ঠাকুমার ঝুলির গল্পের পাতালপুরীর মতো আমাদের কলকাতা শহরের আনাচে কানাচে লুকিয়ে আছে নানান ছোটো-বড়ো রাজপুরী। তাদেরই মধ্যে একটির কথা আজ বলব- নাম তার ‘মার্বেল প্যালেস’।
নেহাত নিজের খেয়ালের বশেই লর্ড মিন্টো এই অট্টালিকার নামকরণ করেন ‘মার্বেল প্যালেস’ অর্থাৎ ‘মার্বেল পাথরের প্রাসাদ’। উত্তর কলকাতার চোরবাগান এলাকায় মুক্তারাম বাবু স্ট্রিটে অবস্থিত এই বিচিত্র প্রাসাদ উনিশ শতকের জাঁকজমক ও রাজকীয়তার এক অন্যতম প্রতিনিধি।
নামকরণ অনুযায়ী, এই অট্টালিকা প্রধানত সুপরিচিত তার শ্বেতপাথরের বিস্তৃত মেঝে ও বারান্দার জন্য, যা ১২৫ ধরনের নানান রঙিন মার্বেল পাথরের তৈরি। এই সমস্ত ইতালিয়ান মার্বেল সমুদ্রপথে ভারতের বুকে পাড়ি দেয় শুধুমাত্র এই প্রাসাদ নির্মাণের কাজে। ১৮৩৬ সালে রাজ রাজেন্দ্র মল্লিক দ্বারা নির্মিত মার্বেল প্যালেস এখনও রাজবংশের সদস্যদের বাসস্থান হয়ে আসছে। রাজেন্দ্র মল্লিক, রাজা নীলমনি মল্লিকের দত্তকপুত্র ছিলেন, যিনি পরবর্তী জীবনে এক সমৃদ্ধশালী ব্যবসায়ী হিসেবে বিখ্যাত হন। মার্বেল প্যালেসের প্রাঙ্গনের মধ্যে নীলমনি মল্লিক দ্বারা নির্মিত একটি প্রাচীন জগন্নাথ দেবের মন্দির আছে, যা মূল বাড়িটির থেকেও পুরানো। প্রকাণ্ড বাগানে আছে অসংখ্য শ্বেতপাথরের মূর্তি এবং পাথরের তৈরি মৎস্যকন্যা দিয়ে সাজানো একটি ঝরনা। মার্বেল প্যালেসকে একটা ছোটোখাটো ‘রক গার্ডেন’ ও চিড়িয়াখানা বলা যেতেই পারে। এইসব নানান মূর্তি আমাদের এই অট্টালিকার ভেতরের ঐতিহ্য এবং বনেদিয়ানার আভাসমাত্র দেয়। বিস্তৃত বাগানের নানান জায়গায় ছড়িয়ে আছে নানান, ধরনের পাথরের সিংহমূর্তি- কিছু জাগ্রত, কিছু ঘুমন্ত। এছাড়া রয়েছে বুদ্ধদেবের ভাস্কর্য ও হিন্দু পুরাণের নানান দেব-দেবী, মা মেরি ও যিশুখ্রিস্টের মূর্তি- এমনকী ক্রিস্টোফার কলম্বাস-ও! প্রধান প্রবেশপথের কাছে রাখা আছে রাজা রাজেন্দ্র মল্লিকের একটি ছোটো মূর্তি। মার্বেল প্যালেসের বাগানে আছে বসবার জায়গা- ছোটো ছোটো বেঞ্চ ও চেয়ার, অনেক সময়ে কিছু কারুকার্য করা সুন্দর পাথরের টেবিলও দেখা যায়।
মার্বেল প্যালেসের চিড়িয়াখানায় এখনও দেখতে পাওয়া যায় নানান বিদেশি পাখি, যেমন ধনেশ, পেলিক্যান ইত্যাদি। এছাড়াও আছে নানান প্রজাতির হরিণ, যেমন ‘বার্কিং ডিয়ার’ এবং কিছু প্রজাতির বাঁদর। আমরা হয়ত সকলে জানি না, যে ভারতের প্রথম চিড়িয়াখানা হিসেবে মার্বেল প্যালেসের চিড়িয়াখানাই পরিচিত। বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করার