লােকে ‘ব্যোমকেশ’ নামে ডাকেন। নতুন নামকরণ হয়েছে ‘সােনা দা। এদিকে আবার ‘সমীরণ বােস’, ‘নাসির’, ‘মাস্টার’-এ জমিয়ে দিয়েছেন টলি ফ্লোর, কিন্তু হিন্দি ছবিটা ‘ব্যাটে বলে হচ্ছে না। সিনেমার সাতকাহন নিয়ে আবির চ্যাটার্জির মুখােমুখি মানসী চ্যাটার্জি।
১. কেমন আছেন?
উফফ, যা গরম, আর ভালাে! ওই আর পাঁচটা বাঙালি গরমে যেমন থাকে, আমিও তেমনি আছি। তবে গতবার গরম থেকে আমার চাপটা বেড়েছে। (হাসতে হাসতে) তার কারণ । অবশ্যই গুপ্তধন এবং তার সন্ধান। আগের বছর ‘গুপ্তধনের সন্ধানে’দর্শকদের মধ্যে দারুণ সাড়া ফেলেছিল। এ বছরও যাতে গরমের ছুটিতে সােনাদা, ঝিনুক, আবিরের সঙ্গে বাঙালি পর্দায় ট্রেজার হান্টে বেরিয়ে পড়তে পারে, তারই চেষ্টায় আছি।
২. এবার গুপ্তধনের সন্ধান করতে কোথায় যাচ্ছেন সােনাদা?
দুর্গেশগড়। এক ছাত্রের বাড়ি। যদিও উদ্দেশ্যটা ছিল বনেদিবাড়ির দুর্গাপুজো উপভােগ করা। কিন্তু রহস্য তাে সােনাদার পিছু ছাড়ে না। অগত্যা নেমে পড়তে হয় গুপ্তধনের সন্ধানে।
৩. পুজো কাটাতে গিয়ে গুপ্তধনের হাতছানি! তা দুর্গেশগড়ে কোন ধন লুকোনাে রয়েছে?
আসলে যে ছাত্রটির বাড়িতে সােনাদা দুর্গাপুজো কাটাতে যায়, তার প্রপিতামহ ছিলেন জমিদার এবং বাংলার এক সময়ের নাম করা আর্টিস্ট। জনশ্রুতি আছে, এই পরিবারটি সে সময় প্রচুর ধনসম্পত্তি লাভ করেছিল। কিন্তু সে ধনের হদিশ কেউ করে উঠতে পারেনি। এই হারানাে সম্পত্তি উদ্ধার করাই এবার সুবর্ণ সেনের চ্যালেঞ্জ।
৪. হারানাে সম্পত্তি হদিশের জার্নিটা কতটা অ্যাডভেঞ্চারাস ?
অ্যাডভেঞ্চার তাে বটেই। এই সঙ্গে আগের থেকে অনেক অনেক বেশি জমকালােও। তা ছাড়া এবারের প্রেক্ষাপট দুর্গাপুজো। যার সঙ্গে রয়েছে গুপ্তধনের যােগ। তবে বারবার বলছি, শুধুমাত্র অ্যাডভেঞ্চার বা ট্রেগার হান্ট নয়, ‘গুপ্তধন’ ফ্রাঞ্চাইজির মূল উদ্দেশ্য বাংলার ইতিহাসকে আরও একবার ফিরে দেখা। তবে কোন ইতিহাস, সেটা আপাতত সিক্রেট।
৫. ফেলুদা, ব্যোমকেশ, সােনাদা- কোথাও কি মনে হচ্ছে অভিনেতা আবিরকে ছাপিয়ে যাচ্ছে গােয়েন্দা আবির?
