কলকাতা ঐতিহাসিক ঐতিহ্যবাহী ভবনগুলির মধ্যে অন্যতম হল রাইটার্স বিল্ডিং। এই ভবনের কথা শুনলেই মনে ভেসে আসে পরপর কয়েকটি কথা। এক, এই ভবনটি সরকারি কার্যালয় এবং মন্ত্রী-সান্ত্রীদের কর্মস্থল। দুই, এখানেই ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় রচিত হয়েছিল বিনয়-বাদল-দীনেশের সশস্ত্র আক্রমণের সূত্র ধরে। আরও একটি প্রচলিত গল্প ঘোরাফেরা করে লোকমুখে। রাত বাড়লে, সমস্ত দফতরগুলি বন্ধ হয়ে গেলে অশৈলী কাণ্ডকারখানা ঘটে এখানে। তখন নাকি মহাকরণ জুড়ে অশরীরীর উপস্থিতি টের পাওয়া যায়।
এই ভবনটি একসময় ছিল চার্চ। নাম ছিল সেন্ট অ্যানেস চার্চ। চার্চটি ডেমলিসড হয়ে যাওয়ার পর এর সংলগ্ন কিছু জমি জুড়ে রাইটার্স বিল্ডিং গড়ে ওঠে। ১৭৭৭ সালে মূল ভবনটি তৈরি হয়। এটিই ছিল কলকাতার প্রথম থ্রি-স্টোরিড বিল্ডিং। এরপর ১৮০০ সালে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ রাইটার্সদের ওরিয়েন্টাল ল্যাংগোয়েজ প্রশিক্ষণের যে ব্যবস্থা করেছিল সেটি পরবর্তীতে উঠে আসে রাইটার্স বিল্ডিং-এ। এরপর বহু পরিবর্তন হয় ভবনটিতে। ৩২ জন স্টুডেন্টদের জন্য তৈরি হয় আবাসিক হস্টেল, একজাম হল। এছাড়া লেকচার রুম, লাইব্রেরি রুমও। ১৮২১ সালে ভবনে যুক্ত হয় ১২৮ ফুট লম্বা বারান্দা। এরপর ১৮৩০ সালে রাইটার্স থেকে কলেজ অন্যত্র স্থানান্তরিত হয়।
এরপর আসে রাইটার্স বিল্ডিং-এর আমূল পালাবদল। ১৮৭১-৭৪ সালের মধ্যে লেফটেনেন্ট গভর্নর জেনারেল, জর্জ ক্যাম্পাবেল অনুভব করেন যে দ্রুত কাজ নিষ্পত্তির জন্য একটি সেক্রেটারিয়েট প্রয়োজন। তবে এ সময় ইস্ট ইন্ডিয়ান রেলওয়ে কোম্পানি, ভবনের একটি বড়ো অংশ অধিগ্রহণ করেছিল এবং অল্টারনেটিভ অ্যাকোমোডেশন খুঁজে পাচ্ছিল না। অবশেষে ১৮৭৭-৮২ সালে বাংলার লেফটেন্যান্ট-গভর্নর, অ্যাশলে ইডেনকে সাদারস্ট্রিট এবং চৌরঙ্গিতে অবস্থিত প্রধান অফিসগুলিকে রাইটার্সে স্থানান্তরিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এই সময় স্থান-সংকুলানের অভাব হওয়ায় প্রাথমিকভাবে তিনটি ব্লক নির্মাণ করা হয় রাইটার্স ভবনে। সময়ের সঙ্গে বাড়তে থাকে স্থাপত্যের সৌন্দর্য। রাইটার্স তার গ্রিকো-রোমান লুক অর্জন করে, সেন্ট্রাল বে-তে পোর্টিকো, দৃশ্যমান ইটের লাল উপরিতল এবং রেলিং সহ। উইলিয়াম ফ্রেডরিক উডিংটন নির্মিত ভাস্কর্য মূর্তিগুলি ছাদের লাইনিং বরাবর স্থাপন করা হয় ১৮৮৩ সালে। সেন্ট্রাল পোর্টিকোর ওপর