হাল আমলের ফ্যাশনিস্তার সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত। এক মুহুর্ত ফ্যাশন ছাড়া চলতে পারি না। সবেতেই ফ্যাশনের ছোঁয়া আজকের যুগের ট্রেন্ড। অথচ ফ্যাশনের দুনিয়ার কতকিছুই আমাদের অজানা। কথিত আছে ১৮ শতকের শেষের দিকে ইউরোপে এক নতুন ফ্যাশনের ট্রেন্ড শুরু হয়। অন্য দেশ থেকে আমদানি করা সেই ফ্যাশন রীতিমতো হইচই ফেলে দেয় আন্তর্জাতিক বাজারে। যা কেলেঙ্কারির বিষয়ও হয়ে উঠেছিল এক শ্রেনীর বিরুদ্ধে।
কি সেই ঘটনা। সেটি হলো ঢাকাই মসলিন। এই সমস্ত কেলেঙ্কারির মূল কারিগর। আজকের মতো মসলিনের কাপড় ছিল না সেটি। সেই মসলিন বানানো হতো ১৬টি ধাপে। আর সেই কাপড় বানানোর জন্য দুর্লভ সুতোর ব্যবহার কর হতো। যে সুতোর তুলো জন্ম কেবল মেঘনা নদীর তীরে। আর সেই যুগে মসলিনকে সম্পত্তি হিসেবে গন্য করা হতো। প্রাচীন গ্রীসের দেব দেবীদের পোশাক থেকে শুরু করে সম্রাট, মোগল সম্রাট এবং তাঁর পরবর্তী সম্রাটদের পরিধানের বস্ত্র তৈরি হতো মসলিনে।
উনিশ শতকে সামনে আসে এক ব্যঙ্গ চিত্র, জনসমক্ষে মসলিন পড়লে কি কি বিপদ হতে পারে। রোদ বা বৃষ্টিতে মসলিন পড়লে শরীর অনাবৃত হয়ে পড়তে পারে।
এই মসলিনের ধরণ ছিল অনেক। নামও ছিল তার বাহারি। তার মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর নামটি হলো, ‘বাফত-হাওয়া’— যার অর্থ ‘হাতে বোনা বাতাস’। একজন রাজ কবি এই নাম দিয়েছিলেন। এই মসলিন ছিল অত্যন্ত হালকা এবং বাতাসের মতোই কোমল ও মসৃণ। পরিব্রাজকের তথ্য থেকে জানা যায়, ৩০০ ফুট লম্বা একটি মসলিনের কাপড় অনায়াসে একটি আংটির ভেতর দিয়ে ঢোকানো ও বের করা যেত। অন্য আরেকজন বলেছিলেন, ৬০ ফুট, অর্থাৎ ১৮ মিটার মসলিনের কাপড় একটি পকেট সাইজের নস্যির বাক্সে অনায়াসে এঁটে যেত। এরকমই স্বচ্ছ আর পাতলা ছিল ঢাকাই মসলিন।
ঐতিহ্যগতভাবে দামি এই কাপড় ব্যবহার করা হতো শাড়ি ও জামা বানানোর কাজে। পুরুষদের টিউনিক-জাতীয় পোশাকেও এর ব্যবহার দেখা যেত। যুক্তরাজ্যে আভিজাতদের পোশাকের ধরনই আমূল বদলে দেয় মসলিন। মসলিনের তৈরি অতি সূক্ষ্ম কাপড় নিয়ে নানা ধরনের নেতিবাচক সমালোচনা প্রচলিত ছিল সেই সময়।
অনেক সমালোচনার পরও তুমুল সাফল্য পায় ঢাকাই মসলিন। সে যুগে সবচেয়ে দামি পোশাক ছিল মসলিনের তৈরি। ফরাসি রানি মেরি অ্যান্তোনিও, সম্রাট নেপোলিয়নের সহধর্মিণী সম্রাজ্ঞী জোসেফিন বোনাপোর্ট, লেখিকা জেন অস্টেন-সহ অসংখ্য বিখ্যাত মানুষ ছিলেন মসলিনের গুণমুগ্ধ ভক্ত। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, মসলিন যত দ্রুত ইউরোপে জায়গা করে নিয়েছিল, কাপড়টি যেন ঠিক তত দ্রুতই বিলুপ্ত হয়ে যায়।
২০ শতকের শুরুর দিকে, বিশ্বের প্রতিটি কোণ থেকে অদৃশ্য হয়ে যায় ঢাকাই মসলিন। মসলিন এখন শুধু টিকে আছে জাদুঘরে।
মেঘনার তীরে জন্মানো গাছ থেকে যে তুলা পাওয়া যেত, সেটি থেকেই বানানো হতো ঢাকাই মসলিন। প্রত্যেক বসন্তে এখানকার ধূসর, পলিমাটিতে বড়ো হতো ম্যাপল গাছের মতো পাতাওয়ালা গাছটি। বছরে দুবার হলুদ ফুল ফুটত প্রাপ্তবয়স্ক ফুটি কার্পাস গাছে। এই ফুল থেকেই পাওয়া যেত তুষার শুভ্র সুতি তন্তু। এগুলো কোনো সাধারণ তন্তু ছিল না। এখনও অনেকে মসলিনের তুলো বানানোর প্রয়াস করে যাচ্ছেন। মসলিন নিয়ে এক মজার কথা প্রচলিত আছে। অনেকের ধারণা, মসলিন কখনোই হাতে বানানো নয়। এটি নিশ্চয়ই কোনও ভূত, প্রেত, পরীর তৈরি করা। নাহলে এত সূক্ষ্ণ হয় কি করে!
ভারতীয় দক্ষ কারিগরিতে তৈরি ট্র্যাডিশনাল ও ডিজাইনার ক্রপ টপ লহেঙ্গায়... Read More
বিয়ের কথা পাকা হওয়া মানেই বাড়িতে সাজো সাজো রব। আর... Read More
এমন কোনও বাঙালি মহিলা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর যাঁর আলমারিতে ভালো... Read More
কলমকারি ব্লাউজ, কলমকারি শাড়ি, কলমকারি স্কার্ট, কলমকারি কুর্তি, সবই আমরা... Read More
একটা চশমা বা সানগ্লাস আপনার মুখমণ্ডলে আনতে পারে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন।... Read More