দেখাে, বাংলার সাহিত্য তথা বাংলা সিনেমার অন্যতম আইকনিক চরিত্র ফেলুদা ও ব্যোমকেশ। এই দুটি চরিত্রে অভিনয় করতে পেরে নিজেকে খুবই সৌভাগ্যবান মনে করি। বিশেষ করে ব্যোমকেশের কথাই বলব। কারণ ফেলুদা তাে একটাই করেছি, তাই ওটা নিয়ে বেশি কথা না বলাই ভালাে। এদিকে সুবর্ণ সেন এঁদের তুলনায় অনেকটাই আলাদা। সােনাদা গােয়েন্দা নন। তিনি হিস্ট্রির প্রফেসর। যাঁর অনুসন্ধিৎসু চোখ রয়েছে। আর চরিত্রগুলি আমার কাছে খুবই । আদরের। বিশেষ করে এখন মানুষ যেভাবে ব্যোমকেশ চরিত্রের সঙ্গে আমাকে আইডেন্টিফাই করতে পারেন, সেটা সত্যিই সম্মানের। কাজেই এই ধরনের চরিত্র, যে কিনা সত্যান্বেষী, যে কিনা রহস্যের সমাধান করে, যে কিনা অ্যাডভেঞ্চারে বেরিয়ে পড়ে সেগুলিতে অভিনয়। করার একটা আলাদা চ্যালেঞ্জ আছে। তাই আমি কখনওই মনে করি না, এই চরিত্রগুলি অভিনেতা আবিরকে ছাপিয়ে যাচ্ছে। বরং এই চরিত্রগুলি অভিনেতা আবিরকে আরও পরিপূর্ণ অভিনেতা হতে সাহায্য করছে। তবে হ্যাঁ, এর সঙ্গে সঙ্গে যদি অন্য ধরনের চরিত্র করতে না পারতাম, তা হলে হয়ত মনে একটা ক্ষোভ থাকত। কিন্তু লাকিলি প্রতি বছর এই ছবিগুলাের সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য বিবিধ ধরনের চরিত্রে আমি অভিনয় করছি। এই ব্যাপারে আমি সম্পূর্ণ ধন্যবাদ দিতে চাই আমার প্রযােজক, পরিচালক ও দর্শকদের।
৬. ব্যোমকেশ বক্সি না প্রদোষ মিত্তির, নাকি সুবর্ণ সেন- আপনি ব্যক্তিগতভাবে কাকে পছন্দ করেন?
ব্যোমকেশ বক্সি বা প্রদোষ মিত্তিরের সঙ্গে সুবর্ণ সেনের তুলনা করাটা এক্কেবারেই অহেতুক। আমি তুলনায় যেতেই চাই না। তবে ব্যোমকেশ বক্সির একটা ছাপ অভিনয়ের বাইরেও আমার ব্যক্তিগত জীবনেও রয়েছে। সেদিক থেকে ব্যোমকেশ বক্সিকেই এগিয়ে রাখব।
৭. গুপ্তধনের সন্ধানে সােনাদা করতে গিয়ে মনে হয়েছিল যে এটা এত বড়াে হিট হবে আর ফেলুদা-ব্যোমকেশ-শবরের পর একটা ফ্রাঞ্চাইজি তৈরি হবে?
শুরু থেকে সােনাদা করতে গিয়ে মনে হয়েছিল, একটা ভালাে কাজ হচ্ছে। তবে গত বছর গরমের ছুটিতে যখন ‘দৃষ্টিকোণ’ ও পৃথিবীবিখ্যাত ছবি ‘অ্যাভেঞ্জারস’-এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ‘গুপ্তধনের সন্ধানে’ বক্স অফিসে নিজের কেল্লা ধরে রাখল, তখন সত্যি দারুণ লেগেছিল। আর তার থেকে বেশি আনন্দ পেয়েছিলাম, যখন দেখলাম ছােটো থেকে বড়াে পরিবারের সবাই এই সিনেমাটি দেখতে আসছে। তখনই আমরা সবাই প্ল্যান করেছিলাম, আবার সােনাদা আসবে। তবে আগের থেকে এবারের অভিযান হবে আরও জমকালাে।
৮. একটা ফ্রাঞ্চাইজি হলে সেই সিরিজের পরের ছবি করতে গিয়ে আপনার, পরিচালকের আর বাকি অভিনেতাদের চাপ কতটা থাকে? অবশ্য একের পর এক ব্যোমকেশের অভিজ্ঞতা আপনার আছে, কিন্তু সােনাদা?
