প্রচেত গুপ্ত
একটা গল্প দিয়ে শুরু করি। তখন পড়ি ক্লাস সিক্সে। জীবনে একটা জিনিসই চিনেছি। একটা নয়, তিনটে জিনিস। এক নম্বর খেলা, দু’নম্বর খেলা এবং তিন নম্বর হল খেলা। শয়নে, স্বপনে, জাগরণে, পঠন-পাঠনে, অনশনে, নিমন্ত্রণে খেলা ছাড়া কিছু বুঝি না। বুঝতে চাইও না। ফুটবল খুব খেলতাম। নিজেদের ক্লাব ছিল। ক্লাবের নাম ছিল ‘চ্যাম্পিয়ন’। ছােটোদের সব ক্লাবে একজন দাদা টাইপ লিডার থাকে। সে-ই হয় গার্জেন। কখনও ক্লাবের সভাপতি, কখনও কোচ, কখনও রেফারি, কখনও পরামর্শদাতা। কখনও আমাদের পকেট ফাকা করে ঝালমুড়ি, চানাচুর, ঘুগনি খাওয়া। সেন্টুদা ছিল আমাদের সেই গার্জেন। সেন্টুদার কোচিং এবং গার্জেনগিরিতে থেকে আমরা ম্যাচ খেলতাম। খেলতাম আর হারতাম। এত হার হয়ে গেল যে একসময় অন্য ক্লাবের ছেলেরা আমাদের নিয়ে ঠাট্টা করতে লাগল।
‘তোরা এবার ক্লাবের নাম বদল কর।’
আমরা তেড়েফুড়ে বলতাম, ‘না, আমাদের ক্লাবের নাম চ্যাম্পিয়নই থাকবে।’
‘আহা, চটছিস কেন? চ্যাম্পিয়নই থাকুক। আমরা কি বারণ করেছি? শুধু আগে একটা হেরো বসিয়ে নে। এবার থেকে ক্লাবের নাম হবে হেরো চ্যাম্পিয়ন। আমরা তো জামার হাতা গুটিয়ে ঝাপিয়ে পড়তাম। লেগে যেত মারপিট। সেন্টুদা ফুটবল টিমকে নিয়ে মিটিং ডাকল। চিন্তিত মুখে বলল, ‘এভাবে হবে না। এভাবে জেতা যাবে না।’
আমি বললাম, তাহলে কীভাবে হবে সেন্টুদা? হারতে হারতে তো প্রেস্টিজ বলে কিছু থাকছে না।
সোনা বলল, ‘আমাদের চেষ্টায় তো ফাঁকি নেই।‘
বিবেক বলল, তোমার কথা মতো জোর প্র্যাকটিস করছি। শট, ভলি, ফ্রি কিক, পাস, পেনাল্টি, ড্রিবলিং, ট্যাকেল এমনকি থ্রো পর্যন্ত। তারপরেও পারছি না। সব ম্যাচেই দুটো, তিনটে, এমনকি ছ’টা পর্যন্ত গোল খেয়ে ফিরছি’।
সেন্টুদা মাথা নাড়তে নাড়তে বল, ‘আমি একটা পথ বের করেছি’। আমি বললাম, কী পথ? অন্য টিমের ভালো ভালো প্লেয়ারদের ভাগিয়ে আমাদের ক্লাবে নিয়ে আসবে? কিন্তু সে তো অনেক। তা ছাড়া, তারা আমাদের এই হেরো ক্লাবে আসবে কেন?
সেন্টুদা বলল, ‘না না কাউকে আমাদের এখানে আনতে হবে না। তোরা মাঠে নেমেই ভাল প্লেয়ারদের স্পট করে ফেলবি। তাঁদের চিনে ফেলবি। ওদের সবকটাকে দশ মিনিটের মধ্যে কুপোকাৎ করতে হবে। একেকটা যেন চিৎপটাং হয়ে পড়ে’।
সেন্টুদার কথা শুনে আমরা সবাই হাঁ। সোনা বলল, ‘কুপোকাত! সেটা আবার কী? বক্সিং লড়ব নাকি? নাকি কুস্তি? লাঠিসোঁটা নিয়ে মাঠে নামতে বলছো না তো?
সেন্টুদা বলল, ‘আরে না না। সবাইকে দেখিয়ে কুপোকাত করলে তো রেফারি ঘাড় ধরে মাঠ থেকে আউট করে দেবে। খেলতেই পারবি না। অপোনেন্টকে ধরাশায়ী করতে হবে গোপনে। কেউ দেখতে পাবে না, কেউ জানতে পারবে না। জানবে শুধু দুজনে। যে পড়বে আর যে ফেলবে’।
আমরা অবাক হয়ে বললাম, সে আবার কী! এমন কোনও কায়দা আছে নাকি?’
