jamdani

চুমু চরিত

সিধু

শাে তখন জমে উঠেছে। শীতের সন্ধে। গায়ে ছিল হালকা জ্যাকেট। উত্তাল শ্রোতা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চড়ছে উত্তেজনার মার্কিউরি। হঠাৎ কী মনে হল, ‘দাদা’-র কায়দায় মাথার ওপর জ্যাকেট ঘুরিয়ে ছুড়ে দিলাম অডিয়েন্সের দিকে। তাক করেছিলাম চেনা-পরিচিত কিছু ফ্যানের দিকে, যাতে শাে শেষে  জ্যাকেটটা ফেরত পাই। কিন্তু হল কী, কোথা থেকে একটি কমবয়সি মেয়ে ছুটে এসে কুড়িয়ে নিল জ্যাকেটটা। যথাসময়ে অনুষ্ঠান শেষ হল। ভাবছিলাম, কেউ এসে জ্যাকেটটা ফেরত দেবে। কিন্তু কই, কেউ তাে এল না! উদ্যোক্তাদের বললাম, আমার জ্যাকেটটা একটু জোগাড় করে দিন না! তারা খোঁজ-খবর । নিয়ে মেয়েটিকে খুঁজে বার করল। জ্যাকেট নিয়ে মেয়ে হাজির। কিন্তু সে মিষ্টি করে জানিয়ে দিল, সে জ্যাকেটটি দেবে না। আমি বললাম, সে কী! আমার শীত করছে যে! আর জ্যাকটটি যথেষ্ট দামিও। তাতে সে-মেয়ের ভ্রুক্ষেপ নেই।‘দেব, কিন্তু একটা শর্ত আছে। তােমায়ও আমাকে একটা জিনিস দিতে হবে!’ 

‘কী ?’

‘একটা চুমু’

‘চুমু!!’ কী সাংঘাতিক কথা। একেবারে অপরিচিতা এক কুড়ির কন্যের চাহিদায় আমি পড়লুম বেকায়দায়। অনেক অনুনয় করলাম। সে জানিয়ে দিল, ‘লাভ নেই! ইউ হ্যাভ টু কিস মি। 

এ মা! সবার সামনে আমি একটা বাচ্চা মেয়েকে চুমু দেব? চলল মিষ্টি জেদাজেদি। 

অবশেষে রফা হল। জ্যাকেট ফেরত পেলাম একটি উষ্ণ আলিঙ্গনের বিনিময়ে। 

চুমু নিয়ে এমন জেদাজেদির সম্মুখীন আমি কখনও হইনি।‘অদ্বিতীয়া’-র জন্য চুমু নিয়ে লিখতে বসে, ভাবনার কাটাকুটি করতে করতে, সেই মেয়েটির কথা মনে পড়ে গেল। 

চুমু কী? আমি তাে মেডিকেলের ছাত্র। আমার ভাষায় চুমু, ‘Juxtaposition of orbicularis oris’। কিন্তু চিকিৎসা শাস্ত্রের ভাষায় তাে চুমুর মতাে উথাল-পাথাল ইমােশনাল বিষয়টাকে এক্সপ্রেস করা যায় না। তাই ভাবতে বসলাম, চুমু কয় প্রকার ও কী কী। ভেবেচিন্তে মনে করলাম, ‘ভেজ চুমু’ আর নন-ভেজ চুমু’। হােটেলের মেনু কার্ডে যেমন ভেজ, নন-ভেজ-এর নীচে হরেক ডিশের নাম লেখা থাকে, তেমনই ভেজ চুমু আর নন-ভেজ চুমুরও নানান রেসিপি আছে। প্রথমে ভেজ সার্ভ করি? প্রথমেই ফ্লাইং কিস। নির্ভেজাল, নিরাপদ একটা ব্যাপার। কোনও তর্ক-বিতর্কে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা নেই। ভীষণ। মিষ্টি অথচ আবেগপূর্ণ একটা এক্সপ্রেশন। উড়ন্ত চুমুতে যেমন আছে মিঠে ভাব, তেমন স্নেহের বাতাও। যে কোনও প্রিয়, ভালােবাসার মানুষকেই ফ্লাইং কিস দেওয়া যায়। অনুষ্ঠান শেষে সাইন অফ করার সময় আমি দর্শকদের দিকে চুমু উড়িয়ে দিই। এর মধ্যে থাকে এত্ত এত্ত ভালােবাসা। 