জন্য যে প্রকাণ্ড পাথরের সিঁড়ি আছে, তা এখন খুবই কম ব্যবহার করা হয়। দর্শকদের জন্য একটি পার্শ্ব প্রবেশপথ আছে, যেটি সোজা চলে যায় ‘বিলিয়ার্ড রুমে’। যেতে যেতে মনে হয় সময়ের উলটো দিকে পাড়ি দিয়ে এ কোন প্রাচীনকালে এসে পৌঁছেছি। এই ঘরের মধ্যিখানে আছে ভিন্ন সাইজের দুটি বিলিয়ার্ড টেবিল, ঘরের চারদিকে সাজানো নানান দেশ-বিদেশের মূর্তি ও ভাস্কর্য। আছে ‘অ্যাপোলো’-র প্রতিমূর্তি, ‘ফন ও ফ্লোরা’ এবং আরও নানান দুর্মূল্য সমস্ত আসবাবপত্র। কিন্তু নজর করার মতো একটি দুষ্প্রাপ্য জাপানি ফুলদানি রাখা আছে দরজার পাশে, যার সত্যিই জুড়ি মেলা ভার। এর পাশের ঘরটি রানি ভিক্টোরিয়ার উদ্দেশ্যে বানানো। ঘরের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে বিশালাকৃতির রানি ভিক্টোরিয়ার উদ্দেশ্যে বানানো। ঘরের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে বিশালাকৃতির রানির একটি কাঠের মূর্তি, যা কেবলমাত্র একটি সিঙ্গল গাছের গুঁড়ি কেটে তৈরি। ওই ঘরের মধ্যেই আছে রানির আর একটি তামার মূর্তি ও মেডুসা’র এক মূর্তি। ওপর থেকে ঝুলছে এক অতিকায় ঝাড়বাতি, ও ঘরের কোনে চাপা দাওয়া এক প্রাচীন গ্রামোফোনও চোখে পড়ে। এই ঘরের কাঠের তৈরি সিলিং পাথরের মেঝের মতোই কারুকার্য করা। এখান থেকে যাওয়া যায় ‘জলসা ঘরে’, যেখানে রাজার মজলিশ বসত। চতুর্দিকে রাখা আছে নানান আকারের পাথরের অথবা বেলজিয়াম কাচের তৈরি মোমদানি। এমনকী ঘরের দেওয়ালগুলিও পাথরের কারুকাজে সজ্জিত। একটি পিয়ানো রাখা আছে জানলার পাশে, যা সম্ভবত ভারতের প্রথম ইমপোর্টেড পিয়ানো।
সন্দীপ মুখোপাধ্যায় - “নাম কী? থাকো কোথায়? কোন ক্লাস অবধি... Read More
লিপস্টিক আমার কাছে লিপস্টিক নয়। লিপস্টিক আমার কাছে প্রতীক। রং...
আমরা সবাই জানি যে ত্রিদেব বলতে ব্রহ্মাণ্ডের তিন প্রধান স্তম্ভকে...
নাতাশা স্নান সেরে এসছে। সারাটা ঘরই এখন গন্ধস্নান করছে। একই...
পুলিশের উর্দিটা তখনও গা থেকে খুলিনি, সুসময়ী বলল, “তােমার জন্য...
শাে তখন জমে উঠেছে। শীতের সন্ধে। গায়ে ছিল হালকা জ্যাকেট।...
চা আর প্রজাপতি বিস্কুট। খাবার মধ্যে এই। কিন্তু কথা ছিল...
রিশপের ছবিগুলাে সব ফেসবুকে আপলােড করার পর কম্পিউটারের সামনে থেকে...
সকাল বেলাটা আজকাল বিজনের বেশ সমস্যার। থিতু হয়ে প্রভাত উপভােগ...
লােকে ‘ব্যোমকেশ’ নামে ডাকেন। নতুন নামকরণ হয়েছে ‘সােনা দা। এদিকে...
আজও এই শহরের সরু অলি-গলি তাকে নস্ট্যালজিক করে তােলে। তাই...