সেন্টুদা মুচকি হেসে বলল, ‘অবশ্যই আছে। তোরা এবার নতুন সিস্টেমে খেলবি। সেই সিস্টেমের নাম হবে লেঙ্গি সিস্টিম। চলতি বাংলায় যাকে বলা হয় ল্যাং। অপোনেন্ট টিমের যেসব প্লেয়ার ভাল খেলবে তাঁদের ল্যাং মেরে ফেলে দিতে হবে ফটাফট। পরিশ্রম কিছু নেই। পাস, ড্রিবল, ট্যাকেল, কিক, ভলির মাঝখানে টুক করে পা-টা বাড়িয়ে দাও। ব্যস্। দেখব এবার চ্যাম্পিয়নকে কে হারায়?
সেন্টুদার কথা সত্যি হল। পরের খেলাগুলোতে লেঙ্গি সিস্টেম অ্যাপ্লাই করে আমরা বিশেষ লাভবান হলাম। ভাল ভাল প্লেয়ারদের ধরাশায়ী করে ম্যাচ জিততে শুরু করলাম। ঘরে শিল্ড এল, ট্রফি এল, মেডেল এল। শুধু আমাদের ক্লাবের নাম বদলে হল ‘লেঙ্গি চ্যাম্পিয়ন’।
সেই বালক বয়সে সেন্টুদা যা শিখিয়েছিল, আজ এই ধেড়ে বয়স পর্যন্ত এসে বুঝেছি সেই শিক্ষার জুড়ি নেই। এতদিনে সার বুঝেছি, লেঙ্গি বিনা ‘বঙ্গি’ নাই। এখানে বঙ্গি মানে ‘বাঙালি’। বঙ্গবাসী থেকে বঙ্গি। খারাপ হল? হুতোমের নকশায় তো অনেক শর্টকাট আছে। আমরা একটা করলে ক্ষতি কী? যে বাঙালিকুল লেগপুলকে জীবনের মূল হাতিয়ার করে রেখেছে, তাকে তো একটু ব্যঙ্গ শুনতেই হবে। হবে না?
বঙ্গিজীবনে (বঙ্গ জীবন থেকে একটু সরে গেলাম), শাসনে, আস্ফালনে, প্রোমোশনে লেঙ্গি চাই। লেঙ্গি মেরে কখনও সঙ্গী কাত, লেঙ্গি মেরে কখনও জঙ্গি (এখানে খারাপ ও ধান্দাবাজ লোক পড়তে হবে)। হাত। আহা! কে যে এই কায়দাটি আবিষ্কার করেছিলেন কে জানে! যদি তার নাম জানা যেত, অনেক বাঙালিই আজ মনীষীদের ফোটোর পাশে দেয়ালে লেঙ্গির আবিষ্কর্তার ফোটো টাঙিয়ে রাখত। রোজ সকালে ফুলের মালা আর ধূপ দিয়ে পূজো সারত। যাই হোক এই ব্যবস্থার উপকারিতা এবং সুবিধাগুলি একবার চট করে দেখা যাক। তাহলেই বোঝা যাবে, বাঙালি কেন এত লেঙ্গিপ্রিয় জাতি।
যে ব্যবস্থার এত মহিমা তার প্রসারের জন্য বাঙালি জাতি কী করেছে? কিছুই করেনি। নিজেরটুকু গুছিয়ে নেওয়া ছাড়া বেচারি লেঙ্গির দিকে ফিরেও তাকায়নি। কী করা যায়? দেখা যাক তিনটে উপায়।
অধিকাংশ কেসেই দেখা গেছে, লেঙ্গিবাজরা একটা সময়ে নিজেকেই লেঙ্গি মেরে বসে। নিজেকে ঠেকিয়ে নিজে ওঠবার ফন্দি। নিজেকে নিজেই হিংসে। ফলে এক সময় চিৎপটাং।
সন্দীপ মুখোপাধ্যায় - “নাম কী? থাকো কোথায়? কোন ক্লাস অবধি... Read More
লিপস্টিক আমার কাছে লিপস্টিক নয়। লিপস্টিক আমার কাছে প্রতীক। রং...
আমরা সবাই জানি যে ত্রিদেব বলতে ব্রহ্মাণ্ডের তিন প্রধান স্তম্ভকে...
নাতাশা স্নান সেরে এসছে। সারাটা ঘরই এখন গন্ধস্নান করছে। একই...
পুলিশের উর্দিটা তখনও গা থেকে খুলিনি, সুসময়ী বলল, “তােমার জন্য...
শাে তখন জমে উঠেছে। শীতের সন্ধে। গায়ে ছিল হালকা জ্যাকেট।...
এদেশে সোনাকে স্থিতি এবং ভাগ্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।...
চা আর প্রজাপতি বিস্কুট। খাবার মধ্যে এই। কিন্তু কথা ছিল...
রিশপের ছবিগুলাে সব ফেসবুকে আপলােড করার পর কম্পিউটারের সামনে থেকে...
সকাল বেলাটা আজকাল বিজনের বেশ সমস্যার। থিতু হয়ে প্রভাত উপভােগ...
লােকে ‘ব্যোমকেশ’ নামে ডাকেন। নতুন নামকরণ হয়েছে ‘সােনা দা। এদিকে...