jamdani

আয়নায় সেই গ্রামের ছেলেটাই আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে, নাওয়াজ অওর আচ্ছা কাম করাে।

পিয়া ঘােষ বন্দোপাধ্যায়

গ্যাংগস অফ ওয়াসিপুর’- কেও একাই কাঁপাতে পারি। আবার অবলীলায় ‘মান্টো’ হয়ে যেতে পারি কিম্বা ‘মাঞ্ঝি’ অথবা ‘সেক্রেড গেমস’ ও করতে পারি। আবার বাল ঠাকরের চরিত্রের মধ্যেও ঢুকে যেতে পারি। আমার তাে মনে হয় আমি রােজ নিজেকে ভাঙছি। বাকিটা তাে মানুষের উপর মানুষ কীভাবে আমায় দেখবেন। তারা যদি বলেন, ‘টাইপকাস্ট’ তবে তাই। 

‘মান্টো’র শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল? ‘মান্টো’ কে নাকি ‘মাঞ্ঝি’ কে আপনি  অভিনয়ের ক্ষেত্রে বেশি নম্বর দেবেন?

প্রথমে বলি, ‘মান্টো’ আর ‘মাঞ্ঝি’ দুটো পুরাে আলাদা চরিত্র। আমার কাছে দুটোই সমান গুরুত্বপূর্ণ। “মাঞ্ঝিও তার থেকে কিছু কম হয়নি। তবে জানি না কেন এই ধরনের ছবি বক্স অফিস হিট হয় না। এটা একটা দুঃখের জায়গা। তবে বিদেশে কিন্তু এই ছবিগুলােই খুব বেশি প্রসংশিত হয়। তবে হ্যা ‘মান্টো’র শুটিংয়ে একটা মজার ঘটনা ঘটেছিল। আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম লাহােড়ে শুটিং করব। কিন্তু সেটা সম্ভব হয় না। তখন গুজরাটে আমরা একটা গ্রাম খুঁজে পাই। যেখানে প্রায় শ’খানেক গ্রামের মানুষকে নিয়ে আমরা শুটিং করি। তারা কেউ অ্যাক্টর নন। আমরা ওদের মতাে করে নিজের নিজের চরিত্রগুলাে গুছিয়ে নিয়েছিলাম সে সময়। সে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা। তবে হ্যা ওই গ্রামের কেউ কিন্তু এখনও নওয়াজ উদ্দিন সিদ্দিকিকে চেনেন না। ২০০৯ এও যেমন চিনত না, এখনও তেমনই চেনে না। 

তাতে কী? বলিউডের বিগ বি তাে আপনার কাজের প্রশংসা করেছেন। আপনাকে বর্তমানের সবচেয়ে ট্যালেন্টেড অ্যাক্টর ও বলেছেন। এই পাওয়াটাকে আপনি কীভাবে দেখছেন? 

অমিতজি আমার কাছে গুরুদেব। আমরা বিগ বি-র ছবি দেখে বড় হয়েছি। আর সেই মানুষটা যখন আমার কাজের প্রশংসা করেন। তখন আমার তাে সব কিছুই পাওয়া হয়ে যায়। জীবনের কাছে আর কোনও অভিযােগ থাকে না। আমার বাবা ও অমিতাভজির সঙ্গে দেখা করেন। সেটা আমার বাবার জীবনেরও স্বপ্ন ছিল। আসলে মানুষ যদি স্বপ্ন দেখে, তবে তা সত্যি হবেই। আমার স্বপ্নগুলাে এক এক করে সত্যি হচ্ছে। 

আপনি এক সময় টিভিতেও কাজ করেছেন। আবার বাইপাস’- এর মতাে শর্ট ফিল্মও করেছেন। ইরফান খানের সঙ্গে বাইপাস ই একমাত্র কাজ। অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

‘বাইপাস’ এমন একটা ছবি, যা আমার কাছে এখনও খুব দামি। ছবিটায় কোনও ডায়লগ ছিল। আমরা মরুভূমির মধ্যে শুটিং করেছিলাম। ইরফানজি আমার থেকে অনেক বড়াে অভিনেতা। আমাকে ইরফানজি তখনই বলেছিলেন, ‘তুম বহত আগে যাওগে। স্যারের কথাই সত্যি হচ্ছে। আসলে আমি সকলের কাছ থেকে কিছু না কিছু শিখি। সেই সময় গরমের মধ্যে আমরা কাজ করছি। কিন্তু আমি কখনও নার্ভাস হইনি। দেখেছিলাম, ইরফানজি ও তার নিজের এবং কো-স্টারদের অভিনয় নিয়েও কতটা আগ্রহী। কিন্তু ইরফানজি এখন খুব অসুস্থ। আর এটা ভেবেই আমার খুব খারাপ লাগছে। আশা করি উনি সুস্থ হয়ে উঠবেন খুব তাড়াতাড়ি। 

যদি এখন টিভিতে কোনও কাজের অফার পান, করবেন ?