দাঁড় করানো হয় দেবী মিনার্ভার মূর্তিটি। স্বাধীনতা পূররববর্তী সময়ে রাইটার্সে সাতটি ব্লক-সহ একটি সুবিশাল কোর্টইয়ার্ড ছিল। ১৯৭০ সালের মধ্যে নির্মিত হয় এখনকার সর্বমোট তেরটি ব্লক এবং বৃত্তাকার ছাদযুক্ত ঘর এবং পাঁচটি মেইন ব্লক। এরইমধ্যে ১৯৩০ সালে ৮ ডিসেম্বর ঘটে যায় সেই ঐতিহাসিক ঘটনা। বিনয় বসু, বাদল গুপ্ত, দীনেশ গুপ্ত সশস্ত্র আক্রমণ করেন রাইটার্স বিল্ডিং-এ। ইউরোপিয়ান পোশাকে তাঁরা প্রবেশ করেন, সঙ্গে ছিল গুলিভর্তি রিভলভার। জেলবন্দিদের ওপর নৃশংস অত্যাচার চালানোর প্রতিশোধ নিতে তাঁরা কুখ্যাত ইন্সপেক্টর জেনারেল অফ পুলিশ, কর্নেল এন এস সিম্পসনকে হত্যা করে। এরপর ভবনের করিডরে দীর্ঘ গুলিযুদ্ধের পর তাঁরা পুলিশের হাতে বন্দি হন। বাদল সেই মুহুর্তেই পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেন। বাদল এবং দীনেশ নিজেদের উদ্দেশে গুলি ছোড়েন কিন্তু বেঁচে যান। পাঁচদিন পর হাসপাতালে বিনয় মারা যান। এবং দীনেশ সে সময় বেঁচে যান। ৭ জুলাই ১৯৩১-এ দেশের জন্য শহিদ হন তিনি। ফাঁসির দড়ি বরণ করে নেন দীনেশ।
এমনই দীর্ঘ ইতিহাস এবং পালাবদলের চিহ্ন বুকে নিয়ে আজও দাঁড়িয়ে রয়েছে রাইটার্স বিল্ডিং। সময়ের গতিতে বদলেছে রাজনৈতিক, সামাজিক প্রেক্ষাপট। ইংরেজ শাসণমুক্ত স্বাধীন ভারতের যে স্বপ্ন দেখেছিলেন বিনয়-বাদল-দীনেশরা, তা একদিন সার্থক হয়েছে। ক্ষমতার অলিন্দে ইংরেজদের পরিবর্তে ভারতীয়দের একাধিপত্য কায়েম হয়েছে। রাইটার্স ভবন তারইর সাক্ষ্য বহন করছে আজও।
সন্দীপ মুখোপাধ্যায় - “নাম কী? থাকো কোথায়? কোন ক্লাস অবধি... Read More
এদেশে সোনাকে স্থিতি এবং ভাগ্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।...
আমরা সবাই জানি যে ত্রিদেব বলতে ব্রহ্মাণ্ডের তিন প্রধান স্তম্ভকে...
লিপস্টিক আমার কাছে লিপস্টিক নয়। লিপস্টিক আমার কাছে প্রতীক। রং...
নাতাশা স্নান সেরে এসছে। সারাটা ঘরই এখন গন্ধস্নান করছে। একই...
পুলিশের উর্দিটা তখনও গা থেকে খুলিনি, সুসময়ী বলল, “তােমার জন্য...
শাে তখন জমে উঠেছে। শীতের সন্ধে। গায়ে ছিল হালকা জ্যাকেট।...
চা আর প্রজাপতি বিস্কুট। খাবার মধ্যে এই। কিন্তু কথা ছিল...
সকাল বেলাটা আজকাল বিজনের বেশ সমস্যার। থিতু হয়ে প্রভাত উপভােগ...
রিশপের ছবিগুলাে সব ফেসবুকে আপলােড করার পর কম্পিউটারের সামনে থেকে...
লােকে ‘ব্যোমকেশ’ নামে ডাকেন। নতুন নামকরণ হয়েছে ‘সােনা দা। এদিকে...