোগল যুগের পোস্ট অফিস সংক্রান্ত বিভিন্ন জিনিস, যেমন লেটার বক্স, সিলমোহর প্রভৃতি প্রদর্শিত হয় এই মিউজিয়ামে। সম্পূর্ণ বিল্ডিংটির দুটি উইং আছে, যা অনেকগুলি করিনথিয়ান পিলার দিয়ে যুক্ত।

Trending

Most Popular


Would you like to receive notifications on latest updates? No Yes