বাগবাজার কুমােরটুলি অঞ্চলের সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির যে কত বছরের পুরনাে, তা জানা যায় না। এই মন্দিরের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক অদ্ভুত কাহিনি। কালীবর নামে এক সন্ন্যাসী হিমালয়ে তপস্যা করছিলেন। একদিন তিনি স্বপ্ন দেখলেন, জলাভূমির নির্জন আড়ালে লুকিয়ে আছে শক্তিপীঠ কালীক্ষেত্র। পাশেই আদিগঙ্গা। এই গুপ্ত স্থান আবিষ্কার করে মায়ের পুজো এবং মন্দির প্রতিষ্ঠা করার ইঙ্গিত পেলেন স্বপ্নে। এর পর কালবিলম্ব না করে কালীবর হিমালয় ছেড়ে নেমে এলেন সমতলে। গঙ্গার তীর ধরে তিনি অগ্রসর হলেন। গঙ্গার ধারে। যেতে যেতে একদিন তিনি এক শরবন আবিষ্কার করলেন। তার মনে হল এই সেই স্থান, যেখানে দেবীর পায়ের আঙুল পড়েছিল। কালীবর সেখানেই বসলেন ধ্যানে। দেবীর দর্শন পেলেন। তবে কালীমাতা কে বললেন, ‘বৎস, এই ক্ষেত্র সেই কালীপীঠ নয়, আমি যে। স্থানের কথা বলেছিলাম তা আরও দক্ষিণে। আসলে দেবী বলেছিলেন কালীঘাটের কথা। সে যা-ই হােক, কালীঘাটের খোঁজ না পেলেও তিনি দেবীর দর্শন পেয়েছেন। তার তপস্যা সিদ্ধিলাভ করেছে। তাই তিনি এই স্থানেই দেবীর প্রতিষ্ঠা করবেন বলে স্থির করলেন। সতীপীঠ না হতে পারে, তবু তাে সাধক কালীবরের সিদ্ধপীঠ!
এই সেই স্থান, যেখানে কালীবর সিদ্ধিলাভের পর দেবীর মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ধ্যানস্থ অবস্থায় তিনি দেবীর যেমনটি রূপ দেখেছিলেন, ঠিক তেমনটি করেই মা সিদ্ধেশ্বরীর মৃন্ময়ী মূর্তি তৈরি করলেন। তবে মায়ের আজ্ঞা তিনি ভােলেননি। কালীঘাট খুঁজে তাকে বের করতেই হবে। তাই তিনি সিদ্ধেশ্বরী মায়ের পূজার ভার অর্পণ করলেন তার সঙ্গে হিমালয় থেকে আসা কয়েকজন কাপালিক সন্ন্যাসীকে। নিজে বেরিয়ে পড়লেন আরও দক্ষিণে কালীঘাটের অন্বেষণে।
কাপালিকদের হাতে দেবী সিদ্ধেশ্বরীর নিত্যপূজা চলতে লাগল, আবার সেই সঙ্গে এসে জুটল ডাকাতের দল। সে সময় এসব অঞ্চলে ডাকাত আর জলদস্যুর উপদ্রব ছিল। সন্ন্যাসী কালীবর ছেড়ে চলে যাওয়ার পর এই স্থান কার্যত হয়ে দাঁড়াল কাপালিক আর ডাকাতদের সাধনস্থল। এভাবেই অতিবাহিত হল বেশ কিছু বছর। যে কাপালিকরা পূজার ভার । নিয়েছিলেন, তারা তখন বৃদ্ধ হয়েছেন। তাদের এবার সময় হয়েছে পূজার ভার নবীন প্রজন্মের হাতে হস্তান্তর করার। কিন্তু কোথায় পাবেন নতুন প্রজন্ম? তারা নিজেরা তাে অকৃতদার সন্ন্যাসী। নিজেদের সন্তান না থাকলে কে পাবে এই পূজার উত্তরাধিকার? তবে কথায় বলে না ভক্তের বােঝা ভগবান বয়’। এখানেও দেখা গেল দেবীর অপরূপ লীলা। কাপালিকদের দুশ্চিন্তা লাঘবের ভার মা যেন নিজেই নিজের কাঁধে নিয়ে নিলেন। কিছুদিনের মধ্যেই দেখা গেল গঙ্গার ওপর দিয়ে ভেসে চলেছে একটি খড়ের চাল। আর তার ওপর দুটি ছেলে ভয়ে জড়ােসড়াে হয়ে বসে রয়েছে। কাপালিকরা এই দৃশ্য দেখতে পেয়ে গঙ্গার বুক থেকে ছেলে দুটিকে উদ্ধার করলেন। কাছে আসার পর দেখা গেল বালক দুটির গলায় পৈতে রয়েছে। জানা গেল, ওদের একজনের নাম শম্ভুচরণ ও অন্যজন তারাচরণ। তারা চক্রবর্তী ব্রাহ্মণ। বয়স যথাক্রমে ষােলাে ও চোদ্দ। কাপালিকরা স্থির করলেন দেবীপূজার বিধি সব এদেরকেই শিখিয়ে দেবেন। তাদের মনে হল, মা সিদ্ধেশ্বরী নিজেই যেন ছেলেদুটিকে পাঠিয়ে দিয়েছেন।।