একটা নতুন ফ্রাঞ্চাইজি তৈরি হলে এক্সপেক্টেশনের পাহাড় তৈরি হয়।‘গুপ্তধনের সন্ধানে তৈরির সময় ইট ওয়াজ এ ক্লিন স্লেট, উই স্টার্টেড উইথ। কিন্তু এখন মানুষ সােনাদা আবির ও ঝিনুককে চেনে। তারা এক্সপেক্ট করে আগের ছবিতে যা যা দেখানাে হয়েছিল, তার থেে আরও আরও ভালাে কিছু পাওয়ার। কাজেই একটা এক্সপেক্টেশনের চাপ থেকেই যায়। আর যেহেতু মানুষের ভালােবাসা আমরা প্রথম ছবিতেই পেয়েছি, তার প্রতিদান হিসাবে আমাদেরও মনে হয় দর্শদের আরও একটা ভালাে সিনেমা উপহার দিই। হ্যা, আমি ব্যোমকেশের ছ’টা ছবিতে কাজ করেছি। সে ক্ষেত্রে ক্যারেক্টারের যে গ্রাফ তৈরি হয়, তা সত্যি হেল্প করে। এখন আমি যেমন জানি, ব্যোমকেশ কী কী করতে পারে এবং কী কী করতে পারে না। অ্যাট দ্য সেম টাইম, আমিও কিন্তু প্রতি ছবিতে একটু একটু করে অ্যাড অন করতে থাকি এবং কিছু বাদ দিতেও থাকি। কারণ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ বদলায়। তাই পরিস্থিতি অনুযায়ী চরিত্রগুলি হওয়া উচিত। ব্যোমকেশের গল্পে আমি এটাই করে থাকি। সােনাদার ক্ষেত্রেও সেটাই করার চেষ্টা করেছি। এখন সেই চেষ্টা কতটা ফলপ্রসূ হবে, আপনারাই বলবেন।
৯. এই মুহূর্তে আবির চ্যাটার্জি কি বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে বড়াে স্টার?
ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে বড়াে স্টার কে? আদৌ কেউ স্টার কিনা! এর মধ্যে আমি একদম ঢুকতে চাই না। কারণ বিষয়গুলি আমার বােঝার বাইরে। দর্শকদের ভালােবাসা পেয়েছি আর ভালােবাসা পেতে চাই। সেটাই মাথায় রেখে কাজ করি। বাকি আর বেশি কিছু মাথায় ঢােকাতে চাই না।
১০. টলিউডের অনেকেই আজকাল হিন্দি ছবিতে অভিনয় করছেন। আপনি কি বলিউড থেকে কোনও অফার পেয়েছেন?
সম্প্রতি একটি শর্টফিল্মে কাজ করেছি। এ ছাড়া বহুদিন আগে ‘কাহিনি’তে অভিনয় করেছিলাম। এখানেই আমার লিস্ট শেষ। তবে মাঝেমধ্যে বেশ কিছু হিন্দি ছবির অফার আমার কাছে। এসেছে। কিন্তু কোনওটাই আমার তেমন এক্সাইটিং লাগেনি যে এখানকার কাজ ছেড়ে চলে যেতে পারি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সময় দিতে পারিনি। সেদিক থেকে বলতে গেলে ব্যাটে-বলে ঠিক করে হয়নি।
১১. ওয়েব সিরিজে অভিনয় করতে চান ?
অনেকেই বলছেন এন্টারটেনমেন্ট ইন্ডাস্ট্রির ভবিষ্যৎ ওয়েব সিরিজ। কিন্তু আমি বলব, দিস ইজ পেজেন্ট অফ এন্টারটেনমেন্ট ইন্ডাস্ট্রি। সত্যি কথা বলতে, আমি নিজে ওয়েব সিরিজের ভক্ত। কিন্তু এই মুহূর্তে ওয়েব সিরিজের কোনও অফার আমার কাছে নেই। তবে ভালাে গল্প ও চরিত্রপেলে অবশ্যই চ্যালেঞ্জটা নেব।
১২. যিশুর সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করাটা কতটা কম্পিটিশনের?