আমার এখন ব্যস্ত শিডিউল। ঠাকরে’ তাে রিলিজ করলাে। প্রশংসিত হয়েছে। এরপর রয়েছে – ফোটোগ্রাফ’, ‘ধুমকেতু’ ‘সেক্রেড গেমস ২’, ফোবিয়া সিকুয়েল’, সুজয় ঘােষের পরিচালনাতেও একটি কাজ করছি। তারপর ‘গ্যাংগস অফ ওয়াসেপুর ৩’, ‘ফরজি’, বােম্বাই সামরাই, পরপর এতগুলাে কাজ করে টিভিতে আর কখন কাজ করব। তাছাড়া আমি যখন। টিভিতে কাজ করতাম, তখনও ডিরেক্টরদের সঙ্গে আমার ঝামেলা হত। ওরা বলত নওয়াজ গলার স্বর উচু করে কথা বল’, তখন আমি বলতাম, ‘সারা জীবনে বা বাস্তবে তাে আমরা চিৎকার করে কথা বলি না। তাহলে এখানে কেন বলব?’আমি নরমাল টোনেই কথা বলতাম। যদি টিভিতে যা বাস্তব সেটা দেখানাের মতাে পরিস্থিতি কখনও আসে তাহলে অবশ্যই কাজ করব। কিন্তু এই একঘেয়ে, অতিরিক্ত মেকআপ, সবকিছু বাস্তব থেকে আলাদা রকমের অভিনয়ে আমি কোনও মজা পাইনা। 

‘ঠাকরের জন্য আপনি কী কী প্রস্তুতি নিয়েছিলেন?

বাল ঠাকরে ছিলেন বাস্তবের হিরাে। কোনও কল্পিত চরিত্র নয়। তিনি একবার বক্তা হিসেবে মাইক ধরলেই হাজার মানুষ তারাগাটাতে আমার কোনও কৃতিত্ব নেই। সবটাই মেকআপ ম্যানের কৃতিত্ব। আমার সফলতা সেখানেই যখন আমি চরিত্রটার মধ্যে ঢুকতে পারছি। বালা সাহেবের চরিত্রে ঢােকার জন্য আমি ইউটিউবে বালাসাহেবের সব ইন্টারভিউ ১০০ বার করে দেখেছি। ওর বাড়িতে গিয়ে সবার সঙ্গে দিন কাটিয়েছি। জেনেছি স্যারের সম্পর্কে নানা কথা। তারপর নিজেকে ভাবতে শুরু করেছি ‘আমিই বালা সাহেব। কারণ, বালা সাহেব না হয়ে। উঠতে পারলে আমি কখনই কাজটা করতে পারতাম না। আর সেটা না পারলে স্যারকে আমি যথাযথ সম্মান জানাতে পারতাম না। আমার জীবনের অন্যতম ভাল কাজের মধ্যেও ‘ঠাকরে’-ও পড়বে। 

অভিনয় জগতে তাে নওয়াজ এমন একটা নাম। কিন্তু আপনার মায়ের কাছে আপনি কেমন?

আমার মা আমার সবকিছু। মা জীবনে যে বাঁধার সম্মুখীন হয়েছেন আমি তার কিছুই দেখিনি। আমার স্ট্রাগলটা মায়ের জীবন সংগ্রামের কাছে কিছুই না। মা আমাকে নিয়ে খুবই গর্বিত। সেই সঙ্গে আমাকে এটা বলতেও গেলেন না।‘বেটা কুছ নেহি হুয়া, অর আচ্ছা কাম করাে। তুমহে রুকনা নেহি হ্যায়’। মায়ের এই কথা আমাকে রােজ নতুন নতুন কাজের পিছনে ছুটিয়ে নিয়ে। যায়। 

র‍্যাপিড ফায়ার—

সেরা পরিচালক—যখন যার সঙ্গে কাজ করি সেই আমার সেরা পরিচালক।

প্রিয় অভিনেতা ? 

—অ্যালপাচিনাে, শত্রুঘ্ন সিনহা

প্রিয় অভিনেত্রী

– আমার সব কো-স্টাররাই আমার কাছে প্রিয় অভিনেত্রী

জীবনে সবচেয়ে প্রিয় কী?

— অভিনয়

কার কথা সবচেয়ে বেশী মেনে চলেন? 

– মায়ের কথা  

Trending

Most Popular


Would you like to receive notifications on latest updates? No Yes