jamdani

ক্লাব ভায়া বটতলা

বিশ্বনাথ বসু (অভিনেতা)

লেখাটি ক্লাব নিয়ে থাকলেও ‘সংঘকথাটা যুক্ত করার সঙ্গে সঙ্গে ক্লাব একটু সঠিক সঙ্গ পেলআমাদের এখানে ক্লাবএর সমার্থক শব্দ আড্ডাবাজদের কাছেআমি মনকে একটু খুঁচোলাম যে ক্লাব যদি মানুষের তৈরি করা একটা বিষয় হয়, তাহলে তাে একটা শুরু থাকবে। মানুষ যখন প্রকৃতির দেওয়া বাসস্থান থেকে সরে গিয়ে নিজেরা ঘর বাঁধল, তখন বারমুখাে বা বাহিরমুখাে কিছু মন গতানুগতিক সদস্যের বাইরে এসে মেলামেশার জায়গাকে আমরা ক্লাবএর জন্মস্থান হিসেবে ধরে নিতে পারিবটগাছের তলা বা অশ্বত্থাগাছের ছায়া থেকে তার সূত্রপাত। তারপর বাঁশের কঞ্চির মাচা, মাটির আটচালা, মুখার্জিভট্টাচার্যদের ঠাকুদালানই বর্তমানের ক্লাব বা সংঘের পীঠস্থান বলা যেতে পারে। হুঁকো খাওয়ার অছিলায় ঘাটের ধারের আলােচনাধর্মীয় গিটকিরি। কালকের বামার ডাগর হওয়ার কাহিনি সবই ওই প্রাচীন ক্লাব ঘরের বিষয় ছিলতার সঙ্গে দাবা, পাশাও চলতগুপী গাইন বাঘা বাইন’এর গুপীকে খিল্লি করার দৃশ্যে প্রাচীন ক্লাবকেই দেখিক্লাবগুলি শহরে বারােয়ারি নাম নিয়ে ধুমধাম করে পুজো করতে শুরু করলঅর্থাৎ নিজের রেস্তোতে না কুলােলে সবাই মিলে আয়ােজনআর আজকে কোটি কোটি টাকার লেনদেন নির্ভর করে এই ক্লাবের পুজোয়রাজনৈতিক রংচড়েছে ক্লাবএর গায়েভােটের আগে । তাই প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন লেখার হিড়িক, রাতে ফিস্টি, দাদা জিতলে ক্লাবএর জোর অনুযায়ী কান্ট্রি, বিলিতি লিকারের বিষ্টি। 

পূর্বকালে শুধু পুরুষরাই আটচালা, চণ্ডীমণ্ডপে ক্লাব চালাত তা নয়বাড়ির মেয়েরা দুপুরবেলা বটুয়া আর মুখ ভরতি পান নিয়ে পরচচাপরনিন্দা, কোথাও কোথাও বিন্তি, রংমিলান্তি চলত তাস হাতেসেই অন্তঃপুরের মহিলাদের পাবেন শহরের অভিজাত ক্লাবগুলিতেগ্রামে পুকুর ঘাটেও ক্লাব চলে বই কীতবে ক্লাব শক্ত বাঁশের দরমা থেকে দোতলা, তিনতলা হয়ে মিশে যায় ক্যালকাটা বা অ্যান্ডারসন ক্লাব-এযে বাবা-মা ছেলে ভ্রাতৃ সংঘের দরমার ক্লাবে দিনে দু’বার গিয়ে ত্রাহি ত্রাহি রব তােলে, তারাই দারােয়ানওয়ালা ক্লাবে ছেলে মেম্বার হলে কাঁচরাপাড়ার মেসােমাসিকে ফোন করে জানায়। 

তবে গতানুগতিক জীবনের বাইরে মেলামেশার ক্লাবগুলাের প্রয়ােজনীয়তা রয়েছেবাবার পেনশন আসছে না, মায়ের বাতের ব্যথা, দাম্পত্যের মাখাে মাখাে দিন শেষ হলে, বুবুনের ভরতি, কাজের মাসির মেডিকেল লিভ, অবিবাহিত বােন, দশফুট বাই দশফুট থেকে মুক্তি পেতে ক্লাব বা সংঘের জুড়ি নেই। মেয়েরাও তাই কমপ্লেক্স ফ্ল্যাটের ক্লাবজরাে জরােশাশুড়ি, শ্বশুরের গুণগান করে, স্বামীর হাঁদামির উদাহরণ দেওয়ার কমপিটিশন চালায়শুধু তাই নয়, পয়সার অপর পিঠ না বললে মহাপাতক হয়ক্লাবগুলাে থেকে রক্তদান শিবির, বসে আঁকো প্রতিযােগিতা, কিডনি অপারেশন, গণবিবাহ, আইলা বিধ্বস্ত থেকে চোখের ছানি ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের পাশে দাঁড়ায়। 

সুতরাং ক্লাব আজ আর মজুমদারদের ভাড়াটে ওঠানাের মাপকাঠি ঠিক করে নাআজ ফেসবুক, টুইটার, ভিডিও গেমসের যুগে ক্লাব বা সংঘ মানুষকে। মানুষের কাছে এনেছেশীতের বিকেলে ক্লাবের লেকে ফিরতি পিকনিক পার্টির বাস দেখলে মিস করি, আমার সেই ক্লাবগুলােকে, পিকনিক কে, সরস্বতী। পুজোকে, কালীপুজোকে, নাটক করাকে, নিঃস্বার্থ ঝাঁপিয়ে পড়াকে। সন্তানকে সমাজের বুকে আনতে আমিও কলকাতার এক উঠতি ক্লাবের সদস্যপদ নিয়ে নিলামসারা ক্লাবের মাঠে, সুইমিং পুলের ওপরে, লাইব্রেরির খড়খড়ির ভেতর দিয়ে সূর্যের আলাে আসে, চাঁদনী রাতে ক্লাবের খােলা ছাদে কেউ বলে । 

ওঠে, পূর্ণিমার রাতে আকাশে চাঁদ ডাকে আয় আয় আয়

Trending

Most Popular


Would you like to receive notifications on latest updates? No Yes