অভিনয় করা দাবা খেলা বা বস্কিং নয়। অভিনয় ভীষণভাবে দেওয়া-নেওয়ার ওপর নির্ভর। করে। সেখানে কিন্তু আমরা সহযােদ্ধা। তাই এখানে যদি আমরা একে অপরকে মাপতে যাই, সবার আগে নকআউট হবে সিনেমাটা। তাই ‘বর্ণপরিচয়’-এর সময় কম্পিটিশনের কথা কখনও মাথায় আসেনি। বরং দু’জনে মিলে ছবিটা আরও ভালাে কীভাবে করা যায়, সেই চেষ্টাই করেছি। তবে সহ-অভিনেতা হিসাবে যিশু দারুণ। এর আগে যদিও ‘রাজকাহিনি’-তে আমরা কাজ করেছি, কিন্তু স্ক্রিন শেয়ার সে অর্থে করিনি। সে ক্ষেত্রে থ্যাঙ্কস টু পরিচালক মৈনাক ভৌমিক।
১৩. এবার একটু অন্য প্রসঙ্গে আসা যাক, মহিলা ফ্যানদের বাড়াবাড়ির কোনও অভিজ্ঞতা শেয়ার করবেন?
আমার মহিলা ফ্যানেরা খুবই বুদ্ধিমতী। তাই অপ্রীতিকর ঘটনা এখনও পর্যন্ত ঘটেনি। তবে কিছু কিছু মজার ঘটনা আছে, যা আমি খুব এনজয় করে থাকি। তাঁরা তাঁদের মতাে করে আমাকে ভালােবাসা জানান।
১৪. নিজেকে অভিনেতা, স্বামী ও বাবা হিসাবে ১০-এর মধ্যে কত দেবেন?
এইরে, নম্বর দেওয়ার কথা বললে আমার পরীক্ষার কথা মনে পড়ে যায়। আর সেটা আমি একদম পছন্দ করি না। তবে এটুকু বলতে পারি, আমার কাছের মানুষদের জন্যই সবটা। তারা আমার সঙ্গে আছে বলেই আমি আজ এখানে। আমি সব সময় চাইব তাদের আরও বেশি বেশি ভালােবাসতে। উল্টে এটাও চাইব, তারাও আমাকে আরও ভালােবাসুন।
১৫. আপনি যদি কখনও গুপ্তধনের সন্ধান পান, কী করবেন?
শুধু গুপ্তধন পেলেই হল না, তার পরেও অনেক খাটনির কাজ আছে। প্রথমত, গুপ্তধনের সন্ধান পেলে সরকার বাহাদুরকে খবর দেব। তাঁদের সম্পত্তি। সেই সঙ্গে জিজ্ঞাসা করব, জিএসটি ও অন্যান্য ট্যাক্সের কী কী ব্যাপার আছে। ট্যাক্সের এ সব অঙ্কটঙ্ক করা খুবই ঝুঁকির কাজ। তাই এ সব গুপ্তধনের খোঁজ না করে অন্য গুপ্তধনের সন্ধান করতে চাই। সেই ধাঁধাটা মেলাতে চাই, যাতে আরও বেশি বাঙালি কীভাবে বাংলা ছবি বড়াে পর্দায় দেখবেন।
সন্দীপ মুখোপাধ্যায় - “নাম কী? থাকো কোথায়? কোন ক্লাস অবধি... Read More
এদেশে সোনাকে স্থিতি এবং ভাগ্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।...
আমরা সবাই জানি যে ত্রিদেব বলতে ব্রহ্মাণ্ডের তিন প্রধান স্তম্ভকে...
লিপস্টিক আমার কাছে লিপস্টিক নয়। লিপস্টিক আমার কাছে প্রতীক। রং...
নাতাশা স্নান সেরে এসছে। সারাটা ঘরই এখন গন্ধস্নান করছে। একই...
পুলিশের উর্দিটা তখনও গা থেকে খুলিনি, সুসময়ী বলল, “তােমার জন্য...
শাে তখন জমে উঠেছে। শীতের সন্ধে। গায়ে ছিল হালকা জ্যাকেট।...
চা আর প্রজাপতি বিস্কুট। খাবার মধ্যে এই। কিন্তু কথা ছিল...
সকাল বেলাটা আজকাল বিজনের বেশ সমস্যার। থিতু হয়ে প্রভাত উপভােগ...
রিশপের ছবিগুলাে সব ফেসবুকে আপলােড করার পর কম্পিউটারের সামনে থেকে...
লােকে ‘ব্যোমকেশ’ নামে ডাকেন। নতুন নামকরণ হয়েছে ‘সােনা দা। এদিকে...