ভেজ চুমুর তালিকায় নেক্সট ইমােটিকন। মিষ্টি একটা শাইন। অ্যাঞ্জেলিনা জোলির মতাে পাউটস। কোনও চাপ নেই। টেনশন নেই। এই চুমু ঘিরে কারও কোনও আপত্তি থাকতে পারে না। উষ্ণ ভালােবাসার প্রকাশেই হােক কিংবা নিছক বন্ধুত্বের ভালাে লাগা প্রকাশে ইমােটিকনের জুড়ি নেই। এখন তাে হােয়াটস অ্যাপ-এর যুগে এই ইমােটিকন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে! আমাকে যখন কেউ প্রােগ্রামের পর ‘ভালাে লেগেছে বলে sms করে, আমি উত্তরে হয়তাে একটা ইমােটিকন পাঠিয়ে দিলাম। এর মধ্যে একটা পজিটিভ ভাইভ আছে।। 

ভেজ চুমুর লিস্টে ৩ নম্বরে গালে বা কপালে চুমু। আগের দুই প্রকার নিরামিষ পদের চেয়ে এই চুমু আর একটু ব্যক্তিগত স্তরের। জীবনে বেশ কিছু আবেগঘন মুহুর্তে, যখন ভাষা যথেষ্ট হয় না, তখন অনেক কথা একসঙ্গে বলে একটা চুমু। প্রতিবছর ভাইফোঁটা নেওয়ার পর দিদি বা বােনেদের গালে একটা চুমু দিই। আবার ভাগনি বিয়েতে বসার ঠিক আগের মুহূর্তে ওর গালে দেওয়া আমার চুমুতে ছিল কত ভালােবাসা আর ওর আগামী জীবনের জন্য আন্তরিক অভিনন্দন। শুধু ভালােবাসা নয়, স্নেহের প্রকাশেও গালে ঠোঁট ছুইয়ে দিই। এই চুমুতে উগ্রতা নেই, অন্য কোনও চাহিদা নেই। 

নাহ! নিরামিষ চুমুর আর কোনও রেসিপি আমার স্টকে নেই। এরপর অবশ্যই আসব আমিষ চুমুর কথায়। নন-ভেজ কিস-এর তালিকায় প্রথমেই আসবে ‘প্রেমের চুমু’। প্রেমের চুমু আর যৌনতার চুমুতে কী ফারাক? প্রেমের চুমুর সঙ্গে কি যৌনতার সংযােগ নেই? প্রেমের চুমু আসে এমন পরিস্থিতিতে, যৌনতার ইচ্ছে নেই। কিংবা ইচ্ছে থাকলেও পরিস্থিতি নেই। অথবা মানসিক অবস্থা যৌনতার উদ্রেক করে না। প্রেমের চুমুতে আছে প্রচুর অনুভুতি। সেই অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যম হল চুমু। প্রেমজ চুমুতে কি শুধু ভালবাসা? ভালবাসার চুমুতে একইসঙ্গে থাকে স্নেহ, সম্মান… সর্বোপরি বিশ্বাস। সবথেকে বড়। কথা, প্রেমের হামির মধ্যে এমন একটা প্যাশন থাকে, যা ভেতর থেকে একটা পজিটিভ এনার্জির জোগান দেয়। তবে পারিপার্শ্বিক বা মন সঙ্গ দিলে প্রেমের চুমু যে যৌনতার দিকে মােড় নেবে না, তার গ্যারান্টি দেওয়া যায় না। তবে যে চুমুতে আছে শুধুই যৌনতা, তাতে ইমােশথাকে কম। আমিষ চুমুর এই ক্যাটেগরি অনেক বেশি যান্ত্রিক। যৌনতার চুমু অনেকটা দেশলাই কাঠির মতাে। শরীর জুড়ে যে বারুদ আছে, তা জ্বালিয়ে দিতে ওই একটা দেশলাই-ই কাফি। তারপর গল্প কোনদিকে টার্ন নেবে, তা অবশ্য ডিপেন্ড করবে বিপরীতের মানুষটির ওপর। 

চুমু চরিত কথা শেষ করার আগে একটা পার্সোনাল মুহুর্তের কথা শেয়ার করিতখন আমার বয়স কমএকজনের সঙ্গে প্রেম করতামমেয়েটি আমার পাড়ারই মেয়েপ্রতিদিন প্রেম করে বাড়ি ফেরার পথে একবার চুপুচুপি আমার বাড়ির বাগানটায় আসতাম। সন্তর্পণে লােহার গেট খুলে বাড়ির একেবারে পেছনে চলে যেতামতারপর প্রেমােকাকে একটা চুমু খেয়ে বাড়ি পৌঁছে দিতামএকদিন এমনই এক মহেন্দ্রক্ষণে হঠাৎ বিনা মেঘে বজ্রপাত। বাড়ির পেছনের জানলা খুললেন আমার মা। তখন, আমি আর সে, মুহুর্তে চম্পট দিলাম। মা সেদিন আমাদের চুমু খেতে দেখেছিলেন কি

Trending

Most Popular


Would you like to receive notifications on latest updates? No Yes