পূজার বিধিশিক্ষার পর শম্ভূচরণ ও তারাচরণের ওপর দেবী সিদ্ধেশ্বরীর নিত্যসেবার ভার পড়ল। ততদিনে বৃদ্ধ পূজারির প্রয়াণ ঘটেছে। যথাকালে এদের দুজনের বিয়ে হল এবং সন্তানাদিও জন্মাল। দুই গৃহী পূজারি এর পর দেবী সিদ্ধেশ্বরীকেও ঘরােয়া রূপেই প্রতিষ্ঠা দিলেন। এই বদলের ফলে ধীরে ধীরে সাধারণ মানুষের আনাগােনা শুরু হল মায়ের মন্দিরে। ততদিনে ডাকাতদের উপদ্রব কমেছে, সুতানুটি কলকাতা হয়ে উঠছে ধীরে ধীরে। এক সময় যে মন্দিরে নরবলি হত বলে কথিত, তা-ই এবার হয়ে উঠল গৃহী মানুষের শান্তির আশ্রয়। নানারকম ধর্মীয় গান, পাঠ, স্তব এ সব শুরু হল মন্দির প্রাঙ্গণে।
অনুমান করা হয় কালীবরের সময় এই মন্দির ছিল গাছের ডাল-পাতা দিয়ে তৈরি। পরে কাপালিকদের সময় সম্ভবত হােগলা পাতার ছাউনির তলায় দেবী অধিষ্ঠিত ছিলেন। পরবর্তীতে অনেক রদবদলের মধ্য দিয়ে বর্তমান মন্দিরটি তৈরি হয়। তবে সে যা-ই হােক, এই মন্দিরের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক মহান ব্যক্তিত্বের নাম। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণদেব বাগবাজারে এলে সিদ্ধেশ্বরী মা-কে দর্শন করে যেতেন। গিরিশচন্দ্র ঘােষ প্রতিটি নাটক লেখার পর মায়ের পায়ে উৎসর্গ করতেন। বসুমতী সাহিত্য মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা উপেন্দ্রনাথ মুখােপাধ্যায়ের ব্যবসা মন্দ যাওয়ায় রামকৃষ্ণদেব তাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন এই বলে- ‘যা উপেন, সিদ্ধেশ্বরীর কাছে মানত কর। তাের এক দরজা যেন শত দরজায় পরিণত হয়। মা সিদ্ধেশ্বরীর কৃপায় সবাই কিন্তু ফললাভ করেছিলেন। শ্রীরামকৃষ্ণ তাই আদর করে। বাগবাজারের সিদ্ধেশ্বরী দেবীকে ডাকতেন ‘গিন্নিমা’ বলে। যিনি সংসারের কত্রীর মতােই সবার মঙ্গল করেন, সকলের দুঃখ দূর করেন ।কালীপূজা এবং অন্যান্য তিথিতে তাে খুব বড়াে করে পুজো হয়ই, কিন্তু দেবী সিদ্ধেশ্বরীর মন্দিরে আরও একটি সুন্দর উৎসব পালিত হয়, যা বিশেষভাবে উল্লেখের দাবি রাখে। বুদ্ধপূর্ণিমার দিন এই মন্দিরে হয় ‘ফুলদোল’ উৎসব। এই দিন দেবী সেজে ওঠেন ফুলের সাজে। নানা রঙের প্রচুর ফুলের আভরণে সেজে মায়ের জগৎমােহিনী রূপ যেন জাগ্রত হয়ে ওঠে। রাজেন্দ্রাণীর রূপে তখন যেন ফুটে ওঠে অলৌকিক প্রভা। তখন তিনি জগৎ সংসারের গিন্নিমা।।
সন্দীপ মুখোপাধ্যায় - “নাম কী? থাকো কোথায়? কোন ক্লাস অবধি... Read More
এদেশে সোনাকে স্থিতি এবং ভাগ্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।...
আমরা সবাই জানি যে ত্রিদেব বলতে ব্রহ্মাণ্ডের তিন প্রধান স্তম্ভকে...
লিপস্টিক আমার কাছে লিপস্টিক নয়। লিপস্টিক আমার কাছে প্রতীক। রং...
নাতাশা স্নান সেরে এসছে। সারাটা ঘরই এখন গন্ধস্নান করছে। একই...
পুলিশের উর্দিটা তখনও গা থেকে খুলিনি, সুসময়ী বলল, “তােমার জন্য...
শাে তখন জমে উঠেছে। শীতের সন্ধে। গায়ে ছিল হালকা জ্যাকেট।...
চা আর প্রজাপতি বিস্কুট। খাবার মধ্যে এই। কিন্তু কথা ছিল...
সকাল বেলাটা আজকাল বিজনের বেশ সমস্যার। থিতু হয়ে প্রভাত উপভােগ...
রিশপের ছবিগুলাে সব ফেসবুকে আপলােড করার পর কম্পিউটারের সামনে থেকে...
লােকে ‘ব্যোমকেশ’ নামে ডাকেন। নতুন নামকরণ হয়েছে ‘সােনা দা। এদিকে...